রাজ্যপাল (The Governor)
নিয়মতান্ত্রিক নির্বাহক প্রধান।
সাধারণত একটি রাজ্যে একজন রাজ্যপাল থাকেন, কিন্তু ১৯৫৬ সালের সংবিধানের সতেরোতম সংশোধন অনুযায়ী একই ব্যক্তি একাধিক রাজ্যের রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত হতে পারেন অথবা একাধিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেঃ গভর্নর নিযুক্ত হতে পারেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সুপারিশ ক্রমে রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত হন।
যোগ্যতা (Qualification)
(ক) ভারতের নাগরিক হতে হবে।
(খ) ৩৫ বছর বয়স হতে হবে।
(গ) কেন্দ্রীয় বা রাজ্য বিধানমন্ডলের সদস্য হতে পারবেন না।
(ঘ) রাজ্য বিধানমণ্ডলের সদস্যদের সমান যোগ্যতা থাকতে হবে।
(ঙ) কোনো লাভজনক পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না।
অন্যান্য তথ্য (Other Points)
রাজ্যপালের স্বাভাবিক কার্যকাল ৫ বছর কিন্তু রাষ্ট্রপতির ইচ্ছানুযায়ী আরও বেশি সময় তিনি পদে থাকতে পারেন ও যতক্ষণ না পর্যন্ত পরবর্তী রাজ্যপাল তার পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন, তিনি কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ইস্তফা দিতে পারেন অথবা রাষ্ট্রপতি তাঁকে বরখাস্ত করতে পারেন। রাজ্যপালের অপসারণের ব্যাপারে রাজ্য অথবা হাইকোর্টের কোনো ভূমিকা নেই।
রাজ্যের সঞ্চিত নিধি থেকে তিনি প্রতিমাসে ১,১০,০০০ টাকা হারে বেতন পান এবং এই ব্যাপারে রাজ্য বিধানসভার ভোটের কোনো এক্তিয়ার নেই। যদি একই ব্যাক্তি একাধিক রাজ্যের রাজ্যপাল থাকেন তাহলে তাঁকে দেওয়া সমস্ত প্রাপ্য বেতন ও ভাতা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও তার অনুপস্থিতিতে প্রবীণতম বিচারপতি রাজ্যপাল্কে শপথ বাক্য পাঠ করান।
ক্ষমতা (Powers)
(ক) নির্বাহক ক্ষমতা-
রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ, রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করেন।
(খ) বিধানিক ক্ষমতা-
রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান, স্থগিদ বা ভেঙে দিতে পারেন।
নির্বাচনের পরে ও প্রত্যেক নতুন অধিবেশনের আগে রাজ্যপাল বিধানসভায় ভাষণ দেন।
কোনো বিল বিধানসভায় গড়ে থাকলে তিনি বার্তা পাঠাতে পারেন।
তিনি রাজ্য বিধানসভার মোট সদস্য সংখ্যার ছয় ভাগের এক ভাগ সদস্যদের নিযুক্ত করতে পারেন।
অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন প্রণয়ন করতে পারেন।
তিনি বিলে সম্মতি দিলে তবেই তা আইনে পরিণত হয়। বিলের ব্যাপারে রাজ্যপালের কাছে কয়েকটি বিকল্প আছেঃ
(১) তিনি বিলে তাঁর সম্মতি দিতে পারেন।
(২) অর্থবিল ছাড়া অন্য কোনো বিল তিনি সংশোধনের প্রস্তাব সহ ফেরত পাঠাতে পারেন। দ্বিতীয়বার উক্ত বিলটি পাস করে, তিনি তাতে সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন।
(৩) তিনি রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য বিলটি সংরক্ষিত করতে পারেন। তিনি বিল থেকে তাঁর সম্মতি প্রত্যাহার করতেও পারেন।
(গ) অর্থনৈতিক ক্ষমতা-
বাজেট যাতে পেশ হয় তা তিনি নিশ্চিত করেন। সমস্ত অর্থ বিল একমাত্র তাঁর সুপারিশক্রমে পেশ করা হয়।
(ঘ) বিচারিক ক্ষমতা-
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করার সময় রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের পরামর্শ নেন। হাইকোর্টের নিম্নে থাকা আদালতগুলির বিচারপতিদের তিনি নিয়োগ করেন। রাজ্যের আইনের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত কোনো ব্যক্তির দন্ডে মার্জনা, প্রবিলম্বন, বিলম্বন বা রেহাই মঞ্জুর করার অথবা দন্ডাদেশ বিলম্বিত করার, রেহাই করার বা লঘু করার ক্ষমতা রাজ্যপালের আছে। কিন্তু মৃত্যুদন্ড রদ বা মার্জনা করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
(ঙ) জরুরি ক্ষমতা-
যদি কোনো রাজ্য সরকার অসাংবিধানিকভাবে শাসনতন্ত্র চালাচ্ছে বলা মনে হয়, তাহলে তিনি তা রাষ্ট্রপতিকে জানাতে পারেন এবং রাষ্ট্রপতি শাসনের (অনুচ্ছেদ ৩৬৫) সুপারিশ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি শাসন চলাকালীন রাজ্যপাল রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। সেই সময় রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা তিনি নিজের হাতে নেন এবং জনপদগণ কৃত্যক আধিকারিকদের (সিভিল সার্ভেন্ট) সাহায্যে রাজ্য চালান।
(চ) অন্যান্য ক্ষমতা-
রাজ্যের অডিটর জেনারেলের রিপোর্ট গ্রহণ ও পেশ করেন।
রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিপোর্ট পেশ করেন।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য হিসাবে কাজ করেন এবং উপাচার্যদের নিযুক্ত করেন।
কোনো রাজনৈতিক দলের যদি পূর্ণ সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকে তাহলে তিনি কোনো সদস্যকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করতে পারেন।
রাজ্য বিধানসভার পাস করা কোনো সাধারণ বিলে সাক্ষর করতে অস্বীকার করতে পারেন।
সারকারিয়া কমিশন নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলি দিয়েছিলেনঃ
১. রাজ্যপাল নিয়োগের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ।
২. বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিকে নিয়োগ।
৩. সক্রিয় রাজনীতিক না নিয়োগ করা।
৪. অপসারণ পদ্ধতি জটিল ও কঠিন করা।
৫. রাজ্যপাল পদের বিলুপ্তি না ঘটানো (Chief Minister)।