logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

পরিবেশ বিদ্যা চর্চা

পরিবেশবিদ্যা

পরিবেশবিদ্যার বহুমুখী প্রকৃতি

ভূমিকা পরিবেশ পরিবেশের উপাদান পরিবেশবিদ্যা পরিবেশবিদ্যার পরিধি পরিবেশগত শিক্ষার গুরুত্ব স্থিতিশীল উন্নয়ন

বিশ্ব: বাস্তুসংস্থান ও বাস্তুতন্ত্র

ভূমিকা বাস্তুতন্ত্রের উপাদান সমূহ খাদ্যশৃঙ্খল খাদ্য জাল বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ বাস্তুতন্ত্রের ধারণা বাস্তুতান্ত্রিক উত্তরাধিকার পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্র বনভূমির বাস্তুতন্ত্র মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র মোহনা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র নদীনালার বাস্তুতন্ত্র হ্রদের বাস্তুতন্ত্র জীবমণ্ডল

প্রাকৃতিক সম্পদ

ভূমিকা সম্পদ সম্পদের শ্রেণিবিভাগ প্রাকৃতিক সম্পদ নবীকরণযোগ্য সম্পদ অনবীকরণযোগ্য সম্পদ ভূমিসম্পদ অরণ্যসম্পদ জলসম্পদ শক্তিসম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ স্থিতিশীল উন্নয়নে সম্পদ

জীববৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ

ভূমিকা জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা জীববৈচিত্র্যের স্তর জীববৈচিত্র্যের মূল্য জীববৈচিত্র্যের দেশ ভারতবর্ষ জীববৈচিত্র্যের উষ্ণ অঞ্চল জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট বিরল , বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রাণী জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ যৌথ বন ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ দূষণ

ভূমিকা পরিবেশ দূষণ জল দূষণ বায়ু দূষণ মৃত্তিকাদূষণ শব্দদূষণ

জনসংখ্যা ও পরিবেশ

ভূমিকা বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার তারতম্য জনবিস্ফোরণ পরিবার পরিকল্পনা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য পুনর্বাসন ও পুনস্থাপনের সমস্যা পরিবেশের বিপর্যয় বন্যা ভূমিকম্প সাইক্লোন ভূমিধস ধস ব্যবস্থাপনা বায়ুদূষণ : ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা চের্নোবিল দুর্ঘটনা বিশনই আন্দোলন আপ্পিকো চাভেলী আন্দোলন চিপকো আন্দোলন সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন পরিবেশ নৈতিকতা পরিবেশ রক্ষায় সংস্কৃতি লিঙ্গ মানবাধিকার পরিবেশ সচেতনতা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা জমি সংরক্ষণ অরণ্য সংরক্ষণ খনিজ সম্পদ সংরক্ষণ সম্পদের পুনঃব্যবহার দূষণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল পরিবেশ বিষয়ক নীতি

পরিবেশগত আইন

পরিবেশ সংক্রান্ত আইন পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৮৬ বায়ুদূষণ আইন ১৯৮১ জলদূষণ আইন ১৯৭৪ জল(দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর আইন , ১৯৭৭ শব্দদূষণ আইন ২০০০ ভূমিদূষণ আইন ১৯৮৯ অরণ্য সংরক্ষণ আইন ১৯৮০ বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ১৯৭২ কেন্দ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আন্তর্জাতিক মান নির্ধারক সংস্থা জীববৈচিত্র্য আইন ২০০২ আন্তর্জাতিক চুক্তি জীববৈচিত্র্যের সম্মেলন সংরক্ষিত এলাকা আদিবাসী জনসংখ্যা ও তার আধিকার মানুষ ও বন্যপশু সংঘাত

বাস্তুতন্ত্রের উপাদান সমূহ


বাস্তুতন্ত্রের উপাদান (Components of Ecosystem) :

বাস্তুতন্ত্র প্রধানত দুটি উপাদান দ্বারা গঠিত ।

(A) নির্জীব বা জড় উপাদান বা অ্যাবায়োটিক উপাদান এবং (B) সজীব উপাদান বা বায়োটিক উপাদান ।

(A) নির্জীব উপাদান (Abiotic Components) :

বাস্তুতন্ত্রে প্রাণহীন উপাদানগুলিকে নির্জীব উপাদান বলে । বাস্তুতন্ত্রে নির্জীব উপাদানগুলি তিন ধরনের ।

(a) অজৈব উপাদান, (b) জৈব উপাদান এবং (c) ভৌত উপাদান বা জল্বায়ু সম্পর্কিত উপাদান ।

(a) অজৈব উপাদান (Inorganic Components) :

মাটি, মাটিতে অবস্থিত খনিজ লবণ, বাতাস, জল ও জলে দ্রবীভূত গ্যাসীয় (O2, CO2) পদার্থ ও খনিজ পদার্থ প্রভৃতিকে একত্রে অজৈব উপাদান বলা হয় । মাটির উপরে স্থলজ উদ্ভিদ থেকে ও প্রানীরা বসবাস করে । মাটিতে অবস্থিত খনিজ লবণ উদ্ভিদেরা গ্রহণ করে তাদের কাজে লাগায় এবং প্রানীরা উদ্ভিদ থেকে ওই পদার্থগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রহণ করে । বাতাসের অক্সিজেন জীবেরা শ্বসনের জন্য গ্রহণ করে । সালোকসংশ্লেষকারী জীবেরা বাতাসে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে । জীবদেহ গঠনের জন্য বাতাসের নাইট্রোজেন প্রয়োজন । জলের ওপর নাম জীব । জীবের জীবন ধারণের জন্য জল একান্ত প্রয়োজন । জীবদেহে তথা প্রোটোপ্লাজমে 70-80 ভাগ জল থাকে । সুতরাং প্রোটোপ্লাজম গঠনের জন্য জল একান্ত প্রয়োজন । এছাড়া জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন জলজ জীবেরা শ্বসনের জন্য গ্রহণ করে এবং জলে দ্রবীভূত কার্বন-ডাই-অক্সাইড জলজ সবুজকণিকাযুক্ত উদ্ভিদেরা সালোকসংশ্লেষের জন্য গ্রহণ করে । জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ ও জলজ জীবেরা গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে ।

(b) জৈব উপাদান (Organic components) :

উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত ও গলিত দেহাবশেষ এবং প্রাণীদের বর্জ্য বা রেচন পদার্থকে একত্রে জৈব উপাদান বলে । প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ইউরিয়া প্রভৃতি হল জৈব উপাদানের উদাহরণ । জৈব পদার্থগুলি জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে মাটির উপাদেনে পরিণত হয় ।

ফ্লোরা ও ফণা (Flora and Fauna) : বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত কোনো নির্দিষ্ট স্থানের উদ্ভিদগোষ্ঠীকে ফ্লোরা এবং প্রানীগোষ্ঠীকে ফণা বলে । প্ল্যাংকটন (Plankton), নেক্টন (Nekton) ও বেনথস (Benthos) : জলে ভাসমান ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীবকণাকে প্ল্যাংকটন বলে । উদ্ভিদকণাকে ফাইটোপ্ল্যাংকটন (উদা ঃ ডায়াটম) ও প্রানীকণাকে জুপ্ল্যাংকটন (উদা ঃ সাইক্লপস) বলে । স্বাধীনভাবে সাঁতার কেটে ঘুরে বেড়ানো জলজ প্রাণীকে নেক্টট বলে । যেমন-চিংড়ি । জলাশয়ের নীচের তলায় বসবাসকারী জীবকে বেনথস্‌ বলে । যেমন-শামুক, ঝিনুক ।

(c) ভৌত উপাদান বা জলবায়ু সম্পর্কিত উপাদান (Physical components or Climatic factors) :

বাস্তুতন্ত্রে সূর্যালোক বা সৌরশক্তি, উষ্ণতা বা তাপমাত্রা এবং বায়ুকে ভৌত উপাদান বলে । সকল শক্তির উৎস হল সূর্যালোক । সবুজ কণিকাযুক্ত উদ্ভিদেরা মাটি থেকে জল ও বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে । ওই খাদ্যের মধ্যে সৌরশক্তি রাসায়নিক বা স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ থাকে । পরভোজী জীবেরা ওই খাদ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রহণ করে শক্তি সংগ্রহ করে এবং জীবন ধারণ করে । সঠিক উষ্ণতা বা তাপমাত্রা জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলিকে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে । বায়ুতে অবস্থিত অক্সিজেন জীবের শ্বসনে ব্যবহৃত হয়, সবুজ উদ্ভিদেরা সালোকসংশ্লেষের জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, জীবদেহে প্রোটিন ও নাইট্রোজেন ঘটিত অন্যান্য জৈব উপাদান উৎপাদনের জন্য নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয় ।

(B) সজীব উপাদান (Biotic components)

বাস্তুতন্ত্রে যে সকল উপাদানের প্রাণ আছে বা সজীবতার লক্ষণ বর্তমান তাদের বলে সজীব উপাদান ।

পুষ্টির ভিত্তির উপর নির্ভর করে সজীব উপাদানকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে ।

1. স্বভোজী উপাদান বা উৎপাদক এবং 2. পরভোজী উপাদান ।

1. স্বভোজী উপাদান বা উৎপাদক (Autotrophic components or Producer) :

বাস্তুতন্ত্রে যে সকল সজীব উপাদান সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারে তাদের স্বভোজী উপাদান বা উৎপাদক বলে । সবুজকণিকাযুক্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী, সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি হল উৎপাদক । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপাদকের দ্বারা উৎপাদিত খাদ্যে (গ্লুকোজ), সৌরশক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ থাকে এবং ওই খাদ্য (গ্লুকোজ) থেকে প্রোটিন, ফ্যাট প্রভৃতি খাদ্য উৎপান্ন হয় । উৎপাদকেরা ওই খাদ্যগুলির কিছু অংশ প্রয়োজনমতো ব্যবহার করে শক্তি সংগ্রহ করে এবং কিছু অংশ নিজ দেহে সঞ্চিত করে রাখে । পরভোজী জীবেরা উৎপাদকদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে জীবণ ধারণ করে । এছাড়া উৎপাদকেরা সালোকসংশ্লেষের সময় পরিবেশ থেকে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে সেই পরিমাণ অক্সিজেন পরিবেশে ত্যাগ করে । ফলে পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অক্সিজেনের সমতা বজায় থাকে ।

2. পরভোজী উপাদান (Heterotrophic components) :

বাস্তুতন্ত্রে যে সকল সজীব উপাদান নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না, খাদ্যের জন্য উৎপাদকের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভসবে নির্ভয় করতে হয় বা কোনো জৈব বস্তু থেকে খাদ্য ও শক্তি সংগ্রহ করে তাদের পরভোজী উপাদান বলে পরভোগী উপাদানকে দুভাগে ভাগ কয়া যায় ।

(a) খাদক বা কনজিউমার (Consumer) এবং (b) বিয়োজক (Decomposer) ।

(a) খাদক (Consumer) :

বাস্তুতন্ত্রে যে সকল পরভোজী উপাদান উৎপাদক থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খাদ্য ও শক্তি সংগ্রহ করে তাকে বলে খাদক । খাদকের ম্যাক্রো-কনজিউমার (macro Consumer)-ও বলা হয় ।

খাদক বা ম্যাক্রো-কনজিউমারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।

(1) প্রথম শ্রেণির খাদক বা প্রাথমিক খাদক বা প্রাইমারি কনজিউমার

(2) দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক বা গৌণ খাদক বা সেকেন্ডারি কনজিউমার

(3) তৃতীয় শ্রেণির খাদক বা প্রগৌণ বা সর্ব্বোচ্চ খাদক বা টারসিয়ারি কনজিউমার ।

(1) প্রথম শ্রেণির খাদক বা প্রাথমিক খাদক বা প্রাইমারি কনজিউমার (Primary Consumer) :

যে সকল খাদক উৎপাদকদের সরাসরি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে শক্তি সংগ্রহ করে তাদের বলে প্রাথমিক খাদক বা প্রাইমারি কনজিউমার ।

এই ধরনের খাদকদের শাকাশী (Herbivorous) বলে ।

যেমন-হরিণ, খরগোশ, গোরু, ছাগল প্রভৃতি স্থলজ প্রাণী, স্থলজ ও জলজ কীটপতঙ্গ,জু-প্ল্যাঙকটন (জলের ভাসমান খাদক) প্রভৃতি হল প্রথম শ্রেণির খাদক ।

(2) দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক বা গৌণ খাদক বা সেকেন্ডারি কনজিউমার (Secondary Consumer) :

যে সকল খাদক প্রথম শ্রেণির খাদকদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে শক্তি সংগ্রহ করে তাদের বলে গৌণ খাদক ।

এরা মাংসাশী (Carnivorous) প্রাণী ।

গৌণ খাদকের উদাহরণ হল ব্যাং, বিড়াল, কুকুর, ছোটো মাছ প্রভৃতি ।

(3) তৃতীয় বা সর্ব্বোচ্চ শ্রেণির বা প্রগৌণ খাদক বা টারসিয়ারি কনজিউমার (Tertiary Consumer):

যে সকল খাদক গৌণ খাদকদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে তাদের বলে প্রগৌণ বা সর্ব্বোচ্চ শ্রেণির খাদক ।

মানুষ, বাঘ, সিংঘ, বাজপাখি, ময়ূর, বোয়াল, হাঙর প্রভৃতি হল প্রগৌণ খাদকের উদাহরণ ।

(b) বিয়োজক (Decomposer) :

বাস্তুতন্ত্রে যে সব জীব মৃত, গলিত জীবদেহের প্রোটোপ্লাজমকে বিয়োজিত করে তাদের বলে বিয়োজক । এই বিয়োজিত পদার্থের কিছু অংশ বিয়োজক তার নিজের কাজে লাগায়, বাকি অংশ পরিবেশে ফিরিয়ে দেয় । উৎপাদকেরা পরিবেশ থেকে ওই পদার্থ গ্রহণ করে খাদ্য উৎপাদন করে । বিয়োজকদের মাইক্রো কনজিউমার (micro consumer)-ও বলে । বিভিন্ন ধরনের আণুবীক্ষণিক জীবাণু অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক হল বিয়োজকের উদাহরণ ।

জনসংখ্যা বা পপুলেশন স্তর (Population level) :

পপুলেশন স্তরের সংজ্ঞা :

একই প্রজাতিভুক্ত অন্তঃপ্রজননশীল সদস্যরা নির্দিষ্ট সময় ধরে একই বাসস্থানে একসঙ্গে বসবাস করলে তারা নিজ বৈশিষ্ট পূর্ণ যে স্তর গঠন করে তাকে জনসংখ্যা বা পপুলেশন স্তর বলে ।

তাই আমরা করবেট ন্যাশানাল পার্কের হরিণ, কাজিরাঙ্গা (Kaziranga)-র একশৃঙ্গ হন্ডার প্রভৃতির পপুলেশন-এর উল্লেখ করে থাকি । এই স্তরের উল্লেখযোগ্য প্রধান বিষয় হল-বিভিন্ন পপুলেশনের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ-বৈশিষ্ট্য থাকে । এইগুলি একক স্তরভুক্ত কোনো সদস্যের ওপর প্রযোজ্য নয় ।

পপুলেশন স্তরের মূল বৈশিষ্ট্য এর আকার বা ঘনত্ব (Density) (অর্থাৎ প্রতি একক অঞ্চলে বসবাসকারী জীবের সংখ্যা) । জীবের ঘনত্ব জন্মহার, মৃত্যুহার, পরিযান প্রভৃতি শর্তগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয় । পরিযানের দুটি ভাগ-অন্যস্থান থেকে এসে জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি করাকে অভিবাসন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব কমিয়ে নিজেরা অন্যত্র চলে যাওয়াকে দেশান্তর বলে ।

অভিবাসন (Immigration) (+) জন্মহার (+) জনসংখ্যার ঘনত্ব (-) মৃত্যুহার (Natality) (Population Density) (Mortality) (-) দেশান্তর ক্রেবস (Kerbs, 1985)-এর (Emigration) মতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক প্রাথমিক শর্তাবলি

জীব-সম্প্রদায় বা কমিউনিটি স্তর (Community level) :

উদ্ভিদ বা প্রাণীর পপুলেশন স্তর একাধিক । আসলে এরা পারস্পারিক দেওয়া-নেওয়া মাধ্যমে একটি জটিল সংগঠন তৈরি করে যায় নাম জীব- সম্প্রদায় বা কমিউনিটি । জীব-সম্প্রদায়ের সংজ্ঞা : জীব-সম্প্রদায় হল আন্তঃক্রিয়াশীল বিভিন্ন পপুলেশন স্তরের সমস্টি । জীব-সম্প্রদায়ের মধ্যে চলতে থাকা আন্তঃক্রিয়াগুলির মূল অর্থ প্রতিযোগিতা । প্রতিযোগিতা রয়েছে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক, পরজীবিতা ও প্রতিযোগিতা ।

(a) খাদ্য-খাদক সম্পর্ক (Prdation) :

জীবজগতের অন্তিত্ব খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল । অধিকাংশ জীবের খাদ্য অন্য কোনো জীব । জীবজগতে কেবল সবুজ উদ্ভিদই স্বনির্ভর-গোরু, ছাগল, হরিণ, হাতি, খরগোশ, কীটপতঙ্গের মতো তৃণভোজী প্রাণীরা বা প্রথম সারির খাদক । প্রথম সারির খাদকের ওপরের স্তরে রয়েছে দ্বিতীয় সারির খাদক বা গৌণ খাদক । এরা প্রথম সারির খাদককে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে । যেমন-চড়ুই, শালিক, ইঁদুর, ব্যাং, কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, নেকড়ে ইত্যাদি । এর পরের স্তরটিতে রয়েছে তৃতীয় সারির বা প্রগৌণ খাদক। এরা গৌণ খাদককে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে যেমন-সাপ । প্রগৌণ খাদক অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেই সর্বোচ্চ খাদক । প্রগৌণ খাদকের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল খাদকের নাম সর্বোচ্চ খাদক । যেমন-বাঘ, সিংঘ, কুমির, বাজপাখি ইত্যাদি । সর্বোচ্চ খাদক পুরোপুরি মাংসাশী । বাস্তুতন্ত্রে এভাবেই উৎপাদক উদ্ভিদ থেকে ক্রমপর্যায়ে খাদ্য-খাদক সম্পর্কযুক্ত প্রাণীগোষ্ঠীর মধ্যে শক্তি প্রবাহিত হয় (খাদ্যশৃঙখল) ।

(b) পরজীবিতা (Parasitism) :

দুটি জীব-প্রজাতীর মধ্যে ক্ষতিকর আন্তঃক্রিয়ার অর্থ পরজীবিতা । পরজীবী কোনো প্রতিদান না দিয়ে আশ্রয়দাতার দেহ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে, যার ফলে আশ্রয়দাতার অপূরণীয় ক্ষতি হয় । উদাহরণ-স্বর্ণলতা (Cuscuta)-উদ্ভিদ এবং ফিতাকৃমি (Taenia solium)-প্রাণী ।

(c) সহযোগিতা বা মিউচুয়ালিজম (Mutualism) :

সংজ্ঞা :

যে সহাবস্থান ও সহযোগিতাভিত্তিক আন্তঃক্রিয়ায় বৃদ্ধি ও বাঁচার জন্য জীব-প্রজাতিগুলি একে অপরের ওপরে সর্বতোভাবে নির্ভরশীল হওয়ায় স্বাভাবিক অবস্থায় উভয়ের কেউই এককভাবে বাঁচতে পারে না তাকে সহযোগিতা বা মিউচুয়ালিজম বলে ।

এই ধরনের সহযোগিতার অন্য নাম অন্যোন্যজীবীতা (Dash 1993) । এখানে উভয় জীবই উপকৃত হয় এবং তাদের মধ্যে দৃঢ় ও স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে ওঠে ।

উদাহরণ :

(1) মৌমাছি, মথ, প্রজাপতি বা অন্যান্য পাখি ফুলের মধু সংগ্রহ করে এবং পরিবর্তে ফুলে ফুলে পরাগযোগ ঘটায় ।

(2) পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ফল, বীজ ইত্যাদি দূর-দূরান্তরে বয়ে নিয়ে গিয়ে ফল ও বীজ বিস্তারে সাহায্য করে ।

(3) পারস্পারিক সুবিধা লাভের চমৎকার দৃষ্টান্ত পিঁপড়ে ও অ্যাকশিয়া (Acacia) গাছের সম্পর্ক । পিঁপড়ে খাদ্য ও বাসস্থানের বিনিময়ে গাছকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে ।

লাইকেন : এখানে ঘনিষ্ট দৈহিক সংস্পর্শে থাকা ছত্রাক ও শ্যাওলা উভয়ে উপয়ের পারস্পারিক সহযোগিতায় বেঁচে থাকে । ছত্রাক আর্দ্রতা জোগায়, শ্যাওলাটি খাদ্য প্রস্তুতে অপারগ ছত্রাককে খাদ্য সরবরাহ করে ।

রাইজোবিয়াম : এই ব্যাকযেরিয়া শিম্বীগোত্রীয় (যেমন-ধইঞ্চা) উদ্ভিদমূলে অর্বুদ সৃষ্টি করে এবং সেখানে বায়ুর নাইট্রোজেন বন্ধন করে-যাতে উদ্ভিদ সেই নাইট্রোজেনকে প্রোটিন সংশ্লেষে কাজে লাগাতে পারে । এই উপকারের বিনিময়ে ব্যাকটেরিয়া আশ্রয় ও খাদ্য সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হয় ।

(D) বাস্তুতান্ত্রিক স্তর (Ecological level) :

বাস্তুতান্ত্রিক স্তরের দুটি দিক-গঠনগত ও কার্যগত ।

(a) গঠনগত দিক (Structural aspect) : বাস্তুতান্ত্রিক স্তরের গঠনগত দিকটি অজীবীয় ও জীবীয় শর্তাবলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।

নীচের সারণিতে এই শর্তগুলির উল্লেখ্য করা হল– বাস্তুতন্ত্র অজীবীয় শর্ত জীবীয় শর্ত বিয়োজক ও রূপান্তরক (জটিল জৈব যৌগকে (সরল জৈব পদার্থকে সরল জৈব যৌগে পরিণত অজৈব পদার্থে পরিণিত করে) উদাহরণ–মৃতজীবী করে) অণুজীব গোষ্ঠী ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক ) উৎপাদক উদ্ভিদ খাদক (স্বভোজী) (পরভোজী) প্রাথমিক খাদক গৌণ খাদক প্রগৌণ খাদক উদাহরণ-কীটপতঙ্গ, উদাহরণ-চড়ুই, ব্যাং, শালিক, ও সর্বোচ্চ খাদক গোরু, ছাগল, হরিণ প্রভৃতি কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি প্রাণী উদাহরণ–সাপ,বাঘ তৃণভোজী সমস্ত প্রাণী সিংঘ, বাজপাখি ইত্যাদি ভৌত উপাদান জৈব উপাদান অজৈব উপাদান আলো মৃত ও গলিত মাটি উষ্ণতা জীবদেহ খনিজ লবণ জল উদ্ভিদ ও প্রানীজাত বায়ু জৈব পদার্থ

(b) কার্যগত দিক (Functional aspects) : বাস্তুতান্ত্রিক স্তরের কার্যগত দিক হল (1) খাদ্যশৃঙ্খল, (2) খাদ্যজাল, (3) শক্তিপ্রবাহ ও (4) পরিপোষক চক্র ।