বায়ুদূষণ : ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা
১৯৮৪ সালের ২রা ডিসেম্বরের মধ্যরাতে মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভূপালে ইউনিয়ন কারবাইড কোম্পানীর কারখানায় (কীটনাশক তৈরির) MIC (মিথাইল আইসোসায়ানেট) গ্যাসভর্তি দু-তিনটি ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ হয়। ঐ গ্যাস থেকে সেভিন বা কার্বরিল নামক কীটনাশক তৈরি হত। MIC গ্যাসকে 0° উষ্ণতায় ঠাণ্ডা না রাখলে গ্যাস উত্তপ্ত হয়। এই গ্যাস দাহ্য, উদ্বায়ী ও বিষাক্ত। ঐ গভীর রাতে ট্যাঙ্কের রেফ্রিজারেটার যন্ত্র বিকল হওয়ায় গ্যাস উত্তপ্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। ‘ফসজিন' নামক রাসায়নিক পদার্থের (এই রাসায়নিকটি MIC গ্যাসকে স্থিাবস্থায় রাখে) সঙ্গে ট্যাঙ্কে ঢুকে যাওয়া জলের বিক্রিয়ায় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, কার্বন ডাই অক্সাইড ও প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়। বিস্ফোরণের ফলে ২০ টন মিক গ্যাস, ফসজিন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস চারিদিকে প্রায় ৪০ বর্গকিমি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসাবে ঘুমন্ত মানুষদের মধ্যে প্রায় ২৯০০ জন মারা যান। বহু মানুষ ফুসফুস, মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হয়। প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যায়। বহু মানুষ প্রতিবন্ধী হয়। ক্ষতিপূরণের জন্য বহু দিন মামলা চলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানীর কাছ থেকে ১৯৯৪ সালে ভারত সরকার মাত্র ৪৭ কোটি ডলার পেয়েছেন।
ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড কোম্পানীতে সুরক্ষার গাফিলতি :
মিক গ্যাসের এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোম্পানীতে অনেকগুলি সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার রাতে প্রতিটি সুরক্ষা ব্যবস্থা মিকগ্যাস ছড়ানো প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়।
(1) স্ক্রাবার (Scrubber) এর সাহায্যে মিক গ্যাসকে কস্টিক সোডার দ্বারা নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তা কাজ করেনি।
(2) নির্গত গ্যাসকে ফ্লেয়ার টাওয়ার (flare tower) দ্বারা পুড়িয়ে নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থাও মিক গ্যাস প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়।
(3) মিক গ্যাসকে শীতল রাখার জন্য ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটর খারাপ থাকার ফলে ট্যাঙ্কে গ্যাসের উষ্ণতা যেখানে শূন্য ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হওয়া উচিত সেখানে তাপমাত্রা 15 থেকে 20 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছে যাওয়ায় বিস্ফোরণ ঘটেছিল।