তৎপুরুষ সমাস
কলাকে বেচা = কলাবেচা। রোগ দ্বারা জীর্ণ = রোগজীর্ণ। এই দৃষ্টান্ত দুটি লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, প্রথম দৃষ্টান্তে পূর্বপদ অর্থাৎ আগের পদটির ‘কে’ বিভক্তি লোপ পেয়েছে এবং দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে ‘দ্বারা’ অনুসর্গ লোপ পেয়েছে। এ-জাতীয় সমাসকে তৎপুরুষ বলে। এই সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান হয়। যে কারকে বিভক্তি বা অনুসরররগ লোপ পায়, সমাসটিকে সেই তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা-কর্ম তৎপুরুষ, করণ তৎপুরুষ, নিমিত্ত তৎপুরুষ, অপাদান তৎপুরুষ, সম্বন্ধ তৎপুরুষ, অধিকরণ তৎপুরুষ। কর্ম তৎপুরুষ সমাস : রথকে দেখা = রথদেখা; কলাকে বেচা = কলাবেচা; ঠাকুরকে দেখা = ঠাকুরদেখা; লোককে দেখানো = লোকদেখানো। এই সকল উদাহরণে পূর্বপদ কর্মকারক এবং সেটির বিভক্তি সমস্তপদে লোপ পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দ্বিতীয় তৎপুরুষ সমাস হয়েছে। যে তৎপুরুষ সমাসে কর্মকারকরূপী পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায়, তাকে কর্ম-তৎপুরুষ সমাস বলে। (ক) প্রাপ্ত, আসন্ন, গত, আশ্রিত, অতীত, সংক্রান্ত, উৎক্রান্ত ইত্যাদি শব্দ যোগেও কর্ম তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা- যৌবনপ্রাপ্ত = যৌবনকে প্রাপ্ত; বিস্ময়কে আপন্ন = বিস্ময়াপন্ন। [অনুরূপ-শরণাপন্ন, বিপদাপন্ন]। নিদ্রাকে গত = নিদ্রাগত। [অনুরূপ-ব্যক্তিগত, শরণাগত, বুদ্ধিগত, হস্তগত, মজ্জাগত, শ্রেণিগত]। ঈশ্বরকে আশ্রিত = ঈশ্বরাশ্রিত। [অনুরূপ-চরণাশ্রিত, দুর্গাশ্রিত]। সংখ্যাকে অতীত = সংখ্যাতীত । [অনুরূপ-গণনাতীত, বর্ণনাতীত]। শাসনকে সংক্রান্ত = শাসনসংক্রান্ত। [অনুরূপ-বিষয়সংক্রান্ত, হিসাবসংক্রান্ত]। (খ) ব্যাপ্তি বোঝালেও কর্ম তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা- চির (কাল) ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী। অনুরূপ : চিরসুন্দর, চিরসুখ, ক্ষণস্থায়ী, দীর্ঘস্থায়ী চিরশত্রু, নিত্যরোগী, নিত্যযাত্রী। (গ) পূর্বপদে অবস্থাবোধক বিশেষণ থাকলেও কর্ম-তৎপুরুষ হয়। যথা- ঘনভাবে সন্নিহিত = ঘনসন্নিহিত। অনুরূপ : দৃড়বদ্ধ; ঘনসন্নিবিষ্ট; অর্ধমৃত (অর্ধরূপে); আধপাকা (আধাভাবে); অর্ধস্ফুট, অর্ধোন্মাদ; আধমরা; নিমরাজী (নিম ভাবে; নিম = ঈষৎ)। করণ তৎপুরুষ সমাস : বজ্র দ্বারা আহত = বজ্রাহত; বেত্র দ্বারা আঘাত = বেত্রাঘাত; মন দ্বারা গড়া = মনগড়া ইত্যাদি উদাহরণে করণ কারকের ‘দ্বারা’ অনুসর্গ সমাসের ফলে লোপ পেয়েছে। এগুলি করণ- তৎপুরুষ সমাস। যে তৎপুরুষ সমাসে করণ কারকের বিভক্তি বা অনুসর্গের লোপ হয় তাকে করণ-তৎপুরুষ সমাস বলে। আরও উদাহরণ- মধু দিয়ে মাখা = মধুমাখা; রব দ্বারা আহূত = রবাহূত; সোন দিয়ে বাঁধানো = সোনাবাঁধানো। গুরু দ্বারা দত্ত = গুরুদত্ত, ইত্যাদি। অনুরূপ : অস্ত্রাঘাত, রোগাক্রান্ত, বিজ্ঞানসম্মত, হাস্যোজ্জ্বল, রসসিক্ত, তৈললিপ্ত, অগ্নিদগ্ধ, কীটদষ্ট, ঢেঁকিছাঁটা, দাকাটা, কলকাচা, বাষ্পচালিত, হতাহত, বস্ত্রাচ্ছাদিত, ভস্মাবৃত, শোকাকুল, কবিকৃত, লেখকরচিত, কালিমাখা, শিরোধার্য (শিরঃ দ্বারা ধার্য), শ্রমলব্ধ, রোগকাতর, ছাতাপেটা, লাঠিপেটা, জাঁতাভাঙা, দাতছানি, শোকার্ত, বাষ্পাকুল, স্নেহান্ধ, শীতার্ত (শীত দ্বারা ঋত), ক্ষুধার্ত, লক্ষ্মীছাড়া, শ্রীভ্রষ্ট, দাঁতখিঁচুনি, পাতাছাওয়া, চোখইশারা, ইত্যাদি ক্ষেত্রেও করণ তৎপুরুষ সমাস হয়েছে। (ক) হীন, শূন্য, কম, হারা, ইত্যাদি শব্দের প্রয়োগ হলেও করণ তৎপুরুষ হয়। যথা- জ্ঞান দ্বারা হীন = জ্ঞানহীন; সন্দেহহীন; অহংকার দ্বারা শূন্য = অহংকারশূন্য; পাঁচ দ্বারা কম = পাঁচকম; জ্ঞান দ্বারা হারা = জ্ঞানহারা, মাতৃহীন; সন্তানহীন; অহংকার দ্বারা শূন্য = অহংকারশূন্য; পাঁচ দ্বারা কম = পাঁচকম; জ্ঞান দ্বারাহারা = জ্ঞানহারা, মাতৃহীন, সন্তানহীন, চেতনাশূন্য, দিশাহারা, ইত্যাদি। (খ) কিন্তু, পোকায় কাটা = পোকায়-কাটা, কলে ছাঁটা = কলে-ছাঁটা, তাঁতে বোনা = তাঁতে-বোনা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্তপদে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায়নি। এগুলি অলুক করণ তৎপুরুষ সমাস-এর দৃষ্টান্ত। অনুরূপ : মায়ে-খেদানো, বাপে-তাড়ানো (ছেলে), ছোখে-দেখা, হাতে-লেখা (পত্রিকা) ইত্যাদি। নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস : রান্নার জন্য ঘর = রান্নাঘর; বালিকাদের জন্য (বা নিমিত্ত) বিদ্যালয় = বালিকাবিদ্যালয়, ইত্যাদি দৃষ্টান্তে পূর্বপদের ‘জন্য’ বা ‘নিমিত্ত’ উপসর্গ লোপ পেয়েছে। যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের নিমিত্ত কারক-সূচক বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায়, নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস বলে। আরও উদাহরণ- বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা; ডাকের জন্য মাশুল = ডাকমাশুল; মালের জন্য গাড়ি = মালগাড়ি; যূপেয় নিমিত্ত (জন্য) কাষ্ঠ = যূপকাষ্ঠ; মেয়েদের জন্য স্কুল = মেয়েস্কুল; চুষিবার জন্য কাঠি-চুষিকাঠি; পাগলাদের জন্য গারদ = পাগলাগারদ। অলুক নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাসের দৃষ্টান্ত : চায়ের-বাটি; পূজার-থালা; খাবার-সোডা; পড়ার-বই ইত্যাদি। অপাদান তৎপুরুষ সমাস : বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত; বিদেশ থেকে আগত = বিদেশাগত ইত্যাদি দৃষ্টান্তে অপাদান কারকসূচক পূর্বপদের অনুসর্গ লোপ পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অপাসান তৎপুরুষ সমাস হয়েছে। যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের অপাদান কারকসূচক বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায়, তাকে অপাদান-তৎপুরুষ সমাস বলে। ব্যাঘ্র হইতে ভীত = ব্যাঘ্রভীত; বৃন্ত হইতে চ্যুত = বৃন্তচ্যুত। অনুরূপ : রোগমুক্ত, পদচ্যুত, ঘরছড়া, দেশ্ছাড়া, মেঘমুক্ত, সত্যভ্রষ্ট, ঋণমুক্ত, বিপন্মুক্ত (বিপদ হইতে মুক্ত); লোকভয়, সর্পভয়, স্কুলপালানো (ছেলে), ধর্মভয়, বোঁটাখসা (আম বা ফল); জন্মান্ধ, ভোগসুখ, পাঁচসাত, দশবারো, বিশপঁচিশ, গাঁছাড়া, পথকুড়ানো। অলুক অপাদান তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ : ঘুম থেকে ওঠা (চোখ), আকাশ থেকে পড়া; দূর থেকে আসা (মানুষ), গাছ থেকে পড়া (ফল), ইত্যাদি। সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস : ধানের খেত = ধানখেত, মাতার স্নেহ = মাতৃস্নেহ, ইত্যাদি দৃষ্টান্তে পূর্বপদের সম্বন্ধসূচক বিভক্তি লোপ পেয়েছে। এগুলি সম্বন্ধ-তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ। যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সম্বন্ধসূচক বিভক্তি লোপ পায় তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস বলে। রাজপুত্র (রাজার পুত্র), রত্নাকর (রত্নের আকার), রাজবাড়ি (রাজার বাড়ি), বৃক্ষশাখা, কবিগুরু (কবিদের গুরু), বন্দীশিবির (বন্দীদের শিবির), প্রজাতন্ত্র (প্রজাদের তন্ত্র), যুবসংঘ (যুবদের সংঘ), বিশ্বভারতী (বিশ্বের ভারতী), মহিলাসমিতি, রাজতন্ত্র (রাজার), রাজ্যশাসন (রাজ্যের), গণতন্ত্র (গণের), দেবমন্দির, নরাধাম, চা-বাগান, ঠাকুরপো, গুরুসেবা, রাজভৃত্য। কয়েকটি বিশেষ উদাহরণ- বিশ্বের মিত্র = বিশ্বামিত্র; বনের পতি = বনস্পতি; বৃহতের পতি = বৃহস্পতি; তাহার প্রতি = তৎপতি। (১) কতকগুলি সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাসে পরের পদ পূর্বে বসে। এই নিয়মকে পূর্বনিপাত বলে। যথা- সাময়িকের সম = সমসাময়িক; কালীনের সম = সমকালীন; গোত্রের সম = সমগোত্র; দরিয়ার মাঝ = মাঝদরিয়া; দিনের মধ্যে = মধ্যদিন; অহ্নের পূর্ব = পূর্বাহ্ন ইত্যাদি। ‘রাজা’ এই শব্দটি অনেক সময় ‘শ্রেষ্ট’ এই অর্থে ব্যবহৃত হয়। এরূপ ক্ষেত্রেও সম্বন্ধ-তৎপুরুষ সমাসে পূর্বনিপাত হয়। যথা- বৈদ্যের রাজা-রাজবৈদ্য; হাঁসের রাজা = রাজহাঁস; পথের রাজা = রাজপথ; মিস্ত্রিদের রাজা = রাজমিস্ত্রি। (২) তুল্য অর্থেও সম্বন্ধ তৎপুরুষ হয়। যথা- মাতার তুল্য = মাতৃতুল্য; ভ্রাতার তুল্য = ভ্রাতৃতুল্য। এইরূপ : পিতৃতুল্য, মাতৃসমা = (মাতার সমা); সোদরপ্রতিমা (সোদরের প্রতিমা)। (৩) বহুত্ব বোধক শব্দের যোগেও সম্বন্ধ-তৎপুরুষ হয়। যথা- ভ্রাতার গণ = ভ্রাতৃগণ; মানবের গণ মানবগণ (গণ = সমূহ বা দল); বৃক্ষের সমূহ = বৃক্ষসমূহ; বৃক্ষের রাজি = বৃক্ষরাজি; পুষ্পের রাশি = পুষ্পরাশি; পঙ্গের পাল = পঙ্গপাল; রত্নের রাজি = রত্নরাজি। (৪) ‘দাস’ শব্দ পরে থাকলে কালী, দেবী ষষ্ঠী শব্দের ‘ঈ’ –স্থানে ‘ই’ হয়। যথা- কালীর দাস = কালিদাস; দেবীর দাস = দেবিদাস; ষষ্ঠীর দাস = ষষ্ঠীদাস। [কিন্তু দাস ভিন্ন অন্য শব্দ পরে থাকলে এই পরিবর্তন হয় না।] (৫) পূর্বপদ জাতিবাচক স্ত্রীলিঙ্গ হলে সেটি পুংলিঙ্গ হয়ে যায়। যথা- ব্যাঘ্রীর শাবক = ব্যাঘ্রশাবক, মৃগীর শিশু = মৃগশিশু; ছাগীর দুগ্ধ = ছাগদুগ্ধ; হংসীর ডিম্ব = হংসডিম্ব; হরিণীর শাবক = হরিণশাবক। (৬) সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস করলে পূর্বদের ন্ লোপ পায়। যথা- গুণীদের গণ = গুণিগন (সংস্কৃত-গুণিন্); হস্তিযূথ (সং-হস্তিন্)। এইরূপ : ফণিভূষণ; যোগীবর (যোগীদের মধ্যে রব, অর্থাৎ স্রেষ্ঠ); শশিভূষণ; রাজগণ; যুববৃন্দ; প্রাণীজগৎ; ইত্যাদি। অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস : গাছে পাকা = গাছপাকা; অকালে মৃত্যু = অকালমৃত্যু; রণে নিপুণ = রণনিপুণ ইত্যাদি দৃষ্টান্তে আধার, কাল বা বিষয় বুঝিয়ে এ বিভক্তি হয়েছে, সমাসের ফলে তা লোপ পেয়েছে। এরকম সমাসকে অধিকরণ-তৎপুরুষ সমাস বলে। যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের অধিকরতণ কারনসূচক বিভক্তি লোপ পায়, তাকে অধিকরণ-তৎপুরুষ সমাস বলে। আরও উদাহরণ : রৌদ্রপক্ক, পাকাসক্ত, অকরালপক্ক, কার্যদক্ষ, ঘরপাতা (দই), মাতাতে ভক্তি = মাতৃভক্তি, রাতকানা, তালিকাভুক্ত, বনজাত, বাটভরা, (বাটায় ভরা), থালাভর্তি, সংখ্যালঘ্য, ইংরেজিশিক্ষিত, জ্ঞানানুরাগ, জলমগ্ন, সত্যাগ্রহ, শিরোধার্য (শিরে ধার্য), মনমরা, গোলাভরা, কোলকুঁজা, গালভরা, পুঁথিগত, বাক্সবন্দী। (১) আগের পদ যদি ‘পূর্ব’ হয়, তবে অধিকরণ-তৎপুরুষ সমাসে সেটা পরে বসে। যথা- পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব; পূর্বে অভূত = অভূতপূর্ব; পূর্বে অশ্রুত = অশ্রুতপূর্ব; পূর্বে অদৃষ্ট = অদৃষ্টপূর্ব। (২) অনেকের মধ্যে নির্ধারণ বোঝালে অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা- কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ট = কবিশ্রেষ্ঠ; বাবুদের মধ্যে বড় = বড়বাবু; পুরুষদের মধ্যে উত্তম = পুরুষোত্তম; লোকের মধ্যে উত্তর = লোকোত্তর; নরের মধ্যে অধম = নরাধম। অলুক অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস : ছাঁচেঢালা; যুধিষ্ঠির (যুধি স্থির); ঘিয়েভাজা, তেলেভাজা; আলুভাতে (ভাতে আলু; ‘আলু’ শব্দের পূর্বনিপাত হয়েছে।) নঞ্ তৎপুরুষ সমাস : নয় সভ্য = অসভ্য; নয় ভদ্র = অভদ্র। এই দৃষ্টান্তগুলিতে ‘ন’ শব্দের স্থলে ‘অ’ বসে সমাস হয়েছে। এই সমাসকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। সংস্কৃতে ‘নঞ্’ একটি অব্যয়; এর অর্থ হল-‘না’। ‘না’ বুঝিয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। আরও উদাহরণ- নয় ভাব = অভাব; নয় উচিত = অনুচিত; নয় কল্যাণ = অকল্যাণ। *(১) ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে অবস্থিত ‘নয় স্থানে’ ‘অ’ হয় এবং স্বরবর্ণের পূর্বে অবস্থিত ‘ন’ –স্থানে ‘অন্’ হয়। যথা- অকথ্য (নয় কথ্য), অমানুষ, অপ্রিয়, অখাদ্য, অপয়া ইত্যাদি। কিন্তু, অনাচার (নয় আচার), অনাঘ্রাত, অনুর্ধ্ব (ন ঊর্ধ্ব), অনেকে (নয় এক), অনৈক্য, অনাদর, অনাদায়, অনিচ্ছা। *(২) ‘ন’ বা ‘নয়’ বুঝিয়ে সমাসের ক্ষেত্রে অনেক সময় া, অনা, না, নি, বি, বে, গর্, ইত্যাদি হয়। যথা- নয় কাঁড়া = আকাঁড়া (চাল), আধোয়া (নয় ধোয়া), নামঞ্জুর, অনাসৃষ্টি (নয় সৃষ্টি), নারাজ (নয় রাজি), আঘাটা (নয় ঘাট), আকাল, আলুনি (নয় লুনি অরররথাত লবণযুক্ত), আগাছা (নয় গাছ), না-বলা (না বলা), নাজানা (না জানা), আকাচা, আভাঙা, নিখরচা (খরচা নয়), গরহাজির (নয় হাজির), বেহিসাবি, বেহিসাবি (নয় হিসাবি), বিজাতীয় (নয় জাতীয়), বিজোড় (নয় জোড়), বিভুঁই (নয় ভুঁই)। উপপদ তৎপুরুষ সমাস : কোনো পদের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয়যুক্ত পদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। উদাহরণ : জলে জন্ম যা = জলজ; খে চরে যে = খেচর (খ = আকাশ); জলচর; ভূচর, উচ্চভাষী (উচ্চ ভাষে যে); প্রয় কথা বলে যে = প্রিয়ংবদ (স্ত্রীলিঙ্গে প্রিয়ংবদা); গৃহে থাকে যে = গৃহস্থ; কুম্ভ করে যে = কুম্ভকার; আগু সরে যে = আগুসার; লুচি ভাজে যাতে = লুচিভাজা (কড়াই); ঘরজ্বালানি (ঘর জালায় যে স্ত্রীলোক); ইঁদুর মারে যা = ইঁদুরমারা (কল ভা বিষ); গাছ কাটে যা (দ্বারা) = গাছকাটা (দা); অর্থ করে যা = অর্থকর (স্ত্রীলিঙ্গে অর্থকারী); লক্ষী ছাড়ে যে (বা যাকে) = লক্ষ্মীছাড়া; সব হারায় যে = সর্বহারা; কৃষি দ্বারা জীবিত থাকে যে = কৃষিজীবী; ছেলে ধরে যে = ছেলেধরা; হাড়ে ভাঙে যা = হাড়ভাঙা(খাটুনি); মনে মরেছে যে = মনমরা । প্রাদি তৎপুরুষ সমাস : ‘প্র’ ইত্যাদি উপসর্গ পূর্বে বসে পরপদপ্রধান যে সমাস হয়, তাকে প্রাদি তৎপুরুষ সমাস বলে। কিছু উদাহরণ : প্রকৃষ্টরূপে ভাত (অর্থাৎ দীপ্ত) = প্রভাত; প্রকৃষ্টরূপে দীপ্তি=প্রদীপ্ত; অভিগত মুখ=অভিমুখ; অতিক্রান্ত মানবকে=অতিমানব, বিশেষরূপে চ্যুত=বিচ্যুত; বিশেষ জ্ঞান=বিজ্ঞান; উত্তম যে ফল=সুফল, উৎক্রান্ত শৃঙ্খলাকে=উচ্ছৃঙ্খল ইন্দ্রিয়কে=অতীন্দ্রিয় ইত্যাদি। বাক্যে প্রয়োগ : অত্যন্ত বিপন্ন হয়ে আপনার শরণাপন্ন হলাম। আলসতা শেষ পর্যন্ত মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়। আকাশে গণনাতীত নক্ষত্রের ভিড়। শিক্ষকের নিন্দা করা ছাত্রদের পক্ষে অনুচিত। অখাদ্য খেলে অসুখ করবে। আমাদের মদ্যেই অনেকের বিজাতীয় ভাব আছে। আজ সাত জন ছাত্র শ্রেণিতে গরহাজির। কুম্ভকার কলশি ছাড়াও নানা রকম মাটির জিনিস বানায়। স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের দৃষ্টিতে অতিমানব।