logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

পরিবেশ বিদ্যা চর্চা

পরিবেশবিদ্যা

পরিবেশবিদ্যার বহুমুখী প্রকৃতি

ভূমিকা পরিবেশ পরিবেশের উপাদান পরিবেশবিদ্যা পরিবেশবিদ্যার পরিধি পরিবেশগত শিক্ষার গুরুত্ব স্থিতিশীল উন্নয়ন

বিশ্ব: বাস্তুসংস্থান ও বাস্তুতন্ত্র

ভূমিকা বাস্তুতন্ত্রের উপাদান সমূহ খাদ্যশৃঙ্খল খাদ্য জাল বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ বাস্তুতন্ত্রের ধারণা বাস্তুতান্ত্রিক উত্তরাধিকার পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্র বনভূমির বাস্তুতন্ত্র মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র মোহনা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র নদীনালার বাস্তুতন্ত্র হ্রদের বাস্তুতন্ত্র জীবমণ্ডল

প্রাকৃতিক সম্পদ

ভূমিকা সম্পদ সম্পদের শ্রেণিবিভাগ প্রাকৃতিক সম্পদ নবীকরণযোগ্য সম্পদ অনবীকরণযোগ্য সম্পদ ভূমিসম্পদ অরণ্যসম্পদ জলসম্পদ শক্তিসম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ স্থিতিশীল উন্নয়নে সম্পদ

জীববৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ

ভূমিকা জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা জীববৈচিত্র্যের স্তর জীববৈচিত্র্যের মূল্য জীববৈচিত্র্যের দেশ ভারতবর্ষ জীববৈচিত্র্যের উষ্ণ অঞ্চল জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট বিরল , বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রাণী জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ যৌথ বন ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ দূষণ

ভূমিকা পরিবেশ দূষণ জল দূষণ বায়ু দূষণ মৃত্তিকাদূষণ শব্দদূষণ

জনসংখ্যা ও পরিবেশ

ভূমিকা বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার তারতম্য জনবিস্ফোরণ পরিবার পরিকল্পনা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য পুনর্বাসন ও পুনস্থাপনের সমস্যা পরিবেশের বিপর্যয় বন্যা ভূমিকম্প সাইক্লোন ভূমিধস ধস ব্যবস্থাপনা বায়ুদূষণ : ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা চের্নোবিল দুর্ঘটনা বিশনই আন্দোলন আপ্পিকো চাভেলী আন্দোলন চিপকো আন্দোলন সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন পরিবেশ নৈতিকতা পরিবেশ রক্ষায় সংস্কৃতি লিঙ্গ মানবাধিকার পরিবেশ সচেতনতা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা জমি সংরক্ষণ অরণ্য সংরক্ষণ খনিজ সম্পদ সংরক্ষণ সম্পদের পুনঃব্যবহার দূষণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল পরিবেশ বিষয়ক নীতি

পরিবেশগত আইন

পরিবেশ সংক্রান্ত আইন পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৮৬ বায়ুদূষণ আইন ১৯৮১ জলদূষণ আইন ১৯৭৪ জল(দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর আইন , ১৯৭৭ শব্দদূষণ আইন ২০০০ ভূমিদূষণ আইন ১৯৮৯ অরণ্য সংরক্ষণ আইন ১৯৮০ বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ১৯৭২ কেন্দ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আন্তর্জাতিক মান নির্ধারক সংস্থা জীববৈচিত্র্য আইন ২০০২ আন্তর্জাতিক চুক্তি জীববৈচিত্র্যের সম্মেলন সংরক্ষিত এলাকা আদিবাসী জনসংখ্যা ও তার আধিকার মানুষ ও বন্যপশু সংঘাত

অরণ্যসম্পদ


অরণ্যসম্পদ (Forest Resources) ঃ

Silviculture বা অরণ্যবিদ্যা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষিয় রূপে চিহ্নিত হয়েছে । আর্থসামাজিক ও পরিবেশ উন্নয়নে অরণ্যসম্পদের ভূমিকা অপরিসীমা । অরণ্য কেবলমাত্র লতা-গুল্ম-বৃক্ষের আবাসস্থল নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, বিয়োজকের জীবনচক্র । সুতরাং অরণ্য হল জীবিত সম্পদের ভান্ডার । পরিবেশরক্ষার জন্য যে কোনো দেশের মোট স্থলভাগের 33% বনভূমি থাকা প্রয়োজন ।

ভারত অরণ্যের পরিমাণ 19.39% পশ্চিমবঙ্গে মাত্র 16.5% । বনসৃজন না করলে এবং যথেচ্ছ অরণ্য ধ্বংস বন্ধ না করলে অদূর ভবিষ্যতে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে ।

সারা বিশ্বে মাথাপিছু অরণ্যের গড় পরিমাণ 0.64 হেক্টর হলেও ভারতে তা মাত্র 0.06 হেক্টর ।

ভারতবর্ষে বৃষ্টি অরণ্যের (Rain forest) পরিমাণ সবচেয়ে বেশি । গভীর বৃষ্টি অরণ্য রয়েছে শতকরা 11.48 ভাগ, অগভীর অরণ্য রয়েছে 7.76 ভাগ । এছাড়া সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাদাবন বা লবণাম্বু উদ্ভিদের অরণ্য রয়েছে 0.15 ভাগ ।

1.1. বিভিন্ন প্রকার অরণ্য :

ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা ও জলবায়ুর তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের বনভূমিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।

  • (a) চিরহরিৎ বনভূমি : 200 সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে এইপ্রকার বনভূমিতে শিশু, মেহগিনি প্রভৃতি উদ্ভিদ পাওয়া যায় । পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে এরূপ অরণ্য রয়েছে।
  • (b) পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য : 100-200 সেমি. বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে-শাল, সেগুন, পলাশ প্রভৃতি পর্ণমোচী উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায় । উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশাতে দেখা যায় ।
  • (c) লতা, গুল্ম ও তৃণজাতীয় বনভূমি : 50-100 সেমি. বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে, পূর্ব রাজস্থান, পশ্চিমিঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে সবাই, কাশ প্রভৃতি লতাগুল্ম দেখা যায় ।
  • (d) মরু অঞ্চলের অরণ্য : বার্ষিক 50 সেনি. থেকে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে (রাজস্থানের থর মরুভূমি, গুজরাটের শুষ্ক অঞ্চল) ফণিমনসা, বাবলা, খেজুর প্রভৃতি উদ্ভিদ জন্মায় ।
  • (e) পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমি : উচ্চতার পরিবর্তনে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ জন্মায় । 1000 মিটার উচ্চিতার মধ্যে মেহগনি, শিশু, গর্জন প্রভৃতি চিরহরিৎ বৃক্ষ, 1000-2000 মিটার উচ্চতায় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বার্চ, পপলার, ওক, ম্যাপল প্রভৃতি পর্ণমোচী উদ্ভিদ, 2000-4000 মিটার উচ্চতার পাইন, দেবদারু, ফার প্রভৃতি সরলবর্গীয় প্রজাতির উদ্ভিদ, 4000 মিটার বেশি উচ্চতায় তৃণভূমি, মস, ফার্ন, শৈবাল জন্মায় ।
  • (f) উপকূলের ম্যানগ্রোভ বনভূমি : সুন্দরবন ও কৃষ্ণা-কাবেরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে গরান, সুন্দরী, কেওড়া, গেঁওয়া প্রভৃতি লবণাম্বু উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায় ।

1.2. অরণ্যের বহুমুখী উপযোগিতা :

(1) আবাসস্থল : বহু জীবজন্তু, কীটপতঙ্গের এবং অরণ্যচারী মানুষের আবাসস্থল হল অরণ্যভূমি।

(2) জ্বালানি হিসাবে : আকাশমণি, পাট, ইউক্যালিপটাস, সুবাবুল, বাবলা, শিরীষ প্রভৃতি উদ্ভিদ জ্বালানি হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । গ্রামাঞ্চলে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় জঙ্গলের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।

(3) শিল্পের কাঁচামাল : কাগজ, প্লাইউড, দেশলাই, বার্নিশ প্রভৃতির কাঁচামাল অরণ্য থেকে সরবরাহ করা হয় ।

(4) ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে : আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয় ।

(5) প্রাপ্ত উপজাত বস্তু : ধুনা, গঁদ, লাক্ষা, রবার প্রভৃতি উপজাত বস্তু অরণ্য থেকে পাওয়া যায় ।

(6) পর্যটন : পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে ।

(7) জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় : ক্রান্তীয় অরণ্যে 50%-এর বেশি জৈববৈচিত্র্য পাওয়া যায় । বিপন্ন প্রাণীকুলের রক্ষায় অরণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমকা গ্রহণ করে ।

(8) মৃত্তিকার ক্ষয় নিবারণ ও জলধারণে : বনাঞ্চলে মৃতিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না এবং গাছের মূলে জলও ধরে রাখে ।

(9) বাতাসের আর্দ্রতা রক্ষায় : বাতাসের জলীয় বাষ্প বাতাসকে আর্দ্র রাখে । এই আর্দ্রতা সৃষ্টি হয় উদ্ভিদের বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় ।

(10) দূষণ রোধ : বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থ উদ্ভিদ শোষণ করে দূষণ রোধ করে ।

(11) মরুবিস্তার রোধ : অরণ্য মরুভূমির বিস্তারকে প্রতিহত করে ।

(12) অর্থনৈতিক উন্নয়নে : অরণ্যের নানা সম্পদের রপ্তানি অর্থনৈতিক উন্নয়নে তরান্বিত করে ।

(13) শক্তি রূপান্তরে : উদ্ভিদ সৌরশক্তি সংগ্রহ করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করে । সেই খাদ্য প্রত্যাক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রাণীদেহে যায় ।

1.3 অরণ্যের ব্যবহার ও অভিশোষণ (Use and over exploitation) ঃ

গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাদানের মধ্যে কাঠ, ভেষজ উদ্ভিদ, উদ্ভিজ উপজাত বস্তু অন্যতম ।

(1) রেলের স্লিপার তৈরি, আসবাবপত্র, গাড়িশিল্প, কাগজ, পাল্প ও দিয়াশলাই শিল্পে যথেচ্ছ অরণ্যের গাছ ব্যবহৃত হয় ।

(2) ওষুধ তথা ভেষজ শিল্পে গাছের নিজস্ব উপাদান এবং বহু ভেষজ উদ্ভিদ যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে । বহুজাতির সংস্থাগুলি নানপ্রকার Herbal product তৈরি করছে, যার উপদান অরণ্য থেকে সংগৃহীত হয় ।

(3) জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল হিসেবে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের জন্য বৃক্ষের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।

দামী কাঠ বিক্রির লোভে চোরাচালান, জ্বালানি সংগ্রহের জন্য বনচ্ছেদন প্রভৃতি ব্যাপক পরিমাণে চলছে । এতে শুধু বনাঞ্চল নয়, সেইসঙ্গে জীববৈচিত্র্যও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে । ভারতবর্ষে গত 20 বছরে প্রায় 2 কোটি 20 লক্ষ 55 হাজার হেক্টর হয়েছে । ভারতে প্রতিবছর গড়ে পায় 15 লক্ষ হেক্টর অরণ্য ধ্বংস হয় ।

1.4 বনচ্ছেদনের কারণ ও তার প্রভাব (Deforestation : Cause and Effect) ঃ

বনচ্ছেদনের কারণ :

  • (1) মানুষের দারিদ্র্য ও বৈজ্ঞানিক চেতনার অভাব ।
  • (2) নগরায়ণ ও শিল্পায়ন ।
  • (3) অসাধু মনোবৃত্তি ও কাঠ বিক্রির লোভ ।
  • (4) ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে রাস্তাঘাট নির্মাণ ।
  • (5) অধিক জনসংখ্যার কারণে বনচ্ছেদন করে বসতবাড়ি নির্মাণ, বানিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন ।
  • (6) স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন নদীর উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাঁধ নির্মাণ, জলাধার নির্মাণ ।
  • (7) বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল শিল্পে (কাগজ, দেশলাই) কাঁচামাল যোগান দেওয়ার জন্য ।
  • (8) প্রাকৃতিক কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস (জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্রকূলবর্তী বনভূমি, দাবানলে বিস্তৃর্ণ বনভূমি, সাইক্লোন, টর্নেডো জাতীয় ঝঞ্ঝাল বনভূমি ধ্বংস) ।

বনচ্ছেদনের প্রভাব :

বনাঞ্চল বিষয়ক আলোচনায় দেখা যায় যে আমরা বন থেকে নান সুবিধা লাভ করি । আমরা যদি অরণ্যের উপযোগিতা বিষয়ে অবগত হই তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অরণ্য বা বনাঞ্চল হ্রাস বা বনচ্ছেদন কীভাবে পরিবেশ অবক্ষয় সৃষ্টি করে তা সহজে অনুধাবন করতে পারব ।

(1) বনাঞ্চল হল জৈববৈচিত্র্যের সংগ্রহশালা । নানা অরণ্যবাসী জীবজন্তু তাদের বাসস্থান, খাদ্য আচার-আচরণ, জনন ও বংশবৃদ্ধির মতো জৈবনিক কার্যগুলি অরণ্য বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থেকে সমাধা করে । বনচ্ছেদন অরণ্য বাস্তুতন্ত্রকে বিঘ্নিত করে এবং জৈববৈচিত্র্যের হ্রাস ঘটায় । তাই বনচ্ছেদন প্রক্রিয়া জৈববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিনষ্ট করে ।

(2) অরণ্য, বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম উৎপাদক (Producer) অঞ্চল । বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য ও অক্সিজেন উৎপন্ন করার কাজে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ । বনচ্ছেদন এই প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে, তাই বাতাসে O2 এবং CO2-এর সমতা রক্ষিত হয় না, বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য সরবরাহ, খাদ্যশৃঙ্খল, খাদ্যজালিকা ও খাদ্য পিরামিড বিঘ্নিত হয় । এতে পরিবেশ অবক্ষয় দেখা দেয় ।

(3) কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত গ্যাসসমূহকে বনাঞ্চল শোষণ ও শোধন করতে সক্ষম হয় । বনচ্ছেদন প্রক্রিয়া বায়ুদূষণকে ***** করে এবং এতে ওজোনস্তর হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে । মেরু অঞ্চলেই অধিক পরিমাণে ওজোন স্তর দেখা যায় ।

(4) বনাঞ্চল থেকে মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ, আসবাবপত্র, গৃহ ও যানবাহন নির্মাণের উপাদান সংগ্রহ করে । নানা প্রকার ভেষন উদ্ভিদ জীবনদায়ী ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । বনাঞ্চল হ্রাস স্বাস্থ্য পরিকল্পনাকে বিঘ্নিত করে । পরিবেশ অবক্ষয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে ।

(5) উপকূলবর্তী বনাঞ্চল, সামুদ্রিক বিপর্যয় থেকে উপকূলভাগকে রক্ষা করে, ভূমিক্ষয় নিবারণ করে, বন্যা হ্রাস করে । বনচ্ছেদন প্রক্রিয়া, ভূমিক্ষয়, ভূমিকম্পের প্রবণতাকে বৃদ্ধি করায় পরিবেশ অবক্ষয় দেখা যায় ।

(6) পাহাড়ী এলাকার ভূমি ঢালে অবস্থিত বনাঞ্চল মৃত্তিকার অবস্থানকে দৃঢ় করে । বনচ্ছেদন প্রক্রিয়া পাহাড়ীয়া ঢালে ভূমিক্ষয়ের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে । অবক্ষয়ের সঙ্গে যুক্ত ।

(7) বনচ্ছেদন প্রক্রিয়া খরা, বন্যা, ধস (Landslide) প্রভৃতি পরিবেশ অবক্ষয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলিকে সুযোগ দেয় । এই সমস্ত কারণে বনচ্ছেদন প্রক্রিয়া পরিবেশ অবক্ষয়ের সাহায্যকারী একটি ক্ষতিকারক প্রক্রিয়া ।

(8) বাতাসের আর্দ্রতা রক্ষায়, মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, মরু বিস্তার রোধে, শক্তির রূপান্তরে ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অরণ্য সাহায্য করে । তাই বনচ্ছেদন পরিবেশ অবক্ষয়ের পথকে প্রশস্ত করে ।

1.5 ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ আন্দোলন হল-

  • সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন
  • চিপকো আন্দোলন
  • নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন

বিদেশে পরিবেশ আন্দোলন :

অন্যান্য দেশে অনুষ্ঠিত আন্দোলনের মধ্যে 1971 সালে নেদারল্যান্ডের ‘গ্রীন পিস’ (Green Peace) আন্দোলন উল্লেখযোগ্য । জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এদের মূল লক্ষ্য ছিল । বর্তমানে 151টি দেশে ‘গ্রীন পিস’ সংস্থা গড়ে উঠেছে , যার সদস্য সংখ্যা প্রায় 50 লক্ষ ।

(1) সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন :

ইংরেজি সাইলেন্ট (Silent) কথাটির অর্থ হল নিস্তব্ধ এবং ভ্যালি (Valley) কথার অর্থ হল উপত্যকা । ভারতের কেরালা রাজ্যে শহর থেকে দূরে পালঘাটের পাহাড়ী বনপরিবেশ এর আয়তন প্রায় 8,592 হেক্টর । উপত্যকাটি নির্জন, নিস্তব্ধ ও শান্ত, তাই এই অঞ্চলটিকে সাইলেন্ট ভ্যালি বলা হয় । সত্তরের দশকে এই বিস্তীর্ণ বৃষ্টি অরণ্যের মধ্যে কুন্তি নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে কেরালা রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ প্রায় 800 হেক্টর বনভূমি (মোট বনভূমির 10 শতাংশ) নষ্ট করে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের পরিকল্পনা করে । এই বাঁধ নির্মাণের ফলে অরণ্যের একটি বৃহৎ অংশ জলে প্লাবিত হত, যার জন্য অরণ্যের অবক্ষয় ছিল অবধারিত । এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কেরালা রাজ্যে জনগণ যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে তা সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন নামে পরিচিত ও বিখ্যাত । এই আন্দোলন শুধুমাত্র কেরালা রাজ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, সমগ্র ভারতে, এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরেও ছড়িয়ে পড়ে । এই আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে শেষপর্যন্ত পরিবেশ মন্ত্রক, কৃষিমন্ত্রক ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের পরামর্শ অনুযায়ী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এই পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে ।

আন্দোলন ও তাৎপর্য :

(1) 1978 সালে কেরালায় একটি বামপন্থী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কেরালার শাস্ত্রীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে বৃষ্টি অরণ্যকে বাঁচানোর জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাই সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন ।

(2) কেরালা সরকার এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য বিধানসভায় দুই বার সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করলেও 1980 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে এই প্রকল্প রূপায়নে সাড়া দেননি ।

(2) চিপকো আন্দোলন :

হিন্দীতে চিপকো কথাটির অর্থ হল ‘জড়িয়ে ধরা’ বা ‘আলিঙ্গন করে ধরে রাখা’ । ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অবাধ বন ধ্বংস রোধ করার জন্য 1973 সালে এই আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল । এই আন্দোলন গান্ধীজি শুরু না করলেও আন্দোলনের সাথে গান্ধীজির নাম জড়িয়ে আছে । কারণ তার অহিংস আন্দোলনের অনুকরণে চিপকো আন্দোলন ছিল বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন । 1973 সালের এপ্রিল মাসে উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল জেলার গোপেশ্বর নামক পাহাড়ী এলাকার মন্ডল গ্রামে চিপকো আন্দোলনের সূত্রপাত । মহিলারা এই কাজে সামিল হন । এলাহাবাদের একটি খেলাধূলার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার ঠিকাদাররা এ অঞ্চলের বড় কয়েকটি গাছ কাটতে শুরু করলে, গ্রামবাসীরা ঐ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁরায় । কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কথায় কর্নপাত না করে কোনো বাধা না মেনে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে । মহিলা গ্রামবাসীরা অন্য কোনো উপায় না দেখে অনেকে মিলে এক একটি করে গাছ জড়িয়ে ধরে রাখে, ফলস্বরূপ ঐ কাজে নিযুক্ত ব্যাক্তিরা আর গাছ না কেটে ফেরত যায় । এতে গ্রামবাসীরা খুবই উদ্বুদ্ধ হয় এবং পরবর্তীকালে ঐ একই পদ্ধতিতে প্রত্যেককে গাছ কাটা থেকে বিরত রাখত । বৃক্ষ ছেদন বন্ধের এই আন্দোলন নামে পরিচিত ।

ব্যাপক গাছ কাটার ফলে গ্রামবাসীরা জ্বালানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল । তাছাড়া ভূমিক্ষয়ের ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছিল । তাই গ্রামবাসীদের মনে ক্ষোভ জন্মায় । তবে তা অহিংসারূপে প্রকাশিত হয় । সুন্দরলাল বহগুণার নাম এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে । কেননা তিনি আন্দোলনের গুরুত্ব, সারমর্ম ও কার্যকারিতে এবং পরিবেশগত গুরুত্ব উপলব্ধি করে শুধু উত্তরপ্রদেশে নয়, ভারতে নয়-সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং এই আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক স্তরে জনমত সংগঠিত করেছিলেন । মীরাবেন ও সরলাবেন—গান্ধীজির এই দুই শিষ্যার কাছে বাস্তুতন্ত্রের নিয়মনীতি সম্পর্কে অনেক তথা-সমৃদ্ধ হয়ে তিনি 1982 সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগদান করে চিপকো আন্দোলনের গুরুত্ব জমি ও জল তথা পরিবেশ সংরক্ষণের বিষিয়ে এক হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য তুলে ধরে সেখানকার জনমানসে আলোড়ন সৃষ্টি করেন । এর ফলে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে চিপকো আন্দোলন যথেষ্ট গুরুত্ব পায় । এই আন্দোলনের অপর নেতা চন্ডীপ্রসাদ ভাট এই প্রকার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দমেলি গ্রাম স্বরাজ মন্ডল নামে একটি সমবায় সংস্থা গড়ে তোলেন ।

1.6 অরণ্য থেকে অতিরিক্ত কাঠ আহরণ, খননকার্য, বাঁধ নির্মাণের কারণে বনাঞ্চল ও আদিবাসীদের উপর উদ্ভুত প্রভাব (Timber extraction, Mining, construction of dams and Their effects on forests and tribal people) ঃ

ভারতবর্ষে প্রতিবছর যে পরিমাণ অরণ্য ধ্বংস হয় তার কারণে যে ভূমিক্ষয় হয়, ধস, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুষণ ঘটে তা যদি টাকার অঙ্কে হিসেব করা যায় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ হবে বাৎসরিক প্রায় 17 হাজার কোটি টাকা । কিন্তু তা সত্ত্বেও সভ্যতা বিকাশের অদম্য গতি, মানুষের চাহিদা পূরণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা প্রকৃতিগতভাবে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে ।

A. অতিরিক্ত কাষ্ঠ আহরণ :

কাগজ, দিয়াশলাই, পাল্প প্রভৃতি বনজ সম্পদ সম্পর্কিত শিল্পকার্যে, বসতবাড়ি নির্মাণে, আসবাবপত্র, রেলের স্লিপার ও অন্যান্য শিল্পকার্যে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হচ্ছে । সে তুলনায় বনসৃজন প্রকল্প গ্রহণের পরিমাণ নগন্য । এ কারণে বহু বছরের প্রাকৃতিক যত্নে সৃষ্টি অরণ্যরাজি ধ্বংস হচ্ছে । এতে শুধু অরণ্য বসবাস করে এবং অরণ্য সম্পদের অপর নির্ভর হয়ে জীবনযাত্রা অতিবাহিত করে তারা বিপন্ন বোধ করছে । এক অরণ্য ছেড়ে অন্যত্র যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

B. খননকার্য (Mining) :

বহু অরণ্যভূমির নীচে কয়লা, লৌহ আকরিক, অভ্র, তামা এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে । সভ্যতা বিকাশের কারণে সেই সম্পদগুলি আহরণের জন্য বনাঞ্চল ধ্বংস করে নানা খননকার্য চলতে থাকে । এছাড়া রাস্তাঘাট, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের জন্যও বহু অরণ্যভূমিকে ধ্বংস করে খননকার্য চলে । খননে পর ভূমিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার বা নূতনভাবে সেখানে বনসৃজনের কোনো প্রকল্প চোখে পড়ে না । এর ফলে শুধুমাত্র বনাঞ্চল ধ্বংস নয়, সেই স্থানের ভূমি ও জলদূষণও ঘটে । বহু জীব তাদের আবাসস্থল হারিয়ে বিপন্ন হয় ।

C. বাঁধ নির্মাণ (construction of dams) :

বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গ্রহণের কারণে নানা জায়গায় নদীর বুকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নানা জলপ্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে ও হচ্ছে । এর ফলে বড়ো বড়ো বাঁধ তৈরি করা হয় । এখনও পর্যন্ত ভারতে প্রায় 3500 বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে । এর কুফল হিসেবে বনাঞ্চল জলমগ্ন হচ্ছে, জীবজন্তু তাদের বিচরণক্ষেত্র হারাচ্ছে, বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে । এক অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ হলেও তার কুপ্রভাব অন্যত্র সৃষ্টি হয় । বহুস্থানে এইরকম প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে । (উদাঃ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন) । তথ্য থেকে জানা যায় বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের কারণে ভারতে প্রায় 2.5 কোটি ঘনমিটার বনাঞ্চল ইতিমধ্যে জলমগ্ন হয়েছে । উদাহরণ হিসাবে ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ, ময়ূরাক্ষী প্রকল্প, কংসাবতী, তিস্তা, নাগার্জুন, তুঙ্গভদ্রা, কোশী, চম্বল, রামগঙ্গা প্রকল্পের নাম উল্লেখ্য ।

বনাঞ্চল ও আদিবাসীদের ওপর প্রভাব :

অতিরিক্ত কাষ্ঠ আহরণ, খননকার্য ও বাঁধ নির্মাণ আপাতদৃষ্টিতে সভ্যতার অগ্রগতির চাকাকে সচল রেখেছে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয় । বন্যা প্রতিরোধ, বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্য সমাধা হলেও বহু বনাঞ্চল মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় । বাস্তুচ্যুত মানুষ নূতন স্থানে মর্যাদা হারিয়ে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে । অরন্যের আদিবাসীরা বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহ এবং জ্বালানি সংগ্রহের অভাবে যাযাবরের মতো একস্থান থেকে অন্যস্থানে বিচরণ করে ।

নগরায়ণ ও বাস্তুহারা মানুষ :

উন্নয়ন প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হন । 1950 থেকে 1990 সাল পর্যন্ত মোট 1 কোটি 64 লক্ষ বাস্তুহারা মানুষের মধ্যে 25% মানুষ পুনর্বাসন (Resettlement) পেয়েছেন । মোট 63 লক্ষ 21 হাজার আদিবাসীর মধ্যে 15 লক্ষ 81 হাজার জন মানুষ পুনর্বাসন পেয়েছেন ।

উন্নত দেশগুলির মোট জনসংখ্যার 75 ভাগ মানুষ শহরে বাস করে । উন্নয়নশীল দেশগুলিতে 45-50 শতাংশ মানুষ শহরে বা নগরে বাস করে । কিন্তু এই সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ।

কেস স্টাডি

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন :

ভারতের গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে অনাবাদী পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা, জলবিদ্যুৎ করা এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ঐ দুটি প্রদেশের সরকার যৌথ উদ্যোগে নর্মদা প্রকল্প গ্রহণ করেছে । নর্মদা বাঁধ প্রকল্পটির আওতায় 30টি বড়, 135টি মাঝারি এবং 3000টি ছোটো বাঁধ নর্মদা ও তার উপনদীগুলির উপর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যা তৈরি করতে সময় লাগবে প্রায় 25 বছর এবং এর খরচ ধরা হয়েছে, আনুমানিক 40,000 কোটি টাকা, (যদিও সরকারী মতে 2000 কোটি টাকা) ।

নর্মদা নদীতে বাঁধ তৈরি করার বিরুদ্ধে প্রথমে বাবা আমতে এবং পরে মেধা পাটেকর তীব্র আন্দোলন সংঘটিত করেন । এই আন্দোলনের নাম ‘‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন” (NBA) । আন্দোলনকারীদের মতে এই প্রকল্প রূপায়িত হলে 92টি গ্রাম সম্পূর্ণ এবং 294টি গ্রাম আংশিক জলমগ্ন হবে । এই ক্ষতির কথা চিন্তা করে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন । এই প্রকল্প 1961 সালে আংশিকভাবে শুরু হলেও 1998 সালে এই প্রকল্পের কাজ পূর্ণমাত্রায় শুরু হয় । উল্লেখিত 30টি বড় বাঁধের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি বাঁধ হল সর্দার সরোবর বাঁধ ও নর্মদা ভ্যালি প্রজেক্ট ।

এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল :

  • (1) 1450 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, যার সুবিধা উভয় রাজ্য লাভ করবে ।
  • (2) ভারতের অন্তত তিনটি রাজ্যে জলসেচের ব্যবস্থা করার ফলে অনাবাদী জমি কৃষি জমিতে পরিনত হবে ।
  • (3) বন্যা প্রতিরোধ ও বন্যার ফলে ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ।

কিন্তু এই প্রকল্প গড়ে উঠলে উল্লেখিত লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে পরিবেশবাদী মহিলা নেত্রী শ্রীমতী পাটেকার এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন এবং 1989 সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষকে নিয়ে হারসুদ উপত্যকায় সমবেত হন এবং এই প্রকল্প বন্ধে আহ্বান জানান । বর্তমানে বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত যেমন- অরুন্ধুতি রায় ।

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন নামক সংস্থার সঙ্গে ভারত সরকারের বিরোধের মূল কারণ হল :

  • (1) NBA-এর মতে এই প্রকল্প থেকে মোটামুটি 50 মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয় । কিন্তু সরকার 1450 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির পক্ষে রায় দিয়েছেন ।
  • (2) সরকারি মতে এই প্রকল্পের দ্বারা বন্যা প্রতিরোধ এবং বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি বন্ধ করা সম্ভব হবে । কিন্তু NBA-এর মতে এই অঞ্চলে বন্যা প্রতিরোধ করা গেলেও অন্য অঞ্চলে নতনভাবে বন্যার সৃষ্টি হবে অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে বন্যা রোধ সম্ভব হবে না ।
  • (3) সরকার এখানকার জল মূলত সেচকার্যে ব্যবহৃত হয় বলে মনে করেন কিন্তু NBA-এর মতে এখানকার জল মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ।
  • (4) সরকারি মতে 35 হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হবে কিন্তু NBA-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী 85 হাজার পরিবারও প্রায় 3 লক্ষ মানুষ তাদের বাস্তুভূমি ও রোজগার হারাবে ।
  • (5) সরকারি মতে এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় 2000 কোটি টাকা হবে, কিন্তু NBA-এর মতে, এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় চল্লিশ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে ।