বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়
স্ত্রীলিঙ্গ গঠনে পুংলিঙ্গ শব্দের সঙ্গে যেসব প্রত্যয় যোগ করা হয় তাদের স্ত্রী প্রত্যয় বলে। বাংলায় আ, ই, ঈ, আনি, আনী, উনি ইত্যাদি অনেক স্ত্রীপ্রত্যয় আছে। এগুলির কথা তোমরা ‘লিঙ্গ’ আলোচনায় জেনেছ। কতগুলি প্রত্যয়ের সাহায্যে বিশেষ্যকে নির্দেশ করা হয়ে থাকে। এদের বলে নির্দেশক প্রত্যয়। যেমন-টি, টা, খানা, খানি > চেয়েরখানা, কপাট, কমলটি ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় বচনের জন্য প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। এক বচনের জন্য কোনো বিশেষ প্রত্যয়ের ব্যবহার নেই। বহুবচনের জন্য শব্দের পরে কতকগুলি প্রত্যয় যুক্ত হয়- এদের বহুবচনের প্রত্যয় বলে। যেমন, রা, গুলি, গুলা, এরা, দিগ, দিগের। আ : নানা অর্থে আ প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। যেমন- ‘আছে’ অর্থে : তেল-তেলা, জল-জলা। রোগ-রোগা। নুন-নোনা। ফাঁক-ফাঁকা। উৎপন্ন বা আগত অর্থে : চীনা-চীনা। দখিন-দখিনা। পষচিম-পশ্চিমা। সদৃশ অর্থে : বাঘ-বাঘা। হাত-হাতা। চাঁদ-চাঁদা। কদম-কদমা। সম্বন্ধ অর্থে : ভাত-ভাতা। নিশান-নিশানা। হাজির-হাজিরা। মতো অর্থে : পাত-পাতা। চোর-চোরা। ফন-ফেনা। জন-জনা। বাদল-বাদলা। চরক-চরকা। অবজ্ঞার্থে : রাম-রামা। কেষ্ট-কেষ্টা। বামন-বামনা। পাগল-পাগলা। আই : ‘ভাব’ অর্থে এই প্রত্যয় হয়। যেমন- বামন + আই = বামনাই। অর্থ : বামুনের ভাব। চড়-চড়াই। বড়-বড়াই। আমি, মি : ভাব অর্থে এই প্রত্যয় দুটিও ব্যবহার করা হয়। যেমন- পাগল + আমি = পাগলামি। অর্থ : পাগলের ভাব। অনুরূপ : বোকামি। ছেলেমি। ভাঁড়ামি। পাকামি। গুন্ডামি। বাঁদরামি। আর, আরি, আলি : এই প্রত্যয়গুলি যে শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়, ওই বৃত্তি বোঝায়। যেমন-চাম + আর = চামার। অর্থ : চর্ম নিয়ে কর্ম যার। শাঁখা + আরি = শাঁখারি। কাঁসা-কাঁসারি। ভিখ-ভিখারি। জুয়া-জুয়ারি। মিতা + আলি = মিতালি। ঠাকুর-ঠাকুরালি। গৃহস্থালি। মেয়ে-মেয়েলি। আল : আছে অরথে এই প্রত্যয় হয়। যেমন-দাঁত + আল = দাঁতাল। কাঁটা + আল = কাঁটাল (পরে পীণায়নের ফলে কাঁঠাল)। আই বা ই ঈ : কিছু থেকে আগত, উৎপন্ন, নির্মিত অর্থে এই দুই প্রত্যয় হয়। যেমন- ঢাকা + আই = ঢাকাই। ই : নানা অর্থে এই প্রত্যয় হয়। যেমন- দাগ + ই = দাগি (অর্থ, দাগ আছে)। সরকার + সরকারি (অর্থ, সরকার সম্পর্কিত)। ডাক্তার + ই = ডাক্তারি (ডাক্তারের বৃত্তি)। পাঁচ + ই = পাঁচই বা পাঁচুই (পুরণার্থে)। ছোরা + ই = ছুরি (ছোট অর্থে)। আগত, উৎপন্ন, নির্মিত বা অধিবাসী অর্থেও এই প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়। যথা-কাশ্মির + ই –কাশ্মিরি। নেপাল + ই = নেপালি। ভাগলপুর + ই = ভাগলপুরি। শান্তিপুরি ইয়া : ইয়া প্রত্যয় চলিত বাংলায় অভিশ্রুতির ফলে ‘এ’ হয়ে যায়। এই প্রত্যয়ের ফলে নানা অর্থ পরিবর্তন ঘটে। যেমন- আদর + ইয়া + আদরিয়া, আদুরে (লোলুপ অর্থে)। জাল + ইয়া =জালিয়া, জেলে (ব্যাবসা অর্থে)। পাড়াগাঁ + ইয়া = পাড়াগাঁইয়া, পাড়াগেঁয়ে (আগত অর্থে)। পাহাড় + ইয়া-পাহাড়িয়া, পাহাড়ে (পাহাড়ে বাস করে অর্থে)। উয়া : (বৃত্তি অর্থে) যেমন-পট + উয়া + পটুয়া। মাছ + মাছুয়া। হাল-হালুয়া। এই প্রত্যয় অভিশ্রুতির ফলে চলিত বাংলায় এ বা ও রূপে উচ্চারণ হয়। যেমন-পটো, মেছো, হেলো জাতীয় উচ্চারণ হয়। ট : স্বার্থে ট প্রত্যয় হয়। যেমন ঝাপ + ট = ঝাপট। দাপ-দাপট। জমা-জমাট। ভরা-ভরাট। গুম-গুমাট। টিয়া (ট) : (সমান বা অল্প অর্থে) চলিত বাংলায় প্রত্যয় টে হয়ে যায়। যেমন-তামা + টিয়া = তামাটিয়া বা তামাটে। অর্থ : তামার সমান। ঘোলাটিয়া, ঘোলাটে। বোকা-বোকাটে। পনা : (কাজ অথবা অবস্থা বোঝাতে) গৃহিণী + পনা > গৃহিণীপনা। দাসী > দাসীপনা। দুরন্তপনা, ন্যাকাপনা, বেহায়াপনা, দস্যিপনা। পারা : পানা : (‘মতো’ অর্থে) যেমন- চাঁদ + পারা = চাঁদপারা (চাঁদের মতো)। কুলোপারা, পাগলপারা। লম্বা + পানা = লম্বাপানা। রোগাপানা, রাঙাপানা। খানা : (গৃহ অর্থে) যথা- পিল + খানা =পিলখানা। সরাইখানা। নির্দেশক প্রত্যয় হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। যেমন- কাপড়খানা, বইখানা। বন্ত : মন্ত : (আছে অর্থে) ভাগ্য + বন্ত = ভাগ্যবন্ত। গুণবন্ত। লক্মী + মন্ত = লক্মীমন্ত। পয়মন্ত। স্বার্থে ও সাদৃশ্যে ড়া ড় (রা, রি) আল, লা লি প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়। গাছ + ড়া = গাছড়া। টুক + রা = টুকরা। পাব + ড়ি = পাবড়ি। বাঁশ + রি = বাঁশরি। হাত + ল = হাতলি। দাঁত + আল = দাঁতাল। এক + লা = একলা। আধু + লি = আধুলি।