পুনর্বাসন ও পুনস্থাপনের সমস্যা
বাস্তুহারা জনগণের পুনর্বাসন ও পুনস্থাপনের সমস্যা (Resettlement and Rehabilitation of people, its problem concerns)
মানব সভ্যতার বিকাশের প্রারম্ভিক পর্ব ছিল কৃষিভিত্তিক ও নদীকেন্দ্রিক। নদীকেন্দ্রিক সভ্যতায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও শিল্পায়নের ফলে নতুন নতুন শিল্পকেন্দ্রিক ও কর্মকেন্দ্রিক বাসস্থান নির্মাণের প্রয়োজনে গড়ে ওঠে নগর। নগরে বসবাসকারী মানুষের চাহিদা পূরণ, সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলিকে একত্রে ‘নগরায়ণ' বলা হয়।
জীবনকে সহজতর, সুন্দরতর, দীর্ঘমেয়াদী করে, বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে বলে উন্নয়ন। উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণে চাই নতুন নতুন উপকরণ, শিল্পায়ন, চাই বিদ্যুৎ, জমি, অরণ্যের গাছপালা। উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক, পেশাজীবি, দক্ষ মানুষজনের জন্য চাই থাকার জায়গা, শিক্ষাকেন্দ্র, বাণিজ্যকেন্দ্র, চিকিৎসালয়, যানবাহন, রাস্তাঘাট, আমোদ প্রমোদ' কেন্দ্র। সুতরাং সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য যে আয়োজন এক কথায় তাকেই বলব ‘ নগরায়ণ'। এমন কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই, যার পরিবেশের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। তবু চেষ্টা থাকবে কতটা কম ক্ষতি করে উন্নয়ন পরিকল্পনা রূপায়িত করা যায়। পরিবেশ ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য এবং রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সারা বিশ্বে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে পরিবেশ অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। শিল্পায়ন জল, বায়ু, মৃত্তিকা দূষিত করছে, নগরায়ণের ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নগরায়ণ ও বাস্তুহারা মানুষ :
- উন্নয়ন প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হন। 1950 থেকে 1990 সাল পর্যন্ত মোট 1 কোটি 64 লক্ষ বাস্তুহারা মানুষের মধ্যে 25% মানুষ পুনর্বাসন (Resettlement) পেয়েছেন। মোট 63 লক্ষ 21 হাজার আদিবাসীর মধ্যে 15 লক্ষ 81 হাজার জন পুনর্বাসন পেয়েছেন।
- উন্নত দেশগুলিতে মোট জনসংখ্যার 75 ভাগ মানুষ শহরে বাস করে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে 45-50 শতাংশ মানুষ শহরে বা নগরে বাস করে। কিন্তু এই সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক জীবনে প্রভাব :
- নগরায়ণের ফলে বাস্তুহারা মানুষদের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বদলে যায়। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভুলে নতুন বসতি গড়ে ওঠে। পরিচিত মানুষদের মধ্যে চিরকালীন বিচ্ছেদ ঘটে। সমাজজীবনে এর প্রভাব পড়ে। খেতমজুরদের কাজ জোটে না। খাস জমি বা বনের ধারে বসবাসকারী আদিবাসীদের উচ্ছেদ হতে হয়। কৃষক নিজের চেনা পরিবেশ হারিয়ে শিল্প শ্রমিকে বা ছোটো ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়।
পরিবেশের ওপর প্রভাব :
- (1) নগরায়ণের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা পরিবর্তন আসে। অরণ্য ধ্বংস করে নগরায়ণ হয়, বাস্তুচ্যুত মানুষদের নতুন কলোনি তৈরির জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানের পরিবেশ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। বন্যা রোধ, জলসেচ আর বিদ্যুৎ তৈরি করতে গিয়ে বিশাল এলাকা জলমগ্ন হয়, অরণ্য ধ্বংস হয়। নর্মদা উপত্যকার সরদার সরোবরের উদাহরণ নিয়ে এলে দেখা যাবে তিন রাজ্যে 108টি গ্রামে 42000 হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ নর্মদা প্রকল্পের ফলে বহু বনভূমি জলমগ্ন হয়েছে। শুধু ছিন্নমূল পরিবারের সংখ্যা 41500 (সরকারি হিসেবে)।
- (2) অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নগরায়ণের এক অবশ্যম্ভাবী ফল হল কঠিন, তরল, গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থের বৃদ্ধি। বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, শোধন এবং বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে না পারলে পরিবেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। পরিবহনজনিত দূষণ, কৃষি বিষ, তেল ও কারখানার বর্জ্য, পারমাণবিক বর্জ্যে পরিবেশ ভরে উঠছে। আগামী দিনে এর ফল হবে ভয়ঙ্কর।