পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য
পরিবেশের সঙ্গে দৈহিক ও মানবিক কার্যের সুসামঞ্জস্য আনন্দদায়ক সম্পর্কই হল ‘স্বাস্থ্য’। শুধুমাত্র নীরোগ অবস্থাকে স্বাস্থ্য বোঝায় না। World Health Organisation-এর মতে, দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এক পরিবেশ সৃষ্টিই হল স্বাস্থ্য। পরিবেশের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিবিড়। নির্মল, দূষণমুক্ত পরিবেশ প্রত্যেকে কামনা করে। দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে জীব নীরোগ দেহে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ের মানবসভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়ন পরিবেশকে দূষিত করেছে। শব্দদূষণ, জল ও বায়ুদূষণ, কীটনাশক দূষণ, তেজস্ক্রিয় দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। পরিবেশ সুস্থ না থাকলে স্বাস্থ্য ভালো থাকতে পারে না। আমরা যদি বিভিন্ন প্রকার দূষণের মানুষের শরীরের ওপর প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করি তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
শব্দদূষণের প্রভাব :
শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর।
- (1) মানুষের মানসিক অবসাদ আসে এবং কর্মদক্ষতা কমে যায়।
- (2) মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় বলে অকারণে বিরক্তি আসে।
- (3) শ্রবণেন্দ্রিয় খারাপ হয়, কান বধির হয়ে যায়।
- (4) ফুসফুসের গোলোযোগ দেখা দেয় ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার অস্বাভাবিক হয়।
- (5) স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
- (6) মাথা ঝিম ঝিম করে, বমিভাব আসে, স্নায়ু উত্তেজিত হয়।
- (7) হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অস্বাভাবিক হয়।
- (8) রাতকানা হতে পারে এবং রং চেনার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
মানুষের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব :
- (a) ধোঁয়াশার ফলে ও যানবাহনের ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে, হাঁপানি হয় এবং ফুসফুসের ক্যানসার সহ অন্যান্য রোগ (যেমন—যক্ষ্মা, ব্রঙ্কাইটিস) হতে পারে।
- (b) ধোঁয়াতে মিশে থাকা কার্বন-মনো অক্সাইড রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- (c) ধোঁয়াশায় যে অ্যাসিড তৈরি হয় তা বড়ো বড়ো অট্টালিকাকে নষ্ট করে।
- (d) যানবাহন থেকে উৎপন্ন এবং পিচ গলানো ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে থাকা বেঞ্জপাইরিন থেকে ক্যান্সার হয়।
- (e) ছত্রাকরেণু ও পরাগরেণু অ্যালার্জি, চর্মরোগ ও হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে।
মানুষের ওপর জলদূষণ ও শিল্পবর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব :
- আর্সেনিক দূষণের ফলে মানুষের যে রোগ হয় তাকে আর্সেনিকোসিস বলে।
আর্সেনিক দূষণের প্রভাবে :
- (1) ফুসফুসের প্রদাহ এবং যকৃৎ রোগ হয়।
- (2) চর্মরোগ হয়, গায়ে ও মুখে নীলচে ছোপ দেখা যায় এবং মূত্রনালী আক্রান্ত হয়।
- (3) পায়ের পাতায় কালো ঘা হয় একে “ব্ল্যাকফুট ডিজিজ” বলে। এই রোগে বহু লোক মারা যায়।
কলকারখানায়, খনিতে, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ও সূক্ষ্মকণা যুক্ত এলাকায় কর্মরত মানুষদের যে সমস্ত রোগ হয় অর্থাৎ যে সমস্ত রোগের উৎস হল তাদের কর্মস্থল সেইরকম রোগকে পেশাগত রোগ বলা হয়।
যেমন— অ্যাসবেস্টস কণা থেকে 'অ্যাসবেস্টোসিস' রোগ হয়। পাথর ভাঙা ক্ষুদ্রকণা থেকে ‘সিলিকোসিস' রোগ হয়। লোহাচূর্ণ থেকে ‘সিডারোসিস' রোগ, সীসা থেকে 'ডিসলেক্সিয়া', ক্যাডমিয়াম থেকে ইটাই-ইটাই রোগ হয়। কয়লার গুঁড়ো থেকে 'এ্যানথ্রাকোসিস' রোগ হয়। তেজস্ক্রিয় দূষণের ফলে ক্যানসার, চর্মরোগ এবং মৃত্যুও ঘটে। এছাড়া বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম কয়েক প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে।