রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা (Powers)
প্রশাসনিক ক্ষমতাঃ
তিনি প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের, ইউ, পি.এস.সি-র চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের, কন্ট্রোলার ও অডিটর জেনারেল, অ্যাটর্নি জেনারেল, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের, রাজ্যপাল, অর্থ কমিশনের সদস্য, রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ করেন।
তিনি লেফটেনেন্ট গভর্নর, কমিশনার বা প্রশাসক-এর সাহায্যে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি শাসন করতে পারেন।
বিধানিক ক্ষমতা (Legislative Powers)
সংসদের দুই পক্ষের অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন বা স্থগিদ করতে পারেন। লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন।
সাধারণ নির্বাচনের পর ও প্রতি বছর অধিবেশনের প্রারম্ভে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন।
কোনো অসীমাংসিত বিধেয়ক (বিল)সম্পর্কে সংসদের যে-কোনো কক্ষে বার্তা প্রেরণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে।
লোকসভার স্পিকার (অধ্যক্ষ ও ডেপুটি স্পিকার (উপাধ্যক্ষ)অনুপস্থিত থাকলে রাষ্ট্রপতি লোকসভার কোনো সদস্যকে লোকসভার কোনো অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার জন্য নিয়োগ করতে পারেন (একই নিয়ম রাজ্যসভার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)।
রাজ্যসভায় ১২জন সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন।
সাংসদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা নিষ্পত্তি করতে পারেন।
কিছু বিশেষ বিল যেমন নতুন রাজ্য গঠন, রাজ্যের সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিল, অর্থ বিল ইত্যাদি উত্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতির আগাম সম্মতি বা সুপারিশ আবশ্যক।
যখন কোনো বিল সংসদে পাস হবার পর রাষ্ট্রপতির কাছে যায়, তিনি
- (১) বিলে তার সম্মতি দিতে পারেন
- (২) বিলে তাঁর অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন
- (৩) বিলটি একবারের জন্য সংসদের পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন (অর্থ বিল বা সংবিধান সংশোধনা বিল ছাড়া)
ভারতের রাষ্ট্রপতি সংসদে পাস হওয়া বিলের বিষয়ে ভেটো প্রয়োগ করার অধিকারী। তিনি তিন ধরণের ভেটো প্রয়োগ করতে পারেন।
- (১)চরম ভেটো (Absolute Veto)- রাষ্ট্রপতি বিলে অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন। সাধারণত কেবলমাত্র বেসরকারি সদস্যদের বিলেই এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। সরকারি বিলের ক্ষেত্রে এমন অবস্থা কল্পনা করা যেতে পারে সেখানে একটা বিল সংসদে গৃহীত করার পর ও রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রদানের আগে মন্ত্রীসভা ইস্তফা দিল এবং নতুন গঠিত মন্ত্রীসভা রাষ্ট্রপতিকে উক্ত বিলের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করার পরামর্শ দিল।
- (২)মধ্যকালীন বা নিলম্বন ভেটো (Suspense Veto)- এটি তখনই প্রয়োগ করা যায় যখন বিলে সম্মতি প্রদান করার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি সমগ্র বিলটি বা তার একটি অংশ পুনর্বিবেচনার জন্য প্রেরণ করেন এবং এর পর যদি সংসদ তা আবার প্রেরণ করে তাহলে রাষ্ট্রপতির তা গ্রহণ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। সুতরাং এই ভেটো হল একটি মধ্যকালীন ভেটো।
- (৩) পকেট ভেটো (Pocket Veto)- রাষ্ট্রপতিকে কতদিনের মধ্যে বিলে সম্মতি দিতে হবে বা অসম্মতি জ্ঞাপন করতে হবে বা ফেরত দিতে হবে, সংবিধানে সে ব্যাপারে কোনো সময়সীমা ধার্য করা হয় নি। সুতরাং রাষ্ট্রপতি এই ভেটো প্রয়োগ করে অনির্দিষ্টকাল কোনো বিল আটকে দিতে পারেন। কিন্তু মন্ত্রীসভা শক্তিশালী হলে রাষ্ট্রপতির পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিং পোস্টাল বিল-এর ক্ষেত্রে পকেট ভেটো প্রয়োগ করেছিলেন।
সংসদের অধিবেশন যখন চলছে না তখন যদি কোনো আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজন তাহলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স)জারি করে তা করতে পারেন (অনুচ্ছেদ ১২৩)। তবে সংসদের অধিবেশন শুরু হবার ছয় মাসের মধ্যে অধ্যাদেশটি পাস করাতে হবে।
কন্ট্রোলার ও অডিটর জেনারেল, ইউপিএসসি এবং অর্থ কমিশনের রিপোর্ট তিনি পার্লামেন্টে পেশ করেন।
অর্থনৈতিক ক্ষমতা (Financial Powers)
সমস্ত অর্থবিল একমাত্র রাষ্ট্রপতির সুপারিশক্রমে সংসদে পেশ হয়।
রাষ্ট্রপতির সুপারিশক্রমেই কোনো অনুদানের দাবি পেশ করা যায়।
কোনো অনিবার্য ব্যায়ের কারণে তিনি ভারতের সঞ্চিত নিধি থেকে আগাম বরাদ্দ করতে পারেন।
প্রতি পাঁচ বছর পরপর তিনি অর্থ কমিশন নিয়োগ করতে পারেন যা কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে করবন্টন সুপারিশ করে।
বিচারিক ক্ষমতা (Judicial Powers)
ভারতের রাষ্ট্রপতির নিম্নবর্ণিত মার্জনা করার ক্ষমতা রয়েছেঃ-
- (১) মার্জনাঃ কোনো অপরাধের বিচার করা হয়েছে এবং বিচারে দোষ প্রমাণ হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মার্জনা করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে।
- (২) প্রবিলম্বনঃ মার্জন বা লঘূকরণের প্রক্রিয়া চলতে থাকার জন্য কোনো দন্ডাদেশ কার্যকর করাকে স্থগিদ রাখা।
- (৩) হ্রাস করাঃ এর ফলে শাস্তির চরিত্র বদল না করে শাস্তির পরিমাণ কমানো হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, এক বছরের কারাদন্ড কমিয়ে ছয় মাসের করা।
- (৪) বিলম্বনঃ কোনো বিশেষ কারণে ঘোষিত শাস্তির তুলনায় কম শাস্তি প্রদান করার ক্ষমতা। উদাহরণ হিসাবে গর্ভবতী মহিলা অপরাধীর কথা বলা যেতে পারে।
- (৫) লঘুকরণঃ একধরণের দন্ডের বদলে আর এক ধরণের লঘু দন্ড প্রদান। যেমন-মৃত্যুদন্ডের বদলে সশ্রম কারাদন্ড, সশ্রম কারাদন্ডের বদলে বিনাশ্রম কারাদন্ড, বিনাশ্রম কারাদন্ডের বদলে জরিমানা।
তিনি সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিযুক্ত করে থাকেন।
সামরিক ক্ষমতা (Military Powers)
তিনি ভারতের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
তিনি জল, স্থল ও নৌবাহিনীর প্রধান্দের নিয়োগ করেন।
তিনি সংসদের পরামর্শ ও অনুমোদন ক্রমে যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তিস্থাপন করতে পারেন।
কূটনৈতিক ক্ষমতা (Diplomatic Powers)
আন্তর্জাতিক ব্যাপারে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।
অন্যান্য দেশে ভারতীয় কূটনীতিক নিয়োগ ও অন্যান্য দেশের কূটনীতিক গ্রহণ করেন।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে সন্ধি ও চুক্তি সম্পাদন তাঁর পক্ষে করা হয়।