logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

ভারতের অর্থনীতি

ভারতের অর্থনীতি

ভূমিকা

ভারতের পরিকল্পনার ইতিহাস পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বেকারত্ব ভারতের দারিদ্র্য

সরকারি উদ্যোগ

সরকারি উদ্যোগ ভারতের বিভিন্ন উন্নয়ন ভারতের জাতীয় আয় কৃষি সবুজ বিপ্লব ভারতীয় কর কাঠামো

আন্তর্জাতিক সংগঠন সমূহ

আন্তর্জাতিক সংগঠন সমূহ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ভাণ্ডার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগানাইজেশন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সংস্থা পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশ গ্রুপ 8(G-8) গ্রুপ 20(G-20) OECD BRICS ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন NAFTA APEC এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন BENELUX MERCOSUR উপসাগরি সহযোগিতা সংস্থা কেন্দ্রীয় আমেরিকা অখণ্ডতা পদ্ধতি

ভারতীয় অর্থনীতির বিবর্তন

আদমশুমারি-২০১১ ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি

ভারতে জাতীয় আয় (National Income in India)


জাতীয় আয় কমিটি (১৯৪৯) অনুসারে ‘‘জাতীয় আয় পরিমাণ করে একটি নির্দষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবাকার্যের মোট অর্থমূল্য (একই দ্রব্যকে বরাবর গণনা না করে)’’ এইভাবে জাতীয় আয় কোনো এক বছরে সারা দেশে উৎপন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকার্যের নিট অর্থমূল্য পরিমাণ করে এবং এটি নিট বৈদেশিক আয়কেও অন্তর্ভুক্ত করে ।

অন্য কথায় জাতীয় আয় অর্থনৈতিতে যে দ্রব্য ও সেবাকার্য ব্যবহৃত হয় তার পরিমান করে । জাতীয় আয় কার্যের সঙ্গে যুক্ত স্টক-এর সঙ্গে নয় । জাতীয় সম্পদের সঙ্গে তুলনায় জাতীয় সম্পদ পরিমাপ করে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেশের জনসাধারণের কাছে জমে থাকা দ্রব্যসামগ্রীর আর জাতীয় আয় পরিমাপ করে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষমতা যা ব্যবহারের জন্য দ্রব্য ও সেবাকার্য উৎপন্ন করে ।

ভারতের জাতীয় আয় গণনা অর্থনৈতিক বছরের (এপ্রিল ১ থেকে মার্চ ৩১) সঙ্গে যুক্ত।

জাতীয় আয়ের ধারণা

জাতীয় আয়ের বিভিন্ন ধারনাগুলি নিম্নরূপ—

স্থূল জাতীয় উৎপাদন (G.D.P)

*কোনো একটি দেশে এক বছরের মধ্যে যে পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী ও সেবাকার্য দেশের অধিবাসীদের দ্বারা উৎপন্ন হয় তার অর্থমূল্যকে স্থূল জাতীয় উৎপাদন বলা হয় ।

*জি. এন. পি. পরিমাপের ক্ষেত্রে যেহেতু দেশের সমস্ত নাগরিকদের একবছরের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী এবং সেবাকার্যকে ধরা হয় সেইহেতু দেশের নাগরিকদের বিদেশে কাজ করার দরুন প্রাপ্ত আয় জি. এন. পি. এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে । একই ভাবে দেশের মধ্যে কাজ করের জন্য বিদেশিদের প্রাপ্ত আয় জি. এন. পি. পরিমাপের ক্ষেত্রে বাদ যাবে ।

*সমীকরণের ক্ষেত্রে,- 
   GNP = GDP + X – M 
  যেখানে 
  X = দেশের নাগরিকদের বিদেশে প্রাপ্ত আয় 
  M = বিদেশের নাগরিকদের দেশে প্রাপ্ত আয় 
  যদি X = M  
  তাহলে  GNP = GPD 
  একইভাবে বদ্ধ অর্থনীতিতে, 
  X = M = 0, সেখানেও,  –  GNP = GDP

*অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (G.D.P.) দেশের মধ্যে এক বছরে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবাকার্যে অর্থমূল্যকে জি. ডি. পি. বলে । জি. ডি. পি-এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দেশের সীমানার মধ্যে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবাকার্য বিবেজিত হয় আর জি. এন. পি.-র ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে এবং দেশের নাগরিক দ্বারা বিদেশেও উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবাকার্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

*নিট জাতীয় উৎপাদন ঃ জি. এন. পি-র থেকে মূলধনের আয় বাদ দিলেই নিট জাতীয় উতপাদন (এন. এন. পি) পাওয়া যায় । অর্থাৎ কোনো দেশে এক বছরে জি. এন. পি. থেকে ওই সময়ে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি বা অবচয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে এন এন পি বলে ।

 সমীকরনের মাধ্যমে,–
    NNP = GNP – অবচয় । 

*জাতীয় আয় পূর্বে উল্লিখিত জি. এন. পি উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারমূলের উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয় । আর এই বাজারমূল্যের মধ্যে পরোক্ষ কর এবং ভরতুকি অন্তর্ভুক্ত । এন এন পি দুভাবে নির্ণয় করা যায়-(ক) দ্রব্য ও সেবাকার্যের বাজার মূল্যে । (খ) উতপাদন ব্যয় ।

*যখন এন এন পি উপাদান ব্যয়ে নির্ণয় করা হয় তখন তাকে জাতীয় আয় বলে । জাতীয় আয় নির্ণয় করা হয় বাজার মূল্যে এন এন পি-র থেকে নিট পরোক্ষ কর (অর্থাৎ, মোট পরোক্ষ কর-ভরতুকি) বাদ দিয়ে । প্রাপ্য ফলকে উপাদান ব্যয়ে এন এন পি অথবা জাতীয় আয় বলে ।

সমীকরণে-
  উপাদান ব্যয়ে এন এন পি অথবা জাতীয় আয় 
  = বাজারমূল্যে এন এন পি – (পরোক্ষ কর – ভরতুকি) 
  = এন এন পি – পরোক্ষ কর – ভরতুকি 

*ব্যক্তিগত আয়: দেশবাসীর দ্বারা অর্জিত প্রকৃত আয়কে ব্যক্তিগত আয় বলে । ব্যক্তিগত আয় নির্ধারিত হয় জাতীয় আয় থেকে আইন সৃষ্ট কর এবং সামাজিক সুরক্ষা বাবদ ব্যয় বাদ দিয়ে এবং সরকারের হস্তান্তর ব্যয় ব্যবসায়ের হস্তান্তর ব্যয়, এবং সরকারের দ্বারা প্রায় নিট সুদ যোগ করে ।

সমীকরণ- 
  ব্যক্তিগত আয় = জাতীয় আয় – সংস্থার অবন্টিত লাভ – সামাজিক সুরক্ষা বাবদ ব্যয় - 
  আইন সৃষ্ট কর + সরকারের হস্তান্তর ব্যয় + ব্যবসায়ের হস্তান্তর ব্যয় + সরকার প্রদত্ত নিট 
  সুদ ।
এটা সবসময় মনে রাখা দরকার যে ব্যক্তিগত আয় হচ্ছে ফ্লো কনসেপ্ট ।

*বন্টনযোগ্য ব্যক্তিগত আয় : ব্যক্তিগত আয় থেকে ব্যক্তিগত প্রত্যক্ষ কর বাদ দিলে বন্টনযোগ্য ব্যক্তিগত আয় পাওয়া যায় ।

সমীকরণে - 
  (বন্টনযোগ্য ব্যক্তিগত আয়) = (ব্যক্তিগত আয়)-(প্রত্যক্ষ কর)

জাতীয় আয়ের পরিমাপ পদ্ধতি

সাইমন কুজ্‌নেটের মহানুযায়ী নিম্নলিখিত তিনটি পদ্ধতিতে একটা দেশের জাতীয় আয় পরিমাপ করা যায়-

  • উৎপাদন পদ্ধতিঃ এস. কুজনেট এই পদ্ধতির নতুন নামকরণ করেছিলেন প্রোডাক্ট সার্ভিস মেথড্‌ । এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট বৎসরে দেশের মধ্যে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার অর্থমূল্য যোগ করলে স্থূল জাতীয় উৎপাদন (জি. ডি. পি) পাওয়া যায় । এই জি. ডি. পি. র সঙ্গে দেশবাসীর দ্বারা বিদেশ থেকে প্রাপ্ত নিট আয় যোগ করে অবচয় বাদ দিতে হয়।

  • আয় পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে জাতীয় আয় নির্ধারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও ব্যাবসায়িক সংস্থায় যুক্ত মানুষের নিট অর্জিত আয় যোগ করা হয় । কর দেওয়া উপার্জন ও কর না দেওয়া উপার্জন উভয়ই যোগ করা হয় । এই পদ্ধতি আরোপ করার জন্য বিভিন্ন আয়ের ক্ষেত্র থেকে কিছু মানুষকে পছন্দ করে একটি গ্রুপ তৈরি করা হয় এবং তাদের অর্জিত উপার্জনের উপর ভিত্তি করে দেশের জাতীয় আয় নির্ধারণ করা হয় । বিস্তারিত অর্থে উৎপাদনের সমস্ত উপাদানের আয় (অর্থাৎ খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা) যোগ করলে জাতীয় আয় পাওয়া যায়।

  • সমীকরণে- 
       জাতীয় আয় = মোট খাজনা + মোট মজুরি + মোট সুদ + মোট মুনাফা
  • ভোগ পদ্ধতি-এই পদ্ধতিকে ব্যয় পদ্ধতিও বলা হয় । সাধারণত ব্যক্তি তার আয়ের কিছু অংশ ভোগের জন্য ব্যয় করে আর বাকিটা সঞ্চয় করে । এও পদ্ধতিতে মোট ভোগ ব্যয় এবং মোট সঞ্চয় যোগ করলে জাতীয় আয় পাওয়া যায় । এই পদ্ধতি আরোপের জন্য ভোক্তাদের আয় এবং সঞ্চয় সংক্রান্ত তথ্য দরকার।

*সাধারণত সঞ্চয় এবং ভোগব্যয় সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য সহজলভ্য নয় । সেই কারণে জাতীয় আয় নির্ধারণে ব্যয় পদ্ধতির ব্যবহার প্রচলিত নয়।

*ভারতের জাতীয় আয় পরিমাপের জন্য যুগ্মভাবে উৎপাদন পদ্ধতি ও আয় পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।


ভারতের জাতীয় আয়ের পরিমাপ

স্বাধীনতার পূর্বে ভারতে জাতীয় আয় পরিমাপের জন্য কোনো বিশেষ প্রচেষ্টা হয় নি । ১৮৬৮ সালে দাদাভাই নৌরোজি প্রথম চেষ্টা করেছিলেন । তিনি তাঁর লেখা ‘‘পভার্টি অ্যান্ড আনব্রিটিশ রুল ইন ইন্ডিয়া’’ বইতে ভারতীয়দের মাথা পিছু বার্ষিক আয় পরিমাপ করেছিলেন ২০ টাকা অন্যান্য কিছু অর্থনীতিবিদ এটা অনুসরণ করাছিলেন এবং বিভিন্নভাবে ভারতীয়দের জাতীয় আয়ের পরিমাপ করেছিলেন ।

এর কিছু ছিল নিম্নরূপ :

ইকনসিস্টম মাথা পিছু আয় (টাকা)
ফল্ডলে শিরাস (১৯১১) ৪৯
ওয়াদিয়া অ্যান্ড জোশি (১৯১৩-১৪) ৪৪.৩০
ড: ভি. কে. আর. ভি. রাও (১৯২৫-২৯) ৭৬

  • স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে ভারত সরকার জাতীয় আয়ের তথ্য সংকলন ও নির্ভরযোগ্য হিসাব করার জন্য অধ্যাপক পি. সি. মহলানবিশার চেয়ারম্যানশিপে জাতীয় আয় কমিটি গঠন করে । এই কমিটি ১৯৫১ সালে প্রথম রিপোর্ট এবং ১৯৫৪ সালে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয় । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের জাতীয় আয় নির্ধারিত হয়েছিল ৮, ৬৫০ কোটি টাকা এবং মাথা পিছু আয় ছিল ২৪৬.৯০ টাকা । ১৯৫৪ সালে পেশ করা চূড়ান্ত রিপোর্ট জাতীয় আর নির্ধারণে জিন্য কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (সি এস ও) স্থাপন করে । এই সংস্থা নিয়মিত ভাবে জাতীয় আয়ের হিসাব প্রকাশ করে আসছে ।

  • বর্তমানে সি এস ও ১৯৯৯-২০০০ সালকে ভিত্তি বৎসর ধরে জাতীয় আয়ের হিসাব পেশ করে । জাতীয় আয় তিনটি ক্ষেত্রের অবদান অন্তর্ভুক্ত করে-প্রাথমিক ক্ষেত্র (কৃষি, বনভূমি, মৎস-চাষ এবং খনি), দ্বিতীয় ক্ষেত্র (শিল্প-উৎপাদন ও নির্মাণ) এবং তৃতীয় ক্ষেত্র (বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, ব্যাংক, বীমা, গৃহসম্পত্তি, সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত পরিসেবামূলক কাজ) ।