বৌদ্ধ ও জৈন
বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈনধর্মের উত্থান
নব আন্দোলনের কারণ সমূহ
সে সময় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ছিল খুব ব্যয়বহুল এবং পশুবলি প্রথা ছিল খুব জটিল এবং এর অর্থও হারিয়েছিল।
জাতিভেদ প্রথা ছিল খুব কঠোর নিয়মে আবদ্ধ, বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম জনসাধারণকে সম্মানের আসনে বসাত।
ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্ব জনসাধারণকে অতিষ্ট করে তুলেছিল।
ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তকগুলি ছিল সবই সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। এর ফলে জনসাধারণের কাছে পুস্তকগুলি অনুধাবনযোগ্য ছিল না।
বৌদ্ধধর্ম
বৌদ্ধধর্মের নিদর্শন হল তিনটি স্তম্ভ।
বুদ্ধদেব বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা।
বুদ্ধদেবের শিক্ষা হল ধম্ম।
বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসীনীদের প্রতিষ্ঠান হল সংঘ।
বুদ্ধদেব
বুদ্ধদেব শাক্যমুনি বা তথাগত নামে পরিচিত। নেপালের কপিলাবস্তুর কাছে লুম্বিনী নামক স্থানে ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে বুদ্ধদেব জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা শুদ্ধোদন ছিলেন শাক্যশাসক।
কোশল রাজবংশের মহামায়া তাঁর মা। বুদ্ধদেবের জন্মের ৭ দিন পরে তাঁর মা মারা যান।
বৈমাত্রেয় মা গৌতমীর কাছে তিনি প্রতিপালিত হন।
১৬ বছর বয়সে যশোধরার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৩ বছর দাম্পত্য জীবন-যাপন করেন এবং তার একমাত্র ছেলের নাম ছিল রাহুল।
একজন বৃদ্ধ, অসুস্থ এবং জরাগ্রস্থ লোক দেখে তিনি পরিব্রাজক হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ২৯ বছর বয়সে তাঁর রথের সারথি চন্ন এবং প্রিয় ঘোড়া কন্টকের সঙ্গে সত্যের সন্ধানে গৃহত্যাগ করেন। গৃহত্যাগটিকে মহানিষ্ক্রমণ বলা হয়।
আলারা কলমার সঙ্গে তিনি প্রথম ধ্যান করেছিলেন। কিন্তু তিনি একমত হতে পারেননি যে মানসিক শৃঙ্খলা এবং জ্ঞানের দ্বারা দূর থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। তাঁর পরবর্তী গুরু ছিলেন উদ্রক রামপুরা। তারপর তিনি পাঁচজন তপস্বীর সঙ্গে ধ্যানে বসলেন, এরা হলেন কোন্ডনা, বাপ্পা, ভাদীয়, মহানামা এবং অসগী, যারা কঠোর তপ্স্যা দ্বারা ত্যাগ করে পরম শান্তি লাভের আশা করেছিলেন। কঙ্কালসার না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর ধরে নিজেকে নিজেই যন্ত্রণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৬ বছর পর তিনি বুঝলেন যে অনুতাপ ও উপবাস হল অর্থহীন। সেকারণে এসকল তিনি ত্যাগ করলেন। পাঁচজন শিষ্যও তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন। ৩৫ বছর বয়সে মগধের (বিহারের)একটি পিপুল গাছের নীচে তিনি নির্বাণ লাভ করলেন। সারনাথে যেখানে তাঁর পাঁচ শিষ্য অবস্থান করছিলেন সেখানে তিনি প্রথম উপদেশ দিলেন। তাঁর প্রদত্ত প্রথম উপদেশকে বলা হয় ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন’ বা ‘নিয়মের চাকার আবর্তন’।
বর্তমান উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলার কাশিয়া গ্রাম-অতীতের কুশীনগরে ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আশি বছর বয়সে মাল্লা প্রজাতন্ত্রে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
বুদ্ধদেব শেষ দীক্ষাদান করেন বৈশালীতে। এবং শেষ দীক্ষা সুভদ্রা।
গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর তার উপদেশ গুলোকে আটটি ভাগে ভাগ করা হয় যাকে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়।
বৌদ্ধদের কাছে বৌদ্ধপূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটি বিশেষভাবে খ্যাত। এই দিন গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনটিকে মহাপরিনির্বাণ বলা হয়।
ধর্ম
(১) চারটি মহান সত্য
দুঃখ এবং কার্পণ্যে পূর্ণ পৃথিবী।
আকাঙ্খাই হল এই দুঃখ ও কার্পণ্যের কারণ।
আকাঙ্খাকে দমন করতে পারলেই দুঃখ যন্ত্রণা ও কার্পণ্যের সমাপ্তি ঘটবে অষ্ট পর্যায়ের পথকে অনুসরণ করলেই আকাঙ্খাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
(২) আট পর্যায় পথ বা মার্গ
আটটি পথ বা মার্গ হল-
(১)সঠিক বিশ্বাস
(২) সঠিক চিন্তা ভাবনা
(৩) সঠিক কর্ম
(৪) সঠিক জীবনযাপন
(৫) সঠিক প্রচেষ্ঠা
(৬) সঠিক বক্তব্য
(৭) সঠিক বুদ্ধিমত্তা বা স্মৃতিশক্তি
(৮) সঠিক মনোসংযোগ।
(৩) নির্বাণে বিশ্বাস
আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি, পুনর্জন্মের নিবৃত্তি, জন্মচক্র থেকে মুক্তি, ৮টি মার্গের অনুসরণে মৃত্যু এবং পুনর্জন্ম লাভ করা যায়।
বুদ্ধদেবের মতে আত্মা হল গূঢ় অর্থপূর্ণ কাহিনী।
(৪) অহিংসায় বিশ্বাস
কারও জীবন্ত প্রাণী, পশু বা মানুষকে আঘাত করা উচিত নয়।
(৫) কর্মের নিয়ম
অতীতের সুকর্মের ফল মানুষ পেয়ে থাকে।
বৌদ্ধ সংঘ
সংঘ হল সন্ন্যাসী অর্থাৎ ভিক্ষু বা শ্রমণের এবং সন্ন্যাসীনীগণের সংগঠন।
ভিক্ষুগণ ধম্মের মশালবাহকের কাজ করেন।
সংঘ ছাড়া উপাসনা করেন তাদের উপাসক বলে।
বৌদ্ধ পরিষদ বা সভাঃ
- বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ চারপর সম্মিলিত হয়েছিলেন এবং এই সম্মিলনগুলি ফলপ্রসূ হয়েছিল।
প্রথম পরিষদ বা সভা- ৪৮৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মেহাকাশ্যপ-এর (তৎকালীন রাজা ছিল অজাত-শত্রু)নেতৃত্বে রাজগৃহে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বুদ্ধদেবের বাণী সকলকে পিটক নামে দুই ভাগে যথা, বিনয় পিটক এবং সুত্ত পিটক নামে বিভক্ত করা হয়। উপালি বিনয় পিটক এবং আনন্দ সুত্ত পিটক আবৃত্তি করেছিলেন।
দ্বিতীয় সভা- সমকামীর নেতৃত্বে (তৎকালীন রাজা ছিল কালাশোক)৩৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈশালীতে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অনুগামীরা ‘স্থাবিরমাদিন’ ও ‘মহাসংঘিকা’ নামে দুই ভাগে ভাগ বিভক্ত হয়েছিল।
তৃতীয় সভা- ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাটলিপুত্রে মোগালিপুত্ত টিসা-র নেতৃত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সময় ত্রিপিটকের তৃতীয় ভাগ পালি ভাষায় লিখিত হয়েছিল।
চতুর্থ সভা- ৭২ খ্রিস্টাব্দে কুন্ডলবন, (বর্তমান কাশ্মীরে) বসুমিত্র-এর নেতৃত্বে (তৎকালীন রাজা কণিষ্ক) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উপাধ্যক্ষ ছিলেন অশ্বঘোষ। সে সময় বৌদ্ধধর্ম মহাযান এবং হীনযান নামে বিভক্ত হয়েছিল।
বি.দ্রঃ মহাযানে পুতুল পুজোর প্রচলন ছিল। এই প্রথা চিন, জাপান, কোরিয়া, আফগানিস্থান, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশে প্রচলিত ছিল। হীনযান মগধ এবং শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় ছিল। হীনযান ব্যক্তিগত মুক্তির আদর্শে বিশ্বাসী ছিল কিন্তু পুতুল পুজোয় বিশ্বাসী ছিল না। এই দুটি ছাড়া তৃতীয় পন্থাকে বলা হত। ভজরযান যা অষ্টম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েছিল এবং বিহার এবং বাংলা দেশে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই ধর্মাবলম্বীগণ মাছ, মাংস, মদ প্রভৃতিকে ধর্মীয় আচরণ মেনে খাদ্যাভাসে স্বাধীন ভাবে গ্রহণ করত।
বৌদ্ধ সাহিত্য
বৌদ্ধিক সাহিত্য পালি ভাষায় রচিত।
পালিভাষার বৌদ্ধলিপিতে সাধারণত লেখা হয়েছে ত্রিপিটক যার অর্থ হল ত্রিস্তর বিশিষ্ট বাক্স।
বিনয় পিটকঃ বৌদ্ধ মিশনারি মঠের নিয়মশৃঙ্খলার নিয়মকানুন লিপিবদ্ধ আছে।
সুত্ত পিটকঃ সুত্ত পিটক বুদ্ধের শ্রমণদের বৃহত্তম সংকলন।
অভিধম্ম পিটকঃ বৌদ্ধধর্মের দার্শনিক নীতির ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ আছে।
বি.দ্র- মহাবংশ এবং দীপবংশ হল অন্যান্য পাঠ্যবিষয়। এই দুটিতে তৎকালীন শ্রীলঙ্কার বিবরণ দেওয়া আছে।
জাতক হল বুদ্ধদেবের বিভিন্ন জন্ম সম্বন্ধে কাহিনী।
বৌদ্ধের জীবনী নিয়ে ‘বুদ্ধচরিত’ (Budhacharita) লেখেন অশ্বঘোষ। এছাড়াও তিনি ললিতাভিসটারা সূত্র (Lalitavistara), মহাবস্তু, নিদান কথা লিখেছিলেন।
বৌদ্ধধর্ম বর্জন করার কারণ সমূহ
ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় নীতি, উৎসব যেমন পুতুল পুজো যেগুলি বৌদ্ধধর্মে আগেই নিন্দিত হয়েছিল যা পুনরায় দমে যাওয়ার কারণে।
নবম শতাব্দী এবং তারপর থেকে শঙ্করাচার্যের হিন্দু ধর্মপ্রচারের ফলে। পালির পরিবর্তে বুদ্ধিজীবীদের সংস্কৃত ভাষার ব্যবহারে সংস্কৃত ভাষা সাধারণের ভাষায় রূপধারণ করে।
বৌদ্ধমঠে বসবাসকারী সন্ন্যাসীদের নৈতিক মানের অবনতি পরিলক্ষিত হয়।
বৌদ্ধমঠে স্ত্রীলোকদের প্রবেশ।
ষষ্ঠ শতাব্দীতে হুন রাজা মিহিরকুলের এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে তুরস্কের আক্রমণের ফলে বৌদ্ধধর্ম অবলুপ্তির পথে চলে যায়।
জৈনধর্ম
জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ঋষভনাথ।
জৈনধর্মে ২৪ জন তীর্থঙ্কর অর্থাৎ গুরু ছিল এবং সকলেই ছিলেন ক্ষত্রিয়। প্রথম ছিলেন ঋষভনাথ, যার প্রতীক ছিল ষাঁড়। তাঁর পরিচিতি ঋগবেদে পাওয়া যায়। কিন্তু ২২ জন তীর্থঙ্করের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি ছিল না। কেবলমাত্র শেষ দুজন তীর্থঙ্করের ঐতিহাহিক ভিত্তি ছিল।
তেইশতম তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ যাঁর প্রতীক ছিল সাপ। পার্শ্বনাথ বারাণসীর রাজা অশ্বসেনার পুত্র। তাঁর উপদেশগুলি ছিল-কাহাকেও আঘাত না করা, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা, কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ না করা।
চব্বিশতম এবং শেষ ছিলেন বর্ধমান মহাবীর যাঁর প্রতীক ছিল সিংহ।
বর্ধমান মহাবীর
৫৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিহারের মুজফ্ফরপুর জেলার কুন্দগ্রামে মহাবীর বর্ধমান জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা সিদ্ধার্থ ছিলেন জ্ঞাত্রিকা জাতির প্রধান। তার মাতা ত্রিশলা ছিলেন বৈশলীয় লিচ্ছবি বংশের রাজকুমার চেতকের বোন। মহাবীর বিম্বিসারের আত্মীয় ছিলেন। তিনি যশোদাকে বইয়ে করেছিলেন, প্রিয়দর্শনা নামে এক কন্যা ছিল, যাঁর স্বামী জামালী বর্ধমান মহাবীরের প্রথম শিষ্য হয়েছিলেন।
মহাবীরের পিতামাতার মৃত্যুর পর তিরিশ বছর বয়সে তিনি সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সন্ন্যাস গ্রহণের ত্রয়োদশতম বছরে বৈশাখ মাসের দশ তারিখে জিম্ভিকাগ্রাম শহরের বাইরে তিনি কৈবল্য অর্থাৎ চরম জ্ঞানলাভ করেছিলেন।
তখন থেকে তিনি জৈন বা জিতেন্দ্রীয় এবং মহাবীর নামে পরিচিত হলেন। এবং তাঁর অনুগামীদের নাম হল জৈন সম্প্রদায়। তিনি অরিহান্ট অর্থাৎ যোগ্য খেতাব লাভ করলেন। ৪৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাটনার নিকট পাবা-য় ৭২ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। পার্শ্বনাথের মতো একই ধর্ম তিনি প্রচার করেন এবং ব্রহ্মচর্য নামে আর একটি ধর্মে তিনি যুক্ত করেন।
মহাবীরের মৃত্যুর পর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে গঙ্গা উপত্যকা থেকে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত এক ভয়ংকর আকারের দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল যেখানে তাঁদের ধর্মীয় মঠগুলি ছিল। পুনর্বাসনের জন্য জৈনদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়।
ভদ্রবাহু যিনি প্রবাসীদের পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি মহাবীর যা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেই নগ্নতার নিয়ম ধারণ করার জন্য বাধ্য করেছিলেন। স্থূলভদ্র উত্তর ভারতে থাকা সন্ন্যাসীদের নেতা, তিনি অনুগামীদের শ্বেতবস্ত্র পরিধান করতে অনুমতি দিয়েছিলেন কারণ দুর্ভিক্ষকালে দুরবস্থার জন্য। তখন থেকে জৈনদের মধ্যে দুটি বিভাগ সৃষ্টি হল-দিগম্বর যারা নগ্ন ছিল (Cky-cladic, maked)এবং শ্বেতাম্বর যারা শ্বেতবস্ত্র (White-clad)পরিধান করত।
মহাবীরের উপদেশ
বেদের কর্তৃত্ব বর্জন এবং বলিদান প্রথার কাজে লিপ্ত না থাকা।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক বস্তু এমনকি ক্ষুদ্রতম বস্তুরও প্রাণ আছে এবং তাদের চেতনা আছে। সে কারণে অহিংসাকে ক্টহোরভাবে মানতে হবে।
জৈনরা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা বলে কাউকে মানতেন না।
জৈনধর্ম দেবদেবীর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেনি, বিশ্বব্রহ্মান্ডে দেবদেবীর কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল না। আত্মার থেকে দেবদেবীর স্থান ছিল অনেক নীচে। মোক্ষলাভের পন্থা ছিল কৃচ্ছসাধন এবং উপবাসে মৃত্যুবরণ (বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মূল পার্থক্য)।
বিশ্বভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী ছিল (জাতি প্রথার প্রতি অবিশ্বাস ছিল)।
বি.দ্র.- জৈনধর্মে তিন রত্ন (ত্রিরত্ন)বিষয়ে বলা হয়েছে এবং এগুলি হল নির্বাণের পন্থা। এগুলি হল-সঠিক পথ, সঠিক জ্ঞান এবং সঠিক চরিত্র।
জৈন্ সম্মেলন
প্রথম সম্মেলন- তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুতেই স্থূলভদ্রের সভাপতিত্বে পাটলিপুত্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৪ পর্বের পরিবর্তে ১২টি অঙ্গে সংকলিত হয়েছিল।
দ্বিতীয় সম্মেলন- পঞ্চম শতাব্দীতে দেবঋধিগানির নেতৃত্বে গুজরাটের বল্লভী-তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে ১২টি অঙ্গ এবং ১৪টি উপাঙ্গে সংকলিত হয়েছিল।
অন্যান্য সূত্র- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময়ে জৈনধর্ম উচ্চশিখরে আরোহন করেছিল। প্রথম শতাব্দীতে কলিঙ্গ খারবেলের নেতৃত্বে চরম পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল।
ভারতে জৈনধর্মের অবলুপ্তির কারণ বিভিন্ন বিষয় দায়ী ছিল। তারা অহিংসার ধারণাকে অতিরিক্ত ভাবে গ্রহণ করেছিল। তারা উপদেশ দিয়েছিল যে অসুখ করলে ওষুধপত্র খাওয়া উচিত নয় কারণ ওষুধ জীবাণুগুলিকে মেরে ফেলে। তারা বিশ্বাস করত যে উদ্ভিদের এবং শাক সবজিরও প্রাণ আছে এবং তাদের আঘাত করা থেকে দূরে থাকা উচিত। সাধারণ লোকের কাছে এগুলি গ্রহণযোগ্য হয়নি। পরবর্তী রাজাগণের কাছ থেকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেনি।
জৈন সাহিত্য অর্ধমাগাধি এবং প্রাকৃতের মিশ্রণ ছিল।
জৈনধর্মের প্রভাবের কারণে বিভিন্ন ধর্মীয় ভাষার অবলুপ্তি হয়েছিল যেমন সৌরসেনির পরিবর্তে মারাঠি, গুজরাটি, রাজস্থানি এবং কানাড়া ভাষার উৎপত্তি হয়েছিল।