সরকারি উদ্যোগ
প্রধানমন্ত্রী গ্রামোদয় যোজনা (পি এম জি ওয়াই)
এই যোজনা চালু হয়েছিল ২০০০-১০ সালে এবং উদ্দেশ্য ছিল পাঁচটি সংকটময় ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের উন্নতি যেমন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, বাড়ি তৈরি, গ্রামের রাস্তা ও পানীয় জল এবং পুষ্টিসহ গ্রামাঞ্চলে জনসাধারণের জীবনযাপনের গুনগত মানোন্নয়ন । ২০০১-০২ সাল থেকে গ্রাম বৈদ্যতিকরণ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নিম্নলিখিত যোজনাগুলি এর অন্তর্ভুক্ত
১. প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা (পি এম জি এস ওয়াই)
এই যোজনা শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে ২৫শে ডিসেম্বর এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ২০০৩ সালের মধ্যে যেসব গ্রামাঞ্চলে ১০০০-এর বেশি অধিবাসী বাস করে এবং ২০০৭ সালের মধ্যে যেখনে ৫০০-এর বেশি অধিবাসী বাস করে । সেই সব অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের জন্য সবরকম আবহাওয়ার উপযুক্ত রাস্তা তৈরি করা ।
২. প্রধানমন্ত্রী গ্রামোদয় যোজনা (গ্রামীণ আবাস)
ইন্দিরা আবাস যোজনার উপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্রকল্প ২০০০ সালের ১লা এপ্রিল চালু হয়। সারা দেশের গ্রামাঞ্চল জুড়ে রূপায়িত হওয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের জীবনযাপনের উন্নয়ন।
৩. প্রধানমন্ত্রী গ্রামোদয় যোজনা (গ্রামাঞ্চলে পানীয় জলের ব্যবস্থা)
সম্পূর্ণ গ্রামীণ রোজগার যোজনা (এস জি আর ওয়াই)
এই প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০০১ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর এবং পূর্ণতন কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প আর জওহর গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা এই যোজনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । ১৯৮৯ সালে চালু হওয়া জওহর রোজগার যোজনা জওহর গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
এই প্রকল্প জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভারত নির্মাণ যোজনা
২০০৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ‘‘গ্রাম অভিমুখে এক পদক্ষেপ’’ এই নীতির উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ‘‘ভারত নির্মাণ যোজনা’’ নামে একটি নতুন প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল গ্রাম্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন। এই প্রকল্প রূপায়িত করতে চার বছর সময় ধার্য করা হয়েছিল এবং খরচ ধরা হয়েছিল আনুমানিক ১,৭৪,০০০ কোটি টাকা ।
প্রধান ছটি ক্ষেত্র এবং পরবর্তী চার বছর তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল নিম্নরূপ-
সেচ ব্যবস্থা : ২০০৯ সালের মধ্যে বাড়তি ১ কোটি হেক্টর জমি সেচের আওতায় নিয়ে আসা।
রাস্তা : যোগাযোগের জন্য ১০০০ জনসংখ্যা আধ্যুষিত সমস্ত গ্রামগুলি এবং ৫০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সমস্ত আদিবাসী ও পাহাড়ি গ্রামগুলির রাস্তাঘাটের উন্নতি।
গৃহ নির্মাণ : গরিবদের জন্য অতিরিক্ত ৬০ লক্ষ গৃহ নির্মাণ।
জল সরবরাহ : বাকি ৭৪০০০ গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বৈদ্যুতিকরণ : বাকি ১,২৫,০০০ গ্রামে বৃদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া এবং ২.৩ কোটি বাড়িতে বৃদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাকি ৬৬৮২২ টি গ্রামে টেলিফোন ব্যবস্থা চালু করা।
স্বর্ণজয়ন্তী শহরী রোজগার যোজনা (এস জে এস আর ওয়াই)
স্বর্ণজয়ন্তী শহরী রোজগার যোজনা ১৯৯৭ সালে প্রবর্তিত হয়।
এই প্রকল্পে পূর্বে প্রচলিত তিনটি প্রকল্প
- নেহেরু রোজগার যোজনা (এন আর ওয়াই),
- শহরের দরিদ্ররের জন্য প্রাথমিক পরিসেবা (ইউ বি এস পি) এবং
- প্রধানমন্ত্রীর সুসংহত শহরাঞ্চলের দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প (পি এম আই ইউ পি ই পি) একত্র ও পুনর্গঠিত করা হয়।
এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল শহরাঞ্চলের বেকার ও অর্ধবেকারদের জন্য এবং নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য স্বনিযুক্ত কর্মসংস্থান বা মজুরি ভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ।
কেন্দ্র ও রাজ্য দ্বারা ৭৫ : ২৫ ভাগে এই কর্মসূচির অর্থ বরাদ্দ করা হয়।
অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা
২০০০ সালের ২৫শে ডিসেম্বর চালু হওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দরিদ্রদের জন্য খদ্যের নিশ্চয়তা কর্মসূচি শুরু করা ।
এই প্রকল্পে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে থেকে ১০ লক্ষ দরিদ্রতম পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পরিবার পিছু মাসে ৩৫ কেজি খদ্যশস্য কম দরে অর্থাৎ ২ টাকা কেজি করে গম এবং ৩ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় ।
অন্নপূর্ণা যোজনা
এই প্রকল্প শুরু হয় ১৯৯৯ সালের ১৯শে মার্চ।
শুরুতে এই প্রকল্পে, যে সমস্ত বয়স্ক ব্যক্তি বয়স হওয়ার জন্য বার্ধক্য ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিন্তু কোনো কারণে বার্ধক্যভাতা পাননি তাদের জন্য ১০ কেজি খাদ্যশস্য বরাদ্দ করে । পরের দিকে যে সমস্ত ব্যক্তি বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন তাঁদেরকেও এই প্রকল্পে অন্তর্ভক্ত করা হয়।
খাদ্য শস্য দেওয়া হত ভর্তুকিপ্রাপ্ত দামে-গম ২ টাকা প্রতি কেজি এবং চাল ৩ টাকা প্রতি কেজি।
সর্বশিক্ষা অভিযান (এস. এস. এ)
সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প প্রবর্তিত হয়েছিল ২০০১ সালে । এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল-
- (ক) ২০০৩ সালের মধ্যে সমস্ত ৬-১৪ বছরের শিশুদের স্কুল / কান্দ্রীয় শিক্ষা নিশ্চয়তা প্রকল্প / সংক্ষিপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা।
- (খ) ২০০৭ সালের মধ্যে সমস্ত শিশুদের পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা।
- (গ) ২০১০ সালের মধ্যে ৬-১৪ বছরের সমস্ত শিশুদের ৮ বছরের স্কুল শিক্ষা সম্পূর্ণ করা।
- (ঘ) জীবনমুখী উপযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া ।
- (ঙ) ২০০৭ সালের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ২০১০ সালের মধ্যে মৌলিক শিক্ষার পর্যায়ে লিঙ্গ ও সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করা ।
- (চ) ২০১০ সালে সবার মধ্যে ের পরিসর বৃদ্ধি করা ।
এই সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচিতে নবম পরিকল্পনায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যসরকারের মধ্যে ৮৫ : ১৫ ভাগের ভিত্তিতে সহায়তা দান, দশম পরিকল্পনায় ৭৫:২৫ ভিত্তিতে এবং পরবর্তীকালে ৫০:৫০ ভিত্তিতে ধার্য করা হয়েছে ।
সর্বশিক্ষা অভিযানে ৬-১৪ বছরের ১৯৪ মিলিয়ন শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এই কমসূচির আওতায় ৯.৭২ লক্ষ প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুল এবং ৩৬.৯৫ লক্ষ শিক্ষক বর্তমানে যুক্ত।
বিদ্যালয়ের শিশুদের দুপুরে খাওয়ার প্রকল্প
দ্য ন্যাশানাল প্রোগ্রাম অফ নিউট্রিশনাল সাপোর্ট ইন প্রাইমারি এডুকেশন (এন পি এন এস পি ই) বা বহু প্রচারিত মিড-দে মিল (এম ডি এম) প্রকল্প সরকারিভাবে প্রবর্তিত হয় ১৯৯৫ সালে ১৫ই আগষ্ট । এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিকরণ, উপস্থিতি, ধারাবাহিকতা এবং প্রাথমিক শ্রেণির শিশুদের পুষ্টির বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন করে তোলা।
এই এম ডি এম প্রকল্প অনুযায়ী প্রাইমারি শ্রেণির পড়ুয়া শিশুদের রান্না করা দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয় যাতে পুষ্টিকর উপাদান নিহিত থাকে ৪৫০ ক্যালোরি এবং প্রোটিন ১২ গ্রাম।
প্রায় ১২ কোটি শিশু ৯.৫০ লক্ষেরও বেশি বিদ্যালয়ে প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে পড়াশোনা করছে । খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধির উদ্দ্যেশ্যে এই প্রকল্পটি ২০০৬ সালে জুন মাসে পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে । প্রতিটি বিদ্যালয়-দিবসে শিশু প্রতি ২ টাকা হিসাবে রান্না করা খাবারের দাম স্থির করা হয় যার মধ্যে উত্তর পূর্ব রাজ্যের জন্য ১.৮০ টাকা এবং অন্যান্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহের জন্য ১.৫০ টাকা কেন্দ্রীয় সহায়তা হিসাবে দেওয়া হয় । রাজ্য সরকার সহায়তা হিসাবে বিদ্যালয় পিছু ৫০০০ টাকা রান্নার সরঞ্জাম কিন্তে / সারাতে প্রদান করে থাকে ।
জহরলাল নেহেরু ন্যাশানাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন (জে এন এন ইউ আর এম)
এই প্রকল্প ভারত সরকার দ্বারা প্রবর্তিত শহরাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন একটা বৃহদায়তান শহর আধুনিকীকরণ প্রকল্প ।
জীবনের গুণগত ও শহরের পরিকাঠামোগত মান বৃদ্ধির কর্মসূচি হিসাবে ২০০৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই প্রকল্প সরকারি ভাবে উদ্বোধন করেন ।
জে. এন এন ইউ আর এম-এর উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে শহরের দরিদ্রদের প্রথমিক পরিসেবা প্রদান করে এবং সংবিধানের ৭৪তম সংশোধিত আইন ১৯৯২ অনুযায়ী মিউনিসিপ্যালিটির রক্ষণাবেক্ষণ শক্তিশালী করার জন্য শহরাঞ্চলের পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে উৎপাদনশীল, নির্ভরযোগ্য, সমভাবাপন্ন এবং দায়িত্বশীল শহর তৈরি করা ।
কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তা দান পরিবর্তিত হতে পারে বড়ো শহরের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ থেকে উত্তর পূর্বে অবস্থিত কোনো শহরের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত । বেশির ভাগ শহরই আয়তনের উপর নির্ভর করে খরচের ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ সহায়তা পেয়েছে ।
মহাত্মা গান্ধি ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এম জি এন আর ই জি এ)
মহাত্মা গান্ধি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থার নিশ্চয়তা আইন একটি কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্প যা ২০০৫ সালে ২৫শে আগস্ট আইনে পরিণত করা হয় । প্রারম্ভিক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া ২০০টি জেলার চলতে থাকা সম্পূর্ণ গ্রামীণ রোজগার যোজনা (এস জি আর ওয়াই) এবং জাতীয় কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্প (এন এফ এফ ডব্লিউ পি) এন আর ই জি এস-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল।
গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা কার্যে পরিণত করা এই প্রকল্প প্রতিবছর ১০০ দিনের কর্মসস্থানের আইনত নিশ্চয়তা প্রদান করে গ্রামের যে-কোনো পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের যারা ২০০৯ সালের মূল্যস্তর অনুযায়ী প্রতিদিন ১২০ টাকা রোজে অদক্ষ শ্রমিকের কায়িক শ্রম করতে ইচ্ছুক তারা এই যোজনায় যোগ দিতে পারে ।
দ্রষ্টব্য :
মূলত আইনটি গৃহীত হয়েছিল প্রতিদিন ৬০টাকা হিসাবে যেহেতু ন্যূনতম মজুরি ধরা হয়েছিল এন আর ই জি এ অনুযায়ী । কিন্তু ভারতের অনেক রাজ্যে মজুরি নিয়মাবলিতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হয়েছে প্রতিটি ১০০ টাকার বেশি । সেই কারণে আই আর ই জি এ-র ন্যূনতম মজুরি পরিবর্তিত হয়ে প্রতিদিন ১৩০ টাকা ধার্য করা হয়েছে ।
এই আইন তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং প্রাথমিক ভাবে গ্রামের মানুষদের,তারা দারিদ্রসীমার নীচে থাকুক বা না-থাকুক,স্বল্প বা অক্ষদ কাজ-দেওয়া চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের এক-তৃতীয়াওংশ হবে মহিলা ।
এই আইনটিকে শুরুতে বলা হত জাতীয় গ্রামীণ কর্মসস্থান নিশ্চয়তা আইন (এন আর ই জি এ) কিন্তু ২০০৯ সালের ২রা অক্টোবর নতুন নামকরণ হয়েছিল ।
২০১০-১১ সালে ৪১ মিলিয়ন পরিবার এন আর ই জি এ-র কাজের সঙ্গে অন্ত্রর্ভুক্ত হয়
সর্বোৎকৃষ্ট অভিপ্রায় থাকা সত্ত্বেও, অসাধু আধিকারিক, অর্থ সংকুলান না হওয়ার ঘাটতি, পরিকাঠামো তৈরিতে গুণ্মানের অভাব এবং দরিদ্রতার উপর অনভিপ্রেত ধবংসাত্মাক প্রভাব এম জি এন আর ই জি এ-কে বিতর্কিত করে তুলেছে ।
প্রাইম মিনিস্টারস এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম (PMEGP)
প্রধানমন্ত্রীর কর্মসংস্থার সৃষ্টি কর্মসূচি দুটি প্রকল্পের সংযুক্ত ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রীর রোজগার যোজনা (পি এম আর ওয়াই) এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি কর্মসূচি (আর ই জি পি) ।
এই কর্মসূচি অনুযায়ী দানগ্রাহী প্রকল্পর খরচে ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করে । তফসিলি জাতি বা উপজাতি অথবা গ্রামের অন্য কোনো পিছিয়ে পড়া জাতির ক্ষেত্রে দানগ্রাহীর বিনিয়োগ প্রকল্পর খরচের ৫ শতাংশ হয় । প্রকল্পর খরচের বাকি ৯০ বা ৯৫ শতাংশ কর্মসূচি অনুযায়ী ব্যাংক প্রদান করে।
এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত দানগ্রাহী এই লোনের একটি অংশ (সাধারণের জন্য ১৫ শতাংশ, গ্রামের দুর্বল শ্রেণির জন্য ৩৫ শতাংশ) ধার দেওয়া দু বছর পর ফেরত পায় ।
সরকার এই ধারযুক্ত ভরতুকি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৭ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে ।
জননী সুরক্ষা যোজনা (JSY)
জননী সুরক্ষা যোজনা একটি কেন্দ্রীয় আনুকুল্যে চলা কর্মসূচী । এর উদ্দেশ্য মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমানো এবং দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারে পতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রসবের হার বৃদ্ধি করা।
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন-এর অধীনে চলা জননী সুরক্ষা যোজনা কর্মসূচিতে গ্রামের দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারের ১৯ বছরের উপর বয়স্ক সমস্ত গর্ভবতী মেয়েদের ২টি শিশুর জন্মাবধি দেখাশোনা করা হয় ।
২০০৩ সালে প্রবর্তিত জে এস ওয়াই পূর্বে প্রচলিত ন্যাশনাল ম্যাটারনিটি বেনিফিট (এন এম বি এস)-এর পরিবর্তিত রূপ । দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারে গর্ভবতী মহিলাদের ভালো খাদ্য প্রদানের সঙ্গে যুক্ত ছিল এন এম বি এস । আর জে এস ওয়াই দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারে গর্ভবতী মহিলাদের একাধারে টাকা দিয়ে প্রসবের পূর্বকালীন অবস্থায় দেখাশোনা করে, প্রসবের সময় এবং পরে প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধানে থাকার ব্যবস্থা করে । সমন্ধয় পদ্ধতিতে যত্ন এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে ফিল্ড লেবেলের স্বাস্থকর্মীরা এই পরিসেবা প্রদান করে।
ইন্দিরা আবাস যোজনা
ইন্দিরা আবাস যোজনা একটি সমাজ কল্যাণ কর্মসূচি যা গ্রামের দরিদ্রদের জন্য গৃহের ব্যবস্থা করে । এখানে গ্রামের দরিদ্র এবং শহরের দরিদ্র আলাদা করা হয়েছে কারণ শহরের দরিদ্রদের জন্য আলাদা কর্মসূচি (যেমন শহরের দরিদ্রদের জন্য প্রাথমিক পরিসেবা) বর্ত্মানে চালু রয়েছে।
গ্রামে দারিদ্র দীমার নীচে বসবাসকারী জনসাধারণের গৃহ তৈরি করার জন্য এটি এটি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি । গৃহ তৈরির জন্য এই কর্মসূচি অনুযায়ী সমতল ক্ষেত্রে ৪৫,০০০ টাকা এবং অসমতল ক্ষেত্রে ৪৮,৫০০ টাকা প্রদান করা হয় । এই বাড়ি পরিবারের স্ত্রীলোকের নামে অথবা যৌথভাবে স্বামী ও স্ত্রী-র নামে বন্টন করা হয়।
গৃহ তৈরির দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে দানগ্রহীতা এবং কোনো কন্ট্রাক্টরকে এই কাজে লিপ্ত করা যাবে না । স্যানিটারি ল্যাট্রিন এবং ধোঁয়াহীন চুলা এই কর্মসূচি অনুযায়ী বাড়িতে তৈরি করা হয় যার জন্য বাড়তি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় যথাক্রমে টোট্যাল স্যানিটেশন ক্যাম্পের এবং রাজীব গান্ধী গ্রামীণ বিদ্যুতিকরণ যোজনা থাকে।
১৯৮৫ সালে চালু এই কর্মসূচি ভরতুকি ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের তাদের নিজেদের দ্বারা তৈরি বাড়ি করতে সাহায্য করে।
ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন (এন আর এইচ এম)
ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন ২০০৫ সালে ১৫ই এপ্রিল চালু হয়েছিল । এর কাজ ছিল দূরবর্তী গ্রাম্য পরিসরে দরিদ্রতম পরিবারকে সুগম, সামর্থ্যযোগ্য এবং দায়িত্বগুণ সম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান করা।
শুরু থেকে ৭ বছর (২০০৫-২০১২) ধরে বিতর্কিত এই মিশন স্বাস্থ্য মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত।
স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের জন্য এই কর্মসূচি কতকগুলি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে যেমন স্থানীয় বাসিন্দাদের ট্রেনং-এর মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটের সোস্যাল হেস্থ অ্যাক্টিভিটিজ (এ এস এইচ এ) এবং জননী সুরক্ষা যোজনার সঙ্গে অন্তর্ভক্ত করা । স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্যানিটারি পরিকাঠামোর উন্নতিও এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
এই মিশন ১৮টি রাজ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে : অরুণাচল প্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, হিমাচল, প্রদেশ, ঝাড়খন্ড্, জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, মধ্যপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, রাজস্থান, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখন্ড এবং উত্তরপ্রদেশ।
উত্তরপ্রদেশ এন আর এইচ এম কর্মসূচি ১০,০০০ কোটি টাকার এক বৃহৎ জালিয়াতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছে । পরপর দুজন রাজ্যের চিকিৎসা বিষয়ক কর্মসূচির প্রধাঙ্কে ২০১০ সালের শেষ দিকে এবিং ২০১১ সালে প্রথম দিকে হত্যা করা হয়েছিল । পরবর্তীকালে আরও চারজন রহস্যময় কারণে নিহিত হয়েছে অথবা মারা গিয়েছে।
ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন (NRLM)
ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন ২০১১ সালের ৩রা জুন রাজস্থানের আদিবাসী অধ্যুষিত বানজারা জেলায় প্রবর্তিত হয়েছিল । উদ্দেশ্য ছিল গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৭ কোটি দারিদ্রদীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারের মধ্যে শেল্ফ-হেল্প গ্রুপ তৈরি করা এবং সহজলব্ধ ঋণ, মূলধন প্রদান এবং ট্রেনিং-এর মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাদের জীবনযাপনের মানোন্নয়ন ঘটানো ।
এন আর এল এম-এর লক্ষ্য ১২টি রাজ্যের (বিহার, ছত্তিশগড়,গুজরাট, ঝাড়খন্ড্ কর্ণাটক,মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র,ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রিদেশ এভং ওয়েস্ট বেঙ্গল) ৩৫০ মিলিয়ন মানুষকে অথবা ভারতের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে যারা ভারতের বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্রদের প্রায় ৮৫ শতাংশ তাদের কাছে সোজাসুজি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া ।
বিশ্বব্যাংক এন আর এল এম প্রকল্প সমর্থন করে ১ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে এবং নিশ্চত করেছে এই প্রকল্পের সঙ্গে দীর্ঘকালীন যুক্ত থাকা ।
প্রত্যেক চিহ্নিত গরিব পরিবার থেকে অন্তত একজনকে (স্ত্রীলোক অগ্রগণা) শেল্ফ-হেল্প গ্রুপ অন্তর্ভক্ত করে সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি নিশ্চিত করা ও এন. আর. এল. এম-এর উদ্দেশ্য ।
কাপার্ট (সি এ পি এ আর টি)
গ্রামের উন্নয়নে স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে কাজে লিপ্ত হওয়াকে উৎসাহিত করতে, বাড়াতে এবং সহায়তা প্রদান করতে বিশেষত : নতুন প্রযুক্তির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে গ্রামের উন্নতি প্রসারিত করতে কাউন্সিল ফর অয়াডভ্যান্সমেন্ট অফ পিপ্ল্স্ অ্যাকশন অ্যান্ড রুরাল টেকনোলজি (সি এ পি এ আর টি) ১৯৮৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর গঠিত হয়েছিল।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে কার্পাট একটি রেজিস্ট্রিকৃত সংস্থা । এর প্রধান অফিস নিউদিল্লিতে । এবং নয়টি প্রাদেশিক সেন্টার / কনিটি জ্যপুর, লখনউ, আমেদাবাদ, ভুবনেশ্বর, পাটনা, চন্ডীগড়, হায়দরাবাদ, গৌহাটি ও ধানবাদে অবস্থিত । প্রাদেশিক কমিটি স্বতঃপ্রবৃত্ত সংস্থার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা কোনো অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুমোদিত করতে পারে । এর প্রধান উদ্দ্যেশ্য গ্রামের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা রূপায়নে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কাজকরাকে উৎসাহিত ও সাহায্য করা ।
এর সঙ্গে যুক্ত কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট-
১. কাপার্ট বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা দান করে যেমন,-জওহর রোজগার যোজনা, অরগ্যানাইজেশন অফ দা বেনিফিসিয়ারিজ অফ পভার্টি ইর্যাডিকোটিং প্রোগ্রাম, ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, দেভেলপমেন্ট অফ উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন ইন রুরাল এরিয়া এবং অন্যান্য এই ধরনের সংস্থা ।
২. ভারত সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক কাপার্ট-এর প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেয় ।