রাজনৈতিক দল (Political Parties)
জাতীয় দল হিসাবে স্বীকৃতি পেতে হলে একটি রাজনৈতিক দল্কে লোকসভা বা বিধানসভার সাধারণ নির্বাচন যে-কোনো চারটি বা তার বেশি রাজ্যের মোট ভোটের অন্তত ছয় শতাংশ পেতেই হবে। এছাড়া, সেই রাজনৈতিক দলকে যে-কোনো একটি রাজ্য থেকে বা সব রাজ্যগুলি মিলিয়ে অন্তত চারটি আসনে জয়লাভ করতে হবে।
বিকল্প ব্যবস্থাহিসাবে, একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় দলের মর্যাদা পেতে পারে যদি এই দল লোকসভার দুই শতাংশ আসন অধিকার করতে পারে। তবে শর্ত থাকে যে, এই সদস্যরা অন্তত তিনটি আলাদা রাজ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।
একটি রাজনৈতিক দল রাজ্যের স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হতে পারে যদি নিম্নলিখিত (ক) বা (খ)-এর উপধারা বর্ণিত শর্তাবলি পূরণ করতে পারে।
(ক) এই দলকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে শেষ লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে।
(১) প্রতি ২৫ জন সাংসদের মধ্যে অন্তত ১ জন সাংসদ ওই দলের হতে হবে অথবা এই সংখ্যার ভগ্নাংশ উক্ত রাজ্য থেকে হতে হবে।
(২) অন্তত ১ জন বিধায়ক প্রতি ৩০ জন সাংসদের মধ্যে ওই দলের হতে হবে অথবা এই সংখ্যার ভগ্নাংশ উক্ত রাজ্য থেকে হতে হবে।
(খ) রাজ্যে হওয়া শেষ লোকসভা বা বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমস্ত প্রার্থী মিলিয়ে মোট প্রদত্ত ভোটের ছয় শতাংশ পেতেই হবে।
যদি কোনো সাংসদ বা বিধায়ক নির্বাচিত হবার পর কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হন তাহলে (ক) বা (খ)-এর উপধারা পূরণ হয়েছে বলে ধরা হবে না।
‘রাজ্য’ বলতে জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পন্ডিচেরী-কেও বোঝাবে।
কোনো রাজনৈতিক দল যদি চারটির কম রাজ্যে স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিগণিত হয় তাহলে উক্ত রাজ্যগুলিতে তাকে ‘রাজ্য রাজনৈতিক দল’ বলা হয়। তবে উক্ত ‘রাজ্য রাজনৈতিক দল’-এর মর্যাদা ততদিনই থাকবে যতদিন উক্ত রাজ্যে হওয়া বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে পূর্বে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করবে।
যদি কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় বা রাজ্য দল হিসাবে মর্যাদা হারিয়ে ফেলে তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তার বরাদ্দ প্রতীক চিহ্ন কেড়ে নেওয়া হয় না। তারা পূর্বের মর্যাদায় উন্নীত হবার জন্য ছয় বছর সময় পায় আর এই ছয় বছর তারা তাদের বরাদ্দ প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করতে পারে।
জমাকৃত অর্থরাশি ও মনোনয়ন (Deposits and Nominations)
প্রত্যেক প্রার্থীকে লোকসভা নির্বাচনের জন্য ২৫,০০০ টাকা এবং রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য ১০,০০০ টাকা জমা রাখতে হয়। তপশিল জাতি ও উপজাতির প্রার্থীদের এই অর্থরাশির অর্ধেক জমা করতে হয়।
নির্বাচনক্ষেত্রের মোট প্রদত্ত ভোটের ছয় ভাগের এক ভাগ ভোট পেলে সেই প্রার্থীকে উক্ত জমা রাখা টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচন কেন্দ্রের একজন নথিভুক্ত নির্বাচক দ্বারা সমর্থিত হতে হবে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে এই সমর্থন দশজন নথিভুক্ত নির্বাচক দ্বারা হতে হবে।
দলত্যাগ বিরোধী আইন (Anti-Defection Law)
১৯৮৫ সালে ৫২তম সংশোধনে রাজনৈতিক দলত্যাগ বন্ধ করার জন্য যুক্ত করা হয়েছে।
সংসদের কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য সাংসদ হিসাবে তার যোগ্যতা হারাতে পারেন-
(১) যদি তিনি উক্ত দলের সদস্যপদ স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেন।
(২) যদি তিনি ভোটদানের ক্ষেত্রে বা ভোটদানে বিরত থেকে দলের ‘হুইপ’ অমান্য করেন।
যদি কোনো নির্দল প্রার্থী নির্বাচনের পর কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করেন, তাহলে অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।
মনোনীত প্রার্থী হিসাবে যোগদান করার ছয় মাসের পর যদি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করেন, তাহলে যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে ধরা নেওয়া হবে।
এই আইন প্রযোজ্য হবে না-
(১) যদি কোনো দলের অন্তত ২ থেকে ৩ জন সদস্য অন্য কোনো দলে সংযুক্ত হন।
(২) যদি কেউ কোনো কক্ষের সভাপতি হবার পর তাঁর দলের সদস্যপদ ত্যাগ করেন এবং সভাপতি পদের কার্যকাল শেষ হবার পর দলে আবার যোগ দান করেন।
বর্তমানে সুপ্রিমকোর্ট একটি যুগান্তকারী নিয়ম করে বলেছেন যে, একজন সাংসদ বা বিধায়ক অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন যদি তিনি দুটি ব্যাপারে ‘হুইপ’ অমান্য করেন-আস্থা ভোট ও অনাস্থা ভোট এবং যখন বিষয়টি উক্ত রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও নীতির সঙ্গে যুক্ত।