প্রাগৈতিহাসিক যুগ
*. ভারতে আদিম মানুষের জীবাশ্মের প্রাগৈতিহাসিক যুগে সমাধান পাওয়া যায়নি। সংরক্ষিত অবস্থায় প্রায় ২,৫০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাথরের অস্ত্রশস্ত্রই নির্দেশ অনুযায়ী ভারতের প্রাচীনতম মানুষের উপস্থিতি নির্দেশ করে। যদিও সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের বরি (Bori) থেকে পাওয়া সংবেদনে বলা হয়েছে যে ভারতে প্রায় ৯৪ লক্ষ বছর আগে মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে।
*. তাদের প্রথম আবির্ভাবে অর্থাৎ ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কেবলমাত্র পাথরের তৈরি অস্ত্রশস্ত্র তারা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করত। সে কারণে এই সময়কালকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যেমন-প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ এবং নব্য প্রস্তর যুগ।
প্রাচীন প্রস্তর যুগ (৫ লক্ষ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
*. তুষার যুগে ভারতে প্রাচীন প্রস্তর যুগের উন্নতি শুরু হয়েছিল।
*. ৫ লক্ষ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগে মানুষের অস্তিত্ব অনুসন্ধান শুরু করে।
*. গাঙ্গেয় ও সিন্ধু উপত্যকা ব্যতীত ভারতের সর্বত্র প্রাচীন প্রস্তর যুগ বিস্তারলাভ করেছিল।
*. এই সময়কালের মানুষেরা ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী, তারা শাকসবজি, বন্য ফল সংগ্রহ এবং শিকার করে জীবনধারণ করত।
*. এরা পাথরের তৈরি গুহায় বাস করত এবং এবড়ো খেবড়ো অর্থাৎ অমসৃণ পাথর অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করত। তাদের কৃশিকাজ, আগুন ও কোনো রকম বাসনপত্র তৈরির ধারণা ছিল না। করতে জানত না। তারা প্রধানত শক্ত পাথরের তৈরি ছোটো বড়ো ছুরি, কুঠার, খোদাই করার যন্ত্র বাটালি, হাতুড়ি ব্যবহার করত, এগুলোকে বলা হত স্ফটিক বা Quartzite এগুলি ছিল উজ্জ্বল ধরণের আর এ কারণে প্রাচীন প্রস্থর যুগের মানুষদের বলা হত স্ফটিক মানুষ বা Quartzite Men।
*. এই যুগের শেষের দিকে এই ধরণের মানুষের বা Homo Sapiens এর আবির্ভাব ঘটেছিল।
*. প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষেরা ছিল আফ্রিকার কাফির সম্প্রদায় ভুক্ত।
*. পাথরের তৈরি অস্ত্রশস্ত্রের প্রকৃতি এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এই সময়কালের মানুষদের তিনটি সম্প্রদায়ে ভাগ করা হয়। যেমন-প্রাচীন বা নিম্নতর, মধ্য এবং উচ্চতর প্রস্তর যুগ।
*. তুষার যুগকে বলা হয় প্রাচীন বা আদিযুগ, এই সময়ে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্রগুলির সন্ধান পাওয়া যায় বর্তমান পাকিস্থানের অন্তর্গত সোয়ান এবং সোহান উপত্যকায় এবং অল্প আর্দ্রভাবাপন্ন উত্তরপ্রদেশের মিরজাপুর জেলার বোলান উপত্যকায়।
*. মধ্য প্রাচীন যুগের পাথরের তৈরি অস্ত্রশস্ত্র যেমন-হাতুড়ি, ফলা বিশিষ্ট অস্ত্রশস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায় পাকিস্থানের সোয়ান এবং ভারতের নর্মদা এবং তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে।
*. উচ্চতর প্রাচীন প্রস্তর যুগে জলবায়ু ছিল উষ্ণ এবং কম আর্দ্রতাভাবাপন্ন। এই সময় ঘষবার যন্ত্র ও বাটালি আবিষ্কারের যুগ হিসাবে চিহ্নিত। এই রকমের যন্ত্রপাতির অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, ভূপাল এবং ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
পুরাতন ও নতুন প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময় (১০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
*. এই যুগে জলবায়ু ছিল উষ্ণ এবং শুষ্ক, সে কারণে জন্তু জানোয়ার ও উদ্ভিদকুলের অবস্থার পরিবর্তন হয়ে এই অঞ্চল বসবাসের সম্ভব হয়েছিল। সেই সময় থেকে এই অঞ্চলে জলবায়ুর বিরাট কোনো পরিবর্তন হয়নি।
*. এই যুগের বৈশিষ্ট্য হল সূক্ষ্ম ফলা বিশিষ্ট পাথরের বিভিন্ন রকমের অস্ত্রশস্ত্রের আবিষ্কার।
*. এই যুগের মানুষেরা শিকার, মাছ ধরে ও ফলমূল সংগ্রহ করে জীবনধারণ করত এবং পরবর্তীকালে জীবজন্তুকে গৃহে পালন করতে শুরু করল।
*. এই যুগের শেষের দিকে তারা চাষাবাদ করতে শিখল।
*. এই অঞ্চলের সন্ধান পাওয়া যায় ভারতের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে, মধ্যবর্তী অঞ্চলে কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণাংশে।
*. বিন্ধ্য পর্বতের মালভূমি অঞ্চলে, প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্যবর্তী যুগ এবং মসৃণ প্রস্তর যুগ অর্থাৎ আধুনিক যুগের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নর্মদা নদীর উপত্যকা অঞ্চলে এগুলির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
মসৃণ পাথরের অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কারের যুগ (৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
*. ভারতে মসৃণ পাথরের অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কারের যুগ ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগে শুরু হয়নি। ভারতের দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চলে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পরে শুরু হয়েছে।
*. এই যুগের মানুষ পুনরায় পাথরের তৈরি অস্ত্রশস্ত্রের ওপরই নির্ভরশীল হয়। কিন্তু এই সময় মানুষেরা অধিকতর সুন্দর ও মসৃণ উজ্জ্বল পাথরের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
*. এই যুগের মানুষেরা জমি চাষবাস করত এবং ফলমূল, রাগি, দানা শস্য, ছোলা প্রভৃতির চাষ শিখেছিল। তারা গৃহপালিত জন্তু যেমন-ভেড়া, ছাগল পালন করত।
*. তারা আগুন জ্বালাতে শিখল, হাতে বাসনপত্র তৈরি করত এবং চাকা ঘুরিয়ে মাটির বাসনপত্র তৈরি করত এবং সেগুলিতে রং ব্যবহার করে সুসজ্জিত করত।
*. তারা গুহায় বাস করত এবং তাদের গুহার দেয়ালগুলি শিকারেরএবং নৃত্যের ছবি এঁকে সুসজ্জিত করত। তারা সুতি এবং পশম বস্ত্র বয়ন করতে শিখল ও নৌকা তৈরির কৌশল শিখল।
*. এই যূগের শেষের দিকে মানুষেরা আরও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে লাগল এবং বৃত্তাকার ও ত্রিভুজাকার বাড়ি মাটি ও নলখাগড়া দিয়ে তৈরি করতে শিখল।
*. এই যুগের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলি হল জম্মু কাশ্মীরের বারজোহোম ও গুফক্রাল এবং কর্ণাটকের মাস্কি, ব্রহ্মগিরি, টেকালকোটা এবং তামিলনাড়ুর পৈয়ামপট্টি, অরুণাচলের পিকলিহাল এবং অন্ধ্রপ্রদেশের হাল্লর, মেঘালয়ের গারো পাহাড়, বিহারের চিরান্দ এবং সেনওয়ার (না হাড়ের যন্ত্রপাতি (Bone tools)পরিচিত), আমরি, কোডজি ইত্যাদি।
*. উত্তরপ্রদেশের কোলডিহাওয়াতে তিনটি সংস্কৃতি বিভক্ত ছিলঃ মসৃণ পাথরের যুগ, খোদাই পাথরের যুগ এবং লৌহ যুগ।
খোদাই কাজের যুগ (Chalcolithic Period)
*. মসৃণ পাথরের যুগ শেষ হওয়ার পর শুরু হল ধাতুর যুগঃ এই ধাতুর যুগে তামার প্রচলন প্রথম শুরু হয়। সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে শুরু হল পাথর ও তামার ব্যবহার। এই পাথর ও তামার ব্যবহারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল মসৃণ শিল্পের কাজ।
*. পাথরের যন্ত্রপাতি ছাড়াও তখন তামা ব্যবহার করে হাত-কুঠার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির আবিশকার শুরু হল।
*. মসৃণ পাথরের যুগের মানুষেরা বিভিন্ন রকমের বাসনপত্র তৈরি করত এবং এগুলির মধ্যে কালো ও লাল রঙের বাসনপত্র খুব জনপ্রিয় ছিল। এগুলি চাকা ঘুরিয়ে তৈরি করত এবং সেগুলি সাদা রঙের রেখার সাহায্যে অলংকৃত করত।
*. এরা পোড়া ইটের ব্যবহার জানত না। তারা সাধারণ মাটির দেয়াল, খড়ের ছাউনির ঘরে বাস করত। এটিই ছিল গ্রাম্য অর্থনৈতিক পরিবেশ।
*. তারা স্ত্রী দেবতাদের শ্রদ্ধা করত এবং ষাঁড়ের পূজা করত।
*. রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে এই সভ্যতার বিকাশ লাভ করেছিল।