logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

ইতিহাস চর্চা

ইতিহাস

প্রাচীন ভারত

প্রাগৈতিহাসিক যুগ সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা মহেন-জো-দারো সভ্যতা বৈদিক যুগ ঃ আর্য সভ্যতা প্রাগবৈদিক যুগ বা ঋগ্‌বৈদিক যুগ পরবর্তী বৈদিক যুগ মহাজনপদ বৌদ্ধ ও জৈন মগধ সাম্রাজ্য আলেকজান্ডার মৌর্য সাম্রাজ্য মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ মৌর্য পরবর্তী যুগ সংগম যুগ গুপ্ত সাম্রাজ্য অন্যান্য রাজবংশ এবং শাসকগণ

মধ্যযুগের ভারত

গজনির মহমুদ মহম্মদ ঘোরী পৃথ্বীরাজ চৌহান ইলাবরি রাজত্ব খলজি বংশ তুঘলক বংশ সৈয়দ বংশ লোদী বংশ ধর্মীয় আন্দোলন বিজয় নগর সাম্রাজ্য বাহমানি সাম্রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্য আঞ্চলিক শক্তির উত্থান

আধুনিক ভারত

ইউরোপীয়োদের আবির্ভাব গভর্নর জেনারেল সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উত্থান ভারতের রাজপ্রতিনিধি ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ সাংবিধানিক উন্নয়ন ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধসমূহ

আঞ্চলিক শক্তির উত্থান


মধ্যকালীন ভারতে শিখ সম্প্রদায়ের অভ্যুত্থান

গুরু নানক (১৪৬৯-১৫৩৯)-

  • গুরু নানকের জন্ম হয় ক্ষত্রী পরিবারে। ১৪৬৯ খ্রিঃ পাঞ্জাবের লাহোরের তালবন্দী গ্রামে (বর্তমানে নানাকানা সাহিব জন্মগ্রহণ করেন)। তাঁর আত্মজীবনী হল ‘জনমসাথী’।

  • শিখ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গুরু নানক। শিখ শব্দের অর্থ ‘শিষ্য’। নানক নির্গুণ ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। নানকের শিষ্যদের নাম ছিল শিষ বা শিখ। যে জন্য এই সম্প্রদায় ‘শিখ’ ও এই ধর্মের নাম হয় শিখ ধর্ম।

  • গুরু নানক ছিলেন দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদীর সমসাময়িক।


দ্বিতীয় গুরু অঙ্গদ (১৫৩৯-৫২)-

  • নানক শিষ্য লেহনা বা লহিন ‘গুরু অঙ্গদ’ নাম নিয়ে দ্বিতীয় শিখ গুরু পদে উপবেশন করেন।

  • গুরু অঙ্গদ এর আমলে শিখগণ সুসঙ্ঘবদ্ধ সম্প্রদায় রূপে আত্মপ্রকাশ করে। একে ‘Corporate Personality’ বলা হত।

  • গুরু অঙ্গদই গুরু নানকের স্তোত্রগুলির সংকলনের কার্য শুরু করেন এবং সেগুলি একত্রিত করে গুরু বাণী প্রকাশ করেন।

  • মুঘল সম্রাট হুমায়ুন গুরু অঙ্গদের সহিত সাক্ষাৎ করেন।


তৃতীয় গুরু অমরদাস (১৫৫২-৭৪)-

  • গুরু অঙ্গদের পর তৃতীয় শিখ গুরু হলেন অমরদাস, যিনি ১৫৫২ খ্রিঃ ৭৩ বছর বয়সে শিখ গুরু হন।

  • গুরু অমরদাস শিখপন্থীকে ২২টি মঞ্জিতে বিভক্ত করেন। সেখানে একজন করে মহন্ত দায়িত্বে থাকত।

  • গুরু অমর দাসের জন্য গোইন্দওয়ালে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুঘল সম্রাট আকবর।

  • গুরু অমরদাসের সময় শিখরা দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল যথা-(১) গৃহী শিখ ও (২) গৃহত্যাগী শিখ।

  • গৃহত্যাগী শিখ সন্ন্যাসীগণ ‘উদাসী’ নামে পরিচিত।


চতুর্থ গুরু রামদাস (১৫৭৫-৮১)-

  • গুরু অমরদাস তাঁর জামাতা গুরু রামদাসকে চতুর্থ গুরু ঘোষণা করেন। তাঁর সময় থেকেই গুরুপদ বংশানুক্রমিক হয়। গুরু রামদাস ‘সোধি’ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। রামদাস ছিলেন অমরদাস কন্যা বিবিভানির স্বামী। ১৫৭৭ খ্রিঃ আকবর শিখদের চতুর্থ গুরু রামদাসকে অমৃতসরে একটি পুষ্করিণী ও একখন্ড ভূমি (৫০০ বিঘা) দান করেন। গুরু রামদাসের সময় পবিত্র অমৃতসর শহরে স্বর্ণমন্দির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৫৮১ খ্রিঃ গুরু রামদাসের মৃত্যু হয়।


পঞ্চম গুরু অর্জুন (১০৮১-১৬০৬)-

  • ১৫৮১ খ্রিঃ গুরু অর্জুন শিখগুরু পদ লাভ করেন। তিনি হলেন শিখদের পঞ্চম গুরু। গুরু অর্জুনের সময় শিখধর্ম ও সম্প্রদায়, হিন্দু ধর্ম ও সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে যায়।

  • গুরু অর্জুন শিখদের পবিত্রতম ধর্মশাস্ত্র “আদিগ্রন্থ” বা “গ্রন্থসাহেবের” সংকলন করেন (১৬০৪ খ্রিঃ)। এতে ৫,৮৯৪টি স্তোত্র রয়েছে।

  • বিদ্রোহী মুঘল শাহজাদা খসরুকে সাহায্যের অভিযোগে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর গুরু অর্জুনকে প্রাণদন্ড দেন (১৬০৬ খ্রিঃ)।


ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ (১৬০৬-৪৪)-

  • ১৬০৬ খ্রিঃ হরগোবিন্দ ষষ্ঠ গুরু পদে আসীন হন। তিনি “সাচ্চাবাদশাহ” উপাধি ধারণ করেন।

  • গুরু হরগোবিন্দকে গোয়ালিয়র জেলে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর বন্দি করে রাখেন।

  • গুরু হরগোবিন্দের সঙ্গে মুঘল সম্রাট শাজাহানের সংঘাত সৃষ্টি হয়। কর্তারপুর যুদ্ধে হরগোবিন্দ জয়লাভ করেন এবং এখানেই নতুন কর্মকেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৬৪৫ খ্রিঃ গুরু হরগোবিন্দ মৃত্যুবরণ করেন।


সপ্তম গুরু হররাই (১৬৪৪-৬১)-

  • শিখদের সপ্তম গুরু হলেন গুরু হররাই। হররার জ্যেষ্ঠপুত্র রামরায়ের পরিবর্তে শিশুপুত্র হরকিষেণকে পরবর্তী শিখগুরু মনোনীত করেন।


অষ্টম গুরু হরকিষেণ (১৬৬১-৬৪)-

  • ১৬৬১ খ্রিঃ গুরু হরকিষেণ অষ্টম গুরু পদ লাভ করেন। গুরু হরকিষেণ মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের দরবারে বসন্তরোগে আক্রান্ত হতে মারা যান।


নবম গুরু তেগবাহাদুর (১৬৬৪-৭৫)-

  • ১৬৬৪ খ্রিঃ শিখদের নবমগুরু গুরু রূপে তেগবাহাদুর আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি অত্যন্ত তেজস্বী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

  • গুরু তেগবাহাদুর এর প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল আনন্দপুর। তিনি বাংলা, বিহার, অসম পরিভ্রমণ করেন।

  • গুরু তেগবাহাদুরকে ঔরঙ্গজেব লালকেল্লার অদূরে শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করেন (১৬৭৫ খ্রিঃ)।


দশম গুরু গোবিন্দ সিংহ (১৬৭৫-১০৭৮)-

  • গুরু তেগবাহাদুরের পুত্র গোবিন্দ সিংহ দশম গুরু পদ (১৬৭৫ খ্রিঃ)লাভ করেন।

  • গুরু গোবিন্দ সিংহ শিখ জাতির এক মহাসম্মেলনে ডেকে ৫ জন শিখ নেতাকে মনোনয়ন করেন। যারা ‘পঞ্চ-পিয়ারে’ নামে পরিচিত। তিনি ‘পাহুল’ বা দীক্ষা প্রথা চালু করেন।

  • গুরু গোবিন্দ এর সময় থেকে শিখ গুরুগণ নামের শেষে ‘সিংহ’ কথাটি ব্যবহার করেন।


মারাঠা উত্থানঃ শিবাজী

  • পূর্ণনাম- শিবাজী শাহজী মহারাজ

  • শিবাজীর বিমাতা- তুকাবাঈ

  • জন্মকাল- ১৬২৭ খ্রিঃ ১০ এপ্রিল (মতান্তরে ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৬৩০ খ্রিঃ)

  • জন্মস্থান- মহারাষ্ট্রের পুনের জুন্নার শহরের নিকট শিবনারের পার্বত্য দুর্গ।

  • মাতা- জীজাবাঈ (প্রাচীন যাদব বংশীয় জায়গিরদার যাদবরাও-এর কন্যা)।

  • পিতা- শাহজী ভোঁসলে। (বিজাপুরের সুলতানের অধীনস্থ জায়গিরদার)।

  • মুম্বাই কোঙ্কন, খান্দেশ, বেরার মারাঠাবাদ অঞ্চল রূপে অভিহিত করা হয়।

  • শিশু শিবাজী ও তাঁর মাতা জীজাবাঈ, দাদাজী কোন্ডদেব নামক জনৈক ব্রাহ্মণের তত্ত্বাবধানে পুনায় বসবাস করেন। শিবাজীর ধর্মগুরু হলেন- মহারাষ্ট্রের প্রখ্যাত সাধক রামদাস স্বামী। দাদাজী কোন্ডদেব শিবাজীকে অস্ত্রচালনা ও অশ্বারোহণ প্রভৃতি বিষয়ের শিক্ষা দেন। শিবাজী হায়দার আলি, রনজিৎ সিং মতোই নিরক্ষর ছিলেন। শিবাজী পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অধিবাসী মাওলীদের নিয়ে এর সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী গঠন করেন।

  • শিবাজী সর্বপ্রথম সামরিক অভিযান চালিয়ে বিজাপুরের তোরনা দুর্গটি অধিকার করেন(১৬৪৭ খ্রিঃ)।

  • শিবাজীর রাজধানী রায়গড় দুর্গে স্থাপিত হয়। তাঁর নির্মিত জল্বেষ্টিত দুর্গগুলি হল ‘সুবর্ণগিরি’ ও ‘জয়নগর’।

  • ১৬৫৯ খ্রিঃ শিবাজী বিজাপুরের সেনাপতি আফজল খাঁকে “বাঘনখ” দ্বারা হত্যা করেন।

  • শিবাজীর বিখ্যাত নৌ সেনাপতি ছিলেন ইব্রাহিম খান ও দৌলত খান।

  • শিবাজীর শক্তির প্রধান কেন্দ্র হল-দুর্গ। শিবাজীর অধিকৃত দুর্গের সংখ্যা ২৪০ (মতান্তরে ২৮০টি) যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- রায়গড়, প্রতাপগড়, পুরন্দর, তোরনা, শিবল, কোন্ডলা, কোলাপুর, পানহালা, জাবলী, চকন, সিংহগড়, বড়মতি, ইন্দ্রপুর প্রভৃতি।

  • মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাঁর মাতুল শায়েস্তা খাঁকে দক্ষিণে শিবাজীকে দমনের জন্য ১৬৬০ খ্রিঃ নিয়োগ করেন।

  • ১৬৬৪ ও ১৬৭০ খ্রিঃ শিবাজী মোট দুইবার মুঘল সাম্রাজ্যের বিখ্যাত বন্দর সুরাট লুণ্ঠন করেন এবং প্রচুর ধনসম্পদ হস্তগত করেন।

  • ১৬৬৫ খ্রিঃ শিবাজী ও মোঘলদের (ঔরঙ্গজেব) মধ্যে পুন্দরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।

  • পুন্দরের সন্ধির দ্বারা ঔরঙ্গজেবকে শিবাজী ২৩টি দুর্গ ও ১৬ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়ের জনপদ সমর্পণ করে।

  • ঔরঙ্গজেব তাঁর রাজত্বের শেষ ২৫ বছর (১৬৮২-১৭০৭ খ্রিঃ) দাক্ষিণাত্যে কাটিয়েছিলেন।

  • ঔরঙ্গজেবের দীর্ঘ প্রচেষ্ঠার পর বিজাপুর (১৬৮৬ খ্রিঃ) এবং গোলকুণ্ডা (১৬৮৭ খ্রিঃ) জয় করেন। বিজাপুরের শেষ সুলতান সিকান্দার ও গোলকুণ্ডার শেষ সুলতান আবুল হাসান দৌলতাবাদ দুর্গে বন্দি থাকেন।

  • ঔরঙ্গজেব ১৬৯৭ খ্রিঃ তাঞ্জোর ও ত্রিচিনাপল্লি-র হিন্দু রাজ্য দুটি জয় করেন। দিল্লি ও মথুরা অঞ্চলের কৃষিজীবী সম্প্রদায় ছিল জাঠ।

  • ১৬৬৯ খ্রিঃ তিলপতের জমিদার গোকলা জাঠ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়। পরবর্তীকালে রাজারাম ও চূড়ামন এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়। জাঠ বিদ্রোহ শেষ হয় ভরতপুর রাজ্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।

  • বুন্দেলরা ছিল মধ্য ভারতের এক রাজপুত গোষ্ঠী। বুন্দেলরা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন বুন্দেলখন্ডের রাজা চম্পৎ রায়। ১৬৭১ খ্রিঃ তাঁর পুত্র ছত্রশাল পুনরায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

  • ১৭৩১ খ্রিঃ ছত্রশাল পূর্ব মালবে একটি ছোটো স্বাধীন হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পান্না হয় তাঁর রাজধানী।

  • ১৬৬৮ খ্রিঃ ঔরঙ্গজেব শিবাজীকে ‘রাজা’ উপাধি দেন ও বেবারে একটি জায়গির প্রদান করেন।

  • ১৬৮৯ খ্রিঃ ১১ মার্চ ঔরঙ্গজেব মারাঠা রাজ শম্ভুজীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।

  • ঔরঙ্গজেবের কন্যা জেব উন্নিসার পৃষ্ঠপোষকতায় বিখ্যাত কবি আবদুল কাদির বেদী চিস্তি সন্তদের ধর্মসমন্বয়বাদকে অনুসরণ করে কাব্য রচনা করেন।

  • ঔরঙ্গজেবের আমলে বিখ্যাত লেখক ঐতিহাসিক ছিলেন কাফী খাঁ। গ্রন্থটির নাম মুস্তাখাব উল-লুবাব।

  • ১৭০২ খ্রিঃ ঔরঙ্গজেবের বিদূষী কন্যা জেব উন্নিসার মৃত্যু হয়।

  • ১৭০৪ খ্রিঃ তাঁর বিদ্রোহী জৈষ্ঠ্যপুত্র আকবর পারস্যে পরলোক গমন করেন।

  • ১৭০৭ খ্রিঃ ৩ মার্চ দাক্ষিণাত্যের আহমেদনগরে ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের শ্রষ্ঠা ঔরঙ্গজেব পরলোক গমন করেন ।