স্থিতিশীল উন্নয়নে সম্পদ
স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পদের নিরপেক্ষ ব্যবহারের গুরুত্ব (Equitable use of resources for sustainable life styles)
সংজ্ঞা : পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে দীর্ঘমেয়াদি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যবস্থা প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ও পার্থিব সম্পদকে নষ্ট না করে সমসাময়িক ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষ ও অন্যান্য প্রজাতির জীবনযাত্রা সুরক্ষিত করে তাকে বহতা বা ধারাবাহিক বা সুস্থায়ী বা স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে। পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিবেশের অবক্ষয়কে তরান্বিত করে।
(a) কৃষিক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী ফলন বৃদ্ধির তাগিদে তথা কৃষিকার্যে উন্নয়নের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা কমছে, মৃত্তিকা লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। জলাশয়ে সার ও কীটনাশক মিশ্রিত জল জলজ বাস্তুতন্ত্রকে বিঘ্নিত করছে। এসব কিছুর ফলে পরিবেশের অবক্ষয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। সুতরাং বহতা উন্নয়ন পরিবেশে অবক্ষয়ের সঙ্গে বিপরীতভাবে সম্পর্কিত। কারণ সুস্থায়ী উন্নয়ন, পরিবেশ সহায়ক, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। উন্নত কৃষিপদ্ধতি, জৈব সার, জৈব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, আলোকফাঁদ প্রভৃতি পদ্ধতির প্রয়োগ সুস্থায়ী উন্নয়নের সহায়ক।
(b) যানবাহন সমস্যা দূর করার জন্য, পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতির জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য প্রয়োজনে অরণ্য নিধন, জলাভূমি ভরাট করা সামাজিক উন্নয়নের অংশ। যানবাহন সংখ্যার বৃদ্ধি বায়ুদূষণের পরিমাণকে বাড়িয়েছে, অপরদিকে রাস্তাঘাটের প্রয়োজনে অরণ্য ধ্বংস হওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। সুতরাং পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন পরিবেশ অবক্ষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। পরিবেশ অবক্ষয় সুস্থায়ী উন্নয়নের পরিপন্থী। বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা, অচিরাচরিত শক্তি উৎসের সন্ধান, পরিবেশ সহায়ক নির্মাণ পরিকল্পনা সুস্থায়ী উন্নয়নের সহায়ক।
(c) অনুরূপভাবে শিল্পায়ন, নগরায়ণ, জল, মাটি ও বায়ুকে দূষিত করে। কলকারখানা থেকে নির্গত নানাপ্রকার ক্ষতিকারক গ্যাস অম্লবৃষ্টি (Acid rain), ভুবন উষ্ণায়ন (global warming), ওজোনস্তরের হ্রাস ঘটায়। এর ফলে পরিবেশের অবক্ষয় হয়। এর দ্বারা সুস্থায়ী উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়। মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য অবিবেচক উন্নয়ন পদ্ধতি বর্তমানের চাহিদা পূরণে সক্ষম হলেও পরবর্তী প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।
(d) একটি দেশের বনাঞ্চল ভূমিভাগের 33% হওয়া দরকার। কিন্তু মানুষের চাহিদা অরণ্যকে ধ্বংস করেছে। বর্তমানে কোনো কোনো স্থানে অরণ্যের পরিমাণ 15 শতাংশের মতো। ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া অরণ্যকে ধ্বংস করে পরিবেশ অবক্ষয়কে সাহায্য করার বিরুদ্ধে। সুপরিকল্পিত বসতি নির্মাণ, চারণক্ষেত্র তৈরি, কৃষিভূমির সম্প্রসারণ ব্যবস্থা হবে সুস্থায়ী উন্নয়নের সহায়ক। পরিবেশ অবক্ষয়কারী উন্নয়ন সুস্থায়ী উন্নয়নের প্রতিবন্ধক।
(e) প্রাকৃতিক নানা সম্পদের মাত্রাহীন ব্যবহার, খননকার্য, জৈববৈচিত্র্যের ধ্বংসসাধন মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার । সুতরাং মাত্রাহীন উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিবেশ অবক্ষয়ের সাহায্যকারী প্রক্রিয়া বিশেষ । জৈব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ব্যবস্থা, সম্পদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ব্যবহার, মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা বহতা উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে । দ্রুত সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থা এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার না দিলে, পরিবেশের ভারসাম্য বিষয়ে সচেতন না হলে পরিবেশের অবক্ষয় দ্রুত মানব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে । বহু প্রাচীন সভ্যতা পরিবেশ সহায়ক না হওয়ার কারণে ধ্বংস হয়েছে । তাই পরিবেশ সহায়ক উন্নয়ন প্রক্রিয়া একান্ত কাম্য।