জীববৈচিত্র্যের স্তর
জীববৈচিত্র্যের পর্যায় বা স্তর
সাধারণত তিনটি স্তরে জৈব বৈচিত্র্য অনুশীলন করা হয় :
(1) জিনগত জৈব বৈচিত্র্য :
- জৈব বৈচিত্র্যের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রজাতির ‘জিন' বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত হয়। জিন বৈচিত্র্যের ফলেই প্রজাতির বিভিন্নতা বা প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়। DNA এ কাজে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এই সব বৈশিষ্ট্যের কিছু কিছু চোখে দেখা যায় (যেমন—আকার ও বর্ণ; গন্ধ ও স্বাদের বৈশিষ্ট্য) এবং কিছু চারিত্রিক বৈচিত্র্য (যেমন—রোগ প্রবণতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) সহজে বোঝা যায় না। এই বৈচিত্র্য থেকেই আমরা নানা ধরনের শস্য (ধান, গম) উৎপাদন করি। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় 50000 ধানের প্রজাতি রয়েছে। ভারতে আমের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ২০০টি।
(২) প্রজাতিগত জৈব বৈচিত্র্য :
- জীবের শ্রেণিবিন্যাসের একক হচ্ছে প্রজাতি। প্রতিটি প্রজাতি নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে অনন্য। নির্দিষ্ট প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে সাদৃশ্য থাকার কারণে তারা বংশগতভাবে সমধর্মী এবং তাদের স্বাভাবিক মিলনে প্রজননক্ষম শাবক জন্মলাভ করে। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় মোট প্রজাতির সংখ্যার ভিত্তিতেই প্রজাতিগত জৈব বৈচিত্র্যের পরিমাপ করা যায়। সাধারণভাবে বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যার দ্বারাই কোনো দেশের জৈব বৈচিত্র্যের বর্ণনা করা যায়। জৈব বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিন, কলম্বিয়া, ইকয়েডর, ভারতবর্ষ, পেরু এবং জাইরে উল্লেখযোগ্য।
(৩) বাস্তুতান্ত্রিক জৈব বৈচিত্র্য :
- কোনো একটি বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে থাকে অসংখ্য উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীব যারা পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং বাতাস, মাটি, জল প্রভৃতি অজৈব পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। বাসস্থানের তথা পরিবেশ বৈচিত্র্যকেই বস্তুতান্ত্রিক জৈব বৈচিত্র্য বলা হচ্ছে। যে স্থানে প্রাণী বা উদ্ভিদ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে সেই স্থানের বৈচিত্র্যই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য। গার্হস্থ্য জৈব বৈচিত্র্য ও কৃষি জৈব বৈচিত্র্যকেও এক একটি জৈব বৈচিত্র্যের স্তর হিসেবে গণ্য করা যায়।
ভারতের জীব-ভৌগোলিক অঞ্চলের শ্রেণিবিভাজন (Biogeographical classification of India) :
কোনো অঞ্চলের জীবপ্রজাতির উপস্থিতি বা ভৌগোলিক গঠন ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে ভারতবর্ষকে 10 টি জীব-ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে সমপ্রকৃতির ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির মধ্যে ব্যবধান দীর্ঘ হলেও ঐসমস্ত অঞ্চলে সমপ্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবস্থান লক্ষ্য করা যায়—
দশটি জীব-ভৌগোলিক অঞ্চল হল—
নং | জীব-ভৌগোলিক অঞ্চল | অবস্থান | প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য | জীববৈচিত্র্য |
---|---|---|---|---|
১ | ট্রান্সহিমালয়ের লাদাখ অঞ্চল | লাদাখ পার্বতীয় অঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম হিমালয় অঞ্চল। | ঠান্ডা ও শুরু | আলপাইন স্টেপি, ফার, ওক, দেওদার প্রভৃতি উদ্ভিদ এবং স্নো-লেপার্ড, বন্য ভেড়া ও ছাগল, মারমোট, কালোগ্রীবার সারস প্রভৃতি প্রাণী। |
২ | উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব হিমালয় অঞ্চল এবং পশ্চিম হিমালয় | কাশ্মীর, কুমায়ুন অঞ্চল এবং পূর্বের সিকিম অঞ্চল | শীতল আবহাওয়া | বিভিন্ন উচ্চতায় (300-4500 মিটার) বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের মধ্যে শিশু, ওক, দেওদার, পাইন, রডোডেনড্রন, শাল উল্লেখযোগ্য। |
৩ | মরুভূমি ও কচ্ছের রান | রাজস্থান, গুজরাটের কচ্ছ ও দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল | উয় ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, অধিক ঠান্ডাযুক্ত শীতকাল। বৃষ্টিপাত 70 সেমি | কাঁটাজাতীয় উদ্ভিদ বাবলা, কুল ও ক্যাকটাস প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায়। |
৪ | পশ্চিমঘাট ও মালাবার ভূমি | পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল ও গুজরাটের উত্তর অংশ | ক্রান্তীয়, আর্দ্র, নাতিশীতোয় অঞ্চল, বৃষ্টিপাত যথেষ্ট | চিরহরিৎ, মিশ্র পর্ণমোচী এবং ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ। |
৫ | শুষ্কপ্রায় অঞ্চল | গুজরাট, রাজস্থান ও পাঞ্জাবের একাংশ | কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল, গ্রীষ্মকালীন উয়তা 40°C, জানুয়ারী মাস 12-17°C | কাঁটা জাতীয় উদ্ভিদ (ফণিমনসা ও বাবলা), উট, নেকড়ে, লোহি, রাবি, ঘোড়া ইত্যাদি প্রাণী। |
৬ | দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল | অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকের অংশ | শুষ্ক অঞ্চল, বছরে 100cm বৃষ্টিপাত | চন্দন জাতীয় উদ্ভিদ পাওয়া যায়। |
৭ | গাঙ্গেয় সমভূমি | রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ,বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ | ক্রান্তীয় শুষ্ক অঞ্চল | ক্রান্তীয়, শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য। হাতি, বাঘ, কুমীর, কৃষ্ণসার হরিণ ইত্যাদি |
৮ | লাক্ষাদ্বীপ ও ভারতের উপকূল ভূমি | পশ্চিম ও পূর্বের সমুদ্র অধ্যুষিত অঞ্চল | 36টি প্রধান দ্বীপ, 12টি অ্যাটোল এবং 3টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে লাক্ষাদ্বীপ গঠিত। | প্রাণীদের মধ্যে ডলফিন, কুমীর, কচ্ছপ প্রভৃতি প্রধান। |
৯ | ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকা | ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্ত্তী অঞ্চল | খয়ের, শাল, শিশু, বাঁশ, জুনিপার, রোডোডেনড্রন প্রভৃতি উদ্ভিদ। | |
১০ | আন্দামান ও নিকোবর | আন্দামান ও নিকোবর 325টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত অঞ্চল | রাইজোতোরা, মিনাযোগ উদ্ভিদ এবং সামুদ্রিক কচ্ছপ, বন্য শুকর, আন্দামানের গেকো, জলজ সাপ, রাক্ষুসে কাঁকড়া, জলজ মনিটর প্রভৃতি প্রাণী উল্লেখযোগ্য |