logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

পরিবেশ বিদ্যা চর্চা

পরিবেশবিদ্যা

পরিবেশবিদ্যার বহুমুখী প্রকৃতি

ভূমিকা পরিবেশ পরিবেশের উপাদান পরিবেশবিদ্যা পরিবেশবিদ্যার পরিধি পরিবেশগত শিক্ষার গুরুত্ব স্থিতিশীল উন্নয়ন

বিশ্ব: বাস্তুসংস্থান ও বাস্তুতন্ত্র

ভূমিকা বাস্তুতন্ত্রের উপাদান সমূহ খাদ্যশৃঙ্খল খাদ্য জাল বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ বাস্তুতন্ত্রের ধারণা বাস্তুতান্ত্রিক উত্তরাধিকার পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্র বনভূমির বাস্তুতন্ত্র মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র মোহনা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র নদীনালার বাস্তুতন্ত্র হ্রদের বাস্তুতন্ত্র জীবমণ্ডল

প্রাকৃতিক সম্পদ

ভূমিকা সম্পদ সম্পদের শ্রেণিবিভাগ প্রাকৃতিক সম্পদ নবীকরণযোগ্য সম্পদ অনবীকরণযোগ্য সম্পদ ভূমিসম্পদ অরণ্যসম্পদ জলসম্পদ শক্তিসম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ স্থিতিশীল উন্নয়নে সম্পদ

জীববৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ

ভূমিকা জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা জীববৈচিত্র্যের স্তর জীববৈচিত্র্যের মূল্য জীববৈচিত্র্যের দেশ ভারতবর্ষ জীববৈচিত্র্যের উষ্ণ অঞ্চল জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট বিরল , বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রাণী জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ যৌথ বন ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ দূষণ

ভূমিকা পরিবেশ দূষণ জল দূষণ বায়ু দূষণ মৃত্তিকাদূষণ শব্দদূষণ

জনসংখ্যা ও পরিবেশ

ভূমিকা বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার তারতম্য জনবিস্ফোরণ পরিবার পরিকল্পনা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য পুনর্বাসন ও পুনস্থাপনের সমস্যা পরিবেশের বিপর্যয় বন্যা ভূমিকম্প সাইক্লোন ভূমিধস ধস ব্যবস্থাপনা বায়ুদূষণ : ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা চের্নোবিল দুর্ঘটনা বিশনই আন্দোলন আপ্পিকো চাভেলী আন্দোলন চিপকো আন্দোলন সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন পরিবেশ নৈতিকতা পরিবেশ রক্ষায় সংস্কৃতি লিঙ্গ মানবাধিকার পরিবেশ সচেতনতা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা জমি সংরক্ষণ অরণ্য সংরক্ষণ খনিজ সম্পদ সংরক্ষণ সম্পদের পুনঃব্যবহার দূষণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল পরিবেশ বিষয়ক নীতি

পরিবেশগত আইন

পরিবেশ সংক্রান্ত আইন পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৮৬ বায়ুদূষণ আইন ১৯৮১ জলদূষণ আইন ১৯৭৪ জল(দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর আইন , ১৯৭৭ শব্দদূষণ আইন ২০০০ ভূমিদূষণ আইন ১৯৮৯ অরণ্য সংরক্ষণ আইন ১৯৮০ বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ১৯৭২ কেন্দ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আন্তর্জাতিক মান নির্ধারক সংস্থা জীববৈচিত্র্য আইন ২০০২ আন্তর্জাতিক চুক্তি জীববৈচিত্র্যের সম্মেলন সংরক্ষিত এলাকা আদিবাসী জনসংখ্যা ও তার আধিকার মানুষ ও বন্যপশু সংঘাত

শক্তিসম্পদ


শক্তিসম্পদ (Energy Resources) :

শক্তিসম্পদ (Energy Resources) :

শক্তি প্রাকৃতিক ধর্ম। শক্তিসম্পদ বলতে বোঝায় কার্য-সম্পাদনের ক্ষমতা। যেসব শক্তির সাহায্যে মানুষ সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে পারে, উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে পারে, কোনো দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে পারে, অর্থনৈতিক উন্নতি তরান্বিত করতে পারে তাকে শক্তিসম্পদ বলে। শক্তি-উৎপাদনের উপকরণকেই বলে শক্তিসম্পদ।

যেমন- কয়লা, খনিজ তেল, সৌরশক্তি, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি।

শক্তিসম্পদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of energy resources ) : শক্তিসম্পদের শ্রেণিবিভাগ নীচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হল—

শক্তিসম্পদ জৈব শক্তি জড় শক্তি পশুশক্তি (উট, পেশি শক্তি প্রচলিত বা অপ্রচলিত বা ঘোড়া, হাতি বলদ, 'গাধা) (মানুষ) চিরাচরিত শক্তি অচিরাচরিত শক্তি ক্ষয়িষ্ণু বা সঞ্চিত বা অপুনর্ভব পরণশীল বা প্রবহমান বা যা অপূরণশীল শক্তি প্রবহমান শক্তি নবীভবনযোগ্য শক্তি (কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক (প্রবহমান জলধারা) (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি প্রভৃতি) জোয়ারভাটার শক্তি, জৈব গ্যাস প্রভৃতি)

শক্তির চাহিদার ক্রমিক বৃদ্ধি (Growing Energy Needs)

শক্তির আদিম উৎস হল সূর্য। সভ্যতার বিবর্তনের ধারায় শক্তির নানা রকম ব্যবহার দেখা যায়। মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের সঙ্গে শক্তির সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বিশ্বের উন্নত দেশগুলি শতকরা ৪০ ভাগের বেশি শক্তি ব্যবহার করে। অপরদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো শতকরা 20 ভাগ শক্তি ব্যবহারের সুযোগ পায় যদিও সেখানে বিশ্বের 70 ভাগ মানুষ বসবাস করে। শক্তির ব্যবহারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক ধরা হয় ৷

কিন্তু শক্তির অতি ব্যবহারের দীর্ঘস্থায়ী কুফলগুলিকে বিবেচনায় নিয়ে আসা যায় না। 1950-1990 সালের মধ্যে বিশ্বে শক্তির চাহিদা চারগুণ বেড়েছে। বিগত 22 বছরে বিদ্যুতের চাহিদা 2 গুণ বেড়েছে। 2000 সালে মোট শক্তি খরচের মধ্যে আছে 9096 মিলিয়ন টন তেল। এর ফলে পৃথিবীতে মাথাপিছু তেল খরচ দাঁড়াচ্ছে 1.5 টন প্রাকৃতিক শক্তির মধ্যে বিদ্যুৎ শক্তির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ভারতে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের চাহিদা মাথায় রেখে 11 তম ও 12 তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় 1 লক্ষ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারতে 124287.17 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় 30 শতাংশ কম বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উৎস হিসাবে শতকরা হিসাব নিম্নরূপ—

উৎস শতকরা বিদ্যুৎ তৈরি
কয়লা 65%
জলবিদ্যুৎ 14%
প্রাকৃতিক গ্যাস 10%
খনিজ তেল 9%
বায়ুশক্তি, তাপশক্তি, জোয়ারভাটা ইত্যাদি 1%
পারমাণবিক শক্তি 1%

2020 সাল নাগাদ উত্তর আমেরিকার চেয়ে শতকরা চল্লিশ ভাগ বেশি শক্তি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ব্যবহৃত হবে বলে অনুমান। বিংশ শতাব্দীর শেষে বিশ্বের বাণিজ্যিক শক্তির উৎস হিসেবে তেলের ব্যবহার শতকরা 39 ভাগ, কয়লা 24 ভাগ, প্রাকৃতিক গ্যাস 24 ভাগ, পারমাণবিক শক্তির শতকরা 7 ভাগ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার শতকরা 6 ভাগ। ভারতে কয়লার ভাণ্ডার থাকায় শক্তির উৎস হিসেবে কয়লার ব্যবহার শতকরা 55 ভাগ, তেল 31 ভাগ, প্রাকৃতিক গ্যাস ৪ ভাগ, জলশক্তি 5 ভাগ এবং পারমাণবিক শক্তি 1 ভাগ। ভারতে মোট শক্তির চাহিদার 1/3 ভাগ বর্তমানে কাঠ ও জৈবজ্বালানি থেকে (খড়, বিচালি, গোবর ইত্যাদি) আসে।

ভারতবর্ষে প্রতিবছর 4.6% হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। 2012 সালে ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ 17.2 কোয়াড্রিলিয়ন B.T.U.

নবীকরণযোগ্য ও অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস (Renewable and non-renewable Energy sources) :

যে সমস্ত শক্তি উৎসগুলি ক্ষয়িষ্ণু নয় অর্থাৎ চিরকাল যে সমস্ত উৎসকে শক্তি উৎপাদনের কাজে বারে বারে ব্যবহার করা যায় তাদেরকে বলে নবীকরণযোগ্য শক্তি।

যেমন—সৌরশক্তি, পবনশক্তি, জোয়ারভাটার শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি।

যে সমস্ত শক্তি উৎসগুলি ক্ষয়িষ্ণু অর্থাৎ শক্তি উৎপাদনের ফলে যাদের পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে এবং যাদের পুনরায় ফিরে পাওয়া যাবে না তাদের অনবীকরণযোগ্য শক্তি বলা হয়।

যেমন—কয়লা, পেট্রোল।

অপ্রচলিত বা বিকল্প শক্তি এবং প্রচলিত শক্তি (Non-Conventional & Conventional energy) :

সংজ্ঞা : শক্তির উৎস সন্ধানে যে সমস্ত শক্তির ব্যবহার এখনও বিশেষ প্রচলিত হয়নি অথবা অতিসামান্য মাত্রায় ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে সেই সমস্ত শক্তিকে অচিরাচরিত বা অপ্রচলিত শক্তি বলা হয়।

যেমন—সৌরশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি, পবনশক্তি, ভূ-তাপশক্তি, জৈব গ্যাস প্রভৃতি।

অচিরাচরিত শক্তি ব্যবহারের সুবিধা (Advantages) :

অচিরাচরিত শক্তি ব্যবহারের নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাওয়া যায়। যেমন—

  • (1) অচিরাচরিত শক্তি ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হয় না।
  • (2) এইরূপ শক্তির উৎসগুলি প্রবহমান সম্পদ, তাই নিঃশেষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
  • (3) শক্তির উৎসগুলি প্রায় অধিকাংশ দেশেই পাওয়া যায়।
  • (4) এই শক্তিসম্পদ ব্যবহারের জন্য কম মূলধনের প্রয়োজন হয়।

অসুবিধা (Disadvantages) :

অচিরাচরিত শক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল—

  • (1) উৎসগুলি অপ্রচলিত বলে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়।
  • (2) শক্তির উৎসগুলি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরিবহন করা যায় না।
  • (3) এইরূপ শক্তির উৎসগুলি সব জায়গায় সমানভাবে পাওয়া যায় না। যেমন- হিমমণ্ডলে সৌরশক্তি পর্যাপ্ত নয়।

প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি ও অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তির পার্থক্য

বিষয় চিরাচরিত শক্তি অচিরাচরিত শক্তি
(1) সংজ্ঞা (1) যেসব শক্তির উৎস বর্তমানে বেশি ব্যবহৃত হয়, যেগুলি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলিকে বলে চিরাচরিত বা প্রচলিত শক্তির উৎস। (1) যেসব শক্তির উৎস বর্তমানে কম ব্যবহৃত হয়, যাদের ব্যবহার এখনও বিশেষ প্রচলিত নয়, সেগুলিকে অচিরাচরিত বা অপ্রচলিত শক্তির উৎস বলে।
(2) উৎস (2) কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, খরস্রোতা জলপ্রবাহ প্রভৃতি চিরাচরিত শক্তির উৎস। (2) জোয়ার-ভাটার শক্তি, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জৈব গ্যাস, ভূ-তাপশক্তি প্রভৃতি— অচিরাচরিত শক্তির উৎস।
(3) প্রযুক্তি (3) চিরাচরিত শক্তির উৎস ব্যবহারের প্রযুক্তি সহজলভ্য। (3) প্রচলিত নয় বলে অচিরাচরিত শক্তির উৎস ব্যবহারের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সহজলভ্য নয় ।
(4) পরিবহন যোগ্যতা (4) একমাত্র জলপ্রবাহ ছাড়া অন্যান্য উৎসগুলি পরিবহনযোগ্য। তাই, এগুলি আমদানি-রপ্তানি করা যায়। (4) অচিরাচরিত শক্তির উৎসগুলি পরিবহনযোগ্য নয়। ফলে, আমদানি-রপ্তানি করা যায় না।
(5) দূষণ (5) প্রবাহমান জলস্রোত ছাড়া উৎসগুলি ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয়। (জ্বালানি দহনে CO2, SO2, NO, উৎপন্ন হয়) (5) এক্ষেত্রে কোনোরকম পরিবেশ দূষণ ঘটে না।
(6) উৎসগুলির প্রকৃতি (6) চিরাচরিত শক্তির উৎসগুলি সঞ্চিত বা অপুনর্ভব সম্পদ। তাই ক্রমাগত ব্যবহারের সম্পদ। ফলে, নিঃশেষিত হতে পারে (জলপ্রবাহ ছাড়া)। (6) অচিরাচরিত শক্তির উৎসগুলি প্রবহমান সম্পদ। ফলে, নিঃশেষিত হবার আশঙ্কা নেই।
(7) মূলধন (7) উৎসগুলি আহরণ ও ব্যবহারের জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন । (7) এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম মূলধনের প্রয়োজন হয়।

বিকল্প (Alternative) বা অচিরাচরিত শক্তির (Non-conventional Energy) ব্যবহার :

প্রচলিত শক্তি উৎসগুলি অনবীকরণযোগ্য হওয়ায় প্রায় নিঃশেষিত। তাছাড়া এইপ্রকার উৎসগুলি দূষণ সৃষ্টি করে এবং এদের ব্যবহারের খরচ অত্যধিক। বর্তমানে অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলির ব্যবহার ব্যাপক না হলেও ধীরে ধীরে এদের ব্যবহারের উপযোগিতা জনপ্রিয় হচ্ছে।

বিভিন্ন প্রকার অচিরাচরিত শক্তি উৎসের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হল—

নবীভবন শক্তি উৎসগুলি ক্ষয়িষ্ণু নয় অর্থাৎ এই শক্তি উৎসগুলি পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে বা প্রতিস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। নবীভবন শক্তি উৎসগুলি দূষণ ছড়ায় না। এই কারণে অপ্রচলিত নবীভবনযোগ্য বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎসগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

এই শক্তি উৎসগুলি হল—

(1) সৌরশক্তি : সৌর বিদ্যুৎকোষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূর্যরশ্মি থেকে বিদ্যুৎশক্তি উৎপন্ন করা যায় যা নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।

(2) বায়ুশক্তি : গুজরাট, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় হাওয়া কল ব্যবহার করে বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়।

(3) সমুদ্র তাপশক্তি : সামুদ্রিক তাপশক্তির পরিবর্তন বা ওসেন থার্মাল এনার্জি কনভারসার (OTEC) প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎশক্তি উৎপন্ন করা হয়।

(4) সমুদ্র তরঙ্গ শক্তি : তিরুবনন্তপুরমের উপকূলবর্তী সমুদ্রে সমুদ্র তরঙ্গের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচেষ্টা চলছে।

(5) জলবিদ্যুৎ শক্তি : বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে তারপর বিভিন্ন পথে সেই জল টারবাইনের উপর ফেলে জলস্রোতের শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। এটি একটি প্রচলিত শক্তির উৎস হলেও নবীকরণযোগ্য।

(6) কোটালশক্তি : ভরা কোটালের জলকে ধরে রেখে তা মরা কোটালের সময় ছেড়ে দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়। আমাদের দেশের সুরাটের কচ্ছ উপকূলে, ক্যাম্বে উপসাগরে ও সুন্দরবনে এই প্রকার শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।

(7) ভূ-তাপশক্তি : পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ গরম। গরম লাভার কাছাকাছি থাকা শিলাস্তর প্রচণ্ড উত্তপ্ত। শিলাস্তরের পার্শ্ববর্তী জলস্তর উচ্চতাপ ও চাপে বাষ্পে পরিণত হয়। এই রকম জমে থাকা উয় বাষ্পকে উপরে তুলে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়।

(8) বায়োমাস (Biomass) বা জৈব পদার্থের শক্তি : গোবর, জৈব আবর্জনা, কৃষিজ বর্জ্য, পোল্ট্রি বর্জ্য প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত জৈবভরকে প্রযুক্তির সাহায্যে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় ও জ্বালানীরূপে ব্যবহৃত হয়।

কয়েকপ্রকার অপ্রচলিত শক্তি উৎস সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা

(a) সৌরশক্তি (Solar Energy) :

সূর্য থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকেই বলা হয় সৌরশক্তি। সূর্য অসীম শক্তির ভাণ্ডার। মাত্র 3 ঘণ্টা সময়ের সৌরশক্তি আবদ্ধ করতে পারলে পৃথিবীর এক বছরের বেশি বিদ্যুৎ খরচ মিটে যাবে। এই অসীম শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে বিদ্যুতে পরিবর্তন করার ক্ষমতা এখনো মানুষের আয়ত্তে নেই। যেদিন তা সম্ভব হবে সেদিন জ্বালানীর সমস্যা থাকবে না। বর্তমানে সৌরশক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় সিলিকন সোলার সেল (silicon solar cell) বা ফটো ভোলটাইক সেন্স (Photo voltaic cell)-এর মাধ্যমে। ফলমূল শুকনো করা, ঘর গরম রাখা, সমুদ্র জল থেকে লবণ উৎপাদন, জলসেচ, আলো জ্বালানো ও সোলার কুকারে রান্নাবান্না প্রভৃতি কাজে এই শক্তিকে বর্তমানে কাজে লাগানো হচ্ছে। রাত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে, একসঙ্গে অধিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে এবং দ্রুত রান্না করার কাজে অসুবিধা রয়েছে।

(b) জোয়ারভাটার শক্তি (Tidal Energy) :

সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণে জোয়ারভাটা হয়। সুতরাং পৃথিবীতে জোয়ারভাটা থেকে প্রাপ্ত শক্তি অফুরন্ত সম্পদ। জোয়ারভাটার সময় জলস্রোতের শক্তি দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎশক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব। শিল্পোন্নত দেশগুলিতে এই ব্যবস্থা বহুদিন আগেই আরম্ভ হয়েছে। ভারতের কাম্বে উপসাগরীয় অঞ্চলে এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

(c) পবনশক্তি (Wind Energy) :

পবন বা বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে পবনশক্তি বা বাতশক্তি বলা হয়। সমুদ্র উপকূলে এত জোরে বাতাস বহে যে তাকে কাজে লাগিয়ে যান্ত্রিক উপায়ে জল তোলা, গম ভাঙা প্রভৃতি নানা কাজ করা যায়। এই অফুরন্ত শক্তিকে বর্তমানে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। 5-6 মিটার/সেকেন্ড গতিবেগে বায়ুপ্রবাহযুক্ত অঞ্চলে এইপ্রকার প্রকল্প গ্রহণ করা যায়। কিন্তু সর্বত্র এইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং একসঙ্গে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রাথমিক খরচ অনেক বেশি।

(d) ভূ-তাপীয় শক্তি (Geo-thermal Energy) :

ভূ-গর্ভের তাপকে কাজে লাগিয়ে যে শক্তি উৎপাদন করা যায় তাকে ভূ-তাপীয় শক্তি (Geothermal Energy) বলে। এটি একটি দূষণমুক্ত অফুরন্ত শক্তি। এর উৎস হল উষ্ণ প্রস্রবণ, আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন ভূমি প্রভৃতি। এই তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি ও কারিগরী জ্ঞান এখনো অধিকাংশ দেশে নেই। ভারতের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে এই শক্তি থেকে সামান্য কিছু বিদ্যুৎ সংগৃহীত হয়। ঝাড়খণ্ডের সুরজখণ্ডে এবং উত্তরাখণ্ডের তপোবনে এইপ্রকার শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভূপৃষ্ঠের 3 কিমি গভীরে 100°C তাপমাত্রা বেশি থাকে। এই বিপুল তাপমাত্রাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হয়।

(e) জৈব গ্যাস (Biogas) :

মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মলমূত্র, শাকসব্জীর খোসা, কচুরিপানা প্রভৃতি জৈব আবর্জনা থেকে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে দাহ্য গ্যাস পাওয়া যায় তাকে জৈব গ্যাস বা বায়ো গ্যাস (Bio gas) বলা হয়। এই গ্যাস উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কাঁচামাল গোবর হওয়ায় একে গোবর গ্যাসও বলা হয়। ভারতের মতো বিকাশশীল দেশগুলিতে গবাদি পশুপালন ও কৃষিকাজের আধিক্য থাকায় এই গ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশি। এই গ্যাস থেকে 60% মিথেন ও 40% কার্বন ডাইঅক্সাইড পাওয়া যায়। এই গ্যাসকে বর্তমানে রান্নাবান্নার কাজে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় 38,40000 টি প্রকল্প রয়েছে।

(f) বায়োমাস শক্তি (Biomass Energy) :

জৈবপদার্থ থেকে বর্তমান ভারতে 19টি প্রকল্পের মাধ্যমে 95 MW. বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। আরো 20টি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। চিনিকল, কাগজকলের জৈব পদার্থ থেকে প্রায় 950 MW বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে।

(g) সমুদ্র তাপশক্তি (OTEC) :

এই পদ্ধতিতে সমুদ্রের উপরিভাগের অধিক তাপযুক্ত অঞ্চল এবং গভীরের নিম্ন তাপযুক্ত অঞ্চলের তাপমাত্রার পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ম্যাঙ্গানীজ উত্তোলনে এই শক্তি অধিক ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা দিনের বেলায় 28-30°C, কিন্তু গভীরে (80- 100 মিটারের মধ্যে) মাত্র 5-7°C তাপমাত্রার এই পার্থক্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায় ৷

কেস স্টাডি (Case Study)

ভারতের বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনার ভিত্তিতে আগামী 2020 সাল নাগাদ 15000 MW বিদ্যুৎ তৈরি হবে। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপে 10 KW ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ুকল রয়েছে। গুজরাটের ওখা, তামিলনাডুর টুটিকোরিন, উড়িষ্যার পুরীর সমুদ্রতীরে উচ্চশক্তিসম্পন্ন বায়ুকল স্থাপিত হয়েছে।

সমুদ্রের ঢেউ থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে দুর্গাদুয়ানী খাঁড়িতে 2008 সালে 3.75 MW বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প স্থাপিত হয়েছে।

ভারতের গবাদি পশুর অপর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর থেকে বছরে 2, 24, 250 লক্ষ ঘনমিটার বায়োগ্যাস উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। উপজাত পদার্থ হিসেবে 2060 লক্ষ টন জৈব সার তৈরি হতে পারে। এই পরিমাণ সার ব্যবহৃত হলে 14 লক্ষ টন নাইট্রোজেন সার, 22 লক্ষ টন কমপোস্ট সার, 9 লক্ষ টন পটাশ সার ব্যবহার করতে হবে না। বর্তমানে ভারতে বায়োগ্যাস প্ল্যাটের সংখ্যা প্রায় চার লক্ষ ।