স্থিতিশীল উন্নয়ন
অস্থিতিশীল উন্নয়ন থেকে স্থিতিশীল উন্নয়ন
(From Unsustainable to Sustainable Development)
স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্পর্কে সর্বপ্রথম বক্তব্য প্রকাশিত হয় 1987 সালে WCED (World Commission of Environment and Development)-এর রিপোর্টে [ব্রুটল্যান্ড কমিশন] বিভিন্ন প্রকার মানবক্রিয়ার দ্বারা, প্রযুক্ত ও নিজ্ঞানের যৌথ সহযোগিতার মানুষ তাদের জীবনে অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসার জন্য কৃষিক্ষেত্রে, পরিবহন ব্যবস্থা, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে, নগরায়ণে, শিল্পায়নে যে ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন নিয়ে আসছে তাকে ধারাবাহিক বা বহতা উন্নয়ন বলা যায় না কারণ তা সহনযোগ্য এবং পরিবেশ সহায়ক নয় । বহতা বা ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিনষ্ট করে না । ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে গুরুত্ত দেয় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য পরিশেব বিষয়টিকে উপেক্ষা করা উচিৎ নয় । বহতা ধারাবাহিক বা স্থিতীশীল উন্নয়ন (sustainable development) প্রক্রিয়া মানবচাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সহায়ক উন্নয়ন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেয়, এর ফলে এই প্রকার উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয় না ।
WCED-এর সংজ্ঞা :
পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে দীর্ঘমেয়াদি মানুষের আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন ব্যবস্থা প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ও পার্থিব সম্পদকে নষ্ট না করে সমসাময়িক ও ভবিষৎ প্রজন্মের মানুশ ও অন্যান্য প্রজাতিত জীবনযাত্রা সুরক্ষিত করে তাকে বহতা বা ধারাবাহিক বা সুস্থায়ী বা স্থিতীশীল উন্নয়ন বলে । পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিবেশ অবক্ষয়কে তরাম্বিত করে ।
বিজ্ঞানী কে, পি, গীতাকৃষ্ণন 1990 সালে এ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে জল, মাটি, শুদ্ধ বায়ু পেয়েছি আমদের উচিৎ পরবর্তী প্রজন্মকে আরো শুদ্ধ পরিবেশ দিয়ে হাওয়া অথবা যেমনটি পেয়েছি তেমনটি দিয়ে যাওয়া ।’’স্থিতিশীল বা বহতা উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও নীতি :
পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক দীর্ঘমেয়াদী, সামগ্রিক মানব ব্যবস্থা মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের সহণযোগ্য আর্থ- সামাজিক উন্নয়নকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলা হয় । যে উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট না করেও জনগণের মঙ্গল করা যায় । তাকেই সাধারণভাবে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে ।
উদ্দেশ্য : সুস্থায়ী বা স্থিতিশীল উন্নয়নের উদ্দেশ্য হল অর্থনীতি ও জনসংখ্যার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, আগামী প্রজন্মের ধারাবাহিক জীবনযাত্রা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখা, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতিপূরণ সম্ভব করা । সকল স্তরে সমতা আনয়ন
জৈব পদ্ধতির লক্ষ উদ্দেশ্য হল-
(1) বংশগতির বৈচিত্র্য জীবনবৈচিত্র্য রক্ষা ।
(2) স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা ।
(3) জৈব উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গুরুত্ত আরোপ ।
অর্থনৈতিক পদ্ধতির লখ্য হল-
(1) প্রাথমিক ন্যূনতম প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণ ।
(2) সকল স্তরে সমতা আনয়ন
সামাজিক পদ্ধতির লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হল-
(1) সামাজিক ন্যায় আনয়ন ।
(2) জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ।
সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য হল পার্থিব সম্পদ বিনষ্ট না করে মানব চাহিদা পূরণ করে সমসাময়িক এবং পরবর্তী প্রজন্মগুলির মানুষ ও অন্যান্য প্রজাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা ।
নীতি : সুস্থায়ী বা স্থিতিশীল উন্নয়নের নীতিসমূহ :
(a) পরিবেশ বা বাস্তুতান্ত্রিক নীতিসমূহ-
(1) জীবন সহায়ক পদ্ধতির সংরক্ষণ ও ব্যবস্থা ।
(2) জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সংবর্ধন ।
(3) বাস্তুতন্ত্রের সমন্ধয় রক্ষা ও বর্ধন এবং বিপন্ন বা ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুরন্ত্রের পুনর্বাসন ও উন্নয়ন ।
(4) বিশ্ব পরিবেশের ক্ষতিকর পরিবর্তনের প্রতিরোধমূলক ও গুহণযোগ্য কৌশল নির্মাণ ও রূপায়ণ।
(b) সমাজ রাজনৈতিক নীতিসমূহ-
(1) পৃথিবীর জীবমন্ডলের (Biosphere) ধারণ ক্ষমতার (Carrying capacity) নীচে মানুষের কাজকর্মের মাত্রাকে সীমাবদ্ধ রাখা ।
(2) মানুষের উন্নয়নের প্রয়োজনে গৃহিত কাজকর্মের পরিবেশ ব্যয় নির্ধারণ, প্রতিটি অর্থনৈতিক কাজের জন্য বস্তু ও শক্তির ব্যবহার নূন্যতম করার পদ্ধতি গ্রহণ, বিষাক্ত ধোঁয়া উৎপাদন হ্রাস এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশের উন্নয়ন ।
(3) সমাজ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমতাযুক্ত বহনযোগ্য সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন ।
(4) রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিবেশ বিষয়ক নীতিসমূহের প্রত্যক্ষ অন্তর্ভুক্তি ।
(5) সুস্থায়ী উন্নয়নের চিন্তাভাবনার বিকাশ, ব্যাখ্যা ও রূপায়ণে গুরুত্ব আরোপ ।
(6) প্রত্যক্ষ পরিবেশ অভিজ্ঞতার সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সংযোগ স্থাপন করে পরিবেশ উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক ক্ষমতার পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিন্যাস করা ।
(c) সমাজ-রাজনৈতির আবশ্যিক গৃহীত নীতিসমূহ :
(1) অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদ্ধতিতে স্বেচ্ছায় সৃজনশীল মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ পদ্ধতিকে সুনিশ্চিত করা ।
(2) দেশের জনসাধারণকে অভাব ও অর্থনৈতিক আগ্রাসান থেকে মুক্ত করা ।
(3) ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সমর্থিন সিদ্ধান্তকারী শক্তির প্রতিষ্ঠা করা ।
(4) সাম্য, ন্যায়, মুক্ত আইনী ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সদাচার, উচ্চশিক্ষার সু্যোগ, তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ, ধর্মাচরণে ও ব্যক্তি আচরণে স্বাধীনতা আনয়নে গুরুত্বারোপ ।