পরিবেশের উপাদান
পরিবেশের উপাদান
পরিবেশের সংজ্ঞা অনুযায়ী পরিবেশ বিষয়ক দুটি অংশ চিহ্নিত হয়েছে ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ : প্রকৃতির যাবতীয় জড় ও জৈব নিয়ে তৈরি হয়েছে এই পরিবেশ ।
সামাজিক পরিবেশ : মানুষের আচার-আচরণ, সংকৃতি ঐতিহ্য, সমাজব্যবস্থা, ধর্ম , শিক্ষা , আয় , ইত্যাদি নিয়ে গঠিত হয়েছে সামাজিক পরিবেশ ।
পরিবেশের উপাদানকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়- অজৈব বা জড় উপাদান (Abiotic Component) এবং জৈব বা সজীব উপাদান (Biotic Component)।
পরিবেশের উপাদান জৈব বা সজীব উপাদান অজৈব বা জড় উপাদান আবহাওয়া জনিত উপাদান ভূপৃষ্ঠের শর্তাবলী মৃত্তিকার উপাদান (আলোক, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত (পাহাড় ও পর্বতের (ভৌত, রাসায়নিক বায়ু, জলীয় বাষ্প) অবস্থিত, উচ্চতা) জৈব)অজৈব বা জড় উপাদান
(A) আবহাওয়া জনিত উপাদান
আলোক (Light) :
পৃথিবীতে শক্তির একমাত্র উৎস সূর্য । সূর্য থেকে আলোকরশ্মি থেকে জীবজগতের খাদ্য তৈরি হয় । সমস্ত জীবজগতের জিবনের শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস হল সৌরশক্তি । উদ্ভিদের দেহে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে খাদ্য তৈরি, বীজের অঙ্কুরোদ্গম, ফুলের পরিস্ফুটন, ক্লোরোফিল উৎপাদন ও চলন প্রভৃতি জৈবনিক কার্যগুলি আলোক নির্ভর । প্রানীদেহের বিপাকে অংশগ্রহণকারী উৎসেচকগুলি নির্দিষ্ট তাপমাথা কর্ম্মক্ষম । তাছাড়া জনন পরিস্ফুটন, ক্লোরোফিল উৎপাদন ও চলন প্রভৃতি জৈবনিক কার্যগুলি আলক নির্ভর । প্রাণীদেহের বিপাকে অংশগ্রহণকারী উৎসেচকগুলি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কর্মক্ষম । তাছাড়া জনন অঙ্গের পরিষ্ফুটনে ও বৃদ্ধিতে আলো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ।
তাপমাত্রা (Temparature) :
উদ্ভিদে অঙ্কুরোদ্গম ও বৃদ্ধির জন্য 25°-35° সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রা প্রয়োজন । উদ্ভিদের চলন তাপমাত্রা উপর নির্ভর করে । জীবদেহের বিপাক ও জনন তাপমাত্রা নির্ভর । উষ্ণশোনিত প্রাণিদের দেহের রক্ত সর্বদা উষ্ণ কিন্তু শীতল রক্তযুক্ত প্রানীদের (মাছ, ব্যাঙ, সাপ) রক্তের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল ।
বায়ু (Air) :
বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড সালোক সংশ্লেষে প্রয়োজন । অক্সিজেন না হলে জীবের শ্বাসকার্য সম্ভব নয় । বাতাসের নাইট্রোজেন জীবদেহের প্রোটোপ্লাজম তৈরির অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান ।
জল (Water) :
জল ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না । মানবদেহের ওজনের 60-70 ভাগ জল । রক্তের 90-92 ভাগ জল । পরিপাক, রেচনের প্রয়োজনীয় উপাদান হল জল । বাষ্পমোচন (উদ্ভিদ দেহে) এবং বীজের অংকুরোদ্গমে জল অপরিহার্য ।
(B) ভূপৃষ্ঠীয় শর্তাবলী (Topographic Factors) :
1)পর্বতমালার উচ্চতা উপর নির্ভর করে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও সূর্যালোকের তীব্রতার পরিবর্তন ঘটে । এর ওপর নির্ভর করে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী জীবসম্প্রদায়ের আচার আচরণ পরিবর্ত্তন হয় ।
2)পর্বত ও উপত্যকার দিক : পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু অনুবাত ঢালে বৃষ্টি প্রায় হয় না । সুতরাং পর্বতের একদিকে অরণ্য সৃষ্টি হলে অন্যদিকে বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে শুষ্কতা লক্ষ্য করা যায় ।
(C) মৃত্তিকার উপাদান (Edaphic Factors) :
মৃত্তিকার মধ্যে নানাপ্রকার খনিজ উপাদন, জৈব উপাদান বা হিউমাস, জল, বায়বীয় পদার্থ ও কিছু জৈব উপাদান থাকে । এই সমস্ত উপাদানের উপর নির্ভর করে মৃত্তিকার প্রকৃত পরিবর্তিত হয় । কোনো কোনো মৃত্তিকা উর্বর আবার কোনটি অনুর্বর হয় । খনিজ পদার্থের উপস্থিতি মৃত্তিকার রঙ্গের পরিবর্তন ঘটায় ।
সজীব উপাদান বা জৈব উপাদান
পরিবেশের যে সমস্ত উপাদানে প্রাণ রয়েছে সেগুলিকে সজীব উপাদান বলা হয় ।
এই গোষ্ঠীর মধ্যে সমস্তরকম উদ্ভিদ, জীবাণু, প্রানীকে ধরা হয় । এদেরকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
(1) স্বভোজী (autotroph) এবং (2) পরভোজী (Heterotroph) ।
স্বভোজীরা নিজেদের দেহে সৌরশক্তির সাহায্যে সালসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে । এজন্য এদেরকে বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক (Producer) বলা হয় ।
উদাহরণঃ সকলপ্রকার সবুজ উদ্ভিদ (ঘাস, গুল্ম, লতা, ফাইটোপ্লাংটন, শৈবাল, বৃক্ষ) ।
স্বভোজীদের দুভাগে ভাগ করা হয়- (a) আলোকজীবী (phototrophs) এবং (b) রাসায়নিক সংশ্লেষ্কারী (Chemoautotroph)
পরভোজীরা খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎপাদক শ্রেণির ওপর নির্ভর্শীল । এদের পরজীবী (কৃমি, মনোসিস্টিস ইত্যাদি), মৃতজীবী (ছত্রাক), পতঙ্গভুক (সূর্যশিশির, কলসপত্রী), জৈব-যৌগজীবী (Holozoic) ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায় ।