পঞ্চায়েত রাজ (Panchayati Raj)
তৃণমূল স্তরে জনসাধারণের যোগদান নিশ্চিত করে।
১৯৫৬ সালে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল বলবন্ত রাই মেহতার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। তিনি তাঁর রিপোর্ট ১৯৫৭ সালে পেশ করেন, যাতে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি করা যায়ঃ
(১) একটি ত্রিস্ত্র কাঠামো- জেলা স্তরে জেলা পরিষদ, ব্লক স্তরে পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রামস্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত।
(২) এই স্নগস্থাগুলিতে পূর্ণক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ।
(৩) তাদের উপযুক্ত অর্থ ও অন্যান্য সম্পদ প্রদান।
(৪) সমস্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাদের মাধ্যমে করা।
উক্ত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থা প্রথম ১৯৫৯ সালের ২রা অক্টোবর রাজস্থান (নাগাউর জেলা)গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীকালে অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।
ত্রিস্তর ব্যবস্থা
এই ব্যবস্থায় গ্রামস্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক স্তরে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা স্তরে জেলা পরিষদ রয়েছে।
গ্রাম পঞ্চায়েত (Village Panchayat)
জনসাধারনের মধ্যে থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত।
সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ৩১ এর মধ্যে থাকে।
তপশিল জাতি ও উপজাতি এবং মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে।
সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যানকে প্রধান বা ‘সরপঞ্চ’ বলা হয়।
পঞ্চায়েত তার সমস্ত কাজের জন্য গ্রামসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। এই গ্রামসভা হল গ্রামবাসীদের সাধারণ সংস্থা (জেনারেল বডি)।
একটি পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাসকারী সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের নিয়ে গ্রামসভা গঠিত হয়।
এটি পঞ্চায়েতের কাজকর্মের উপর সাধারণ তত্ত্বাবধান বজায় রাখে এবং প্রয়োজনীয় পথনির্দেশ করে।
ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি
একটি ব্লক যা পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালনা করে যেখানে ২০-৬০ জন গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করে। এই পঞ্চায়েত সমিতি গ্রাম পঞ্চায়েতের পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত।
জেলা পরিষদ
এটি ত্রিস্তর কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর।
নিজেদের সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। তাঁকে বলা হয় ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর।
অশোক মেহতা কমিটি
জনতা সরকার ১৯৭৭ সালে নিযুক্ত করে।
১৯৭৮ সালে রিপোর্ট পেশ করে। যা নিম্নরূপঃ
(১) ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বদলে দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা যার মূলে থাকবে মন্ডল পঞ্চায়েত (১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ জনসংখ্যা বিশিষ্ট কিছু গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত)গঠনের প্রস্তাব।
(২) রাজ্য সরকারের উপর পঞ্চায়েতের নির্ভরতা কমানোর জন্য পঞ্চায়েতকে তাদের এলাকায় পেশা কর, প্রমোদ কর ইত্যাদি সংগ্রহ করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব।
(৩) সমাজের দুর্বল অংশের মানুষকে রক্ষার জন্য প্রতি জেলা পরিষদে সামাজিক ন্যায় কমিটি গঠনের প্রস্তাব।
(৪) পঞ্চায়েত রাজ সংস্থা বলতে রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্য যোগদানের প্রস্তাব।
১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ৭৩তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে গ্রামস্তর পর্যন্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-
(১) সংরক্ষণ ব্যবস্থা সহ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে পঞ্চায়েতি রাজ সংস্থাগুলি গঠিত হবে।
(২) কার্যকাল পাঁচ বছর। যদি আগে ভেঙে যায়, তাহলে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করাতে হবে।
(৩) গ্রামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে। ১১তম সিডিউলে এই বিষয়গুলি উল্লেখ আছে যেখানে মোট ২৯টি বিষয়ের কথা বলা আছে।