logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

পরিবেশ বিদ্যা চর্চা

পরিবেশবিদ্যা

পরিবেশবিদ্যার বহুমুখী প্রকৃতি

ভূমিকা পরিবেশ পরিবেশের উপাদান পরিবেশবিদ্যা পরিবেশবিদ্যার পরিধি পরিবেশগত শিক্ষার গুরুত্ব স্থিতিশীল উন্নয়ন

বিশ্ব: বাস্তুসংস্থান ও বাস্তুতন্ত্র

ভূমিকা বাস্তুতন্ত্রের উপাদান সমূহ খাদ্যশৃঙ্খল খাদ্য জাল বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ বাস্তুতন্ত্রের ধারণা বাস্তুতান্ত্রিক উত্তরাধিকার পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্র বনভূমির বাস্তুতন্ত্র মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র মোহনা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র নদীনালার বাস্তুতন্ত্র হ্রদের বাস্তুতন্ত্র জীবমণ্ডল

প্রাকৃতিক সম্পদ

ভূমিকা সম্পদ সম্পদের শ্রেণিবিভাগ প্রাকৃতিক সম্পদ নবীকরণযোগ্য সম্পদ অনবীকরণযোগ্য সম্পদ ভূমিসম্পদ অরণ্যসম্পদ জলসম্পদ শক্তিসম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ স্থিতিশীল উন্নয়নে সম্পদ

জীববৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ

ভূমিকা জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা জীববৈচিত্র্যের স্তর জীববৈচিত্র্যের মূল্য জীববৈচিত্র্যের দেশ ভারতবর্ষ জীববৈচিত্র্যের উষ্ণ অঞ্চল জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট বিরল , বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রাণী জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ যৌথ বন ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ দূষণ

ভূমিকা পরিবেশ দূষণ জল দূষণ বায়ু দূষণ মৃত্তিকাদূষণ শব্দদূষণ

জনসংখ্যা ও পরিবেশ

ভূমিকা বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার তারতম্য জনবিস্ফোরণ পরিবার পরিকল্পনা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য পুনর্বাসন ও পুনস্থাপনের সমস্যা পরিবেশের বিপর্যয় বন্যা ভূমিকম্প সাইক্লোন ভূমিধস ধস ব্যবস্থাপনা বায়ুদূষণ : ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা চের্নোবিল দুর্ঘটনা বিশনই আন্দোলন আপ্পিকো চাভেলী আন্দোলন চিপকো আন্দোলন সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন পরিবেশ নৈতিকতা পরিবেশ রক্ষায় সংস্কৃতি লিঙ্গ মানবাধিকার পরিবেশ সচেতনতা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা জমি সংরক্ষণ অরণ্য সংরক্ষণ খনিজ সম্পদ সংরক্ষণ সম্পদের পুনঃব্যবহার দূষণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল পরিবেশ বিষয়ক নীতি

পরিবেশগত আইন

পরিবেশ সংক্রান্ত আইন পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৮৬ বায়ুদূষণ আইন ১৯৮১ জলদূষণ আইন ১৯৭৪ জল(দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর আইন , ১৯৭৭ শব্দদূষণ আইন ২০০০ ভূমিদূষণ আইন ১৯৮৯ অরণ্য সংরক্ষণ আইন ১৯৮০ বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ১৯৭২ কেন্দ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আন্তর্জাতিক মান নির্ধারক সংস্থা জীববৈচিত্র্য আইন ২০০২ আন্তর্জাতিক চুক্তি জীববৈচিত্র্যের সম্মেলন সংরক্ষিত এলাকা আদিবাসী জনসংখ্যা ও তার আধিকার মানুষ ও বন্যপশু সংঘাত

ভূমিসম্পদ


ভুমিসম্পদ (Land Resource) ঃ

সোলাম (Solum) নামক ল্যাটিন শব্দ থেকে Soil কথাটি এসেছে । মৃত্তিকা বিজ্ঞানকে বলা হয় পেডোলজি (Pedology) । ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের নরম আন্তরণকে মাটি বলা হয় । মাটি একটি পদার্থ । মাটির উপাদানগুলি হল মাটির কণা, খনিজ পদার্থ, জল, বায়ু, জৈব পদার্থ এবং বিভিন্ন প্রকার জীব । কোনো অঞ্চলের মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে 2-5 হাজার বছর সময় লাগতে পারে ।

সংজ্ঞা : ভূ-ত্বকের উপরিভাগের ক্ষয়িত পরিবর্তিত শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব বস্তুর সংমিশ্রণে গঠিত নরম আন্তরণকে মৃত্তিকা বলে ।

বিভিন্ন ভৌত প্রক্রিয়ার ফলে [বিচূর্ণভবন (Weathering), নগ্নীভবন (Denudation), ভূক্ষয় (Erosion), অপসারণ (Transporation), অবক্ষেপণ (Deposition)] মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় ।

শিলাচূর্ণের ব্যাসের উপর নির্ভর করে মাটির কণাকে নানাভাবে ভাগ করা যায় ।

  • (1) মোটা কাঁকর-ব্যাস 5 mm. –এর বেশি
  • (2) মিহি কাঁকর-ব্যাস 5-2 mm. –এর বেশি
  • (3) মোটা বালি-ব্যাস 2-0.2 mm. –এর বেশি
  • (4) মিহি বালি-ব্যাস 0.2-0.02 mm. –এর বেশি
  • (5) পলি-ব্যাস 0.02-0.002mm. –এর বেশি
  • (6) কাদা-ব্যাস 0.002 mm. –এর কম ।

উপাদানের উপস্থিতির পার্থক্য ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে মাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-

(ক) এঁটেল মাটি : এই ধরনের মাটিতে কাদা ও অজৈব পদার্থ থাকে শতকরা 75 থেকে 90 ভাগ এবং বালি থাকে 10 থেকে 25 ভাগ । এঁটেল মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি কিন্তু বালির ভাগ কম থাকায় বায়ু চলাচল খুবই কম হয় । এই ধরনের মাটিতে আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি বৃক্ষ এবং ধান, গম, যব প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হয় ।

(খ) বেলে মাটি : এই মাটিতে বালি থাকে 80ভাগ, 10ভাগ কাদা এবং 10ভাগ পলি থাকে । এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম, কিন্তু বায়ু চলাচল করে বেশি । এই মাটিতে জলসেচের মাধ্যমে তরমুজ, ফুটি, শশা, পটল, কুমড়ো প্রভৃতি উদ্ভিদ ভালো হয় ।

(গ) দোঁয়াশ মাটি : এই মাটিতে বালি, কাদা ও পলি শতকরা 30 ভাগ করে মোট 90 ভাগ থাকে এবং খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ থাকে 10 ভাগ । এই মাটির জল-ধারণ ক্ষমতা এবং বায়ু-চলাচল স্বাভাবিক । তাই ফসল চাষের পক্ষে এই মাটি সবচেয়ে উপযোগী । এই মাটিতে সবরকম রবি ও খরিফ শস্য জন্মায় ।

(ঘ) পলিমাটি : নদী তীরবর্তী অঞ্চলে এবং নদী মোহনা সংলগ্ন অঞ্চলে এই ধরনের মাটি থাকে । এতে পলির ভাগ শতকরা 50 থেকে 80 ভাগ থাকে । এতে ধান, গম, পাট ও রবিশস্য ভালো উৎপন্ন হয় ।

(ঙ) নোনা মাটি বা লবণাক্ত মাটি : সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে । সেজন্য একে নোনা মাটি বলে । এই মাটিতে সুন্দরী, গরান, নারকেল, তাল প্রভৃতি উদ্ভিদ ভালো জন্মায় ।

(চ) বোদ বা হিউমাস : শিলা চূর্ণের সঙ্গে মৃত জীবদেহের পচনশীল অংশ মিশে এই প্রকারের মাটি তৈরি হয় । এই ধরনের মাটি কিছুটা অম্ল প্রাকৃতির । এর জলাধারণ ক্ষমতা বেশি কিন্তু বায়ুচলাচল স্বাবাভিক । এই মাটিতে চাষবাস ভালো হয় না । তবে চা চাষ খুব ভালো হয় ।

(ছ) কালো মাটি : ব্যাস্টল নামক শিলা থেকে উৎপন্ন মাটি কালো বর্ণের হয় । এই মাটিতে তুলো চাষ ভালো হয় ।

1.2. সম্পদ হিসেবে মৃত্তিকার গুরুত্ব :

(1) মাটির খনিজ লবণ মিশ্রিত জল উদ্ভিদ শোষণ করে খাদ্য তৈরি করে । এই খাদ্য গ্রহণ করে জীবজগৎ বেঁচে থাকে ।

(2) প্রায় সমস্ত রকম উদ্ভিদ এবং অনেক প্রাণীর আশ্রয়স্থল হল মাটি । পিঁপড়ে, ইঁদুর, কেঁচো, সাপ, উইপোকা প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে ।

(3) মাটিতেই সমস্ত রকম কৃষিজ ফসল উৎপন্ন হয় । সেই সমস্ত ফসলের উপর নির্ভর করে প্রাণিরা বেঁচে থাকে ।

(4) মাটির উপাদানের তারতম্যের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য ও জলধারণ ক্ষমতার পার্থক্য দেখা যায় । বিভিন্ন প্রকার মাটিতে উৎপন্ন ফসল ভিন্ন ভিন্ন হয় ।

1.3. মৃত্তিকার অবক্ষয় (Land Degradation)

সভ্যতা বিকাশের কারণে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে । অপরদিকে মৃত্তিকার অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা খনিজ ভান্ডারকে লুন্ঠন করার কাজে মানুষ উৎসাহী । প্রাকৃতিক সম্পদ আরহণ বা খাদ্য উৎপাদনের বিপুল চাহিদা থাকায় মৃত্তিকার অবক্ষয় হচ্ছে।

(1) কৃষিকার্যের কারণে : অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য একই জমিতে বার বার ট্র্যাক্টর দিয়ে মৃত্তিকা কর্ষণ করা হয় । এর ফলে মৃত্তিকার উপরের স্তরের উর্বর সারযুক্ত মৃত্তিকা আলগা হয়ে বৃষ্টির জলে বাহিত হয়ে নদীতে বা সমুদ্রে পড়ছে । ফলে মৃত্তিকার গুণাবলীর অবক্ষয় হয় এবং মৃত্তিকা অনুৎপাদক হয়ে পড়ে ।

(2) জলসেচ : অধিক জলসেচের কারণে মৃত্তিকাতে water logging হওয়ায় এবং অধিক লবণ সঞ্চিত হওয়ায় মৃত্তিকার অবক্ষয় হয় ।

(3) অধিক রাসায়নিক সার ও ঔষধ প্রয়োগ : অধিক সার ও ঔষধ প্রয়োগের কারণে মৃত্তিকা উর্বরাশক্তি হারায় । রাসায়নিক ঔষধ মৃত্তিকাদূষণ ঘটায় এবং এর ফলে মৃত্তিকা অনুর্বন হয়ে পড়ে ।

(4) খননকার্য : খনিজ উত্তোলনের ফলাফল হিসেবে ভূমির অভ্যন্তরের নুড়ি, পাথর প্রভৃতি ভূ পৃষ্ঠে জমা করা হয় । এতে জমি আম্লিক হয়ে পড়ে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয় ।

(5) আবর্জনা সঞ্চয় : বিভিন্ন প্রকার কঠিন আবর্জনা মৃত্তিকাতে নিক্ষিপ্ত হয় । এই প্রকার আবর্জনা মাটিতে থাকার ফলে মাটি অম্ল হয়ে পড়ে । বাস্তুতান্ত্রিক বিপর্যয় দেখা যায় ।

(6) অম্লবৃষ্টি : বায়ুদূষণের অন্যতম কুফল হল অম্লবৃষ্টি । প্রভৃতি গ্যাসগুলি উৎপন্ন হয়ে বৃষ্টির জলে মিশে গিয়ে অম্লবৃষ্টি সৃষ্টি করে । এই প্রকার বৃষ্টি মাটিতে মিশে মাটিকে অনুর্বর করে।

ভূমির অবক্ষয় প্রতিরোধ :

অবক্ষয় প্রতিরোধের জন্য পর্যায়ক্রমিক চাষ, বনসৃজন, জৈব পদার্থের পুনরুদ্ধার, অণু খাদ্যের পুনরুদ্ধার, নাইট্রোজেন বৃদ্ধিকারি উদ্ভিদ চাষ করা উচিত ।

1.4. মনুষ্যজনিত ভূমিস্খলন (Man induced Landslide)

সংজ্ঞা : পাহাড়ের ঢাল বরাবর মাধ্যাকর্ষণের টানে শিলাচূর্ণ, পাথরের চাঁই মাটির নীচে নেমে আসে । এই ঘটনাকে ধস বলে ।

প্রাকৃতিক কারণ :

  • (1) প্রচুর বৃষ্টিপাত
  • (2) পাথর আলগা হওয়া
  • (3) মাটিতে বালির ভাগ বেশি হওয়া
  • (4) ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত ।

মানুষের তৈরি কারণ :

(1) অরণ্য নিধন : নানা প্রয়োজনে অরণ্য ধ্বংস করার ফলে মাটির বাঁধন আলগা হয় । জল মাটির ভেতরে প্রবেশ করে মাটিকে অধিক সম্পৃক্ত করে । এর ফলে ভূমির স্খলন ঘটে বা ধস নামে ।

(2) অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তাঘাট ও বসতি নির্মাণ ও খনিজ উত্তোলন : সভ্যতা বিকাশ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যথেচ্ছ রাস্তাঘাট ও বসতি নির্মাণের জন্য ও খনিজ উত্তোলনের জন্য খোঁড়াখুড়ি হয় । এতে মাটিতে ধস নামে ।

(3) দৈনন্দিন উৎপন্ন গ্রৃহস্থ আবর্জনা ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ ভূমি ঢালে দীর্ঘদিন জমা রাখলে ভূমিতে ধস নামে ।

(4) দুর্বল মাটিতে খুব গভীরে শিকড় চালাতে পারে এরূপ বৃক্ষরোপণ করলেও ধস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় ।

(5) ডিনামাইট ব্যবহার করে পাহাড় এলাকায় ভূমি সমতল করে বসতি নির্মাণ করা হয় । এতেও ভূমি ধস ঘটে ।

ভূমিস্খলন বা ধসের কারণে বড়ো বড়ো পাথরের টুকরো প্রাণহানি ঘটায় । ভূমিক্ষয়ের ফলে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে ।

1.5. ভূমিক্ষয় (Soil Erosion)

সংজ্ঞা : নদী বা বৃষ্টির জল, বায়ুপ্রবাহ, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে এবং অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ, অরণ্য নিধন, পশুচারণ ইত্যাদি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে কমজোরি, দুর্বল, অস্বাভাবিক অপসারণকে ভূমিক্ষয় বলে ।

ভূমিক্ষয় বিভিন্ন প্রকারের হয়-

  • (1) শিট ভূমিক্ষয় (Sheet Erosion) : খাড়াই ভূমির ঢাল বরাবর মৃত্তিকার উপরের পাতলা আবরণ চাদরের মতো সরে গেলে তাকে শীট ভূমিক্ষয় বলে ।
  • (2) রিল ভূমিক্ষয় (Rill Erosion) : বৃষ্টির জলের লম্বা সরু অগভীর খাদ সৃষ্টি হয় । এই সরু খাদ বরাবর ভূমিক্ষয়কে রিল ভূমিক্ষয় বলে ।
  • (3) নালি ভূমিক্ষয় (Gully Erosion) : রিলগুলো যখন আরো গভীর ও চওড়া হয় তখন নালী তৈরি করে । এই নালীর মাধ্যমে ভূমি বৃষ্টির জলে ক্ষয়ে যায় । একে নালি ভূমিক্ষয় বলে ।
  • (4) রিপারিয়ান ভূমিক্ষয় (Riparian Erosion) : নদীর পাড়ের নীচের স্তরের মাটি জলের স্রোতে বা ঢেউয়ের ফলে আলগা হয়ে যায় । উপরের মাটি সঠিক অবস্থানে থাকে । পরবর্তীকালে উপরের মাটিও ধসে গিয়ে ভূমিক্ষয় ঘটায় ।

ভূমিক্ষয়ের কারণ :

অরণ্য নিধন, অতিরিক্ত পশুচারণ, অবৈজ্ঞানিক বসতি নির্মাণ, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অবক্ষয়যুক্ত আলগা মৃত্তিকার উপস্থিতি ইত্যাদি ।

  • (1) বসতি নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণের প্রয়োজনে কারখানার কাঁচামাল সরবরাহের প্রয়োজনে অরণ্য নিধন হচ্ছে । এর ফলে মাটিকে ধরে রাখার মতো গাছের শেকড় কমছে । এ কারণে ভূমিক্ষয় ঘটছে ।
  • (2) ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ, গুল্ম জাতীয় ঝোপঝাড় তৈরিতে সক্ষম উদ্ভিদ অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে নষ্ট হয়ে যায় । এর ফলে মাটি আলগা হয় ও ভূমিক্ষয় হয় ।
  • (3) অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বসতি নির্মাণ, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে প্রচুর মৃত্তিকা উত্তোলন করা হয় । এর ফলে আলগা মাটিতে ধস সৃষ্টি হয় এবং ভূমিক্ষয় হয় ।
  • (4) চাষযোগ্য জমিতে ট্রাক্টর দ্বারা ভূমিকর্ষণ করার ফলে প্রচুর মাটি উত্তোলিত হয় । সেচের জলে উপরের মৃত্তিকার ক্ষয় হয় ।
  • (5) খাড়াই পাহাড়ী ঢাল, স্বল্পবনভূমিযুক্ত অঞ্চল, সমুদ্র উপকূল, মরুভূমির নিকটবর্তী অঞ্চল ও মালভূমির ঢালের মৃত্তিকা সহজ অবক্ষয়যুক্ত আলগা মৃত্তিকা । এইসব মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি এবং মাটি আঁঠালো না হওয়ায় বৃষ্টিপাতের ফলে সহজে ক্ষয়ে যায় । এই প্রকার মৃত্তিকার সংরক্ষণ সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ ।

ভূমিক্ষয়ের কুফল :

  • (1) ভূমিক্ষয়ের ফলে মাটির উপরের স্তরের জৈব খাদ্য ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ (ম্যাক্রো ও মাইক্রো এলিমেন্টস) হ্রাস পায়, যার প্রভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।
  • (2) ভূমিক্ষয়ের ফলে জলচক্র ব্যাহত হয় এবং বিয়োজক ব্যাকটিরিয়া প্রভৃতি জীবাণুর বাসভূমি নষ্ট হয় ।
  • (3) ভূমিক্ষয় অধিক হলে মাটি ক্ষয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নদীর গর্ভে এসে জমা হয় । ফলে নদীর গভীরতা কমে নাব্যতা হ্রাস পায় এবং বন্যা দেখা যায় ।
  • (4) ভূমিক্ষয়ের প্রভাবে জল সংরক্ষণ সম্ভব হয় না এবং জলের যোগান হ্রাস পায় এবং এর ফলে মাটির উর্বরাশক্তি কমে যায় । ফলে বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে, এর ফলে খরা দেখা দেয় । অক্সিজেনের ঘাটতি হয় ।
  • (5) ভূমিক্ষয়ের ফলে ফলন কমে যায় এবং কৃষি উৎপাদন কম হওয়ায় খাদ্য শৃঙ্খল বিঘ্নিত হয় । এই সমস্ত কারণে মৃত্তিকা সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজনীয় ।

ভূমিক্ষয় কমানোর উপায় :

  • (1) ভূমি ঢালের সমকোণে জমি কর্ষণ করলে ভূমিক্ষয় হ্রাস বা রোধ করা যায় ।
  • (2) কোনো ভূমিকে অনাবৃত না রেখে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বন্সৃজনের জন্য ব্যবহার করলে মৃত্তিকা সংরক্ষিত হয় ।
  • (3) ভূমিক্ষয় কমানোর জন্য ঝুম চাষ বন্ধ করা প্রয়োজন ।
  • (4) নগ্ন মাটিতে বিভিন্ন রকম গাছ ও ঘাস বা গুল্ম পুঁতলে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় ।
  • (5) ভূমিক্ষয় নিবারণের জন্য পশুচারণ ও বসতি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন ।
  • (6) ধাপ চাষ, বলয় কৃষি ও সমোন্নতি কৃষি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
  • (7) বিভিন্ন প্রকার পাঁচিল (কংক্রিটের পাঁচিল, জাল দিয়ে মোড়া পাথরের পাঁচিল, গাছের গুঁড়ির পাঁচিল, বালির বস্তার পাঁচিল) নির্মাণ করে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় ।

মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য ভূমিক্ষয় নিবারণের সাথে সাথে মৃত্তিকার উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধি প্রয়োজন ।

এর জন্য গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল-

  • (1) শস্য আবর্তন (crop rotation) পদ্ধতিতে একই জমিতে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায় ।
  • (2) সার প্রয়োগ : উপযুক্ত পরিমাণে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা রক্ষা করা যায় ।
  • (3) সঠিকভাবে জমি কর্ষণ ও দ্রুত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ।

1.6. মরুকরণ (Desertification)

সংজ্ঞা : ধারাবাহিক মরুভূমির আয়তন বৃদ্ধিই মরুকরণ নামে পরিচিত ।

প্রতি বছর প্রায় 2 লক্ষ কিমি অঞ্চল মরুভূমির অন্তর্গত হচ্ছে । এর ফলে বছরে 13 হাজার কোটি টাকার কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । পৃথিবীর প্রায় 20% অঞ্চলের 100টি দেশ এবং 60 কোটি মানুষ মরুকরণের সমস্যায় বিপন্ন । ভারতের মোট ভূখন্ডের 10-20% মরুভূমি ।

মোট মরুকরণের আওতায় থাকা ভূমির মধ্যে-

  • রাজস্থান--62%, গুজরাট--19%, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা—9%, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক—10% ভূমি রয়েছে ।

মরুকরণের কারণ :

  • (1) মরুভূমির নিকটবর্তী এলাকায় অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ ।
  • (2) অত্যাধিক পশুচারণ ।
  • (3) পতিত শুষ্ক জমিকে বারে বারে লাঙল দিয়ে কর্ষণ করলে জমির মাটি ঝুরঝুরে হয়, এর ফলে মরুকরণ তরান্বিত হয় ।
  • (4) অনিয়ন্ত্রিক অরণ্য নিধন, অবৈজ্ঞানিকভাবে গাছ কাটা, অত্যধিক জলসেচ, অত্যধিক সার ও ঔষধ প্রয়োগ মরুকরণের কারণ ।

মরুকরণের কুফল :

  • (1) মরুকরণের ফলে কৃষিজমি হ্রাস পায় এবং মানুষ জীবিকা হারায় ।
  • (2) মরুকরণের ফলে চারণভূমি হ্রাস পায় এবং এর ফলে পশুচারণ বিপদগ্রস্ত হয় ।
  • (3) মরুকরণযুক্ত এলাকায় জলসেচের জন্য অধিক জল প্রয়োজন হয়, আবার water logging-এর সম্ভাবনা কম থাকে ।

মরুকরণ প্রতিরোধের উপায় :

  • (1) বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং যথেচ্ছ অরণ্য নিধন বন্ধ করতে হবে ।
  • (2) পশুচারণ নিয়িন্ত্রণ করতে হবে ।
  • (3) ভূ-অভ্যন্তরের জলন্তর যাতে বেশি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে অর্থাৎ অধিক জল উত্তোলন বন্ধ করতে হবে ।
  • (4) মরুভূমির উপযোগী জেরোফাইট উদ্ভিদ (ফণিমনসা, বাবলা ইত্যাদি) লাগাতে হবে । (5) মরুকরণ বিষয়ে জনসচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে ।