চের্নোবিল দুর্ঘটনা
চের্নোবিল দুর্ঘটনা :
১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল ইউক্রেনের চের্নোবিল শহরে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটি ও মানুষের অসাবধানতার ফলে যে বিস্ফোরণ হয় তাতে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়াম প্রায় ৩০০০ বর্গ কিমি. এলাকাকে দূষিত করে। যার প্রভাব ছিল তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী। পরিবেশ অবক্ষয়ের এটি একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এখানকার দুর্ঘটনায় যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে তার মাত্রা 350-450 msv। এখানকার প্রায় 1.35 লক্ষ মানুষকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সরকারীভাবে মৃতের সংখ্যা 31 হলেও বেসরকারি মতে সংখ্যা অনেক অনেক বেশি জানা যায়। 209 জন কর্মী অসুস্থ হয়। এখান নূতন তৈরী 4নং চুল্লীতে যথেষ্ট তাপ উৎপন্ন না হওয়ায় সমস্ত শীতলীকরণ যন্ত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ফিউলরডগুলি উত্তপ্ত হয় এবং কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় বিস্ফোরণ হয়।
ওইদিন গভীররাত্রে বিদ্যুৎ না থাকায় সতর্কতা ও প্রতিরোধব্যবস্থা ইচ্ছে করে বন্ধ রাখা হয়েছিল। নিউক্লিয়ার রিয়েকটরের (Nuclear Reactor) অপারেটরের ইন চার্জের (operator incharge) মধ্যে যথেষ্ট সংযোগ না থাকার কারণে 4নং নিউক্লিয়ার Reactor নষ্ট হয়। এর ফলে উত্তপ্ত জল ও স্টীমের সঙ্গে তেজস্ক্রিয় পদার্থ (137CS) বেরিয়ে আসে। হিরোসিমাতে যে বোমা ফেলা হয়েছিল তার তেজস্ক্রিয়তার 400 গুণ বেশি তেজস্ক্রিয় পদার্থ মুক্ত হয়। বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রায় এক লক্ষ বর্গ কিমি. এলাকা উপদ্রুত হয়। পার্শ্ববর্তী শহর Pripyat এর মানুষ কিছুই বুঝতে না পেরে স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে বমি করেন ও মাথার যন্ত্রণায় আক্রান্ত হন। 27 এপ্রিল শহর থেকে সবাইকে তিনদিনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তাদের পার্শ্ববর্তী কিয়েভ শহরে রাখার ব্যবস্থা হয়। প্রথমে 10 কিমি., পরে 30 কিমি. পরিধির স্থানকে মুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই শহর পরিত্যক্ত। ফেলে আসা জিনিস কেউই নিয়ে আসতে পারেননি। এই দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে 2 জন মারা যান এবং প্রায় 50 জন একমাসের মধ্যে নানাভাবে রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন। তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ ছিল 0.001 R/S (3.6 R / n ) । UNSCEAR-এর তথ্য অনুযায়ী সরাসরি মৃত্যুর সংখ্যা 64 এবং Radiation Syndrome এবং Thyroid Cancer-এ মোট মৃত্যুর সংখ্যা 3940। লিউকোমিয়া এবং অন্যান্য বিষয়ে আক্রান্তের সংখ্যা 2 লক্ষ। বিপর্যয় মোকাবিলার কর্মী, 1,16,000 জন শহর খালি করার কাজে যুক্ত কর্মী এবং শহরের 2,70,000 বাসিন্দা। অদূর ভবিষ্যতে এদের মৃত্যু অবধারিত। এই দুর্ঘটনার খবর প্রথমে প্রকাশিত না হলে সুইডেনের নিউক্লিয়ার সেন্টারে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার অ্যালার্ম বাজতে শুরু করলে 28 এপ্রিল দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করা হয়।
এই বিপর্যয়ের ফলে পার্শ্ববর্তী Pripyat নদী যা Dnieper জলাধারের সঙ্গে যুক্ত এবং যেটি থেকে কিয়েভে 2.4 মিলিয়ন মানুষ জলপান করে তা 131I, 137Cs এবং 90Sr তেজস্ক্রিয় পদার্থ দ্বারা দূষিত হয়। যদি আধিকারিকরা বলেন যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ তলদেশে থেকে গেছে যা 800-1000 বছরেও দ্রবীভূত হবে না, তবু কিয়েভ শহরের জল শেষ • পর্যন্ত Desna নদী থেকে নেওয়া হয়।
4 কিমির মধ্যে থাকা পাইন অরণ্য দ্রুত লাল বাদামী রঙে রূপান্তরিত হয় যা এখন 'Red Forest' নামে পরিচিত। চেনোবিল দুর্ঘটনার বিষয়ে অবক্ষয় রোধের জন্য পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র স্থাপনের সময় পরিবেশ আইন ও নিয়ন্ত্রণবিধি মেনে চলা এবং ঘনবসতি এলাকা থেকে বহু দূরে কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত। পারমাণবিক শক্তি বিপজ্জনক হওয়ায় অপ্রচলিত, দূষণ মুক্ত, নবীভবনযোগ্য শক্তি উৎসগুলিকে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।