ভারতের রাষ্ট্রপতি (Indian President)
রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক প্রধান, দেশের মহানাগরিক।
পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ মন্ত্রীমণ্ডলীর পরামর্শক্রমে প্রয়োগ করা প্রশাসনিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত করা আছে। সংবিধানের ৪২তম সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য।
যোগ্যতামান (Qualification)
(১) ভারতের নাগরিক হতে হবে।
(২) বয়স পঁয়তিরিশ বছর পূর্ণ হতে হবে।
(৩) লোকসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচনের যোগ্য।
(৪) নিম্নলিখিত পদ বাদে কোনো সরকারি পদে আসীন থাকতে পারবেন না।
- (ক) রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি
- (খ) কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল
- (গ) কেন্দ্র বা রাজ্যের মন্ত্রী
নির্বাচন পদ্ধতি (Election)
অনুচ্ছেদ ৫৪ ও ৫৫-তে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি বর্ণিত আছে।
সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যগণ ও রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচিত সদস্যগণ দ্বারা গঠিত একটি নির্বাচক মণ্ডলী পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির দ্বারা ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করেন। মনোনীত সদস্যগণ এতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। ১৯৯২ সালের ৭০তম সংশোধনা অনুযায়ী, ‘রাজ্য’ শব্দটির দ্বারা দিল্লি ও পন্ডিচেরীকেও বোঝাবে। লেজিসলেটিভ কাউন্সিল-এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদান করার অধিকারী নন।
সংসদের মোট ভোটদানের শক্তি সমস্ত বিধানসভাগুলির মোট ভোট-ক্ষমতার সমান হতে হবে।
প্রত্যেক রাজ্যের বিধানসভার সদস্যদের মোট ভোটশক্তি ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিত্বের মধ্যে সমতা রক্ষা করা হয়েছে। এই সমতা রক্ষা করার জন্য যে ফর্মুলা গ্রহণ করা হয় তা নিম্নরূপঃ
একজন বিধায়কের ভোটমূল্য= রাজ্য জনসংখ্যা /(১০০০ X মোট বিধায়কের সংখ্যা)
বিভিন্ন রাজ্য ও সংসদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা হয়েছে সে ফর্মূলার মাধ্যমে তা নিম্নরূপঃ-
একজন সাংসদের ভোটমূল্য= সমস্ত রাজ্যের বিধায়কদের মোট ভোটমূল্য /মোট সাংসদ সংখ্যা (লোকসভা+রাজ্যসভা)
১৯৭১ সালের আদমশুমারি সম্প্রতি বিবেচনা ধীন।
নির্বাচনটি একক হস্তান্তর যোগ্য ভোট দ্বারা সমানানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতি অনুসারে গোপন ব্যালটে হয়। যে পার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পান তাঁকেই নির্বাচিত করা হয়।
এটা সংবিধান সভায় বলা হয়েছিল যে, যেখানে একজন মাত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন, সেখানে সমানানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অর্থহীন। এছাড়া, এখানে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের কোনো অস্তিত্বই নেই কারণ কারুরই একক ভোট নেই, সবারই একাধিক ভোট রয়েছে। এই বিষয়গুলির উত্তর দিতে গিয়ে ডঃ আম্বেদকর বলেছিলেন, “আমরা একক সমানানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা রেখেছি সেখানে একজন প্রার্থী যতক্ষণ না ‘কোটার ভোট’ পাবেন তার নীচের প্রার্থীরা পরপর বাতিল হতে থাকবেন”। তিনি আরও বলেছিলেন, এই পদ্ধতি চালু করার উদ্দেশ্য হল যাতে সংখ্যালঘুরাও এই নির্বাচনে কিছু ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও সেখানে একজনই মাত্র-নির্বাচিত হচ্ছে, সেখানে এই পদ্ধতি কিভাবে কার্যকর হবে তা তিনি ব্যাখ্যা করেন নি। সাংবিধানিক বিশ্লেষকগণ বলেছেন যে এই পদ্ধতি হল বিকল্প ভোটের নামান্তর
কোটা= (মোট প্রদত্ত ভোট সংখ্যা/2) + 1
এই পদ্ধতি একজন ভোটার প্রত্যেক প্রার্থীকে তার পছন্দ উল্লেখ করে যতজন প্রার্থী ততগুলিই ভোট দিতে পারবে। যদি প্রথমবারের গণনায় কোনো প্রার্থী প্রার্থিত কোটা না পান তাহলে ভোট হস্তান্তর পদ্ধতি বিলোপ করা হবে এবং তাঁর দ্বিতীয় পছন্দের ভোট অন্যান্য প্রার্থীদের প্রথম পছন্দের ভোটের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। যতক্ষণ না একজন প্রার্থী প্রত্যাশিত কোটা না পাচ্ছেন ততক্ষণ এই পদ্ধতি অনুসৃত হবে। কাজেই প্রথমবারের গণনায় যিনি সর্বাপেক্ষা বেশি ভোট পেলেন, তিনিই যে বিজয়ী হবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই পদ্ধতি এটা নিশ্চিত করে যে, যিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হবেন তাঁর পক্ষে পূর্ণ সংখ্যা গরিষ্ঠের সমর্থন আছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচণ সংক্রান্ত সমস্ত বিতর্ক সুপ্রিমকোর্ট অনুসন্ধান করবে।
দ্রষ্টব্যঃ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে ভি. ভি. গিরি একমাত্র যিনি ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেছিলেন।
১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে নিলম সঞ্জীব রেড্ডি রাষ্ট্রপতি হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করেন।
প্রধান বিচারপতি (সুপ্রিমকোর্ট)-র বা তাঁর অবর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণতম বিচারপতির উপস্থিতিতে তিনি শপথ নেন।
সময়কাল এবং বেতন ও ভাতা (Term and Emoluments)
৫ বছরের কার্যকল।
অনুচ্ছেদ ৫৭ বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি কতবার রাষ্ট্রপতি হতে পারেন তার কোনো উর্ধসীমা নেই।
পূর্ণ স্ম্যকালের আগেই উপরাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করতে পারেন।
বর্তমান বেতন-প্রতিমাসে দেড় লক্ষ টাকা (ভাতা সহ)। পেনশন হবে বেতনের পঞ্চাশ শতাংশ।
অভিশংসন (অনুচ্ছেদ ৬১)(Impeachment)
একটি প্রায়-বিচারিক পদ্ধতি।
শুধুমাত্র সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ইম্পীচ বা অভিশংসন করা যায়।
সংসদের যে-কোন কক্ষে ইমপীচমেন্ট পদ্ধতি উত্থাপন করা যেতে পারে। উক্ত কক্ষের মোট সদস্য সংখ্যার এক-চতুর্থাংশের স্বাক্ষর করা একটি অভিযোগপত্র প্রথমে প্রস্তাবাকারে পেশ করা হয়। সংকল্প পেশ করার আগে রাষ্ট্রপতিকে একটি চোদ্দো দিনের নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ দেবার পর সংকল্প ওই কক্ষের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যন দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাধিক্যে গৃহীত হয়। এর পর বিষয়টি অন্য কক্ষে রেফার করা হয়।
অভিযোগপত্র একটি কক্ষে গঠন করার পর তা অন্য কক্ষ তদন্ত করে। সেই সময় রাষ্ট্রপতি স্বয়ং বা আইনজীবী দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন। তদন্তের পর সেই কক্ষের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যান্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাধিক্যে যদি সংকল্প গ্রহণ করা হয় যে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাহলে সংকল্প গ্রহণের তারিখ থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ হবে।
রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে (Vacancy)
মৃত্যু, ইস্তফা বা অপসারণের কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি হিসাবে কাজ করবেন। তিনি যদি না থাকেন তাহলে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং তাঁরও অবর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতিপদ শূন্য হবার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
দ্রষ্টব্যঃ
ভারতের ইতিহাসে একবারই বিচারপতি এম. হেদায়েতুল্লাহ (সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি)১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বিচারপতি এম. হেদায়েতুল্লাহ একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুদফায় দুটি ভিন্ন পদাধিকারে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন-প্রথমবার ১৯৬৯ সালে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৮২ সালে উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে।
ভারতের রাষ্ট্রপতিগণ | ||
---|---|---|
নাম | কার্যকাল | |
হতে | পর্যন্ত | |
ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ | ২৬.০৬.১৯৫০ | ১৩.০৫.১৯৬২ |
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ | ১৩.০৫.১৯৬২ | ১৩.০৫.১৯৬৭ |
ডঃ জাকির হোসেন | ১৩.০৫.১৯৬৭ | ০৩.০৫.১৯৬৯ |
ভি.ভি.গিরি(উপরাষ্ট্রপতি) | ০৩.০৫.১৯৬৯ | ২০.০৭.১৯৬৯ |
বিচারপতি এম. হেদায়েতুল্লাহ | ২০.০৭.১৯৬৯ | ২৪.০৮.১৯৬৯ |
ভি.ভি.গিরি | ২৪.০৮.১৯৬৯ | ২৪.০৮.১৯৭৮ |
এফ.আলি আহমেদ | ২৪.০৮.১৯৭৪ | ১১.০২.১৯৭৭ |
ভি.ডি.যাত্তি | ১১.০২.১৯৭৭ | ২৫.০৭.১৯৭৭ |
এন্.সঞ্জীব রেড্ডি | ২৫.০৭.১৯৭৭ | ২৫.০৭.১৯৮২ |
জ্ঞানী জৈল সিং | ২৫.০৭.১৯৮২ | ২৫.০৭.১৯৮৭ |
আর.বেঙ্কটরামন | ২৫.০৭.১৯৮৭ | ২৫.০৭.১৯৯২ |
ডঃ এস. ডি.শর্মা | ২৫.০৭.১৯৯২ | ২৫.০৭.১৯৯৭ |
কে.আর.নারায়ণন | ২৫.০৭.১৯৯৭ | ২৫.০৭.২০০২ |
ডঃ এ.পি.জে. আব্দুল কালাম | ২৫.০৭.২০০২ | ২৫.০৭.২০০৭ |
শ্রীমতি প্রতিভা পাটিল | ২৫.০৭.২০০৭ | ২৫.০৭.২০১২ |
প্রণব মুখার্জী | ২৫.০৭.২০১২ | ২৫.০৭.২০১৭ |
রামনাথ কোবিন্দ | ২৫.০৭.২০১৭ | ২৫.০৭.২০২২ |
দ্রৌপদী মুর্মু | ২৫.০৭.২০২২ | বর্তমান |