logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

ভারতের সংবিধান

সংবিধান গঠন
সংবিধান গঠন গণ পরিষদ সংবিধান রচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি সংবিধানের রুপান্তর ইস্ট ইন্ডিয়া শাসনতন্ত্রের অভিজ্ঞতা ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের অভিজ্ঞতা ভারত শাসন আইন সংবিধান বিধিবদ্ধ করণ সংবিধানের প্রস্তাবনা মৌলিক অধিকার কেন্দ্র-সুপ্রিমকোর্ট ঃ বিবদমান দুই সংস্থা সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সংবিধানের তপশিল সমূহ সাম্যের অধিকার স্বাধীনতার অধিকার ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার আজ্ঞালেখ এর প্রকারভেদ রাষ্ট্র পরিচালনের নির্দেশ মূলক নীতি মৌলিক কর্তব্য সমূহ ভারত ভূখণ্ড ও তার সীমানা রাজ্য পুনর্গঠন নাগরিকত্ব সংবিধানের ভাগ ভারতের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা জরুরি ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের সম্পর্ক উপরাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদ পার্লামেন্ট লোকসভার স্পিকার রাজ্যসভা ভারতের রাজ্য কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল রাজ্য সভার ক্ষমতা ভারতের সুপ্রিমকোর্ট রাজ্য শাসনব্যবস্থা রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য বিধানসভা বিধান পরিষদ বিধানসভা হাইকোর্ট নিম্ন আদালত কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল ইউ. পি. এস. সি ক্যাগ অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল অর্থ কমিশন পঞ্চায়েতি রাজ জাতীয় প্রতীক চিহ্ন জাতীয় প্রতীক জাতীয় পতাকা জাতীয় স্তবগান জাতীয় সংগীত মর্যাদা পদের সারণি সংবিধান সংশোধন সংবিধান সংশোধনগুলির তালিকা

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (Union Territories)


  • এই অঞ্চলগুলি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা শাসিত।

  • এই অঞ্চলগুলি রাষ্ট্রপতির দ্বারা প্রশাসকের মাধ্যমে শাসিত হয়।

  • এই প্রশাসককে দিল্লি, দমন-দিউ, দাদরা-নগর-হাভেলি এবং পন্ডিচেরি-তে লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলা হয়। আন্দামান ও নিকোবর এবং চন্ডীগড়-এ এই প্রশাসককে বলা হয় চিফ কমিশনার। লাক্ষাদ্বীপে প্রশাসককে বলা হয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটর।

  • বর্তমানে মোট সংখ্যা ৭+১। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চন্ডীগড়, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন-দিউ, দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চল, লাক্ষাদ্বীপ ও পন্ডিচেরী, জম্মু ও কাশ্মীর, লাডাক।

  • ১৯৯১ সালের ৬৯তম সংশোধনী আইন অনুযায়ী, দিল্লি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের নাম হয় জাতীয় রাজধানী অঞ্চল এবং এর একটি বিধানসভা থাকবে যার সদস্যরা সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। এই বিধানসভা জনশৃঙ্খলা, পুলিশ ও জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলি বাদে রাজ্য তালিকাভুক্ত অন্য বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।

কেন্দ্র-রাজ্য-সম্পর্ক (Union-State Relations)


(ক) বিধানিক সম্পর্ক (Legislative Relations)

  • সংবিধানে বিষয়গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

    • কেন্দ্র তালিকাভুক্ত- ৯৭টি বিষয়

    • রাজ্য তালিকাভুক্ত- ৬৬টি বিষয়

    • সমবর্তী সূচি- ৪৭টি বিষয়

  • কেন্দ্রীয় সূচি বা কেন্দ্র তালিকাভুক্ত বিষয়ে সংসদের একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে। যে বিষয়গুলি এখানে আছে সেগুলি হলঃ প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক কার্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নাগরিকত্ব, রাজ্যগুলির মধ্যে ব্যাবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, পরমাণু শক্তি, ডাক ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ইত্যাদি।

  • রাজ্যতালিকাভুক্ত বিষয়গুলিতে বিধিপ্রণয়নের ক্ষমতা কেবলমাত্র রাজ্যের উপর ন্যস্ত আছে। বিষয়গুলি হলঃ জনশৃঙ্খলা, পুলিশ, ন্যায় প্রণালী, করা, স্বশাসন, কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধান, সেচব্যবস্থা ইত্যাদি। তবে সংবিধান বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারকে তার এক্তিয়ার বিস্তৃত করে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়েই হস্তক্ষেপ করতে পারে। আসলে, জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে উপযুক্ত তিনটি তালিকাভুক্ত বিষয়েই সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে।

  • সমবর্তী সূচীতে থাকা বিষয়গুলিতে সংসদ ও রাজ্য বিধানসভার মধ্যে যে কেউ আইন প্রণয়ন করতে পারে। বিষয়গুলি হলঃ ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইন, বন, শিক্ষা, বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ, ওষুধ, শ্রমিক কল্যাণ, খবরের কাগজ, বই ও ছাপাখানা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি।

  • অবশিষ্ট ক্ষমতা (তালিকায় না থাকা বিষয়গুলি)কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া হয়েছে।

  • অনুচ্ছেদ ২০০ অনুযায়ী রাজ্য রাজ্য বিধানমন্ডলে পাস হওয়া কোনো বিল যদি রাজ্যপাল মনে করেন যে এটি আইনে পরিণত হলে হাইকোর্টের ক্ষমতা খর্ব হবে, তাহলে তিনি উক্ত বিলটিকে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।


(খ) শাসনব্যবস্থাগত সম্পর্ক (Administrative Relations)

  • ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রকে শক্তিশালী করার লক্ষে কিছু পক্ষপাতিত্ব করেছে বলা যায়। রাজ্য সরকারের শাসনব্যবস্থার উপর কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বজায় থাকে।

  • রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা সর্বদাই সংসদীয় আইনকে মান্য করে চলে এবং কোনোভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতার উলঙ্ঘন করে না।

  • রাজ্য যদি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে অনুচ্ছেদ ৩৬৫ প্রয়োগ করে কেন্দ্র রাজ্যের শাসনক্ষমতা নিজের হাতে নিতে পারে।


(গ) আর্থিক সম্পর্ক (Financial Relation)

  • রাজ্য এই ব্যাপারে কেন্দ্রের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সংবিধানে রাজ্যের জন্য অপ্রতুল রাজস্বের উৎস নির্ধারণ করা আছে, তাই রাজ্যকে কেন্দ্রের ভরতুকি ও অনুদানের উপর নির্ভর করতে হয়। কেন্দ্র ভারতের কন্ট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে, যিনি রাজ্যের অর্থ তহবিল অডিট করেন।

  • প্রতি পাঁচ বছরে একবার রাষ্ট্রপতি অর্থ কমিশন নিযুক্ত করেন।


রাজস্ব বন্টন পদ্ধতি (Scheme of Distribution of Revenue)

  • অনুচ্ছেদ ২৬৮ অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজস্ব বন্টনের নীতি নির্ধারণ করা আছে। রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ের রাজস্বের উপর রাজ্যের পুরোপুরি অধিকার রয়েছে। কেন্দ্র তালিকাভুক্ত বিষয়ের রাজস্বের অধিকার কেন্দ্রের। সমবর্তী সূচীর বিষয়ের উপর কোনো শুল্ক নেই।

  • সংবিধানে চার প্রকারের কেন্দ্রীয় করের কথা বলা আছে যেগুলিতে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব রয়েছে-

    • (ক) কতকগুলি শুল্ক কেন্দ্র আরোপ করবে কিন্তু আদায় করবে রাজ্য এবং তার কাজে লাগাবে। যেমন ঔষধ ও প্রসাধন সামগ্রীর উপর স্ট্যাম্প ডিউটি ও অন্তঃশুল্ক, যা কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত।

    • (খ) কেন্দ্র কর্তৃক আরোপিত ও সংগৃহীত, কিন্তু রাজ্যসমূহের জন্য নির্দিশট করঃ কৃষিজমি ছাড়া অন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্পর্কিত শুল্ক; কৃষিজমি ছাড়া অন্য সম্পত্তি সম্পর্কিত সম্পদ শুল্ক; রেলপথ, সমুদ্রপথ ও বায়ুপ্তহে বাহিত দ্রব্য ও যাত্রীদের উপর সীমা-কর; রেলপথে যাত্রীভাড়া ও মালের মাসুলের উপর কর; অন্তঃরাজ্য মাল প্রেরণের উপর কর; সংবাদপত্রের ক্রয় ও বিক্র্য়ের উপর কর ও বিজ্ঞাপনের উপর কর।

    • (গ) কেন্দ্র কর্তৃক আরোপিত ও সংগৃহীত এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সমূহের মধ্যে বন্টিত কর; উপার্জন কর যা কোম্পানির সম্পত্তি কর নয়।

    • (ঘ) কেন্দ্র কর্তৃক আরোপিত ও সংগৃহীত এবং এটিও মনে করলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ভাগ করা যেতে পারেঃ ঔষধ ও প্রসাধনী সামগ্রী বাদে অন্য সামগ্রীর উপর অন্তঃশুল্ক ও কর।

  • অনুচ্ছেদ ২৭৫ অনুসারে, কেন্দ্র মূলত উপজাতি অঞ্চলের কল্যাণের জন্য রাজ্যগুলিকে সহায়ক অনুদান দিতে পারে। এই অর্থ রাজ্যের সংগৃহীত অর্থের একটি অন্যতম প্রধান উৎস।


সারকারিয়া কমিশন (Sarkaria Commission)

  • রাজ্যগুলিকে আরও ক্ষমতা দেওয়ার দাবি প্রব্ল হবার পর, বিচারপতি সারকারিয়া-র নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালের জুন মাসে এই কমিশন গঠিত হয়। ১৯৮৭ সালের ২৭শে অক্টোবর কমিশন তার রিপোর্ট পেশ করে।

  • সমবর্তী সূচিতে থাকা বিষয়গুলিতে কেন্দ্র রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করবে ও নিম্নলিখিত সুপারিশগুলিতেও একইভাবে সিদ্ধান্ত নেবেঃ-

    • (১) প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন।

    • (২) অনুচ্ছেদ ৩৬৫ (রাষ্ট্রপতি শাসন)-এর অপব্যবহার না করা।

    • (৩) রাজ্যপাল সম্পর্কে।

    • (৪) হাইকোর্টের বিচারপতিদের তাঁদের সম্মতি ছাড়া বদলি না করা।

    • (৫) ত্রি-ভাষা ফর্মুলা রূপায়িত করা।

    • (৬) রেডিয়ো ও দূরদর্শনের উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা।

    • (৭) কেন্দ্রের দ্বারা সংগৃহীত কর আরও বেশি করে রাজ্যগুলিতে বন্টনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন।

    • (৮) কোম্পানির কর কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমবন্টন।

    • (৯) অনুচ্ছেদ ২৬৩-তে বর্ণিত আন্তঃরাজ্য পরিষদকে সমর্থন। তবে এই নাম পরিবর্তন করে আন্ত-সরকার পরিষদ করার সুপারিশ।

    • (১০) কেন্দ্র সরকারের নির্ধারিত বিজ্ঞপ্তির পরে নয়, স্বাভাবিক ভাবেই আন্তঃরাজ্য নদীজল ট্রাইবুলানের রায় বের হবার তিন মাস পরেই তা বাধ্যতামূলক ভাবে কার্যকর হবে।

    • (১১) জাতীয় উন্নয়ন পরিষদ বহাল রাখা ও আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা।

    • (১২) অর্থ কমিশন ও পরিকল্পনা কমিশনের বর্তমান কাজ কর্ম সন্তোষজনক।

    • (১৩) অর্থ কমিশনের কার্যকাল সম্পর্কে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা।


আঞ্চলিক পরিষদ (Zonal Councils)

  • ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিতঃ-

    • (১) উত্তরাঞ্চল- পাঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, চণ্ডীগড় ও জাতীয় কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল দিল্লি।

    • (২) কেন্দ্রীয় অঞ্চল- উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশ।

    • (৩) পূর্বাঞ্চল- বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও সিকিম।

    • (৪) পশ্চিমাঞ্চল- মহারাষ্ট্র, গোয়া, গুজরাট এবং দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন-দিউ-কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।

    • (৫) দক্ষিণাঞ্চল- অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালা ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পন্ডিচেরী।

    • (৬) উত্তর-পূর্বাঞ্চল পরিষদ- ১৯৭২ সালে আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে এর মধ্যে সিকিম অন্তর্ভুক্ত হয়। মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৮।

  • এই পরিষদ গঠন করার লক্ষ্য হল রাজ্যগুলির নিদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা, আন্তঃরাজ্য সমস্যার সমাধান করা এবং কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের নিষ্পত্তি করা।

  • প্রত্যেক পরিষদ প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দুজন অন্য মন্ত্রীকে নিয়ে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রশাসককে নিয়ে গঠিত হয়।

  • সমস্ত আঞ্চলিক পরিষদের সাধারণ সভাপতি মনোনীত হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।