logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

ইতিহাস চর্চা

ইতিহাস

প্রাচীন ভারত

প্রাগৈতিহাসিক যুগ সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা মহেন-জো-দারো সভ্যতা বৈদিক যুগ ঃ আর্য সভ্যতা প্রাগবৈদিক যুগ বা ঋগ্‌বৈদিক যুগ পরবর্তী বৈদিক যুগ মহাজনপদ বৌদ্ধ ও জৈন মগধ সাম্রাজ্য আলেকজান্ডার মৌর্য সাম্রাজ্য মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ মৌর্য পরবর্তী যুগ সংগম যুগ গুপ্ত সাম্রাজ্য অন্যান্য রাজবংশ এবং শাসকগণ

মধ্যযুগের ভারত

গজনির মহমুদ মহম্মদ ঘোরী পৃথ্বীরাজ চৌহান ইলাবরি রাজত্ব খলজি বংশ তুঘলক বংশ সৈয়দ বংশ লোদী বংশ ধর্মীয় আন্দোলন বিজয় নগর সাম্রাজ্য বাহমানি সাম্রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্য আঞ্চলিক শক্তির উত্থান

আধুনিক ভারত

ইউরোপীয়োদের আবির্ভাব গভর্নর জেনারেল সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উত্থান ভারতের রাজপ্রতিনিধি ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ সাংবিধানিক উন্নয়ন ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধসমূহ

বিজয় নগর সাম্রাজ্য


বিজয়নগর সাম্রাজ্য

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে ১৩৩৬ খ্রিঃ। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রভাবে তুঘলক সাম্রাজ্যের থেকে দক্ষিণাত্যের বিজয়নগর আলাদা হয়ে যায়। ১৯৩৬ খ্রিঃ থেকে ১৪৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত সংগম বংশের রাজারা রাজত্ব করে এবং ১৪৮৫ থেকে ১৫০৩ খ্রিঃ সালুভ বংশ এবং ১৫০৫ থেকে ১৫৭০ খ্রিঃ তুলুভ বংশের রাজারা রাজত্ব করে।

হরিহর (প্রথম)(১৩৩৬-৫৬ খ্রিঃ)-

  • হরিহর (প্রথম) ছিলেন বিজয়নগরের প্রথম শাসক। তিনি হোয়সল রাজা চতুর্থ বল্লালকে ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত করে বিজয় নগর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘কদম্ব’ নামক এলাকাটি জয় করেন। তিনি নতুন রাজধানী বিজয় (বিদ্যানগর)স্থাপন করেন। বিজয়নগরের পূর্বনাম ছিল বিরূপাক্ষ পট্টন। বিজয়নগরের সামরিক বাহিনীতে হিন্দু-মুসলমান সকল শ্রেণির লোক নিয়োগ হত। নিজ নামে শাসকরা মুদ্রা ছাপাত।

দ্বিতীয় হরিহর (১৩৭৭-১৮০৪)-

  • সিংহাসন দখল করার পর তিনি ‘মহারাজাধিকার’ এবং ‘রাজপরমেশ্বর’ উপাধি নেন। তিনি কাঞ্চি, ত্রিচিলাপল্লি, কানাড়া, চিঙ্গলপুটি ইত্যাদি এলাকা জয় করে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তিনি ধাবল, ঘুরপতন জয় করেন। তিনি বাহমনি শাসকদের কাছ থেকে বেলগাঁ ও গোয়া জয় করে নিজ রাজ্যভুক্ত করেন।

  • দ্বিতীয় হরিহরের পর বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে বিরূপাক্ষ (প্রথম), দ্বিতীয় বুক্ক। এই শাস্কের শাসনকাল ছিল খুবই কম দিন। উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনার কথা জানা যায়নি।

প্রথম দেবরায় (১৪০৬-২২ খ্রিঃ)-

  • দ্বিতীয় বুক্কের পর বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন প্রথম দেবরায়। তিনি ফিরোজ শাহকে দশ লক্ষ মুদ্রা, বহু সোনা-মণি-মুক্তা ও হাতি উফার দেন। আবার ফিরোজ শাহ দেবরায়ের কন্যাকে বিবাহও করেন।

  • ১৪১৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি বাহমনি সুলতানকে পরাজিত করে এই অপমানের প্রতিশোধ নেন। তিনি অশ্বারোহী বাহিনীর উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি জলসেচের জন্য তুঙ্গভদ্রা ও হরিদ্রা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেন। বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হরিবিলাসন’ এর লেখক শ্রীনাথ প্রথম দেবরায়ের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন।

দ্বিতীয় দেবরায় (১৪২৩-৪৬ খ্রিঃ)-

  • ইনি ছিলেন সংম বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি উড়িষ্যার গজপতি রাজ্যকে পরাস্ত করে ‘গজবেতকর’ উপাধি নিয়েছিলেন। তিনি অন্ধ্রের কন্তাভিদু রাজ্য ও কেরল রাজ্য জয় করেন। কালিকটের ‘জামরিন’ তাঁর অধীনে ছিল। তাঁর দেওয়ান লাক্কানদানিক শিলভ জয় করেন। তিনি সংস্কৃতে ‘মথনাটক সুধা নিধি’ নাটকটি লেখেন। তিনি সেবাবাহিনীতে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করেন। ইতালীয় পর্যটক নিকোলো কন্টি ও পারসিক রাষ্ট্রদূত আব্দুর রেজ্জাক দ্বিতীয় দেবরায়ের শাসনকালে বিজয়নগর রাজ্যে আসেন।

মল্লিকার্জ্জুন (১৪৪৬-৫৫ খ্রিঃ)-

  • তাঁর শাসনকালে উড়িষ্যার রাজা বিজয়নগর রাজ্যের উদয়গিরি ও কোন্ডবিভু আক্রমণ করে দখল করেন। তিনি বাহমনি রাজ্যের মুসলমান শাসকের আক্রমণ প্রতিহত করেন।

বিরূপাক্ষ (দ্বিতীয়)(১৪৬৫-৮৫ খ্রিঃ)-

  • বিরুপাক্ষ(২য়)মল্লিকার্জুনের ভাই ছিলেন। পাণ্ড্য রাজা বিজয়নগরের কাঞ্চি দখল করেন। বাহমনি শাসক বিরূপাক্ষের কাছ থেকে গোয়া ছিনিয়ে নেন। অবশেষে চন্দ্রগিরির সামন্ত রাজ নরসিংহ সালুভ ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে দুর্বল বিরূপাক্ষকে হত্যা করে সংগম বংশের পতন ঘটান। নরসিংহ সালুভ রাজবংশের শাসনকালের সূচনা করেন।


সালুভ বংশ (১৪৮৫-১৫০৫ খ্রিঃ)

নরসিংহ সালুক-

  • ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দ বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন। তিনি গুন্দা সালুভের পুত্র ছিলেন। সংগমবংশীয় রাজা মল্লিকার্জুনের কনিষ্ঠ পুত্র রাজশেখরকে নরসিংহ সালুভ রাজপ্রাসাদে আশ্রয় দেন। রাজশেখর (১৪৮৫-৯০)অন্ধ্র রাজ্য জয় করে শাসন করেন। নরসিংহ সালুভের মৃত্যুর পর তাঁর শিশুপুত্র ইম্মদি নরসিংহকে বিজয়নগরের সিংহাসনে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী নবম কার্যত সকল ক্ষমতা দখল করে। নবম নায়ক ১৪৯০-১৫০৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিজয়নগর রাজ্যের কর্তা ছিলেন। নবম নিজেকে ‘রক্ষাকর্তা’ ও ‘স্বামী’ বলতেন। ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নবম নায়কের মৃত্যু হয়। এর পর মাত্র দুই বছর শাসন করেন ইম্মদি নরসিংহ। সালুভ রাজবংশের সেনাপতির ছেলে বীরসিংহ সালুভ রাজবংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে তুলুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।


তুলুভ বংশ (১৫০৫-৭০ খ্রিঃ)

বীরসিংহ (১৫০৫-০৯ খ্রিঃ)-

  • তিনি সালুভ বংশের শেষ শাসক ইম্মদি নরসিংহকে পরাজিত করে বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু শাসক ছিলেন এবং তীর্থক্ষেত্রে গিয়ে প্রচুর ধন দৌলত বিতরণ করতেন। পোর্তুগিজ সেনাপতি আলমিদার সঙ্গে চুক্তি করে বিজয়নগরে আরবি ঘোড়া আনার ব্যবস্থা করেন।

কৃষ্ণদেব রায় (১৫০৯-৩০ খ্রিঃ)-

  • বীরসিংহের ভাই কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন বিজয়নগরের শ্রেষ্ঠ শাসক এবং ভারতের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি ‘যবন রাজ্য স্পাথনাচ্য’ উপাধি ধারণ করেন। নিজে বৈষ্ণব ধর্মের উপাসক হলেও তিনি পরধর্ম সহিষ্ণু ছিলেন। দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিরা সর্বদা তাঁর করুণা লাভ করত। তিনি সর্বদাই শান্তির প্রতীক সাদা পোশাক পরতেন।

  • বিজয়নগরের শ্রেষ্ঠ নরপতি কৃষ্ণদেব রায়ের রাজসভায় ‘অষ্টদিগগজ’ নামে আটজন খ্যাতনামা কবি অলংকৃত করেছিলেন। এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন অল্লসনই পোদ্দানা, যাকে অন্ধ্র কবিতার পিতামহ বলা হয়। পোদ্দানা ছিলেন তাঁর প্রধান সভাকবি। পোদ্দানা রচনা করেন ‘মনুচরিতম’ ও ‘হরিকথা সারাংশম’ গ্রন্থ দুটি। রাজা কৃষ্ণদেব রায় তেলেগু ভাষায় ‘আমুক্ত মাল্যদা’ নামে বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়া কৃষ্ণদেব রায় সংস্কৃতে ‘জাম্ববর্তী কল্যাণম’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

  • পোর্তুগিজ পর্যটক পায়েজ, ন্যুনিজ প্রভৃতির বিবরণীতে কৃষ্ণদেব রায় সম্পর্কে প্রচুর প্রশংসা করা হয়েছে। পোর্তুগালের বারবোসা কৃষ্ণদেব রায়ের সময়ে বিজয়নগরে আসেন। কৃষ্ণদেব রায়ের রাজত্বকালে এসেছিলেন পোর্তুগিজ পর্যটক পায়েজ ও ন্যুনিজ।

লেখক রচনা
পঙ্গলিসুরন রাঘব পন্ডিত বিজয় ও প্রভাবরী পদ্দুম্ন
তেনালি রামলিঙ্গ পান্ডুরাম মহত্তম
আয়াল্লা রাজুরামভদ্র শকরামতসর সংগ্রহম
ধুরাজ্যোতি কলহস্তি সহতম
নন্দীতিমান পারিজাত পোহরানম
মাধ্য রাজশেখর চরিতম

অচ্যুত রায়(১৫৩০-৪২ খ্রিঃ)-

  • কৃষ্ণদেব রায়ের পর বিজয়নগরের রাজা হন অচ্যুত রায়। অচ্যুতের আমলে বিজয়নগর রাজ্যের ক্ষয় শুরু হয়।

  • এর পর সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র প্রথম ভেঙ্কট (১৫৪২ খ্রিঃ)

সদাশিব রায় ও রাম রায় (১৫৪৩-৭০ খ্রিঃ)-

  • তুলুভ বংশের সদাশিব রায় ছিলেন খুবই দুর্বল শাসক। তাঁর দুর্বলতার সুযোগে মন্ত্রী রাম রায় সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। রাম রায় দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে আক্রমণের চেষ্টা করেন।


আরবিডু বংশ (১৫৭০-১৬৪৫ খ্রিঃ)

প্রতিষ্ঠাতা- তিরুমল

শেষ শাসক- তৃতীয় শ্রীরঙ্গ

তিরমুল (১৫৭০-৭২ খ্রিঃ)-

  • রাম রায়ের ভাই তিরুমল তুলুভ বংশের শেষ রাজা সদাশিব রায়কে সিংহাসনচ্যুত করে সিংহাসন দখল করেন। তিরুমল পেনুগোন্ডা নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করে বিজয়নগরকে নতুন করে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বংশ আরবিডু বংশ নামে পরিচিত। এর পর সিংহাসনে বসেন প্রথম শ্রীরঙ্গ (১৫৭২-৮৫ খ্রিঃ)।

দ্বিতীয় ভেঙ্কট (১৫৮৫-১৬১৪ খ্রিঃ)-

  • প্রথম শ্রীরঙ্গের পর বিজয়নগরের রাজা হন দ্বিতীয় ভেঙ্কট। তিনি তাঁর রাজধানী পেনুগোন্ডা থেকে চন্দ্রগিরি ও পরে ভেলোরে নিয়ে যান। তিনি তামায়া ও লিঙ্গম বিদ্রোহ করেন। এর পর সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে রামদেব রায়, তৃতীয় ভেঙ্কট এবং তৃতীয় শ্রীরঙ্গ।

তৃতীয় শ্রীরঙ্গ ছিলেন আরবিডু রাজবংশের শেষ রাজা। মোঘলদের শাসনকালে ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মীরজুমলা বিজয়নগর রাজ্যের ধ্বংস করেন।