বর্তমান কাল
ক্রিয়ার কাজ যদি বর্তমান কালে ঘটে থাকে, তবে ক্রিয়ার সেই কালকে বর্তমান কাল (Present Tense) বলে। অতীত কালের যেমন নানা শ্রেণি আছে, বর্তমান কালেরও তেমন নানা শ্রেণি আছে নীচের আলোচনা দ্বারা তা বোঝা যাবে। (১) সাধারণ বর্তমান কাল : প্রথমে বর্তমান কালের কয়েকটি বাক্য পরীক্ষা করে দেখা যাক। ভাস্কর আসে। আমরা খাই। বাবা ভালোবাসেন। এখানে ক্রিয়াগুলি সাধারণভাবে বর্তমান কালের বলে বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু তা ছাড়া অন্য বিশেষ কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এ-রকম কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে। একে নিত্য বর্তমান বা অনির্দিষ্ট বর্তমানও বলা যায়। ক্রিয়ার যে কাল দ্বারা কোনো কাজ বর্তমান ঘটছে, শেষ হয়নি এ-রকম বোঝায়, তাকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। (২) ঘটমান বর্তমান কাল : নীচের দৃষ্টান্তগুলিতে বর্তমান কালের আর-এক ধরনের রূপ পাওয়া যাবে। অসীম হাসছে। তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুই কি পড়ছিস? উপরের দৃষ্টান্তগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে, ক্রিয়ার কাজ বর্তমান কালে চলছে, শেষ হয়নি, এ-রকম কালকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। ক্রিয়ার কাজ বর্তমান কালে ঘটছে বলেই এই রকম নাম। ক্রিয়ার যে কাল দ্বারা কোনো কাজ বর্তমান ঘটছে, শেষ হয়নি এ-রকম বোঝায়, তাকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। (৩) পুরাঘটিত বর্তমান কাল : তিনি বলেছেন। আমি দেখেছি। সে করেছে। এইসব দৃষ্টন্তে বোঝা যাচ্ছে, ক্রিয়ার কাজ হয়ে গেছে কিন্তু তার ফল বর্তমান। এ-রকম কালকে ‘পুরাঘটিত বর্তমান কাল’ বলে। ক্রিয়ার যে কাল দ্বারা বোঝা যায় যে, কাজটি হয়ে গেছে, কিন্তু তার ফল বর্তমান, তাকে পুরাঘটিত বর্তমান কাল বলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘটমান বর্তমান বোঝাবার জন্যেও পুরাঘটিত বর্তমান কালের রূপ ব্যবহৃত হয়। যথা- ওরা চলেছে গ্রামের দিকে। (অর্থাৎ চলছে) (৪) ঐতিহাসিক বর্তমান কাল মাঝে মাঝে অতীত কাল বোঝানোর জন্যেও পুরাঘটিত বর্তমানের প্রয়োগ দেখা যায়। যথা- পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে বাঙালি স্বাধীনতা হারিয়েছে। শঙ্করাচার্য বেদান্ত প্রচার করেন। ১৬০৫ সালে আকবর মারা যান। এই জাতীয় দৃষ্টান্ত ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়। দৃষ্টান্তগুলিতে যদিও অতীতের কথা বলা হয়েছে, তথাপি বর্তমান কালের ক্রিয়ার রূপ ব্যবহৃত হয়েছে। (করেন = করেছিলেন। যান = গিয়েছিলেন।) ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনায় অতীত কাল বোঝাবার জন্যে অনেক সময় ক্রিয়ার বর্তমান কালের রূপ ব্যবহৃত হয়। একে ঐতিহাসিক বর্তমান বলা কাল হয়। * (৫) বর্তমান অনুজ্ঞা : তুমি যাও। আপনি বসুন। তুই চল্। সে করুক। দৃষ্টান্তগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ক্রিয়ার দ্বারা আদেশ বা অনুরোধ বোঝাচ্ছে। আদেশ, অনুরোধ, ইত্যাদিকে অনুজ্ঞা বলে। আরও লক্ষ করা যাচ্ছে যে, ক্রিয়াগুলি বর্তমান কালের। তাই ক্রিয়ার এই ধরনের কালকে বর্তমান অনুজ্ঞা বলে। ক্রিয়ার কাজ যদি বর্তমান কালের আদেশ, অনুরোধ ইত্যদি বোঝায়, তবে ক্রিয়ার এই কালকে বর্তমান অনুজ্ঞা বলে। সুতরাং, বর্তমান কাল সম্পর্কে এতক্ষণ যে আলোচনা হল, তা থেকে আমরা বর্তমান কালের পাঁচটি রূপ পাই। সেগুলি হল- (১) সাধারণ (বা অনির্দিষ্ট) বর্তমান, (২) ঘটমান বর্তমান (৩) পুরাঘটিত বর্তমান, (৪) ঐতিহাসিক বর্তমান, (৫) বর্তমান অনুজ্ঞা।