ভূমিধস (Landslide)
যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পাহাড়ের ঢাল বরাবর মাধ্যাকর্ষণের টানে পাথরের চাঁই, শিলাচূর্ণ, মাটি এবং অন্যান্য আলগা পদার্থের হঠাৎ নেমে আসা বা খসে পড়ার ঘটনা ঘটে তাকে ধস বলে। সাধারণত বর্ষাকালে পাহাড়ে ধস নামে; এছাড়া ভূমিকম্প হলে বা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময়েও ধস নামতে পারে।
ধসের কারণ :
(ক) প্রাকৃতিক কারণ :
(১) প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে :
- পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে মাটি, পাথর আলগা ও ভারি হয়ে মাধ্যাকর্ষণের টানে নীচে খসে পড়ে। এই জন্য দার্জিলিং, সিকিম অঞ্চলে প্রতি বর্ষায় ধস নামে।
(২) পাথর আলগা হওয়ার কারণে :
- পাহাড়ী অঞ্চলে বহুদিন ধরে জল, হাওয়া, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়ায় পাথর ফেটে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
(৩) মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকার কারণে :
- যে মাটিতে বালির ভাগ বেশি, সেই মাটির মধ্যে সহজেই জল ঢুকে যেতে পারে। দার্জিলিং, সিকিম অঞ্চলের মাটিতে বালির ভাগ বেশি বলে বর্ষাকালে ধস নামে ৷
(৪) ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাতের জন্য :
- ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বেরিয়ে আসায় মাটি মুহুর্মুহু কাঁপতে থাকে। ফলে ধস নামে।
(খ) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ :
(১) অরণ্য কেটে সাফ করে ফেললে মাটির উপরে গাছপালার আবরণ থাকে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির জল দিনের পর দিন মাটিকে সরাসরি আঘাত করে ক্ষয় করে। আর প্রচুর জল মাটির মধ্যে অনবরত ঢুকে যায়। মাটি দুর্বল হয়ে খসে পড়ে। ধস নামে।
(২) দুর্বল পাহাড়ী ঢালে নিয়ম না মেনে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর বানালে : দার্জিলিং, কার্সিয়াং ও গ্যাংটকের আশেপাশের এলাকায় ধস নামে।
ধসপ্রবণ এলাকা :
হিমালয়, খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়, পশ্চিমঘাট পর্বতের বিভিন্ন অংশ ধসপ্রবণ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দার্জিলিং, কার্সিয়াং, গ্যাংটক, শিলং, অরুণাচলের পাহাড়, উত্তরকাশী, নৈনিতাল ইত্যাদি।
ধসের জন্য সমস্যা :
ধস একটা প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে এটি পরিবেশ ও মানুষের কাছে ইদানীং বিশেষ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
(ক) ধসের জন্য পরিবেশের ক্ষতি :
(১) ধস নামলে বনভূমি নষ্ট হয়।
(২) ধসে যাওয়া মাটি সাধারণত বালি, কাঁকর, পাথরে ভর্তি থাকে। এর ফলে মাটির গুণ নষ্ট হয় এবং মাটির ক্ষতি হয়।
(৩) ধসের ফলে পাহাড়ের ঢাল নষ্ট হয়। ভূমিক্ষয় হয়।
(৪) ধসের ফলে মাটি নদীতে বাধা সৃষ্টি করে এরফলে বন্যা হয় এবং অনেকসময় নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে ।
(খ) ধসের জন্য মানুষের ক্ষতি :
(১) ধসের ফলে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে।
(২) রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।
(৩) চা, কমলালেবু, আপেল, নাশপাতি প্রভৃতি দামি বাগান নষ্ট হয়।
(৪) চাষাবাদের ক্ষতি হয়। মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে।
(৫) পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটক না আসায় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
(৬) মানুষ ও জীবজন্তুর প্রাণহানি ঘটে।