পরিবেশগত শিক্ষার গুরুত্ব
পরিবেশগত শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম । পরিবেশ বা এনভায়রনমেন্ট (Environment) কথাটির মধ্যে পারিপার্শ্বিক কথাটি রয়েছে । পরিবেশগত শিক্ষা মানুষকে তার অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয় । সামাজিকভাবে তাকে সচেতন করে । পরিবেশগত শিক্ষার মূল ধারণাগুলির মধ্যে প্রধান হল এই যে-মানুষ বুঝতে পারে এই পৃথিবী তার একার ভোগবিলাসের স্থান নয় । আবার কেবলমাত্র মানবজাতিরও নয় । প্রাকৃতির দানের উপর সমস্ত জীবের সমান অধিকার ।
পরিবেশ শিক্ষা থেকে মানুষের ধারণা হয় যে বহু প্রাচীন কাল থেকে বহু জীব প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলেছে । প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে পৃথিবীতে বিচরণ করেছে । তাদের মতো মানুষেরও পরিবেশ সহায়ক কার্যের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ।
পরিবেশ পাঠ ও পরিবেশ শিক্ষা থেকে অন্যান্য যে সমস্ত শিক্ষা লাভ করা যায় বা ধারণা জন্মে সেগুলি হল-
(১) পৃথিবীর পরিবেশের উৎপত্তি, তার উপাদানগুলির মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় ।
(২) এই পৃথিবী কেন জীবজগতের একমাত্র বাসস্থান অর্থাৎ পৃথিবী কেন প্রাণ সৃষ্টির উপযোগী তা জানা যায় বা ধারনা লাভ করা যায় ।
(৩) মানুষের উৎপত্তির সময়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় ছিল । কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পরে বিভিন্ন ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থ প্রকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে । এই সকল বর্জ্য পদার্থের ক্ষতির হাত থেকে আমরা রেহাই পেতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি তা পরিবেশ পাঠের মাধ্যমে জানা যায় ।
(৪) অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতিসাধন করার জন্য মানুষ কীভাবে প্রাকৃতি সম্পদকে ব্যবহার করছে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ হয় ।
(৫) বাস্তুতন্ত্রের (ecology) মধ্যে শক্তির প্রবাহ, খাদ্য-খাদক সম্পর্ক, খাদ্যশৃঙ্খল, খদ্যজালিকা ইত্যাদি বষয়ে যেমন জান যায় তেমনি পুষ্টির জোগান অনুযায়ী প্রজাতী সংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা জানা যায় ।
(৬) পরিবেশ পাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিবেশগত রোগ, রোগের কারণ, রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতি বিষয়ে জ্ঞানলাভ করা যায় এবং সুস্থ পরিবেশ গড়া যায় ।
(৭) শিল্প, বাণিজ্য, কৃষিক্ষেত্রগুলির সমষ্টির ফল হিসাবে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, পুষ্টি প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে মানুষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি না তা জানা যায় ।
(৮) পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবেশের সম্পদভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রগতিক হার কীরূপ তা জানা যায় ।
(৯) প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি বিষয়ে অবগত হওয়া যায় ।
(১০) জনসাধারণের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব হয় পরিবেশ পাঠের মাধ্যমে ।
(১১) পরিবেশ পাঠের মাধ্যমে কিভাবে বিভিন্ন প্রকার দূষণ (জলদূষণ, শব্দদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ) থেকা পরিবেশ রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে জান যায় ।
(১২) পরিবেশের ভারসাম্য বজায় না রাখার জন্য অর্থাৎ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার অপরাধে কি শাস্তি পেতে হিয়, সে বিষয়ে জান যায় ।
(১৩) মানুষের নিজের ও তার আগামী প্রজন্মের স্বার্থে পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য পরিবেশের পাঠ করা দরকার ।