যোগ্যতা
(১) পথিক অগ্নিপান করে তৃষ্ণা নিবারণ করল।
(২) জলে কাপড় শুকিয়ে গেল।
(৩) সে পেনসিল-কাটা ছুরি দিয়ে বাঘ মেরেছে।
(৪) বাতাসে মাছ বাঁচে।
(৫) মাছ বাঙালি খায়।
(৬) মানুষ চতুষ্পদ প্রাণী।
(৭) বই মানুষের এক বড়ো শত্রু।
ওপরের বাক্যগুলো একটু মন দিয়ে পড়লে দেখতে পাবে ব্যাকরণের দিক থেকে সব কটাই বাক্য- কিন্তু অভিজ্ঞতা বা সুযুক্তির দিক থেকে এগুলো মোটেই বাক্য নয়। কারণ ব্যবহৃত পদসমূহের মধ্যে অর্থগত ও ভাবগত সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা বা সামর্থ্যের অভাব। ওপরের বাক্যগুলো থেকে একটা বাক্য বিশ্লেষণ করলেই ব্যাপারটা সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
যেমন- ‘বাঙালি মাছ খায়।’ এই বাক্যে অর্থগত যোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু পদের ক্রম উলটে দিয়ে যদি লেখা যায়-‘মাছ বাঙালি খায়’ তবে যোগ্যতার অভাবে তা বাক্য বলে স্বীকৃত হবে না। তাহলে যোগ্যতা কাকে বলে ? ব্যাকরণের যোগ্যতা বলতে বাক্য গঠনের যোগ্যতা বোঝায়। যে পদসমষ্টি সংযত ও অর্থবহ বাক্য গঠনের উপযোগী, তাদের যোগ্যতা বলে।
যেমন-‘বই মানুষের বড়ো শত্রু’-এটা কি ঠিক? তোমরা বলবে- ‘না’। তাহলে হওয়া উচিত ‘বই মানুষের বড় বন্ধু’। এটি সঠিকযোগ্যতা সম্পন্ন বাক্য হচ্ছে। বিশেষ করে বাক্য নির্মাণের যে শর্ত তা কিন্তু ‘শত্রু’ না হয়ে ‘বন্ধু’ই’ পূরণ করেছে। ব্যতিক্রম : মনে রাখতে হবে অনেক সময় গভীর অর্থ বা ভাব-ব্যঞ্জনা থাকলে কিংবা অর্থালংকারে অসংগত বাক্য ব্যবহৃত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আভধানিক অর্থ না ধরে গূঢ়ার্থ গ্রহণ করা হয়।
যেমন- (১) ‘অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে সকল অঙ্গ ভরে।’ (২) ‘লালিমা আরও একবার বাজিবার উপক্রম করিল।’ পরিহার করে কিছু বলার মধ্যে যোগ্যতার অভাবেও বাক্য হতে পারে।
যেমন- (১) ‘দ্রৌপদী কাঁদিয়া কহে বাছা হনুমান, কহ কহ কৃষ্ণকথা অমৃত সমান ।’ (২) ‘তার চলন বলন ধরন ধারণ বুঝে নেবে আঁচে আঁচে। (যদি) চোখ দিয়ে শোনা কান দিয়ে দেখো তবু যেয়ো নাকো কাছে।’ এই ধরণের বাক্য যথেষ্টই গ্রাহ্য ও রসসৃষ্টির সহায়ক।