নাগরিকত্ব (Citizenship)
একজন নাগরিক হল সেই ব্যক্তি যিনি যেখানে বসবাস করেন সেই অঞ্চলের পূর্ণ-সদস্যাধিকার লাভ করেন।
একক নাগরিকত্ব- রাজ্যের জন্য পৃথক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা নেই।
নাগরিকগণ পরকদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, কারণ পরকরা নিম্নলিখিত মৌলিক অধিকারগুলি ভোগ করে না।
(১) ধর্ম, জাতি, বর্ণ ও জন্মস্থান ভেদে কোনো নাগরিকের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না (অনুচ্ছেদ ১৫)
(২) সরকারি চাকরি বা সরকারি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকলের সমান সুযোগ থকাবে (অনুচ্ছেদ ১৬)
(৩) অনুচ্ছেদ ১৯-এ বর্ণিত ছয়টি অধিকারের ক্ষেত্রে যেমন, বাক্ ও মতামত প্রকাশের জমায়েতের, সমিতি গঠনের, চলাফেরার, বসবাসের ও পেশাগত অধিকার।
(৪) অনুচ্ছেদ ২৯ ও ৩০-য়ে বর্ণিত সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার আবার, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল প্রভৃতি পদে শিধুমাত্র ভারতের নাগরিকগণেই আসীন হবার অধিকার আছে। এছাড়া লোকসভা ও বিধানসভার কোনো সদস্যকে নির্বাচিত করার এবং বিধানসভা ও সংসদের সদস্য হবার অধিকার শুধুমাত্র একজন ভারতীয় নাগরিকেরই রয়েছে।
সংবিধান প্রবর্তিত হবার সময় নাগরিকত্ব
১. প্রত্যেক ব্যক্তি যার ভারত ভূখন্ডে স্থায়ী আবাস এবং
(ক) যার জন্ম ভারত ভূখন্ডে
(খ)যার মা-বাবার কোনো একজনের জন্ম ভারত ভূখন্ডে
(গ) সংবিধান প্রবর্তিত হবার অব্যবহিত পূর্বে কমপক্ষে পাঁচ বছর সাধারণভাবে ভারতের রাজ্যক্ষেত্রে যে বাস করেছে-তাকে ভারতের নাগরিক বলা হবে।
২. সেই ব্যক্তি ১৯৪৮ সালের ১৯শে জুলাইয়ের আগে পাকিস্থান থেকে প্রব্রজন করেছে এবং সেই থেকে ভারতের রাজ্যক্ষেত্রে সাধারণভাবে বসবাস করেছে।
৩. সেই ব্যক্তি ১৯৪৮ সালের ১৯শে জুলাই বা তার পরে পাকিস্থান থেকে প্রব্রজন করে থাকলে ভারতের নাগরিক হিসাবে নিবন্ধভুক্ত হবার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো আধিকারিকের কাছে আবেদন করে নিবন্ধভুক্ত হলে।
৪. যে ব্যক্তি ১লা মার্চের পর ভারত থেকে পাকিস্থানে প্রব্রজন করেছে কিন্তু ভারত সরকার প্রদত্ত কোনো পুনর্বাসন অনুমতি প্ত্রের বলে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেছে।
৫. যে ব্যক্তি অথবা যার মা-বাবা অথবা পিতামহী পিতামহ অথবা মাতামহ মাতামহী ভারতে জন্মগ্রহণ করেছে।
যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, ১৯৮৬ দ্বারা সংশোধিতঃ
এই আইন অনুযায়ী সংবিধান প্রবর্তিত হবার পর পাঁচটি উপায়ে ভারতের নাগরিকত্ব লাভের কথা বলা হয়েছে; জন্মগত ভাবে, বংশগত ভাবে, নিবন্ধভুক্তি দ্বারা, দেশীয়করণ দ্বারা এবং রাজ্যক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্তি দ্বারা।
১. জন্মগতভাবে নাগরিকত্ব লাভঃ ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি বা তারপরে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছে এবং যার বাবা-মা উভয়েই বা কোনো একজন ভারতের নাগরিক। যদিও সে ভারতের নাগরিক হতে পারবে না যদি তার জন্মের সময় (ক)তার বাবা একজন বিদেশি কূটনীতিক হন অথবা (খ)তার বাবা একজন বিদেশি শত্রুগোষ্ঠির কেউ হন।
২. বংশগতভাবে নাগরিকত্ব লাভঃ ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি বা তার পরে সে ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছে, বংশগত ভাবে সে ভারতের নাগরিক বলে গণ্য হবে যদি তার জন্মের সময় তার বাবা ভারতের নাগরিক হন।
৩. নিবন্ধভুক্তি দ্বারা নাগরিকত্বলাভঃ যে-কোনো ব্যক্তি যিনি ভারতের নাগরিক নন ও নিম্নবর্ণিত শ্রেণিভুক্ত তারা ভারতের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে, নিবন্ধভুক্তি হবার আবেদন করার পূর্বে অন্তত পাঁচ বছর তাকে ভারতে বসবাস করতে হবে। শ্রেণিগুলি হল-
(ক) ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্যক্তি যারা নিবন্ধভুক্তির জন্য আবেদন করার পূর্বে পাঁচ বছর ভারতে বসবাস করছে।
(খ) ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্যক্তি যে সাধারণভাবে ভারতের বাইরে অন্য কোনো দেশে বসবাস করে।
(গ) যে নারীর ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ হয়েছে।
(ঘ) ভারতীয় নাগরিকের নাবালক সন্তান।
(ঙ) এই আইনের প্রথম তপশিলে বর্ণিত পূর্ণ বয়স্ক ও সক্ষম যে-কোনো অন্য দেশের নাগরিক।
৪. দেশীয়করণ দ্বারা নাগরিকত্ব লাভঃ কোনো বিদেশি দেশীয়করণের জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন করে ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে তবে তার জন্য তাকে অন্তত দশ বছর ভারতে বসবাসের পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে।
৫. রাজ্যক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্তি দ্বারা নাগরিকত্ব লাভঃ যদি কোনো নতুন রাজ্যক্ষেত্র ভারতের অংশভুক্ত হয় তাহলে সেই রাজ্যক্ষেত্রের নাগরিকগণও ভারতের নাগরিক বলে গণ্য হবে।
এই আইন অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকত্বের অবসান-
নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-তে একজন ভারতীয় নাগরিকের নাগরিকত্বের অবসান ঘটানো যাবে বলা হয়েছে।
সেগুলি হল- পরিত্যাজন, পরিসমাপন ও পরিবঞ্চন।
১. পরিত্যাজন হল একটি স্বেচ্ছাকৃত কাজ যার বলে একজন ব্যক্তি অন্য দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার পর ভারতের নাগরিকত্ব স্বেচ্ছায় ত্যাগ করতে পারে।
২. পরিসমাপন আইনের বলে, যখন ভারতের কোনো নাগরিক স্বেচ্ছায় অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে তখন আইন অনুযায়ী তার ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিসমাপ্তি হয়।
৩. পরিবঞ্চন হল ভারতীয় নাগরিকত্বের বাধ্যতামূলক পরিসমাপন। ভারত সরকার যদি এই বিশ্যে নিশ্চিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তি প্রতারণার দ্বারা বা তথ্য গোপন করে ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করেছে তা ভারতের সংবিধানের প্রতি তার আনুগত্যহীনতা প্রদর্শন করেছে, তাহলে আদেশবলে তাকে ভারতীয় নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যেতে পারে।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ১৯৯২
এই সংশোধনী বিল অনুযায়ী কোনো শিশু ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণ করলেও তার মা যদি ভারতের নাগরিক হন, তবে সেও ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে।
এই আইনের পূর্বে ভারতের বাইরে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলে সে তখনই ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারত যদি তার বাবা ভারতের নাগরিক হতেন।
ভারতের বৈদেশিক নাগরিক (ওভারসিজ সিটিজেন বা ও.সি.আই)
সংসদে পাস হওয়া নাগরিকত্বে (সংশোধনী)আইন আনুযায়ী, পাকিস্থান ও বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য দেশের ভারতীয় বংশোদ্ভুতগণ যাদের পিতা-মাতা বা পিতামহ-পিতামহী ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারির পর ভারত থেকে প্রবেজন করেছিলেন তা ১৯৫০সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের নাগরিক হওয়ার যোগ্য ছিলেন বা এমন ভূখন্ডের অধিবাসী ছিলেন যা ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট-এর পর ভারতের অংশ বলে বিবেচিত হয়, তারা নিজেদের ভারতের বৈদেশিক নাগরিক (ওভারসিজ সিটিজেন)হিসাবে নিবন্ধীকৃত হওয়ার যোগ্য। এই ব্যাপারে সমস্ত আইনি পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে।
অধিকারীঃ
ও.সি.আই-রা বহু ব্যবহার্য, বহু উদ্দেশ্য সাধক, আজীবন ভিসা পাওয়ার অধিকারী এবং তার জন্য পুলিশের কাছে নিবন্ধীকরণের প্রয়োজন নেই।
তারা ভারতে বসবাস ও কাজ করতে পারে বা তাদের দেশীয় কৃত স্থানেও তা পারবে।
বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার ব্যাপারে এরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ও.সি.আই.-রা এন.আর.আই (নন্ রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান)-দের সঙ্গে স্মানভাবে অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত সুযোগ সুবিধা লাভ করবে, শুধুমাত্র শিল্প ও কৃষি সম্পত্তি লাভের ক্ষেত্র ব্যতিরেকে।
তাঁর অধিকারী ননঃ
সরকারি ও সাংবিধানিক পদলাভের অধিকারী নন।
ভোটাধিকারের অধিকার নেই।
দ্রষ্টব্যঃ
যে সমস্ত ভারতীয় নাগরিক কার্যসূত্রে বা শিক্ষাগত কারণে বা অন্যান্য কারণে ভারতের বাইরে থাকেন তাদের ভোটাধিকারের প্রস্তাবটি সরকার অনুমোদন করেছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করা ভারতীয়দের এটি দীর্ঘদিনের দাবি, কারণ তারা ওই দেশে দেশীয়করণ হতে পারে না। এই সুবিধা সংসদ অনুমোদন করার পর জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার পর পাওয়া যাবে।