ঘূর্ণবাত বা সাইক্লোন (Cyclone)
কোন জায়গায় বায়ুর চাপ হ্রাস হলে নিম্নচাপের কেন্দ্রের দিকে সজোরে ছুটে আসা ঘূর্ণীর মত বায়ুপ্রবাহকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণবাত বলে।
পৃথিবীর ক্রান্তীয় এলাকায় সাধারণত গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এবং ইউরোপ, আমেরিকায় শীতকালে ঘূর্ণবাত দেখা যায়।
করিয়োলিস বলের (coriolis force) প্রভাবে ঘূর্ণবাতগুলির কেন্দ্রের দিকে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা বাতাস উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে।
(১) ভারত, (২) বাংলাদেশ, (৩) ফিলিপাইন, (৪) চীন, (৫) জাপান, (৬) ওয়েস্ট ইন্ডিজ, (৭) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, (৮) মেক্সিকো, (৯) অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে ঘূর্ণবাত বেশি হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন—ওয়েস্ট ইন্ডিজে হারিকেন, চীন ও জাপানে টাইফুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডো, উত্তর ভারতে আঁধি ইত্যাদি।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব :
(১) সাইক্লোন বা ঘূর্ণীঝড় বা ঘূর্ণবাত মানুষের ঘরবাড়ি ধন-সম্পদের ক্ষতি করে। বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ঘূর্ণবাতের ফলে বহু হাজার কোটি টাকার ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
(২) ঘূর্ণীঝড়ের তাণ্ডব থেমে যাওয়ার পর দূষণের কারণে পানীয় জলের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।
(৩) দূষিত জলের কারণে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটে।
(৪) ঘূর্ণবাতের ফলে প্রচুর গাছপালার ক্ষতি হয়, পশু-পাখিরা তাদের স্বাভাবিক আশ্রয় হারায়, ছোট ছোট তৃণভোজী বা মাংসাশী প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। ফলে বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত হয় এবং শক্তি প্রবাহ বিঘ্নিত হয়।
ঘূর্ণবাত ব্যবস্থাপনা (Cyclone Management) :
ঘূর্ণবাত প্রাকৃতিক দূর্যোগ হওয়ায় ঘূর্ণবাতকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে ঘূর্ণীঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এর জন্য প্রয়োজন হয়—
(১) ঘূর্ণবাত বা ঘূর্ণীঝড় আসার আগে উপগ্রহ মারফৎ খবরাখবর আদান-প্রদানের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তুলে সঠিক পূর্বাভাসের ব্যবস্থা করা যায়।
(২) ঝড়ের আগে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত কাঠামো সমন্বিত আশ্রয় শিবির তৈরি রাখা যায়।
(৩) ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
(৪) অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারি সাহায্য ও ব্যাঙ্কের তরফে ঋণ দানের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।