ভূমিসম্পদ
ভুমিসম্পদ (Land Resource) ঃ
সোলাম (Solum) নামক ল্যাটিন শব্দ থেকে Soil কথাটি এসেছে । মৃত্তিকা বিজ্ঞানকে বলা হয় পেডোলজি (Pedology) । ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের নরম আন্তরণকে মাটি বলা হয় । মাটি একটি পদার্থ । মাটির উপাদানগুলি হল মাটির কণা, খনিজ পদার্থ, জল, বায়ু, জৈব পদার্থ এবং বিভিন্ন প্রকার জীব । কোনো অঞ্চলের মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে 2-5 হাজার বছর সময় লাগতে পারে ।
সংজ্ঞা : ভূ-ত্বকের উপরিভাগের ক্ষয়িত পরিবর্তিত শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব বস্তুর সংমিশ্রণে গঠিত নরম আন্তরণকে মৃত্তিকা বলে ।
বিভিন্ন ভৌত প্রক্রিয়ার ফলে [বিচূর্ণভবন (Weathering), নগ্নীভবন (Denudation), ভূক্ষয় (Erosion), অপসারণ (Transporation), অবক্ষেপণ (Deposition)] মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় ।
শিলাচূর্ণের ব্যাসের উপর নির্ভর করে মাটির কণাকে নানাভাবে ভাগ করা যায় ।
- (1) মোটা কাঁকর-ব্যাস 5 mm. –এর বেশি
- (2) মিহি কাঁকর-ব্যাস 5-2 mm. –এর বেশি
- (3) মোটা বালি-ব্যাস 2-0.2 mm. –এর বেশি
- (4) মিহি বালি-ব্যাস 0.2-0.02 mm. –এর বেশি
- (5) পলি-ব্যাস 0.02-0.002mm. –এর বেশি
- (6) কাদা-ব্যাস 0.002 mm. –এর কম ।
উপাদানের উপস্থিতির পার্থক্য ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে মাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-
(ক) এঁটেল মাটি : এই ধরনের মাটিতে কাদা ও অজৈব পদার্থ থাকে শতকরা 75 থেকে 90 ভাগ এবং বালি থাকে 10 থেকে 25 ভাগ । এঁটেল মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি কিন্তু বালির ভাগ কম থাকায় বায়ু চলাচল খুবই কম হয় । এই ধরনের মাটিতে আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি বৃক্ষ এবং ধান, গম, যব প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হয় ।
(খ) বেলে মাটি : এই মাটিতে বালি থাকে 80ভাগ, 10ভাগ কাদা এবং 10ভাগ পলি থাকে । এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম, কিন্তু বায়ু চলাচল করে বেশি । এই মাটিতে জলসেচের মাধ্যমে তরমুজ, ফুটি, শশা, পটল, কুমড়ো প্রভৃতি উদ্ভিদ ভালো হয় ।
(গ) দোঁয়াশ মাটি : এই মাটিতে বালি, কাদা ও পলি শতকরা 30 ভাগ করে মোট 90 ভাগ থাকে এবং খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ থাকে 10 ভাগ । এই মাটির জল-ধারণ ক্ষমতা এবং বায়ু-চলাচল স্বাভাবিক । তাই ফসল চাষের পক্ষে এই মাটি সবচেয়ে উপযোগী । এই মাটিতে সবরকম রবি ও খরিফ শস্য জন্মায় ।
(ঘ) পলিমাটি : নদী তীরবর্তী অঞ্চলে এবং নদী মোহনা সংলগ্ন অঞ্চলে এই ধরনের মাটি থাকে । এতে পলির ভাগ শতকরা 50 থেকে 80 ভাগ থাকে । এতে ধান, গম, পাট ও রবিশস্য ভালো উৎপন্ন হয় ।
(ঙ) নোনা মাটি বা লবণাক্ত মাটি : সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে । সেজন্য একে নোনা মাটি বলে । এই মাটিতে সুন্দরী, গরান, নারকেল, তাল প্রভৃতি উদ্ভিদ ভালো জন্মায় ।
(চ) বোদ বা হিউমাস : শিলা চূর্ণের সঙ্গে মৃত জীবদেহের পচনশীল অংশ মিশে এই প্রকারের মাটি তৈরি হয় । এই ধরনের মাটি কিছুটা অম্ল প্রাকৃতির । এর জলাধারণ ক্ষমতা বেশি কিন্তু বায়ুচলাচল স্বাবাভিক । এই মাটিতে চাষবাস ভালো হয় না । তবে চা চাষ খুব ভালো হয় ।
(ছ) কালো মাটি : ব্যাস্টল নামক শিলা থেকে উৎপন্ন মাটি কালো বর্ণের হয় । এই মাটিতে তুলো চাষ ভালো হয় ।
1.2. সম্পদ হিসেবে মৃত্তিকার গুরুত্ব :
(1) মাটির খনিজ লবণ মিশ্রিত জল উদ্ভিদ শোষণ করে খাদ্য তৈরি করে । এই খাদ্য গ্রহণ করে জীবজগৎ বেঁচে থাকে ।
(2) প্রায় সমস্ত রকম উদ্ভিদ এবং অনেক প্রাণীর আশ্রয়স্থল হল মাটি । পিঁপড়ে, ইঁদুর, কেঁচো, সাপ, উইপোকা প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে ।
(3) মাটিতেই সমস্ত রকম কৃষিজ ফসল উৎপন্ন হয় । সেই সমস্ত ফসলের উপর নির্ভর করে প্রাণিরা বেঁচে থাকে ।
(4) মাটির উপাদানের তারতম্যের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য ও জলধারণ ক্ষমতার পার্থক্য দেখা যায় । বিভিন্ন প্রকার মাটিতে উৎপন্ন ফসল ভিন্ন ভিন্ন হয় ।
1.3. মৃত্তিকার অবক্ষয় (Land Degradation)
সভ্যতা বিকাশের কারণে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে । অপরদিকে মৃত্তিকার অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা খনিজ ভান্ডারকে লুন্ঠন করার কাজে মানুষ উৎসাহী । প্রাকৃতিক সম্পদ আরহণ বা খাদ্য উৎপাদনের বিপুল চাহিদা থাকায় মৃত্তিকার অবক্ষয় হচ্ছে।
(1) কৃষিকার্যের কারণে : অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য একই জমিতে বার বার ট্র্যাক্টর দিয়ে মৃত্তিকা কর্ষণ করা হয় । এর ফলে মৃত্তিকার উপরের স্তরের উর্বর সারযুক্ত মৃত্তিকা আলগা হয়ে বৃষ্টির জলে বাহিত হয়ে নদীতে বা সমুদ্রে পড়ছে । ফলে মৃত্তিকার গুণাবলীর অবক্ষয় হয় এবং মৃত্তিকা অনুৎপাদক হয়ে পড়ে ।
(2) জলসেচ : অধিক জলসেচের কারণে মৃত্তিকাতে water logging হওয়ায় এবং অধিক লবণ সঞ্চিত হওয়ায় মৃত্তিকার অবক্ষয় হয় ।
(3) অধিক রাসায়নিক সার ও ঔষধ প্রয়োগ : অধিক সার ও ঔষধ প্রয়োগের কারণে মৃত্তিকা উর্বরাশক্তি হারায় । রাসায়নিক ঔষধ মৃত্তিকাদূষণ ঘটায় এবং এর ফলে মৃত্তিকা অনুর্বন হয়ে পড়ে ।
(4) খননকার্য : খনিজ উত্তোলনের ফলাফল হিসেবে ভূমির অভ্যন্তরের নুড়ি, পাথর প্রভৃতি ভূ পৃষ্ঠে জমা করা হয় । এতে জমি আম্লিক হয়ে পড়ে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয় ।
(5) আবর্জনা সঞ্চয় : বিভিন্ন প্রকার কঠিন আবর্জনা মৃত্তিকাতে নিক্ষিপ্ত হয় । এই প্রকার আবর্জনা মাটিতে থাকার ফলে মাটি অম্ল হয়ে পড়ে । বাস্তুতান্ত্রিক বিপর্যয় দেখা যায় ।
(6) অম্লবৃষ্টি : বায়ুদূষণের অন্যতম কুফল হল অম্লবৃষ্টি । প্রভৃতি গ্যাসগুলি উৎপন্ন হয়ে বৃষ্টির জলে মিশে গিয়ে অম্লবৃষ্টি সৃষ্টি করে । এই প্রকার বৃষ্টি মাটিতে মিশে মাটিকে অনুর্বর করে।
ভূমির অবক্ষয় প্রতিরোধ :
অবক্ষয় প্রতিরোধের জন্য পর্যায়ক্রমিক চাষ, বনসৃজন, জৈব পদার্থের পুনরুদ্ধার, অণু খাদ্যের পুনরুদ্ধার, নাইট্রোজেন বৃদ্ধিকারি উদ্ভিদ চাষ করা উচিত ।
1.4. মনুষ্যজনিত ভূমিস্খলন (Man induced Landslide)
সংজ্ঞা : পাহাড়ের ঢাল বরাবর মাধ্যাকর্ষণের টানে শিলাচূর্ণ, পাথরের চাঁই মাটির নীচে নেমে আসে । এই ঘটনাকে ধস বলে ।
প্রাকৃতিক কারণ :
- (1) প্রচুর বৃষ্টিপাত
- (2) পাথর আলগা হওয়া
- (3) মাটিতে বালির ভাগ বেশি হওয়া
- (4) ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত ।
মানুষের তৈরি কারণ :
(1) অরণ্য নিধন : নানা প্রয়োজনে অরণ্য ধ্বংস করার ফলে মাটির বাঁধন আলগা হয় । জল মাটির ভেতরে প্রবেশ করে মাটিকে অধিক সম্পৃক্ত করে । এর ফলে ভূমির স্খলন ঘটে বা ধস নামে ।
(2) অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তাঘাট ও বসতি নির্মাণ ও খনিজ উত্তোলন : সভ্যতা বিকাশ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যথেচ্ছ রাস্তাঘাট ও বসতি নির্মাণের জন্য ও খনিজ উত্তোলনের জন্য খোঁড়াখুড়ি হয় । এতে মাটিতে ধস নামে ।
(3) দৈনন্দিন উৎপন্ন গ্রৃহস্থ আবর্জনা ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ ভূমি ঢালে দীর্ঘদিন জমা রাখলে ভূমিতে ধস নামে ।
(4) দুর্বল মাটিতে খুব গভীরে শিকড় চালাতে পারে এরূপ বৃক্ষরোপণ করলেও ধস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় ।
(5) ডিনামাইট ব্যবহার করে পাহাড় এলাকায় ভূমি সমতল করে বসতি নির্মাণ করা হয় । এতেও ভূমি ধস ঘটে ।
ভূমিস্খলন বা ধসের কারণে বড়ো বড়ো পাথরের টুকরো প্রাণহানি ঘটায় । ভূমিক্ষয়ের ফলে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে ।
1.5. ভূমিক্ষয় (Soil Erosion)
সংজ্ঞা : নদী বা বৃষ্টির জল, বায়ুপ্রবাহ, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে এবং অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ, অরণ্য নিধন, পশুচারণ ইত্যাদি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে কমজোরি, দুর্বল, অস্বাভাবিক অপসারণকে ভূমিক্ষয় বলে ।
ভূমিক্ষয় বিভিন্ন প্রকারের হয়-
- (1) শিট ভূমিক্ষয় (Sheet Erosion) : খাড়াই ভূমির ঢাল বরাবর মৃত্তিকার উপরের পাতলা আবরণ চাদরের মতো সরে গেলে তাকে শীট ভূমিক্ষয় বলে ।
- (2) রিল ভূমিক্ষয় (Rill Erosion) : বৃষ্টির জলের লম্বা সরু অগভীর খাদ সৃষ্টি হয় । এই সরু খাদ বরাবর ভূমিক্ষয়কে রিল ভূমিক্ষয় বলে ।
- (3) নালি ভূমিক্ষয় (Gully Erosion) : রিলগুলো যখন আরো গভীর ও চওড়া হয় তখন নালী তৈরি করে । এই নালীর মাধ্যমে ভূমি বৃষ্টির জলে ক্ষয়ে যায় । একে নালি ভূমিক্ষয় বলে ।
- (4) রিপারিয়ান ভূমিক্ষয় (Riparian Erosion) : নদীর পাড়ের নীচের স্তরের মাটি জলের স্রোতে বা ঢেউয়ের ফলে আলগা হয়ে যায় । উপরের মাটি সঠিক অবস্থানে থাকে । পরবর্তীকালে উপরের মাটিও ধসে গিয়ে ভূমিক্ষয় ঘটায় ।
ভূমিক্ষয়ের কারণ :
অরণ্য নিধন, অতিরিক্ত পশুচারণ, অবৈজ্ঞানিক বসতি নির্মাণ, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অবক্ষয়যুক্ত আলগা মৃত্তিকার উপস্থিতি ইত্যাদি ।
- (1) বসতি নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণের প্রয়োজনে কারখানার কাঁচামাল সরবরাহের প্রয়োজনে অরণ্য নিধন হচ্ছে । এর ফলে মাটিকে ধরে রাখার মতো গাছের শেকড় কমছে । এ কারণে ভূমিক্ষয় ঘটছে ।
- (2) ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ, গুল্ম জাতীয় ঝোপঝাড় তৈরিতে সক্ষম উদ্ভিদ অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে নষ্ট হয়ে যায় । এর ফলে মাটি আলগা হয় ও ভূমিক্ষয় হয় ।
- (3) অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বসতি নির্মাণ, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে প্রচুর মৃত্তিকা উত্তোলন করা হয় । এর ফলে আলগা মাটিতে ধস সৃষ্টি হয় এবং ভূমিক্ষয় হয় ।
- (4) চাষযোগ্য জমিতে ট্রাক্টর দ্বারা ভূমিকর্ষণ করার ফলে প্রচুর মাটি উত্তোলিত হয় । সেচের জলে উপরের মৃত্তিকার ক্ষয় হয় ।
- (5) খাড়াই পাহাড়ী ঢাল, স্বল্পবনভূমিযুক্ত অঞ্চল, সমুদ্র উপকূল, মরুভূমির নিকটবর্তী অঞ্চল ও মালভূমির ঢালের মৃত্তিকা সহজ অবক্ষয়যুক্ত আলগা মৃত্তিকা । এইসব মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি এবং মাটি আঁঠালো না হওয়ায় বৃষ্টিপাতের ফলে সহজে ক্ষয়ে যায় । এই প্রকার মৃত্তিকার সংরক্ষণ সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ ।
ভূমিক্ষয়ের কুফল :
- (1) ভূমিক্ষয়ের ফলে মাটির উপরের স্তরের জৈব খাদ্য ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ (ম্যাক্রো ও মাইক্রো এলিমেন্টস) হ্রাস পায়, যার প্রভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।
- (2) ভূমিক্ষয়ের ফলে জলচক্র ব্যাহত হয় এবং বিয়োজক ব্যাকটিরিয়া প্রভৃতি জীবাণুর বাসভূমি নষ্ট হয় ।
- (3) ভূমিক্ষয় অধিক হলে মাটি ক্ষয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নদীর গর্ভে এসে জমা হয় । ফলে নদীর গভীরতা কমে নাব্যতা হ্রাস পায় এবং বন্যা দেখা যায় ।
- (4) ভূমিক্ষয়ের প্রভাবে জল সংরক্ষণ সম্ভব হয় না এবং জলের যোগান হ্রাস পায় এবং এর ফলে মাটির উর্বরাশক্তি কমে যায় । ফলে বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে, এর ফলে খরা দেখা দেয় । অক্সিজেনের ঘাটতি হয় ।
- (5) ভূমিক্ষয়ের ফলে ফলন কমে যায় এবং কৃষি উৎপাদন কম হওয়ায় খাদ্য শৃঙ্খল বিঘ্নিত হয় । এই সমস্ত কারণে মৃত্তিকা সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজনীয় ।
ভূমিক্ষয় কমানোর উপায় :
- (1) ভূমি ঢালের সমকোণে জমি কর্ষণ করলে ভূমিক্ষয় হ্রাস বা রোধ করা যায় ।
- (2) কোনো ভূমিকে অনাবৃত না রেখে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বন্সৃজনের জন্য ব্যবহার করলে মৃত্তিকা সংরক্ষিত হয় ।
- (3) ভূমিক্ষয় কমানোর জন্য ঝুম চাষ বন্ধ করা প্রয়োজন ।
- (4) নগ্ন মাটিতে বিভিন্ন রকম গাছ ও ঘাস বা গুল্ম পুঁতলে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় ।
- (5) ভূমিক্ষয় নিবারণের জন্য পশুচারণ ও বসতি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন ।
- (6) ধাপ চাষ, বলয় কৃষি ও সমোন্নতি কৃষি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
- (7) বিভিন্ন প্রকার পাঁচিল (কংক্রিটের পাঁচিল, জাল দিয়ে মোড়া পাথরের পাঁচিল, গাছের গুঁড়ির পাঁচিল, বালির বস্তার পাঁচিল) নির্মাণ করে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় ।
মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য ভূমিক্ষয় নিবারণের সাথে সাথে মৃত্তিকার উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধি প্রয়োজন ।
এর জন্য গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল-
- (1) শস্য আবর্তন (crop rotation) পদ্ধতিতে একই জমিতে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায় ।
- (2) সার প্রয়োগ : উপযুক্ত পরিমাণে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা রক্ষা করা যায় ।
- (3) সঠিকভাবে জমি কর্ষণ ও দ্রুত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ।
1.6. মরুকরণ (Desertification)
সংজ্ঞা : ধারাবাহিক মরুভূমির আয়তন বৃদ্ধিই মরুকরণ নামে পরিচিত ।
প্রতি বছর প্রায় 2 লক্ষ কিমি অঞ্চল মরুভূমির অন্তর্গত হচ্ছে । এর ফলে বছরে 13 হাজার কোটি টাকার কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । পৃথিবীর প্রায় 20% অঞ্চলের 100টি দেশ এবং 60 কোটি মানুষ মরুকরণের সমস্যায় বিপন্ন । ভারতের মোট ভূখন্ডের 10-20% মরুভূমি ।
মোট মরুকরণের আওতায় থাকা ভূমির মধ্যে-
- রাজস্থান--62%, গুজরাট--19%, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা—9%, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক—10% ভূমি রয়েছে ।
মরুকরণের কারণ :
- (1) মরুভূমির নিকটবর্তী এলাকায় অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ ।
- (2) অত্যাধিক পশুচারণ ।
- (3) পতিত শুষ্ক জমিকে বারে বারে লাঙল দিয়ে কর্ষণ করলে জমির মাটি ঝুরঝুরে হয়, এর ফলে মরুকরণ তরান্বিত হয় ।
- (4) অনিয়ন্ত্রিক অরণ্য নিধন, অবৈজ্ঞানিকভাবে গাছ কাটা, অত্যধিক জলসেচ, অত্যধিক সার ও ঔষধ প্রয়োগ মরুকরণের কারণ ।
মরুকরণের কুফল :
- (1) মরুকরণের ফলে কৃষিজমি হ্রাস পায় এবং মানুষ জীবিকা হারায় ।
- (2) মরুকরণের ফলে চারণভূমি হ্রাস পায় এবং এর ফলে পশুচারণ বিপদগ্রস্ত হয় ।
- (3) মরুকরণযুক্ত এলাকায় জলসেচের জন্য অধিক জল প্রয়োজন হয়, আবার water logging-এর সম্ভাবনা কম থাকে ।
মরুকরণ প্রতিরোধের উপায় :
- (1) বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং যথেচ্ছ অরণ্য নিধন বন্ধ করতে হবে ।
- (2) পশুচারণ নিয়িন্ত্রণ করতে হবে ।
- (3) ভূ-অভ্যন্তরের জলন্তর যাতে বেশি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে অর্থাৎ অধিক জল উত্তোলন বন্ধ করতে হবে ।
- (4) মরুভূমির উপযোগী জেরোফাইট উদ্ভিদ (ফণিমনসা, বাবলা ইত্যাদি) লাগাতে হবে । (5) মরুকরণ বিষয়ে জনসচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে ।