বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার তারতম্য
বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমভাবে জনসংখ্যার বন্টন হয় না। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পৃথিবীকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়—
- (a) অতি নিবিড় বসতিযুক্ত অঞ্চল :
- প্রতি বর্গকিমিতে 100 জনের বেশি জনসংখ্যাযুক্ত অঞ্চল। পূর্ব এশিয়ার চিন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনস। দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশরের নীলনদ অঞ্চলগুলি কৃষিকাজের সুবিধার জন্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউক্রেন প্রভৃতি ইউরোপের দেশগুলি শিল্প ও কৃষির কারণে; উত্তর আমেরিকার পূর্বভাগ শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যের কারণে অতিনিবিড় বসতিযুক্ত অঞ্চল।
- (b) নিবিড় বসতিযুক্ত অঞ্চল :
- প্রতি বর্গকিমিতে 40-100 জন। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইটালি, স্পেন, রাশিয়া ইত্যাদি দেশগুলিতে কৃষি, খনি ও শিল্পের কারণে এইরূপ নিবিড় বসতিযুক্ত অঞ্চল হয়েছে।
- (c) মাঝারি বসতিযুক্ত অঞ্চল :
- প্রতি বর্গকিমিতে 10-40 জন। ভারতের মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চলের স্থানবিশেষ, আফ্রিকার উপকূলবর্তী দেশসমূহে, দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি, অস্ট্রেলিয়াতে এইরূপ বসতি দেখা যায়। কৃষিকাজ ও খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভর করে অধিবাসীরা।
- (d) স্বল্প বসতিযুক্ত অঞ্চল :
- প্রতি বর্গকিমিতে 1-10 জন। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ তৃণভূমি অঞ্চলে, স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে। পশুপালন ও সামান্য কৃষিকার্যের ওপর ভিত্তি করে প্রেইরি (উঃ আমেরিকা), পম্পাস (দঃ আমেরিকা), ভেল্ড (দঃ আফ্রিকা), ইউরেশিয়ার স্টেপস, অস্ট্রেলিয়ার ডাউন্স প্রভৃতি অঞ্চলে এইরূপ বসতি গড়ে উঠেছে।
- (e) জনবিরল অঞ্চল :
- উয় মরু অঞ্চল, বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চল, তৈগা ও সেলভা অঞ্চলে বসবাসের ও খাদ্যের সুব্যবস্থা না থাকায় অঞ্চলগুলিতে প্রতিবর্গকিমিতে 1 জনেরও কম লোক বাস করে। সাইবেরিয়া, সাহারা, গোবি, থর, উঁচু পার্বত্য অঞ্চল রকি, আন্দিজ ইত্যাদি এইরূপ অঞ্চল।
যে কোনো স্থান তার প্রাকৃতিক সম্পদ অনুযায়ী সর্বাধিক একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যা প্রতিপালন করতে পারে। কাম্য জনসংখ্যার তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যকে জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলা যায়।
জনবিরল অবস্থা যেমন দেশের সম্পদের সঠিক ও পরিপূর্ণ ব্যবহারের প্রতিকুল তেমনি জনাধিক্য অবস্থায় দেশের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যজনিত অবস্থার অবনতি ঘটে।
জমির বহন ক্ষমতা (Carrying capacity) ও কাম্য জনসংখ্যার তত্ত্ব থেকে যে-কোনো দেশে একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যা সেই দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের উন্নতির সহায়ক হতে পারে আবার ঐ একই জনসংখ্যা অন্য দেশের পক্ষে উন্নতির প্রতিবন্ধক হতে পারে। সুতরাং পরিবেশ ও উন্নয়নের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল ও প্রতিকূল প্রভাব দেখা যেতে পারে।
পরিবেশ ও উন্নয়নের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল প্রভাব :
- (1) জনসংখ্যা বৃদ্ধি শ্রমিক ও শ্রমের জোগান দিয়ে সম্পদ আহরণে ও উৎপাদনে সাহায্য করে।
- (2) জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে বাজারের আয়তন বৃদ্ধি পায়।
- (3) দেশের মূলধনের ভাণ্ডার বাড়ে।
- (4) দেশে অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশ ও উন্নয়নের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিকূল প্রভাব :
- (1) খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি গাণিতিক হারে হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় গুণোত্তর হারে। এর ফলে সমাজে খাদ্যের অভাব, অপুষ্টি, অনাহার দেখা দেয়। এগুলি দেশের উন্নয়নের প্রতিবন্ধক।
- (2) মোট উৎপাদনের হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে কম হলে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ক্রমে ক্রমে হ্রাস পায়। এর ফলে গণ-দারিদ্র্য (mass poverty) দেখা দেয়।
- (3) দারিদ্র্য ও অপুষ্টি, অকাল বার্ধক্য ও অকাল মৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বাস্থ্যহীন জনগণ দশের সমাজ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক।
- (4) অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশে প্রভাব ফেলে, সেইসঙ্গে দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটায়। অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনে রাসায়নিক সার ও ঔষধ ব্যবহৃত হয় ফলে জল, মাটি, বায়ুদূষণ ঘটে। কলকারখানা, শিল্পের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদিত হয়, ওজোনস্তরের ক্ষতি হয়, বায়ুদূষণ ঘটে।
- (5) দেশের জনসাধারণের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষাখাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগ ও মূলধন ঠনের হার হ্রাস পায় ।
- (6) মানুষ ও জমির আনুপাতিক হার প্রতিকূল হওয়ায় ক্রমহ্রাসমান উৎপাদনবিধি কাজ করে।
- (7) জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশে বেকারত্ব এবং কৃষিক্ষেত্রে ছদ্মবেকারত্ব (disguised unemployment) দেখা দেয়।
- (8) জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশের মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্যকে নষ্ট করে। জমির অবক্ষয়, অরণ্যের ধ্বংস হয়। নানা প্রকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়। বাসস্থানের সমস্যা, জলের সমস্যা, পুনর্বাসনের সমস্যা, বর্জ্য অপসারণ সমস্যা, আইন শৃঙ্খলার সমস্যা ও বন্যার সমস্যা দেখা দেয়।
- (9) বৈদেশিক ঋণের বোঝা জনগণের ওপর কুপ্রভাব ফেলে। জনগণ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে।
- (10) জনসংখ্যার বৃদ্ধি পরিবেশের অবনমন ঘটায়। নানাপ্রকার রোগজীবাণু দেখা দেয়। চিকিৎসাক্ষেত্রে পরিষেবার ঘাটতি দেখা দেয়।
কয়েকটি দেশের জনসংখ্যা
মহাদেশ/দেশ | জনসংখ্যা (10 লক্ষ) | জনঘনত্ব সংখ্যা |
---|---|---|
1. এশিয়া মহাদেশ | 3720.73 | 119 |
(i) চীন (ii) ভারত (iii) মালয়েশিয়া (iv) বাংলাদেশ |
1275.11 1027.01 23.27 137.44 |
143 324 70 850 |
2. আফ্রিকা মহাদেশ | 812.60 | 28 |
(i) মিশর (ii) সুদান (iii) ইথিওপিয়া |
67.88 29.90 62.91 |
71 12 51 |
3. ইউরোপ মহাদেশ | 726.32 | 31 |
(i) যুক্তরাজ্য (ii) ফ্রান্স (iii) জার্মানি |
58.79 58.74 82.02 |
243 109 230 |
4. উত্তর আমেরিকা | 526.52 | 26 |
(i) ব্রাজিল (ii) আর্জেন্টিনা |
166.80 37.03 |
20 13 |
5. দক্ষিণ আমেরিকা | 347.11 | 19 |
(i) আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্র (ii) কানাডা |
281.42 30.76 |
31 3 |
6. ওশিয়ানিয়া | 30.9 | 4 |
Source: U.N. Demographic Year Book 2005.