কর্তৃ কারক
যে ব যা ক্রিয়া সম্পাদন করে, সে বা সেটি কর্তা। ক্রিয়ার সঙ্গে কর্তা-সম্বন্দযুক্ত পদকে কর্তৃ কারক বলে। যথা- সুতপা বই পড়ছে-এই বাক্যে ‘সুতপা’ কর্তৃকারক। কর্তৃ কারকে নানা বিভক্তি বা অনুসর্গ যোগ হয়। নীচে বিভিন্ন প্রকার কর্তা ও সেই অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তির প্রয়োগ দেখান হল। (১) কর্তৃবাচ্যের কর্তা : এই ধরনের কর্তা প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়া সম্পাদন করে। যেমন-তপন আমাকে বইটি দিয়েছে। এখানে ‘তপন’ পদটির সঙ্গে কোনো বভক্তি যুক্ত হয়নি। সুতরাং, তপন পদটির ‘শূন্য’ বিভক্তি। (২) অনুক্তা কর্তা : করমবাচ্যে কর্ম প্রধান হয় এবং কর্তার পরে করণ কারকের অনুসর্গ বসে। এই কর্তাকে অনুক্ত কর্তা বলে। যেমন-আমি বইটি পড়েছি (কর্তৃবাচ্য)। বইটি আমার দ্বারা পঠিত হয়েছে(কর্মবাচ্য)। এই রকম আরও দৃষ্টান্ত-রাম কর্তৃক রাবণ নিহত হলেন। (‘রাবণ’ কর্তা, ‘রাম’ অনুক্ত কর্তা।) ‘দ্বারা’, ‘কর্তৃক’-এদুটি শব্দ অনুসর্গ। (৩) প্রযোজক কর্তা : শিক্ষক ছাত্রকে পড়াচ্ছেন।–এই বাক্যে শিক্ষক ছাত্রকে পড়ার কাজে প্রযোজিত করেছেন অর্থাৎ লাগাচ্ছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষক প্রযোজক কর্তা বলে। শিক্ষক পদের সঙ্গে কোনো বিভক্তি যুক্ত হয়নি। অর্থাৎ শূন্যে বভক্তি। (৪) প্রযোজ্য কর্তা : শিক্ষক ছাত্রকে পড়াচ্ছেন। এই বাক্যে প্রকৃত পড়ার কাজ করছে চাত্র। ছাত্র হল প্রযোজ্য কর্তা। যাকে দিয়ে কাজ করানো হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। ছারত্র শব্দের সঙ্গে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। (৫) সমধাতুজ কর্তা : একই ধাতু থেকে যদি কর্তা এবং ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাহলে কর্তাটিকে সমধাতুজ কর্তা বলা হয়। যেমন- বাজনা বেজে উঠল। এক্ষেত্রে ‘বাজনা’ পদে শূন্য বিভক্তি হয়েছে। (৬) ব্যতিহার কর্তা : একাধিক কর্তা যদি পরস্পর প্রবৃত্ত থেকে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাহলে ওই কর্তাকে বলা হবে ব্যতিহার কর্তা। যথা- মায়ে-ঝিয়ে ঝগড়া করছে। এক্ষেত্রে মা ও ঝি দুটিই ব্যতিহার কর্তা। দুটি পদেই ‘য়ে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। (৭) কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা : ঘন্টা বাজল। -এই বাক্যে ঘন্টা নিশ্চয়ই কর্ম, কেন-না-কেউ না কেউ ঘন্টা বাজিয়েছে। কিন্তু বাক্যের বিন্যাস দেখে মনে হচ্ছে যে, ঘন্টা যেন নিজেই বেজেছে। কোনো বাক্যে কর্মই যখন ক্রিয়া সম্পাদন করছে মনে হয়, তখন বাক্যের বিন্যসকে কর্মকর্তিবাচ্য বলে, এবং এই বাক্যের কর্তাকে কর্মকতৃবাচ্যের কর্তা বলে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঘন্টা শব্দে ‘শূন্য’ বিভক্তি হয়েছে। (৮) বাক্যাংশ কর্তা : কোনো কোনো সময় বাক্যাংশ অর্থাৎ বাক্যের অন্তর্ভুক্ত একগুচ্ছ শব্দ ক্রিয়া সম্পাদন করে। এই ধরনের কর্তাকে বলা হয় বাক্যাংশ কর্তা। যথা- তার এইভাবে চিঠি লেখা আমাকে উৎসাহিত করেছে। এখানে ‘তার এইভাবে চিঠি লেখা’ এই বাক্যাংশই কর্তা। ‘শূন্য’ বিভক্তি হয়েছে। (৯) নিরপেক্ষ কর্তা : অসমাপিকা ক্রিয়ার উপর যদি সমাপিকা ক্রিয়া নির্ভর করে তবে অসমাপিকা ক্রয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে। যথা- সূর্য অস্ত গেলে আমরা মন্দিরের দিকে পা বাড়াল্ম। এক্ষেত্রে সূর্য নিরপেক্ষ কর্তা। এই পদের ‘শূন্য’ বিভক্তি হয়েছে। (১০) বহু ক্রয়ার এক কর্তা : ছেলেরা খেলছে, হাসছে, নাচছে, গাইছে। -এই বাক্যটিতে ক্রিয়া অনেকগুলি, কিন্তু সব ক-টি সম্পাদন করছে এক কর্তা ‘ছেলেরা’। এই পদটির ‘শূন্য’ বিভক্তি। (১১) এক ক্রিয়ার বহু কর্তা : অনিল, সীমা, প্রকাশ আর আমিনুর ওই কাজটা করছে। -দেখা যাচ্ছে, কোনো কর্তার সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়নি। কর্তৃ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ : ১. শুন্য বিভক্তি : রিমা আসবে। সাধন যাবে ২. এ : পাগলে কী না বলে। চোরে নিয়ে গিয়েছে। এসব দৃষ্টান্তে পাগলে, চোর-এগুলি হল কর্তা। সবগুলির সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত তয়েছে। ৩. য় : ঘোড়ায় গাড়ি টানে। বইটি পোকায় কেটেছে। ৪. তে : গোরুতে দুধ দেয়। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে। ৫. য়ে : মায়ে ঝিয়ে চলেছ কোথায়? ভাইয়ে ভাইয়ে কথা বলেছে। ৬. এতে : লোকেতে অনেক কথা বলে। ভাইয়েতে ভাইয়েতে পরামর্শ হচ্ছে। ৭. কে : আমাকে যেতেই হবে। তাকে রোজ খেতে হয়। ৮. র, এর : তোমার থাকা হয় কোথায়? শ্যামলের গাওয়া হয়ে গিয়েছে।