জটিল বাক্য
১। যাদের জন্য আমি করেছি তারাও আমায় দেখে না।
২। যাঁরা বড়ো পন্ডিত হতেন তাঁরা গীতা পড়তেন।
৩। যদি ক্ষন্ত না হন তবে এই বর্শায় বিদ্ধ করব।
৫। যদিও এত টাকা পেলাম তবু অভাব মিটল না।
৬। অপরাধ যখন করেছ তখন শান্তি পাবেই।
৭। যেহেতু কোথাও পথ পেলাম না সেহেতু আপনার কাছে এসেছি।
৮। ছাত্রদের আপত্তি যে সংগত তা শিক্ষককে মানতে হয়েছিল।
ওপরের উদাহরণগুলো লক্ষ করলে বুঝবে, বাক্যগুলিতে দুটো খন্ড আছে এবং ‘যাদের-তারাও’, ‘যাঁরা-তাঁরা’, ‘যদি-তবে’, ‘যদিও’-‘তবু’, ‘যখন-তখন’, ‘যেহেতু-সেহেতু’, ‘যে-তা’ ইত্যাদির সাপেক্ষতা রয়েছে। ‘যাঁরা বড়ো পন্ডিত হতেন’ এবং ‘তাঁরা গীতা পড়তেন।’ প্রথমটি অধীন খন্ডবাক্য আর দ্বিতীয়টি প্রধান খন্ডবাক্য। তাহলে জটিল বাক্য কাকে বলব? একটি প্রধান উপাদনবিশিষ্ট বাক্যের সঙ্গে এক বা একাধিক গৌণ উপাদানবিশিষ্ট বাক্য নিয়ে গঠিত বাক্যকে জটিল বাক্য বলে।
জটিল বাক্য গঠনের শর্ত :
আশ্রয়-আশ্রিত শ্রেণির জটিল বাক্য :
১। ‘লেখাপড়া বিষয়ে তার যে গভীর অনুরাগ ছিল, একথা বলা যায় না।’
২। ‘রাজা শুনিয়া মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিলেন, ইহার পরিবার এত অল্প, তবুও কী নিমিত্ত অধিক প্রার্থনা।’
২নং বাক্যটিতে খন্ডবাক্য তিনটি। এর মধ্যে ‘রাজা শুনিয়া মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিলেন’-এই বাক্যটি প্রধান খন্ডবাক্য। ‘ইহার পরিবার এত অল্প’ এবং কী নিমিত্ত অধিক প্রার্থনা’-এ দুটি প্রধান খন্ডবাক্যের মধ্যে আশ্রিত অর্থাৎ খন্ডবাক্যের ক্রিয়ার কর্মস্থানীয় বা বিশেষ স্থানীয় খন্ডবাক্য।
সাপেক্ষ পদযুক্ত :
১। ‘যদি তারে নাই চিনি গো, সে কি আমার নেবে চিনে।’ ২। ‘তাঁহারা যখন এদেশে পদার্পণ করিতেন তখন সম্পূর্ণরূপে এ দেশীয় ভাষা বিষয়ে অনভিজ্ঞ থাকিতেন।’
২নং উদাহরণে প্রধান খন্ডবাক্য ‘তখন সম্পূর্ণরূপে এদেশীয় ভাষা বিষয়ে অনভিজ্ঞ থাকিতেন।’ অধীক খন্ডবাক্য ‘তাহারা যখন এদেশে পদার্পণ করিতেন’। এখানে প্রধান খন্ডবাক্যে ‘তখন’ এবং অধীন খন্ডবাক্যে ‘যখন’-এ দুটো পদ খন্ডবাক্য দুটোকে সাপেক্ষতার সূত্রে যুক্ত করেছে। তাই এ দুটি সাপেক্ষ পদ যুক্ত জটিল বাক্য।
প্রতি নির্দেশক সর্বনামযুক্ত :
১। ‘আমি তখন ছিলেন মগন গহন ঘুমের ঘোরে, যখন বৃষ্টি নামল।’
২। ‘যে জাতির মনের মধ্যে চলনধর্ম প্রবল সেই জাতিই পরের সম্পাদকে নিজের সম্পদ করে নিতে পারে।’
২নং উদাহরণে প্রধান খন্ডবাক্য-‘সেই জাতিই পরের সম্পদকে নিজের সম্পদ করে নিতে পারে’ এবং অধীন ‘খন্ডবাক্য’ যে জাতির মনের মধ্যে চলনধর্ম প্রবল। এই জটিল বাক্যটিতে প্রতি-নির্দেশক সর্বনাম পদ (যে/সেই) অধীন খন্ডবাক্য এবং প্রধান খন্ডবাক্যকে অর্থের দিক দিয়ে যুক্ত করেছে। মনে রাখতে হবে, জটিল বাক্যগুলো যদি সংযোজক বা বিয়োজক অব্যয় দ্বারা সংযুক্ত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে জটিল বাক্যগুলো জটিল বাক্যগঠনের নিয়ম অনুসারে গঠিত হবে। বাক্যটিতে অধীন খন্ডবাক্য থাকবে এবং স্বাধীন প্রধান খন্ডবাক্য থাকবে। খন্ডবাক্যগুলো পরস্পর নির্ভরশীল হবে। অপ্রধান খন্ডবাক্য যদি, তাই, যখন, তখন, যেমন, তেমন, যে, সে, যিনি, তিনি, ইত্যাদি সংযোগমূলক সর্বনাম দ্বারা অন্বিত হবে।