চিপকো আন্দোলন
হিন্দীতে চিপকো কথাটির অর্থ হল 'জড়িয়ে ধরা' বা 'আলিঙ্গন করে ধরে রাখা'। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অবাধ বন ধ্বংস রোধ করার জন্য 1973 সালে এই আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল। এই আন্দোলন গান্ধীজি শুরু না করলেও আন্দোলনের সাথে গান্ধীজির নাম জড়িয়ে আছে। কারণ তাঁর অহিংস আন্দোলনের অনুকরণে চিপকো আন্দোলন ছিল বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন। 1973 সালের এপ্রিল মাসে উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল জেলার গোপেশ্বর নামক পাহাড়ী এলাকার মণ্ডল গ্রামে চিপকো আন্দোলনের সূত্রপাত। মহিলারা এই কাজে সামিল হন। এলাহাবাদের একটি খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার ঠিকাদাররা এ অঞ্চলের বড় কয়েকটি গাছ কাটতে শুরু করলে, গ্রামবাসীরা ঐ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কথায় কর্ণপাত না করে কোনো বাধা না মেনে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। মহিলা গ্রামবাসীরা অন্য কোনো উপায় না দেখে অনেকে মিলে এক একটি করে গাছ জড়িয়ে ধরে রাখে, ফলস্বরূপ ঐ কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা আর গাছ না কেটে ফেরত যায়। এতে গ্রামবাসীরা খুবই উদ্বুদ্ধ হয় এবং পরবর্তীকালে ঐ একই পদ্ধতিতে প্রত্যেককে গাছ কাটা থেকে বিরত রাখত। বৃক্ষ ছেদন বন্ধের এই আন্দোলন চিপকো আন্দোলন নামে পরিচিত।
ব্যাপক গাছ কাটার ফলে গ্রামবাসীরা জ্বালানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। তাছাড়া ভূমিক্ষয়ের ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছিল। তাই গ্রামবাসীদের মনে ক্ষোভ জন্মায়। তবে তা অহিংসারূপে প্রকাশিত হয়।
সুন্দরলাল বহুগুণার নাম এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কেননা তিনি আন্দোলনের গুরুত্ব, সারমর্ম ও কার্যকারিতা এবং পরিবেশগত গুরুত্ব উপলব্ধি করে শুধু উত্তরপ্রদেশে নয়, ভারতে নয়—সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং এই আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক স্তরে জনমত সংগঠিত করেছিলেন। মীরাবেন ও সরলাবেন— গান্ধীজির এই দুই শিষ্যার কাছে বাস্তুতন্ত্রের নিয়মনীতি সম্পর্কে অনেক তথ্য-সমৃদ্ধ হয়ে তিনি 1982 সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগদান করে চিপকো আন্দোলনের গুরুত্ব, জমি ও জল তথা পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে এক হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য তুলে ধরে সেখানকার জনমানসে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এর ফলে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে চিপকো আন্দোলন যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। এই আন্দোলনের অপর নেতা চণ্ডীপ্রসাদ ভাট এই প্রকার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দমেলি গ্রাম স্বরাজ মণ্ডল নামে একটি সমবায় সংস্থা গড়ে তোলেন।