সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উত্থান
ব্রাহ্মসমাজ
1828 সালে রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এর পূর্বে 1815 সালে ইনি প্রথম আত্মীয় সভা শুরু করেন।
ইনি সতীদাহ প্রথার সমালোচনা করেন, জাতি বা শ্রেণি প্রথা মানতেন না, বিধবা বিবাহের পক্ষে ছিলেন।
তিনি কলকাতার হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড হেয়ারকে সানন্দে সহযোগিতা করেন।
তিনি বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য সামাজিক এবং ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হত।
তিনি প্রকৃতি দত্ত ভাষাবিদ ছিলেন। তিনি বারোটির বেশি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন যেমন সংস্কৃত, পারসি, আরবিক, ইংরেজি, ফরাসি, ল্যাটিন, গ্রিক এবং হিব্রু ইত্যাদি। তিনি সংস্কৃতে শিক্ষা দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন কারণ তিনি ভাবতেন সংস্কৃত শিক্ষা দেশকে আরও অন্ধকারে নিয়ে যাবে।
তিনি মনে করতে এসে হিন্দু এবং ভারতীয়দের ক্ষতি হবে। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যোগদেন। তাকে ভারতীয় নবজাগরণের পিতা বলা হত।
রাজা রামমোহন রায় ১৮৩০ সালে মোগল সম্রাট আকবর-II এর সহযোগিতার উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডন যান। এবং লর্ড বেন্টিং এর সহযোগিতায় সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেন। তিনি ফ্রান্স ও ভ্রমণ করেছেন।
১৮৩৩ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহন ম্যানেনজাইটিসে আক্রান্ত হয় ব্রিসটোলে মারা যান।
তার মৃত্যুর পর তার কন্যা কিছুদিনের জন্য ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীকালে দ্বারকানাথ ঠাকুর ও পন্ডিত রামাচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর দ্বায়িত্ব নেয় এবং ১৮৪১ সালে দ্বারকানাথের প্রথম পুত্র দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর এই সভায় যোগদান করেন। ১৮৫৭ সালে কেশবচন্দ্র সেন এই সভায় যোগ দেন।
এই সমাজের আরও দুই দিকপাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশবচন্দ্র সেন।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্র সেনকে 1865 সালে সমাজ থেকে বহিষ্কার করেন।
কেশবচন্দ্র সেন সংগত সভা, প্রার্থনা সমাজ এবং ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ চালু করেন।
দেবেন্দ্রনাথের সংগঠণের নামকরণ করা হয় তত্ত্ববোধিনী সভা এবং আদি ব্রাহ্মসমাজ।
আনন্দমোহন বোস চালু করেন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ।
জাস্টিস এম. জি. রানাডে প্রতিষ্ঠা করেন প্রার্থনা সভা।
১৮৬১ সালে মনমোহন ঘোষও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ইন্ডিয়া দর্পন’ বা ‘India Mirror’ নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে কেশব চন্দ্র সেন দৈনিক প্রতিকায় পরিবর্তন করেন এবং প্রতিদিন তিনি পত্রিকায় আর্টিকেল লিখতেন।
আর্য সমাজ
1875 খ্রিস্টাব্দে স্বামী দয়ানন্দ (মূলশংকর) এই সমাজের প্রতিষ্ঠাতা।
তাঁর মতবাদ ছিল ‘বেদগ্রন্থে ফিরে যাও’ এবং ‘ভারত ভারতীয়দের জন্য’। তিনি পুরাণ, মুর্তিপূজা, বর্ণভেদ বা জাতিভেদ এবং অচ্ছুত প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি বিধবা-বিবাহ মঞ্জুর করেছিলেন।
তাঁর মতবাদ ‘সত্যর্থ প্রকাশ’ গ্রন্থে পাওয়া যায়। তিনি আরও দুতী গ্রন্থ লিখেছিলেন ‘বেদ ভাষ্য ভূমিকা’ এবং ‘বেদ ভাষ্য’।
তিনি গুরুকুল, ডিএভি স্কুল ইত্যাদির প্রতিষ্ঠাতা।
‘সিন্ধি’ আন্দোলনের দ্বারা অহিন্দুকে হিন্দুতে রূপান্তরের প্রয়াস করেছিলেন।
আর্য সমাজের আরও অনেক সংস্কারক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে হ্ংসরাজ, পন্ডিত গুরুদত্ত, লালা লাজপত রায়, স্বামী শ্রদ্ধানন্দের নাম উল্লেখযোগ্য।
রামকৃষ্ণ মিশন
স্বামীবিবেকানন্দ (পূর্বনাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত, 1863-1902) 1897 সালে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের মৃত্যুর এগারো বৎসর পরে।
তিনি 1893 সালে শিকাগোয় ধর্ম মহাসভায় যোগদান করেন।
তিনি ইংরেজিতে প্রবুদ্ধ ভারত নামে এবং বাংলায় উদ্বোধ্ন নামে দুটী পত্রিকা প্রকাশনা করেন।
বিবেকানন্দের বাণী
নারী জাতি সামাজিক পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার, সমাজের উন্নতি তাঁদের উন্নতি বিনা সম্ভব নয়।
যতদিন পর্যন্ত গরিবের ক্ষুধা এবং অজ্ঞতা বর্তমান, ততদিন আমি প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিশ্বাসঘাতক মনে করি কারণ যাহাদের আনুগত্যে তাঁহারা শিক্ষালাভ করেছেন সেই মানুশগুলির প্রতি তাঁহাদের মনোভাব আশ্চর্যরকম শীতল।
তুমি সবকিছু করতে পার কারন সেই ক্ষমতা তোমার ভিতর অন্তর্নিহিত। ইহাতে বিশ্বাস আনো, কদাপি নিজেকে দুর্বল ভাবিও না। কাহারও সাহায্য ছাড়াই তুমি সবকিছু করিতে পার। সমস্ত ক্ষমতা সেই স্থানে নিহিত। উঠে দাঁড়াও এবং তোমার ভিতর ঈশ্বরস্বত্বাকে প্রকাশ করো।
মার্গারেট নোব্ল নামে এক আইরিশ মহিলা যিনি পরবর্তীকালে সিস্টার নিবেদিতা নামে পরিচিত হয়েছিলেন, রামকৃষ্ণের বাণী প্রচার করেছিলেন তাঁর গুরু স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে।
ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট
1820 সালের শেষার্ধে এবং 1830 সালের প্রথম অবধি একটি কেন্দ্রবিমুখ বুদ্ধিগত ধারা বাংলার যুব সমাজে প্রবাহিত হয়েছিল, একে ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট বলা হত।
হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (1809-31)এই মুভমেন্টের উদ্ভাবক। তিনি হিন্দু কলেজে শিক্ষকতা করতেন।
তিনি হেসপেরাস এবং ক্যালকাটা লিটারারি গেজেটের সম্পাদক ছিলেন এবং ইন্ডিয়া গেজেট নামক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তিনি তাঁর ছাত্রদের স্ত্যের জন্য জীবন সংগ্রামের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্যে কঠিন সংগ্রাম করেছিলেন এবং তিনি নারী জাতির ন্যায্য অধিকারের জন্য সচেষ্ট ছিলেন।
বেদ সমাজ
দক্ষিণের ব্রাহ্মসমাজকে বেদ সমাজ বলা হত। শ্রীধরালু নাইডু এর প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি ব্রাহ্ম ধর্মের বহু পুস্তক তামিল এবং তেলেগু ভাষায় রচনা করেন।
ধর্ম সভা
রাধাকান্ত দেব 1830 খ্রিস্টাব্দে ধর্ম সভা চালু করেন।
তিনি আধুনিকতার বিরোধী ছিলেন এবং গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় দিতেন, কিন্তু পশ্চিমি শিক্ষার পক্ষে ছিলেন, এমনকি নারী শিক্ষার ক্ষেত্রেও।
লোকহিতবাদী
গোপাল হরি দেশমুখ এটা চালু করেন। তিনি পশ্চিমি শিক্ষার সমর্থক এবং প্রবল যুক্তিবাদী ছিলেন। নারীজাতির উন্নতিকল্পে নারী শিক্ষার প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল।
জাতীয় আত্মপ্রত্যয়তার সেবকরূপে তিনি দিল্লির দরবারে 1876 সালে যোগদান করেছিলেন এবং তাঁর পরিধানে ছিল চরকায় কাটা সুতার খাদি পোশাক।
জাতীয় সামাজিক সভা
এম জি রানাডে এবং রঘুনাথ রাও এর প্রতিষ্ঠাতা। প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল 1857 সালে।
এর প্রথম লক্ষ্য ছিল বহুবিবাহ এবং কুলিনপ্রথা রদ এবং নিম্নবর্ণের সঙ্গে যে-কোনো বর্ণের বিবাহকে সম্মতি প্রদান করা। বাল্যবিবাহ রদ করবার উদ্দেহস্যে এরা সর্বদা লড়াই চালিয়েছেন।
একে ভারতীয় জাতীয় কংহ্রেসের একটি শোধন শাখা বলা হত।
ভারতীয় সমাজ সেবক
1915 খ্রিস্টাব্দে গোপালকৃষ্ণ গোখলে এর প্রতিষ্ঠা করেন।
এই দল দুর্ভিক্ষ পীড়িত স্থানে এক দৃষ্টান্ত সূচক কাজ করেছিল এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় উন্নতি সাধন করেছিল।
সেবা সমিতি
হৃদয়নাথ কুনজরু, ভারতীয় সেবক সমিতির এক সদস্য, 1914 সালে এই দলের সূচনা করেন। এই দলের মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল দুর্দশাগ্রস্থ নিম্নশ্রেণিকে উচ্চস্তরে উন্নীত করা, দুষ্কৃতিদের মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলা এবং সমাজকে দুর্দশামুক্ত করা।
রাধাস্বামী মুভমেন্ট
তুলসীরাম নামে একজন ব্যাংককর্মী 1861 খ্রিস্টাব্দে এই দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শিবদয়াল সাহেব এবং স্বামী মহারাজ নামেও পরিচিতি ছিলেন।
এই দলটি প্রচার করত, ঈশ্বরে বিশ্বাস, গুরুদেবের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সাধারণ সামাজিক জীবনধারণ শ প্রত্যেক সৎসঙ্গী বা ভক্তসকলকে মানতে হত।
দেব সমাজ
শিব নারায়ণ অগ্নিহোত্রী 1887 সালে এই সমাজের প্রতিষ্ঠাতা। মূলত মানুষের নৈতিকতা এবং সামাজিক আচরণের ওপর জোর দিত যেমন জুয়া এবং নেশার দ্রব্য সংহার।
দেব শাস্ত্র থেকে আমরা দেব সমাজের পূর্ণ বিবরণ পেয়ে থাকি।
থিওসোফিক্যাল সোসাইটি
পশ্চিমের কিছু ব্যক্তি এই সমাজ তৈরি করেছিলেন যাঁরা ভারতীয় চিন্তাধারা এবং সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
মাদাম এইচ পি ব্লাভাটসকি আমেরিকায় 1875 খ্রিস্টাব্দে এই সমাজের সূচনা করেন। পরবর্তীকালে কার্নেল এম এস য়ালকট আমেরিকার জনৈক সৈনিক এতে যুক্ত হন।
1882 সালে এটা ভারতের তামিলনাড়ুতে আদেয়ার নামক স্থানে স্থানান্তরিত হয়।
অ্যানি বেসান্ত 1907 সাএল এর প্রেসিডেন্ট হন। তিনি কেন্দ্রীয় হিন্দু কলেজ 1898 সালে প্রতিষ্ঠা করেন। যা পরে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি নামে 1916 সালে খ্যাতি লাভ করে।
এই সমাজ হিন্দুধর্মের কিছু বিশ্বাস যেমন পুনর্জন্ম ও কর্মের উপর প্রাধান্য দিত। এই সমাজের পণ্ডিতগণ উপনিষদ, সাংখ্য, যোগ এবং বেদান্ত থেকে অনুপ্রেরণা পেতেন।
আলিগড় মুভমেন্ট
স্যার সৈয়দ আহমেদ খান এটা শুরু করেছিলেন। তিনি মুসলিম সমাজকে পশ্চিমি শিক্ষার আদর্শ গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করতেন এবং ধর্ম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসু হতে অনুরোধ করতেন।
তাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর সমাজকে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি 1864 সালে বৈজ্ঞানিক সমাজের সূচনা করেন। একটি উর্দু পত্রিকা তহজিব-অল-আখলাক (1870) এবং আলিগড় বিদ্যালয় (1875) এই সমাজের অবদান। এই বিদ্যালয় পরবর্তীকালে মহমেডান অ্যাঙ্গলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ রূপে 1877 সালে আত্মপ্রকাশ করে। ক্রমে এটি আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত হয়।
আহমেদিয়া মুভমেন্ট
1889 সালে মির্জা গুলাম আহমেদ এটি আরম্ভ করেন।
তাঁর একটি সর্বব্যাপী ধর্মে বিশ্বাস ছিল। তিনি ধর্মীয় যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং সর্বজনে ভ্রাতৃত্ব এবং একতায় তিনি একনিষ্ঠ ছিলেন।
দেওবন্দ মুভমেন্ট
1866 সালে দেওবন্দ স্কুল অফ ইসলামিক থিওলজি দেওবন্দে রসিদ আহমেদ গাঙ্গোহি এবং মহম্মদ কাশিম নানাউতাভি ইসলামিক সংস্কৃতির নীতিমূলক এবং ধর্মীয় আদর্শ নতুন মুসলিম প্রজন্মকে ব্যাখ্যা করে। এদের চিন্তাধারা পশ্চিমি শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিপক্ষে ছিল।
ইসলামের খানিকটা নরমপন্থী ব্যাখ্যা মুসলিমদের মধ্যে প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়েছিল।
সত্যশোধক সমাজ
জ্যোতিবা ফুলে 1873 সালে এই সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের আধিপত্য এবং নিম্নবর্ণের উপর অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উদ্দেশ্যে। তিনি নিম্নবর্ণের মানুষদের নিজেদের সম্বন্ধে সচেতন করবার জন্য তাদের উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।
তিনি নিম্নবর্ণের জন্য একটি বিদ্যালয় এবং বিধবাদের জন্য অনাথাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তাঁর রচিত ‘গুলামগিরি’ এবং ‘সার্বজনিক সত্যধর্ম পুস্তক’ পুরাতন সমাজের প্রথা এবং বিশ্বাসের মূলে করাঘাত করেছিল।
ভারতের গ্রিব কৃষক সম্প্রদায়ের স্বার্থে তিনি নেতা হিসাবে ডিউক অফ ইয়র্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
জাস্টিস পার্টি মুভমেন্ট
ডক্টর টি এম নায়ার, স্যার পিট্টি ত্যাগরাজা চেট্টিয়ার এবং পঙ্গলের রাজা একটি দল গঠন করেন 1916 সালে এবং নামকরণ করেন দক্ষিণ ভারতীয় প্রগতিবাদী গোষ্ঠী। এই দলের উদ্দেশ্য ছিল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের সরকারি চাকুরি, শিক্ষা এবং রাজনীতিক ক্ষেত্রে আধিপত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। ‘জাস্টিস’ নামক পত্রিকার মধ্য দিয়ে এই দল তাদের দলীয় নীতি, চিন্তাধারা ব্যক্ত করত। এই দলকে পরবর্তীকালে ‘জাস্টিস পার্টি’ বলা হত।
সেলফ রেসপেক্ট মুভমেন্ট (১)
এই মূল আন্দোলনটি ই ভি রামস্বামী নাইকার নামে এক ব্যক্তির দ্বারা তামিলনাড়ুতে 1925 সালে অব্রাহ্মণ জনগণকে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের পীড়ন থেকে রক্ষা করবার উদ্দেশ্যে আরম্ভ হয়েছিল।
এই আন্দোলনের দ্বারা অব্রাহ্মণদের বিবাহ মন্দির এবং পুরোহিত ছাড়াই অনুষ্ঠিত হত।
আত্মসম্মানবোধবিশিষ্ট আন্দোলন বা সেলফ-রেসপেক্ট মুভমেন্ট (২)
ডক্টর ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এই আন্দোলনের প্রথম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অস্পৃশ্য জনগণের উন্নতির স্বার্থে তিনি শিক্ষা, আইন, রাজনীতিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি নিম্নবর্ণের জনগণকে তাদের উপর বোঝাস্বরূপ চাপানো কর্মকে পরিহার করবার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করেছিলেন।
1924 সালে মুম্বাইতে তিনি ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভার’ ডাক দিয়েছিলেন। তিনি ‘বহিষ্কৃত ভারত’ এবং ‘সমাজ ক্ষমতা’ সংঘ নামে দুটি পত্রিকার মারাঠি ভাষায় সম্পাদনা করতেন। তিনি স্বাধীন লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
তিনি ‘তফশিলী জাতি গোষ্ঠী’ নামে 1942 সালে এক রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন।
তফশিলী এবং কৃষক সম্প্রদায়ের উন্নতিকল্পে আন্দোলন ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর
চৌরার উদয় : 1768 থেকে 1832 পর্যন্ত পশ্চিম বাংলার নানভূম এবং বড়ভূম অঞ্চলে প্রাধান্য পেয়েছিল।
ভিল বিপ্লব : পশ্চিমঘাট অঞ্চলে 1818 থেকে 1848 পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
হো-দের উত্থান : সিংভূম এবং ছোটোনাগপুর অঞ্চলে 1820, 1822 এবং 1832 সালে প্রত্যক্ষ হয়েছিল।
কোলি-দের উত্থান : গুজরাটের পশ্চিমঘাট অঞ্চলে এবং মহারাষ্ট্রে 1824, 1827, 1839 এবং 1844-48 পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
খাসিদের উত্থান : 1829-1832 পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল আসাম এবং মেঘালয়ের খাসি পর্বতমালায় তিরথ সিং ও বরমানিকের উদ্যোগে।
সিংপোদের বিদ্রোহ : অসমে 1830 সাল থেকে 1839 পর্যন্ত এই বিদ্রোহ চলেছিল।
কোলদের উদ্ভব : ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বুদ্ধ ভগতের নেতৃত্বে 1831 থেকে 1832 পর্যন্ত আন্দোলন স্থায়ী ছিল।
খোন্দদের উত্থান : ওড়িশার খোন্দমল অঞ্চলে 1846-1848 এবং 1855 এবং 1914 সালে চক্রবিসাইদের নেতৃত্বে প্রাধান্য পেয়েছিল।
নৈকডদের বিদ্রোহ : রূপ সিং এবং জোরিয়া ভগতের নেতৃত্বে 1858-59 এবং 1868 সালে গুজরাটের পঞ্চমহলে ঘটেছিল।
কাচনাগ বিদ্রোহ : 1882 সালে শম্ভুদাসের নেতৃত্বে অসমের কাছাড় অঞ্চলে এই বিদ্রোহ ঘটেছিল।
ভিলদের উদ্ভব : গোবিন্দ গুরুর নেতৃত্বে দক্ষিণ রাজস্থনে বানসওয়ারা এবং দুঙ্গাপুর অঞ্চলে শুরু হয়েছিল।
ওরাওঁদের বিপ্লব : 1914-15 সালে যাত্রা ভগত নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ছোটোনাগপুর অঞ্চলে ঘটেছিল।
থারোকুকিদের উত্থান : 1917-1919 মণিপুরে জাদোজাং এবং রানি গোইদিনলিউ-এর অনুপ্রেরণায় শুরু হয়েছিল।
চাইনচু বিদ্রোহ : 1921-1922 সালে অন্ধ্রপ্রদেশের নালামালায় হনুমনথুর নেতৃত্বে ঘটেছিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহ : রাজমহল পাহাড় অঞ্চলে 1855-57 পর্যন্ত বিখ্যাত বৈপ্লবিক সিধু এবং কানহুর নেতৃত্বে ঘটেছিল।
বেগান নামে বিদ্রোহ দিয়ে শুরু হয়েছিল সমতলভূমির জনগণের শোষণ থেকে যা শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ বিরোধী পর্যায়ে সমাপ্ত হয়।
অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে ব্রিটিশদের বিপক্ষে যুদ্ধ করে ভাগলপুর থেকে রাজমহল পর্যন্ত পুরোমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সমর্থ হয় কিন্তু পরে ব্রিটিশ শক্তি তাদের পর্যুদস্ত করে।
মুন্ডা বিদ্রোহ : রাঁচির দক্ষিণে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে 1899-1900 পর্যন্ত এই বিপ্লব স্থায়ী হয়।
বিরসা মুন্ডা রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তিতে লক্ষ্যভেদ অনুশীলন করত ধনুকের সাহায্যে।
রাম্পা বিদ্রোহ : রজন জন্তয়া (1884) এবং আল্লুরী সিতারাম রাজুর নেতৃত্বে 1922-24 সালে অন্ধ্রে শুরু হয়।
রামোসি বিদ্রোহ : 1822-29 সালে পশ্চিমঘাটে বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে যিনি মহারাষ্ট্রের রবিনহুড নামে খ্যাত ছিলেন তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল।
কৃষক বিদ্রোহ
মোপলা বিদ্রোহ : কেরালার উত্তরাঞ্চলে হিন্দু জমিদার এবং ব্রিটিশের শোষণ এবং অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মুসলমান মোপলা কৃষকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
1836 সাল থেকে মতবিরোধ শুরু হয় এবং প্রধান বিপ্লব আগস্ট, 1921 সালে হয়।
রোমাসি আন্দোলন : 1879 সালে মহারাষ্ট্রে বাসুদেব বলবন্ত ফাদকের দ্বারা সূচিত হয়।
পাবনা আন্দোলন : জমিদারদের উৎপীড়নের প্রতিবাদে বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলায় 1872-76 কৃষকদের দ্বারা সূচনা হয়।
বিজলিয়া আন্দোলন : 86 রকমের কর কৃষকদের উপর চাপানোর বিরুদ্ধে রাজস্থানে 1905, 1913, 1916, 1927 সালে কৃষকেরা সংগঠিত হয়ে এই আন্দোলনে শামিল হয়।