লিঙ্গ : পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় নারী
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে অরণ্য সংরক্ষণে তথা পরিবেশ রক্ষায় মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কারণ—
(1) বনাঞ্চলের বহু গ্রাম্য মহিলার আয়ের একমাত্র উৎস হল জঙ্গলের পাতা ও জঙ্গলের কাঠ। গাছের ফলের প্রয়োজন হলে মহিলারাই তাদের বাড়ির বাগানের ফলের বৃক্ষ রোপণ করে। যে কোনো প্রকার চারা গাছের প্রতি মহিলাদের স্বাভাবিক ও স্বতস্ফূর্ত আগ্রহ ও দরদ থাকে।
(2) মহিলাদের কাছে ফল অত্যন্ত নির্ভরশীল খাদ্য। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বা অর্থনৈতিক কারণে খাদ্যশস্য ভালো না জন্মালে গাছের ফলেই অভাব মেটায়। গ্রাম্য মহিলারা রান্নার কাজে জ্বালানীরূপে কাঠ ব্যবহার করে এবং সেই কাঠ কঠোর পরিশ্রম করে মহিলারা সংগ্রহ করে জঙ্গল থেকে।
(3) অরণ্যের পাশাপাশি বসবাসকারী মহিলারা গৃহে যে পশুপাখি প্রতিপালন করে তাদেরকেও গাছের পাতা, ফল, ঘাস ইত্যাদি খাওয়ায়। গ্রামের সকল মানুষই গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি সংগ্রহ করে ঘর বানায়। এছাড়া বিভিন্ন রং এবং ভেষজ ওষুধ তৈরির কাজেও অরণ্য সম্পদ ব্যবহৃত হয়। বনের ফল, মধু, মোম, গদ, রজন, তরুক্ষীর প্রভৃতি সংগ্রহে মহিলাদের ব্যবহার করা হয়।
(4) পূজা পার্বণে ব্যবহৃত নানা ফুলের গাছ ও ভেষজ উদ্ভিদকে এবং আধ্যাত্মিক সম্পর্ক যুক্ত উদ্ভিদকে মহিলারা যত্ন করে।
(5) অরণ্য সম্পদের উপর নির্ভর করে যেসব কুটির শিল্প গ্রামে গড়ে ওঠে সেগুলিতে বনজ সম্পদ সংগ্রহের কাজে বহু মহিলা নিযুক্ত। বনজ সম্পদ সংগ্রহ করাই হল ঐ সকল মহিলাদের আয়ের একমাত্র উৎস।
(6) অনেক সময় বনবিভাগ নানা কাজে মহিলাদের নিয়োগ করে।
(7) বহু মহিলা অরণ্যকে মাতৃজ্ঞানে রক্ষা করে ।
(8) নানা বৃক্ষ তথা অরণ্য আন্দোলনে (চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন) মহিলাদের অবদান উল্লেখযোগ্য।
উপরের আলোচনা থেকে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় নারীর ভূমিকা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপলব্ধি করা যায়—
(1) নারী শিক্ষার প্রসার না হলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিবেশে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রাথমিক পাঠ শিশুরা মায়েদের কাছ থেকে লাভ করে।
(2) স্বাস্থ্যবিধান মেনে চলা, পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা, খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্য দূষণ, জল দূষণ প্রভৃতি বিষয়ে নারীদের সচেতনতার ওপর সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি নির্ভরশীল।
(3) সামাজিক দূষণ প্রতিরোধে, পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের উপায়, সদস্যদের মাদকাশক্তি হ্রাসে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার পরিকল্পনা রূপায়ণে নারীর ভূমিকা আদর্শ।
(4) নারী স্বাবলম্বী হলে, পরিবারে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এতে পারিবারিক শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
(5) নারীর স্বাভাবিক স্নেহ, মমতা, দূষণ প্রতিরোধে, বনসৃজনে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
(6) বহু পরিবেশ আন্দোলনে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। মেধা পাটেকর, অরুন্ধতী রায় প্রমুখ নারীরা পরিবেশ আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করে পরিবেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।