গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ
নীল বিদ্রোহ (1859-60)
ইউরোপিয়ানদের ফ্যাক্টরি মালিকগণ ভারতীয় কৃষকদের বলপূর্বক বাধ্য করত তাদের জমিতে নীল চাষ করানোর জন্য।
অত্যাচার সীমা ছাড়ালে দিগম্বর বিশ্বাস এবং বিষ্ণু বিশ্বাস নামে এই দুই ব্যক্তি বাংলার নদিয়া জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
আরও অনেক বিদ্বজন এই বিদ্রোহে শামিল হয়েছিলেন যেমন হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশ চন্দ্র মুখার্জি, নীল দর্পণের লেখক দীনবন্ধু মিত্র, বিখ্যাত বাংলা কাব্য এবং নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
সরকার ইন্ডিগো কমিশন 1860 সালে নিয়োগ করে নীল চাষ রদ করে।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
1885 সালে একজন অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজ রাজপুরুষ এ. ও. হিউম এর প্রতিষ্ঠাতা।
যতদূর মনে হয় তিনি সরকারের বিরাগভাজন কিছু শিক্ষিত ভারতীয়দের লাগামবদ্ধ করবার প্রচেষ্ঠা করেছিলেন।
অন্য যেসব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠনে ছিলেন তাঁদের মধ্যে দাদাভাই নৌরজী, বদরুদ্দীন ত্যাবজী, আনন্দমোহন বোস, আর সি দত্ত, ফিরোজ শাহ মেহতা, জি কে গোখলে, জি সুব্রমন্যম আইয়ার, দিনশাহ ভাচা, বাল গঙ্গাধর তিলক, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, মদন মোহন মালব্যের নাম উল্লেখযোগ্য।
1885 সালে প্রথম সভাটি বসে 72 জন সদস্যকে নিয়ে ডব্লিউ সি ব্যানার্জির নেতৃত্বে।
প্রথম দুই দশক (1885-1905), সদস্যগণ বিনীতভাবে সভায় যোগদান স্বরূপ ব্রিটিশদের বিচারে বা দাক্ষিণ্যে কোনোরূপ অমত প্রকাশ করতেন না।
কিন্তু ব্রিটিশ রাজের অন্যায়জনক চাপের ফলে কংগ্রেসের ভিতর একটি বিপ্লবী দল মাথা চাড়া দিল। তাঁদের মধ্যে বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক এবং লালা লাজপথ রায়ের নাম (লাল, বাল, পাল) উল্লেখযোগ্য। তাঁদের সঙ্গে অরবিন্দ ঘোষের নামও যুক্ত হয়।
বঙ্গভঙ্গ
1905 সালের 16ই অক্টোবর রাজকীয় ঘোষণার সঙ্গে পুরোনো বাংলাকে একদিকে রেখে পূর্ব বাংলা এবং অসমকে বিচ্ছিন্ন করে।
সরকারের বক্তব্য ছিল পূর্ব বাংলার বৃদ্ধিকে জাগরিত করতে এই বিভাগের প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু এর পিছনে আসল উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে একটি বিভেদ সৃষ্টি করা।
এই বিভাগকে কেন্দ্র করে দেশ প্রচণ্ড বিক্ষোভের সম্মুখে উপস্থিত হল। জাতীয় আন্দোলন তুমুল্ভাবে এই 1905 সালের বিভাগকে ধিক্কার জানাল।
রবীন্দ্রনাথ এই সময়ে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেন এবং দেশের প্রতিটি কোণে এই গান শোনা যেত। এই গানটি পরবর্তীকালে 1971 সালে পাকিস্তান থেকে মুক্তি পাবার পর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে পরিগণিত হয়।
1905 সালের 16ই অক্টোবর রাখি-বন্ধন উদযাপিত হয়। হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ সজ্জিবনি রাখি-বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং ভ্রাতৃত্ব ও একতার নজির স্থাপন করে।
খবরের কাগজ এই সময় একটি অতি আকর্ষক ভূমিকা নেয়। প্রধান কাগজের মধ্যে কে কে মিত্রর সঞ্জিবনী, এস এন ব্যানার্জীর বেঙ্গলী, মোতিলাল ঘোষের অমৃতবাজার পত্রিকা, বি বি উপাধ্যায়ের যুগান্তর, বিপিন চন্দ্র পালের নিউ ইন্ডিয়া, অরবিন্দ ঘোষের বন্দেমাতরম, অজিত সিং-এর ভারত মাতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
স্বদেশি আন্দোলন (1905)
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বিরোধিতাই স্বদেশি আন্দোলনের জন্ম দেয়। বাংলার নেতারা, দেখলেন শুধুমাত্র বিরোধিতা, সভা করা এবং সংকল্প গ্রহণ করলেই আসল কার্য সমাধা হবে না, গঠনমূলক কিছু করতে হলে স্বদেশি আন্দোলন এবং বয়কট ছাড়া কোনো পথ নেই।
স্বদেশী আন্দোলনের দ্বারা জনগণের আত্মবিশ্বাস জাগানোই এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
লাল, বাল, পাল এবং অরবিন্দ ঘোষ স্বদেশি আন্দোলনে বড়ো ভূমিকা নিয়েছিলেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রথম বেনারসের সভায় 1905 সালে এই আন্দোলনের ডাক দেন। জি কে গোখলে এই সভার পৌরহিত্য করেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভায় 1905 সালের 7ই আগস্ট কলকাতায় ব্রিটিশ নির্মিত দ্রব্য বর্জন করার সংকল্প গ্রহণ করা হয়।
বিদেশি পণ্যকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
মুসলিম লিগ (1906)
1906 সালে আগা খান, ঢাকার নবাব সালিমুল্লাহ এবং নবাব মহসিন-উল-মুল্কের নেতৃত্বে মুসলিম লিগ গঠন করা হয়।
এটা ব্রিটিশের স্নেহভাজন, সাম্প্রদায়িক এবং গোঁড়া রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং দলটি স্বদেশি আন্দোলনের বিরোধী, মুসলমানের নিরাপত্তার দাবি এবং মুসলিমদের নিজস্ব সাংসদ গঠন করবার জন্য চেষ্টা চালিয়েছিল।
স্বরাজ
1906 সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় দাদাভাই নৌরজী স্বরাজ বা নিজেদের সরকার এই লক্ষ্যে ভারতীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট সভা
এই সভায় 1907 সালে, সুরাটে জাতীয় কংগ্রেস দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়, একটি চরমপন্থী লাল, বাল, পালের নেতৃত্বাধীনে এবং অন্যটি শান্তিবাদী জি কে গোখলের নেতৃত্বে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মতবিরোধ হয় কারণ রাসবিহারী ঘোষকে চরমপন্থীরা নাকচ করে, তাঁরা লালা লাজপথ রায়কে নির্বাচিত করেন।
সরকার চরমপন্থীদের উপর বিশাল আঘাত হানে, তাদের পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করে এবং নেতৃবৃন্দকে বন্দি করে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট বা মিন্টো-মোর্লে রিফর্মস (1909)
অন্য সাংবিধানিক পদক্ষেপ ছাড়াও এই ধারা মুসলিম সাংসদ হবার পক্ষে রায় দেয়।
জাতীয়তাবাদী স্তরে ভান ধরাতে এই ধারা নরমপন্থী এবং মুসলিমদের সরকারের পক্ষে আনার চেষ্টা করে।
গদর পার্টি (1913)
লালা হরদয়াল, তারকনাথ দাস এবং সোহন সিং ভাকনা এই দলের প্রতিষ্ঠাতা।
গদর নামটি একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে নেওয়া হয়েছিল যেটা 1913 সালে 1লা নভেম্বর প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল সিপাই বিদ্রোহের স্মরণে।
সান ফ্রানসিসকোতে এর সদর অফিস ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে গদর পার্টির নেতাদের সুযোগ হয়েছিল ভারতকে স্বাধীন করার যদিও এটা তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল না।
হাজার খানেক অনুগামী বাংলার বিপ্লবীদের সঙ্গে একত্র হয়ে বিদ্রোহে শামিল হল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য অভিসার ব্যর্থ হয়।
কোমাদাতা মারু ঘটনা (1914)
‘কোমাদাতা মারু’ একটি জাহাজের নাম যাতে ভরতি ছিল শিখ এবং মুসলমান আভিবাসী যারা পাঞ্জাব থেকে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে যাত্রা করেছিল।
কিন্তু কানাডিয়ান অভিবাসন দপ্তর তাদের কিছু মাস যাবৎ অসহায় অবস্থায় রেখে পুনরায় তাদের ফেরত পাঠায়।
জাহাজটি অবশেষে 29শে সেপ্টেম্বর, 1914 সালে কলকাতায় নোঙর ফেলে।
কিন্তু জাহাজের যাত্রীরা পাঞ্জাবের ট্রেনে উঠতে না চাওয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাতে 22 জন মারা যায়।
এই ঘটনা বিপ্লবীদের খেপিয়ে তোলে এবং অসহায় ভারতবাসীর মৃত্যুর বদলা নিতে বদ্ধপরিকর হয়।
গৃহ নীতি আন্দোলন বা হোম রুল মুভমেন্ট (1916)
ছয় বৎসর মান্ডালয় জেলে কাটাবার পর তিলক ফিরে আসেন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন। মিন্টো-মোর্লে রিফর্মের জন্য যে ভ্রান্তি তৈরি হ্যেহচিল এবং যুদ্ধের জন্য যে দুর্যোগ দেশের ওপর ব্যে গিয়েছিল তা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে তিলক এবং অ্যানি বেসান্ত নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
এটা বাল গঙ্গাধর তিলকের দ্বারা 1916 সালের এপ্রিলে পুনায় এবং অ্যানি বেসান্ত ও এস সুব্রমন্যম আয়ারের দ্বারা চেন্নাইয়ে 1916 সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল।
তিলকের দল মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং বেবারে এবং অ্যানি বেসান্তের দল ভারতের বাকি রাজ্যগুলিতে কাজ করতে শুরু করে।
লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ রাজ্যের মধ্যেই ভারতের নিজ সরকার স্থাপন করা।
তিলক স্বরাজের কাছে এই দাবি রেখেছিলেন আঞ্চলিক ভাষাগত অঞ্চল গঠন এবং নিজস্ব ভাষা সহযোগে শিক্ষার ব্যবস্থা। তিনি এই শ্লোগান দিতেন ‘স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি নিয়েই ছাড়ব’।
মারহাট্টা, কেশরি তিলকের এবং অ্যানি বেসান্তের নিউ ইন্ডিয়া, যুক্তরাজ্য এবং ইয়ং ইন্ডিয়া গৃহনীতি আন্দোলনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়াল।
মুসলিম লিগ এই আন্দোলনের স্বপক্ষে ছিল।
লখনউ চুক্তি (1916)
ব্রিটেন এবং তুর্কিদের যুদ্ধের পরবর্তীকালে মুসলিমদের মধ্যে ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণার ভাব উদ্রেক হয়েছিল।
জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগ উভয়েই যৌথভাবে এর নিষ্পত্তি করেছিল। উভয়েই নিজ নিজ সাংসদ নির্বাচন করেছিল এবং যৌথভাবে নিজস্ব সরকারের জন্য দাবি করেছিল।
আগস্ট ডিক্লারেশন (1917)
লখনউ চুক্তির পরে, একটি ব্রিটিশ শাসন প্রণালী ঘোষিত হয়েছিল যার লক্ষ্য ছিল শাসনকার্য চালাবার জন্য সংসদে ভারতীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং দেশের সরকার সূক্ষ্মভাবে পরিচালনা করবার স্বার্থে ব্রিটিশদের অধীনে। এটিকে আগস্ট ডিক্লারেশন নামে অভিহিত করা হয়।
হিন্দু-মুসলিম একতা দেখাতে লখনউ চুক্তিতে তার কারণ স্বরূপ এই শাসন প্রণালী ঘোষিত হয়েছিল।
মন্টেগু-চেমসফোর্ড অ্যাক্ট এই ঘোষণার ভিত্তিতে করা হয়েছিল।
রাওলাট অ্যাক্ট (1919)
এই ধারা সরকারকে লাগামহীন ক্ষমতা দিয়েছিল সন্দেহভাজন আসামিদের সশরীরে কারণ দর্শানোর জন্য আদালতে বিনা বিচারে। ব্রিটেনের সামাজিক স্বাধীনতা যার উপর তাদের বিচার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাকে বুড়ো আঙুল প্রদর্শন করে ভারতে এই ধারা জারি হয়েছিল।
সমস্ত দিক থেকে প্রবল উত্তেজনা দেখা দিল। এই উত্তেজনা দেশ-ভিত্তিক হয়েছিল এবং গান্ধিজি এর পথ প্রদর্শক ছিলেন এবং তিনি অসহযোগ আন্দোলনের বীজ তখনই রোপণ করেছিলেন।
1919 এর এপ্রিল মাসে দেশ এক রাজনৈতিক জাগরণ প্রত্যক্ষ করল। হরতাল, আন্দোলন দেশের সব স্থানেই পালিত হতে লাগল।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড (এপ্রিল 13, 1919)
এপ্রিল 10, 1919 ডক্টর সত্যপাল এবং ডক্টর কিচলু গ্রেপ্তার হন। জনগণ এই গ্রেপ্তারির উপর প্রচন্ড হাঙ্গামা বাঁধায়।
জেনারেল ও ডায়ার গুলি চালানোর নির্দেশ দেন জালিয়ানওয়ালাবাগ, অমৃতসরে সেখানে হামলাকারীরা একত্রিত হয়েছিল।
ফলে শতাধিক পুরুষ, মহিলা এবং শিশুর মৃত্যু হয় এবং এক হাজারের বেশি লোক আহত হন।
রবীন্দ্রনাথ এর প্রতিবাদে নাইটহুড উপাধি ফিরিয়ে দেন এবং স্যার সংকরণ নায়ার ভাইসরয় এগজিকিউটিভ কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করেন।
বিচার করতে হান্টার কমিশন বসানো হয়।
মার্চ 13, 1940 সর্দার উধম সিং জেনারেল ও ডায়ারকে লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করেন।
খিলাফত আন্দোলন (1920)
মুসলিম জনগণ জ্বলে উঠল তুর্কি এবং ব্রিটিশ চুক্তির ফলে যার পরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
মহম্মদ আলি এবং সৌকত আলি এই দুই ভাই মিলে এই আন্দোলন শুরু করেন। মৌলানা আজাদ, হাকিম আজমল খান এবং হলরত মোহানি তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। খিলাফত নেতৃবৃন্দ এবং কংগ্রেস যৌথভাবে এই আন্দোলনের অগ্রণী হয়।
গান্ধিজি খিলাফত আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে হিন্দু এবং মুসলমানকে একই বৃত্তে আনার চেষ্টা করেন।
1920 সালের 31 আগস্ট, খিলাফত কমিটি অসহযোগ আন্দোলনে ব্রতী হয়।
গান্ধিজি কংগ্রেসের উপর চাপ প্রয়োগ করেন একই রকম কাজ করার জন্য। যদিও চিত্তরঞ্জন দাশ প্রথমে এর আপত্তি করেন কিন্তু পরে রাজি হয়ে যান।
অসহযোগ আন্দোলন (1920)
এটাই প্রথম জনগণ রাজনৈতিক আন্দোলন যার পুরোভাগে গান্ধিজি ছিলেন।
কংগ্রেস 1920 সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় এই আন্দোলনের সংকল্প গ্রহণ করে।
এই আন্দোলনের মুখ্য চাহিদা ছিল-
(1) সমস্তরকম সরকারি উপাধি এবং অবৈতনিক পদ পরিত্যাগ
(2) স্থানীয় কেন্দ্রের সমস্ত পদ পরিত্যাগ।
(3) সরকারি সভায় অনুপস্থিতি এবং ব্রিটিশ কাছারি থেকে সমস্ত ভারতীয় উকিলগণের অনুপস্থিতি।
(4) সাধারণ জনগণের মিলিটারি এবং অন্য সরকারি যোগ না দেওয়া এবং বিদেশি জিনিস বর্জন করা।
চিত্তরঞ্জন দাশ এবং মতিলাল নেহেরু প্রমুখ ওকালতি ত্যাগ করেন এবং সুভাষচন্দ্র বসু সিভিল সার্ভিস চাকরি গ্রহণ করেননি।
এই সময়ে (17 নভেম্বর, 1921) প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারতে আসেন কিন্তু কোনো ভারতীয় তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য এগিয়ে আসেননি।
চৌরি-চৌরার ঘটনা (1922)
1921 সালের ডিসেম্বরে এলাহাবাদে কংগ্রেস অসামরিক আজ্ঞা লঙ্ঘনের সংকল্প করে এবং গান্ধিজিকে নেতা নির্বাচিত করার মনস্থ করে।
কিন্তু এটি কার্যকর করার পূর্ব মুহুর্তে গোরখপুরের চৌরি-চৌরায় এক শ্রেণির লোক পুলিশের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলে এবং 22 জন পুলিশকর্মীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। ঘটনাটি ঘটে 1922 সালের 5ই ফেব্রুয়ারি।
গান্ধিজি বাধ্য হন 12 ফেব্রুয়ারি 1922-এর আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে।
স্বরাজ পার্টি (1923)
মতিলাল নেহেরু, চিত্তরঞ্জন দাশ এবং এন সি কেলকার (পরিবর্তনে সমর্থনকারী) দাবি করলেন বিধানসভা বয়কট তুলে নেওয়া হোক বরং বিধানসভায় ঢুকে সমস্ত বিবৃতি জনগণকে জানানো হোক। কিন্তু রাজেন্দ্রপ্রসাদ, রাজা গোপালাচারী প্রমুখ যাঁরা পরিবর্তনের বিপক্ষে ছিলেন তাঁরা গান্ধিজির পক্ষ নিলেন, এবং বয়কট তোলার বিপক্ষে গেলেন। 1923 সালের 1লা জানুয়ারি পরিবর্তনে সমর্থনকারীরা স্বরাজ পার্টি গড়লেন এবং ভোটে লড়ে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেললেন।
1923 সালের নির্বাচনে, স্বরাজ পার্টি বাংলা ও মধ্যপ্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
লাহোর বৈঠকের পরে 1930 সালে দুটি দলের পুনর্মিলন হয়।
সাইমন কমিশন (1927)
জন সাইমনের তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক অবস্থার পুনরায় পর্যালোচনা হয় এবং গণতন্ত্রে কোনোরকম পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হয়।
ভারতীয় নেতৃবৃন্দ কোনো ভারতীয়ের এতে অনুপস্থিতির দরুন এই কমিশনের প্রবল বিরোধিতা করেন।
কংগ্রেস এই বয়কটকে আন্দোলনের দিকে নিয়ে যায়।
1928 সালের 3রা ফেব্রুয়ারি জন সাইমন তাঁর সহকারী সমেত মুম্বাই পদার্পণ করেন এবং হরতাল, কালো পতাকা সহ বিক্ষোভ মিছিলের সম্মুখীন হন।
সরকার এই বিরোধী জনগণের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায় এবং পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করে এই আন্দোলন ভাঙতে। লাহোরে লালা লাজপত রায়ের উপর প্রচন্ড লাঠিচার্জ করা হয়। অবশেষে 1928 সালের 7ই নভেম্বর উনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বৈপ্লবিক কার্যধারা (Revolutionary Activities)
প্রথম একজন ইউরোপীয় রাজনৈতিক হত্যা সংঘটিত হয় 1897 সাএল পুনায় চাপেকার ভাতৃদ্বয় দামোদর এবং বালকিষণ দ্বারা। তাঁরা প্লেগ কমিশনের প্রেসিডেন্ট মিঃ র্যান্ডকে হত্যার ছক কষেন দুর্ভাগ্যবশত লেফটেনেন্ট আইয়ের্স্ট গুলিবিদ্ধ হন।
1907 সালে একজন পার্শি বিপ্লবী মাদাম ভিকাজী কামা স্টুটগার্টে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
1908 সালে ক্ষুদিরাম বোস এবং প্রফুল্ল চাকী মুজফফরপুরের এক কুখ্যাত বিচারক কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারেন। ওই কারণে ক্ষুদিরাম, কানাইলাল দত্ত এবং সত্যেন্দ্রনাথ বোসের আলিপুর মামলায় ফাঁসির সাজা হয়।
1909 সালে লন্ডনে ভারতীয় অফিসের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা কর্নেল উইলিয়াম কার্জন হুইলিকে এম এল ধিংড়া গুলি করে হত্যা করেন।
1912 সালে রাসবিহারী বোস এবং শচীন্দ্রনাথ স্যান্যাল দিল্লিতে লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর বোমা বর্ষণ করেন। এর ফলে দিল্লি চক্রান্ত মামলা শুরু হয়।
1924 সালের অক্টোবর মাসে কানপুরে ভারতের সমস্ত বিপ্লবী এক সভা করেন। এই সভায় বয়স্ক বিপ্লবীগণ যেমন শচীন্দ্রনাথ স্যান্যাল, যোগেশ্চন্দ্র চ্যাটার্জী এবং রামপ্রসাদ বিসমিল যোগদান করেন। যুব বিপ্লবীদের মধ্যে ভগত সিং, শিব বর্মা, শুকদেব, ভগবতীচরণ ভোরা, চন্দ্রশেখর আজাদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁরা হিন্দুস্থান সামাজিক প্রজাতন্ত্র জোট বা সেনা গঠন করেছিলেন। তাঁরা তিনটি লক্ষ্য স্থাপন করেছিলেন।
(1) গান্ধিজির অহিংস আন্দোলনের বিপক্ষে জনগণকে জাগ্রত করা।
(2) বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সোজাসুজি লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন।
(3) প্রজাতন্ত্র ভারতকে একটি গোষ্ঠীর ভিতর এনে একটি যুক্তরাষ্ট্র স্থাপন করা।
হিন্দুস্থান সামাজিক প্রজাতন্ত্র সেনাগণ সাহারানপুর-লখনউ রেলওয়েজ লাইনে 9 আগস্ট, 1925 এ কাকোরি পর্যন্ত যাবার ট্রেনের উপর ডাকাতির হামলা করেন। চক্রান্তকারীদের মধ্যে রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লাহ, রোশনলাল এবং রাজেন্দ্র লাহিড়ী গ্রেপ্তার হন এবং তাঁহাদের ফাঁসি হয়।
ভগত সিং তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট এস পি (লাহোর) সন্ডার্সকে গুলি করে মেরে ফেলেন। সন্ডার্স ডিসেম্বর 17, 1928 সালে লালা লাজপত রায়ের উপর লাঠি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ভগত সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত এপ্রিল 8, 1929 সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলীতে বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন। লাহোর চক্রান্ত মামলায় তাঁকে, রাজগুরু এবং শুকদেব মার্চ 23, 1931 এ লাহোরে জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়। এবং ফিরোজপুরে হুসেই নিওয়ালায় তাঁদের সৎকার করা হয়।
1929 সালে তেষট্টি দিন অনশনে রত জেলের অমানবিক অবস্থার জন্য যতীন দাস মৃত্যুবরণ করেন।
মিরাট চক্রান্ত মামলা 1929 সালে শুরু হয় এবং চার বছর ধরে চলে। একত্রিশজন কম্যুনিস্টের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁদের মধ্যে মুজফফর আহমেদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়।
বাংলার এক বিপ্লবী সূর্য সেন বাংলায় ইন্ডিয়ান রিপান্ডক আর্মি গঠন করেন। চিটাগাং-এর অস্ত্রাগার লুন্ঠন তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়। 1933 সালে তাঁর ফাঁসি হয়।
1931 সালে এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কে চন্দ্রশেখর আজাদ নিজেকে গুলিবিদ্ধ করেন।
ভারতের বাইরে গঠিত বৈপ্লবিক সংগঠন
| সংগঠন | বছর | প্রতিষ্ঠাতা | স্থান |
|---|---|---|---|
| ইন্ডিয়া হাউস | 1905 | শ্যামজি কৃষ্ণ ভার্মা | লন্ডন |
| অভিনব ভারত | 1906 | ভি.ডি সাভারকর | লন্ডন |
| ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স | 1907 | তারকনাথ দাস | ইউ. এস. এ |
| লিগ গদর পার্টি | 1913 | লালা হরদয়াল, তারকনাথ দাস, সোহন সিং ভাকনা | সান ফ্রান্সিসকো |
| ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স | 1914 | লালা হরদয়াল এবং বীরেন্দ্র | বার্লিন |
| লিগনাথ চট্টোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স | 1915 | রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ | কাবুল |
| লিগ অ্যান্ড গভর্নমেন্ট ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স | 1942 | রাসবিহারী বোস | টোকিও |
| লিগ, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি | 1942 | রাসবিহারী বোস | টোকিও |
| ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি | 1943 | সুভাষচন্দ্র বোস | সিঙ্গাপুর |
ভারতে বৈপ্লবিক সংগঠন
| সংগঠন | বছর | প্রতিষ্ঠাতা | স্থান |
|---|---|---|---|
| মিত্র মেলা | 1899 | সাভারকর ভ্রাতৃদ্বয় | পুনা |
| অনুশীলন সমিতি (১) | 1902 | জ্ঞানেন্দ্রনাথ বোস | মেদিনীপুর |
| অভিনব ভারত | 1904 | ভি ডি সাভারকর | পুনা |
| স্বদেশ বান্ধব | 1905 | অশ্বিনীকুমার দত্ত | বরিশাল |
| অনুশীলন সমিতি (২) | 1907 | বীরেন্দ্রকুমার ঘোষ ও ভূপেন্দ্র দত্ত | ঢাকা |
| ভারত মাতা সোসাইটি | 1907 | অজিত সিং ও অম্বা প্রসাদ | পাঞ্জাব |
| হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন | 1924 | যোগেশ চন্দ্র চ্যাটার্জি, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল | কানপুর |
| নওজয়ান সভা | 1926 | ভগৎ সিং | লাহোর |
| রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন | 1928 | চন্দ্রশেখর আজাদ | দিল্লি |
নেহেরু রিপোর্ট (1928)
সাইমন কমিশন বয়কটের পর, সমস্ত রাজনৈতিক পার্টি মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে এবং ভারতের সংবিধান তৈরি করতে বদ্ধপরিকর হয়। সাংবিধানিক গঠনকার্যে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ বলে এটি একটি স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে স্বীকৃত হয়।
তেজ বাহাদুর সপ্রু, আলি ইমাম, এম এস এনি, মঙ্গল সিং, সোহেব কুরেশী, জি আর প্রধান এবং সুভাষ চন্দ্র বোস এই কমিটি গঠনে প্রয়াস করেন।
লাহোর সেশন (1929)
ডিসেম্বর 19, 1929 এ জওহরলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস লাহোরের সভায় পূর্ণ স্বরাজের ঘোষণা করেন।
ডিসেম্বর 19, 1929 এ প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় এবং জানুয়ারি 26, 1930 তারিখটি ঠিক করা হয় স্বাধীনতা দিবস হিসাবে এবং প্রতি বৎসর এই তারিখে পালন করার শপথ নেওয়া হয়।
বি. দ্র.-
রায় সাহেব হরবিলাস সারদা বিধানসভায় 1928 সালে শিশুবিবাহ রদের উদ্দেশ্যে একটি বিল পেশ করেন। 1929 সালে এই বিলটি কার্যকর হয় এবং সারদা অ্যাক্ট 1929 নামে এটি প্রচলিত হয়। এই অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনো বালককে 18 বছরের নীচে এবং কোনো বালিকাকে 14 বছরের নীচে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ করা যাবে না।
1928 সালে ভূমিকর সংক্রান্ত আইনের বিরিদ্ধে আন্দোলন হয়। বল্লভভাই প্যাটেল এর নেতৃত্বে ছিলেন এবং এর পরেই তিনি সর্দার উপাধিতে ভূষিত হন।
ডান্ডি মার্চ (1930)
একে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনও বলা হয়।
মার্চ 12, 1930 সালে সবরমতী আশ্রম থেকে গান্ধিজি 78 জন অনুগামী নিয়ে লবণ আইন ভঙ্গ করতে ডান্ডি অভিমুখে পদযাত্রা করেন।
এপ্রিল 6, 1930 সালে গান্ধিজি সমুদ্র তীরে পৌঁছান।
তিনি একমুঠো লবণ নিয়ে অসামরিক আইন অমান্য আন্দোলন সূচনা করেন।
লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরে সি রাজাগোপালাচারি (তামিলনাড়ু) এবং ভাইকম সত্যাগ্রহের নায়ক কে কালাপ্পান (মালাবার) নিজেদের হাতে তুলে নেন।
লবণ আইন অমান্য আন্দোলনকে জাগিয়ে তোলে। উত্তর-পশ্চিমে পাঠানদের নেতা খান আবদুল গফফর খান (ফ্রনটিয়ার গান্ধী) ‘খুদাই খিদমদগার’ সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমাজ ‘রেড শার্ট’ নামে অভিহিত। এই আন্দোলন ব্রিটিশ সৈন্যদের মধ্যে ভারতীয়দের দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে। গাড়োয়াল সৈন্যরা পেশোয়ারে জনগণের উপর গুলি করার আদেশ অমান্য করে।
প্রথম গোল টেবিল বৈঠক (1930)
নভেম্বর 12, 1930 সালে সাইমন কমিশনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে এই বৈঠক লন্ডনে আয়োজিত হয়। এটিই প্রথম বৈঠক যাতে ব্রিটিশ এবং ভারতীয়রা সমমর্যাদার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে।
জাতীয় কংগ্রেস এই সভা বয়কট করে কিন্তু মুসলিম লিগ, হিন্দু মহসভা, লিবারেল পার্টি ইত্যাদি এতে অংশগ্রহণ করে।
বড়ো রাজনৈতিক পার্টির অনুপস্থিতির দরুন এই সভা জানুয়ারি 2, 1931 এ পিছিয়ে দেওয়া হয়।
গান্ধী-আরউইন চুক্তি
গান্ধিজি এবং সরকারের মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলার স্বার্থে সপ্রু, জয়কর এবং শ্রীনিবাস শাস্ত্রী চেষ্টা চালাতে থাকেন।
গান্ধিজি এবং আরউইন গঠিত সরকার মার্চ 5, 1931 এ একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অসামরিক আইম অমান্য আন্দোলন রদ করেন এবং দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানে রাজি হয়ে যান।
ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেন এবং সমুদ্রতীরবর্তী গ্রামগুলিতে লবণের সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখেন।
1931 সালে করাচি সেশনে গান্ধী-আরউইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এটি ঐতিহাসিক এই কারণে নূন্যতম অধিকার এবং জাতীয় অর্থনীতির সূচনা এই সময়েই হয়।
দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক (1931)
গান্ধিজির নেতৃত্বে লন্ডনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস লন্ডনে পৌঁছায় এবং গান্ধিজি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনান্ডের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
এই বৈঠকে গান্ধিজি প্রথম দাবি করেন এক দায়িত্বপূর্ণ সরকারের যা দেশের নিরাপত্তা, বহির্দেশের নীতি যোগাযোগ এবং অর্থনীতি সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপার তদারকি করবে প্রধান কার্যালয়ে এবং জেলায়।
যদিও এই যেমন ভঙ্গ হয় ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থে। মুসলিম, দলিত, ভারতীয় খ্রিস্টান এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ান প্রভৃতি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী থেকে আলাদা নেতৃত্ব দাবি করা হয়।
ম্যাকডোনাল্ড এই সেশন শেষ করে দেন এই বক্তব্য রেখে, দুটি বড়ো মুসলিম সংগঠন উত্তর-পশ্চিম ফ্রনটিয়ার প্রভিন্স এবং সিন্ধ গঠন করা হবে, এবং ভারতীয়রা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে তাহলে সাংঘাতিক ফলস্বরূপ ‘ইউনিল্যাটার্যাল ব্রিটিশ কম্যুনাল অ্যাওয়ার্ড’- এর আওতায় আসবে।
গান্ধিজি মুম্বাই পৌঁছানোর পর কংগ্রেস অসামরিক আইন অমান্য আন্দোলন পুনরায় জারি করার শপথ নেয় এবং ফলস্বরূপ 1932 সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে সরকার বেআইনি ঘোষণা করেন এবং নেতৃবৃন্দ পুলিশের হাতে বন্দি হন এবং গান্ধিজিকে ইয়ারাওদা জেলে (পুনা) স্থানান্তরিত করা হয়।
অসামরিক আইন অমান্য আন্দোলন 1934 সালে তুলে নেওয়া হয় কারণ গান্ধিজি নিম্নবর্গদের গঠনমূলক কজে আনেন তাঁর নতুন গ্রামীণ বিকাশের জন্য।
কম্যুনাল অ্যাওয়ার্ড (আগস্ট 16, 1932)
রামসে ম্যাকডোনাল্ড এটি প্রকাশ করেন। এটা প্রধানত ব্রিটিশ কর্তৃক গঠিত বিভক্ত শাসনের (ডিভাইড এন্ড রুল) অনুরূপ।
মুসলিম, শিখ, ভারতীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, মহিলা সম্প্রদায় এবং দলিত শ্রেণি ইত্যাদিকে আহ্বান জানানো হয়।
গান্ধিজি ইয়ারাওদা জেলে অনশন করেন এর বিরুদ্ধে।
পুনা চুক্তি
কম্যুনাল অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা এবং পরবর্তী গান্ধিজির অনশন চলাকালীন দেশের সমস্ত জায়গায় সভা অনুষ্ঠীত হতে আরম্ভ করে।
মদন মোহন মালব্য, আম্বেদকর এবং এম সি রাজা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
পুনা চুক্তি হবার পর গান্ধিজি ষষ্ঠ দিনে (সেপ্টেম্বর 25, 1932) অনশন ভঙ্গ করেন।
এই চুক্তি অনুযায়ী দলিত সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচিত সদস্যের উপস্থিতি নাকচ হয়ে যায় কিন্তু নিম্নবর্গের জন্য সংরক্ষণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
পুনা চুক্তি উচ্চ এবং নিম্নবর্গের নির্বাচিত যৌথ সদস্যকে সমর্থন জানায়।
গান্ধিজি হরিজনদের উন্নতির স্বার্থে চেষ্টা চালাতে থাকেন। সর্বভারতীয় ‘অ্যান্টি আনটাচেবিলিটি লিগ’ 1932 সালে স্থাপিত হয়। একটি ‘হরিজন’ নামক সাপ্তাহিকী জানুয়ারি, 1933 থেকে বেরোতে থাকে। গান্ধিজি নিজেকে শুদ্ধিকরণ করতে তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে হরিজনদের স্বার্থে 21 দিনের অনশনে ব্রতী হন।
তিনি আগস্ট 1, 1933 থেকে ‘ইনডিভিজুয়াল সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স’ আরম্ভ করেন।
তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক (1932)
বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ বন্দি থাকায় এই বৈঠকের কোনো ফল হয়নি। শুধু ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, 1935 সংক্রান্ত আলোচনা হয়।
বি.দ্র- সর্বভারতীয় কৃষক কংগ্রেস 1934 সালে লখনউতে সহজাতনন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে পালিত হয়।
গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, (1935)
সাইমন কমিশন তথ্য অনুযায়ী তৈরি হয়।
কংগ্রেস 1935 অ্যাক্টকে বাতিল করে এবংদাবি করে বয়স্ক ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত সদস্যদের স্বাধীন সমেত ভারতের সংসদে অন্তর্ভুক্তি। নেহেরু 1935 অ্যাক্টকে ব্যঙ্গ করে বলেন আমাদের একটি ব্রেক সমেত গাড়ি দেওয়া হয়েছে যার কোনো ইঞ্জিন নেই।
তথাপি কংগ্রেস 1937 সালে নির্বাচন লড়ে এবং এগারোটি জেলার ভিতর সাতটিতে মন্ত্রীত্ব গঠিত হয়। বাংলা এবং পাঞ্জাবে অ-কংগ্রেস মন্ত্রীসভা হয়। বাংলায় কৃষক প্রজা পার্টি-মুসলিম লিগ যৌথভাবে এবং পাঞ্জাবে ইউনিওনিষ্ট পার্টি মন্ত্রীসভা গঠন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন
কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর দেশে জনগ্ণেরভিত্র এক সুশৃঙ্খল অবস্থা ফিরে আসে। 1939 সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হওয়া পর্যন্ত তারা কাজকর্ম চালাতে থাকেন। যখন যুদ্ধ শুরু হয়, লর্ড লিনলিথগো হঠাৎ প্রধান মন্ত্রীসভার কোনো অনুমতির অপেক্ষা ছাড়াই ভারতকে যুদ্ধের আওতায় নিয়ে আসেন।
কংগ্রেস রাজি হয় ব্রিটেনকে সমর্থন করতে একটি শর্তে। প্রথমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষীত হবে এবং পরে ব্রিটেন সমর্থন পাবে। কিন্তু ভাইসরয় প্রথমে স্বাধীনতা ঘোষণায় রাজি হলেন না, কিন্তু প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হলেন যুদ্ধের পরেই স্বাধীনতা ঘোষিত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে 1939 সালে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে কংগ্রেস সদস্যরা মন্ত্রীসভা পরিত্যাগ করেন। মুসলিম লিগ, ডিসেম্বর 22, 1939 কে মুক্তির দিন বা ডেলিভারেন্স ডে হিসাবে পালন করে।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস গণতান্ত্রিক ক্ষমতাকে সাহায্য করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু একটি পরাধীন দেশের পক্ষে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশকে সাহায্য করা কতটা যুক্তিযুক্ত এই প্রশ্ন ওঠে। কংগ্রেস ঘোষণা করে ভারতকে স্বাধীনতা দিতেই হবে বা কমপক্ষে কার্যকরী ক্ষমতা ভারতের হাতে ছাড়তেই হবে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে যোগদানের পূর্বে। কিন্তু ভাইসরয় এই শর্ত মানতে চাইলেন না। কিন্তু তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আজ্ঞা দিলেন। অবশেষে ব্রিটিশ সরকার নানারকম দানের সাহায্যে যা আগস্ট অফার এবং ক্রিপস মিশন নামে খ্যাত, কংগ্রেসকে রাজি করাতে সমর্থ হয়।
পাকিস্থান রাষ্ট্রের দাবি
1930 সালে ইকবাল ফ্রনটিয়ার প্রভিন্স, বালুচিস্তান, সিন্ধ এবং কাশ্মীরকে একটি মুসলিম রাজ্যে পরিণত করার মত পোষণ করেন।
রহমত আলি চৌধুরি 1933 সালে পাকিস্থান নামটি প্রথম প্রয়োগ করেন।
মহম্মদ আলি জিন্না মুম্বাইতে থাকতেন, তিনি পাকিস্থানের পক্ষে যৌক্তিকতা প্রকাশ করেন।
মুসলিম লিগ 1940 সালে লাহোর সেখানে প্রথম আলাদা পাকিস্থানের দাবি তোলে যা জিন্নার দ্বিজাতীয় মতবাদ নামে খ্যাত। এটা রচনা করেন সিকন্দর হায়াত খান, ফজলুল হকের দ্বারা প্রেরিত হয় এবং খালিকুজ্জামান দ্বিতীয় প্রেরকের কাজটি করেন।
1943 সালের ডিসেম্বর মাসে করাচি সেশনে মুসলিম লিগ স্লোগান দেয় ‘দেশ ভাগ করো এবং দেশ ছাড়’।
আগস্ট অফার-আগস্ট 8, 1940
(i) রাজ্যের সীমা নির্ধারণ।
(ii) যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সংবিধান করতে একটি সমিতি গঠন।
(iii) গভর্নর জেনারেলের উচ্চ আধিকারিকদের নিম্নবর্গের ক্ষমতা প্রদান।
(iv) কংগ্রেস এটা অগ্রাহ্য করেন কারণ পূর্বেই রাষ্ট্রকে ক্ষমতা প্রদান এবং পূর্ণ স্বরাজের দাবি খন্ডন করা হয়েছিল। আগস্ট অফার মুসলিম লিগ গ্রহণ করেছিল।
ক্রিপস মিশন (1942)
ডিসেম্বর, 1941 সালে জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শামিল হয় এবং ভারতের পরিসীমার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মার্চ 7, 1942, রেঙ্গুনের পতন হয় এবং পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জাপানের হাতে চলে আসে।
ব্রিটিশ সরকার ভারতের সহযোগিতার আশায় স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করিবার জন্য প্রেরণ করে।
তিনি নেতৃবৃন্দের নিকট কয়েকটি লিখিত প্রস্তাব প্রদান করেনঃ-
(i) অধীন রাষ্ট্রের হাতে স্বায়ত্বশাসনের পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান যুদ্ধের পরে।
(ii) যুদ্ধের পরে ভারতের সাংবিধানিক গোষ্ঠীর হাতে সংবিধানের কাজকর্মের ভার অর্পণ যাঁরা জেলা থেকে নির্বাচিত বা কোনো রাজা দ্বারা শাসিত শাসকের দ্বারা প্রেরিত।
ব্রিটিশ সরকার দুটি শর্তে সেই সংবিধানকে গ্রাহ্য করবে-
(i) যে কোনো জেলা এই প্রস্তাবে ইচ্ছা প্রকাশ না করলে আলাদা সংবিধান করতে পারবে।
(ii) নতুন সংবিধান ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তি করে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা প্রদান করবে।
কংগ্রেস এই প্রস্তাব নস্যাৎ করে কারণ তাঁরা ভবিষ্যতে ব্রিটিশদের উপর বিশ্বাস হারিয়েছিল।
গান্ধিজি একে ‘ভবিষ্যৎ প্রাপ্তি চেক একটি ভগ্নপ্রায় ব্যাংকের’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
1942 এর আন্দোলন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন
এটাকে ‘ভরদা প্রস্তাব’ এবং ‘নেতৃত্বহীন সংগ্রাম’ বলা হয়।
আগস্ট 8, 1942 সংকল্পগ্রহণ করা হয় এবং গান্ধিজি স্লোগান দেন ‘করব অথবা মরব’।
আগস্ট 8, 1942 মহান নেতারা বন্দি হন এবং গান্ধিজিকে পুনে শহরে আগা খান প্যালেসে রাখা হয়।
এই গ্রেফতারের জন্য জনগণ ক্রোধে জ্বলে ওঠে এবং কোনো পূর্বনির্ধারিত সূচনা না থাকার কারণে আন্দোলন হয়ে ওঠে তৎক্ষণাৎ এবং প্রবলভাবে হিংসাত্মক কার্য দেশের সব স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারী দপ্তর ভাঙচুর হয়, টেলিগ্রাফ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং সংযোগ ব্যহত হয়।
গুপ্ত বৈপ্লবিক কাজকর্মও এই সময়ে শুরু হয়। জয়প্রকাশ নারায়ণ, আর এম লোহিয়া এবং অরুণা আসফ আলি গুপ্ত সমিতি চালু রাখেন। সবথেকে সাহসিক কর্ম দেখা যায় যখন কংগ্রেস রেডিয়ো বার্তা দেওয়া আরম্ভ করে ঊষা মেহতার ঘোষণার সঙ্গে।
সমান্তরাল সরকার দেশের বহু স্থানে কাজ শুরু করে। চিত্তু পান্ডের নেতৃত্বে পূর্ব-উত্তরপ্রদেশে বালিয়াতে প্রথম সমান্তরাল সরকার গঠিত হয়। এর পরে সাতারা, তালচের, উত্তর প্রদেশের পূর্বে কিছু জায়গায় এবং বিহারে এই সরকার ক্ষমতাধীন হয়।
মুসলিম লিগ একঘরে হয়ে যায়, হিন্দু মহাসভা এই আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেয় না এবং কম্যুনিস্টরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করে না।
এই আন্দোলনকে ব্রিটিশ শক্তি গুঁড়িয়ে দেয়।
নৌসেনা বিপ্লব (1946)
বি সি দত্তকে দেয়ালে ‘ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো’ লেখার জন্য গ্রেফতার করা হয় এবং সেই কারণে 18 ফেব্রুয়ারি 1946 সালে এইচ এম এস তলোয়ার নাম্নী জাহাজে আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের আরও কয়েকটি বিশেষ কারণ ছিল যেমন বর্ণভেদ, খাদ্যের মান এবং অভদ্র ভাষার প্রয়োগ।
পরের দিন করাচীতেও এইচ এম এস হিন্দুস্থান জাহাজে আন্দোলন শুরু হয়।
শীঘ্রই আন্দোলন অনেক স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। মুম্বাই বিদ্রোহীরা তেরঙ্গা জাহাজের উপর উড়িয়ে দেয়, নেতাজির প্রতিকৃতিও সঙ্গে থাকে এবং জয় হিন্দ স্লোগানে বাতাস মুখরিত হয়। তারা দাবি করে জাতীয় নেতাদের এবং ভারতীয় ন্যাশনাল আর্মির সোলজারদের তৎক্ষণাৎ জেল থেকে অব্যাহতি।
ভারতীয় নেতৃবৃন্দের চাপে এই আন্দোলন থেকে বিদ্রোহীরা সরে দাঁড়ায়।
রাজাগোপালাচারী ফর্মূলা (1944)
সেইসব মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যেমন উত্তর-পশ্চিম পূর্ব সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তিনি গণভোট করতে রায়দান করেন।
যদি জনগণের বৃহদংশ রাষ্ট্রের সমর্থনে যায় তবে সেখানে সেইরূপ রাষ্ট্র গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
জিন্না বিরোধিতা করেন এবং বলেন ওইসব অঞ্চলে কেবল মুসলিমরাই ভোটাধিকার পাবেন।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি
সুভাষ চন্দ্র বোস-
ভারতকে স্বাধীন করতে প্রথম এই সেনাদলের সূচনা করেন রাসবিহারী বোস। ব্রিটিশ আর্মির এক ভারতীয় অফিসার মোহন সিং যিনি সেই সময় মালয়তে ছিলেন তাঁর সাহায্যে রাসবিহারী বোস জাপানে গিয়ে 1915 সালে সেই দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
সুভাষ চন্দ্র বোস গোপ্নে 1941 সালের জানুয়ারি মাসে ভারত ছেড়ে বার্লিন পৌঁছান এবং সিঙ্গাপুরে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদান করেন। সেখানে রাসবিহারী বোস তাঁর হাতে দলের নেতৃত্বের ভার অর্পণ করেন।
সেনাদলের মধ্যে ভারতীয় সেনা (ব্রিটিশ আর্মির) ছিল যাদের জাপানিরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জয় করে জাপানে বন্দি অবস্থায় নিয়ে এসেছিল। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির হেড কোয়ার্টার দুটি জায়গায়, রেঙ্গুনে এবং সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেনাদের মধ্যে তিনটি সেনা দলে ভাগ করা হয়েছিল-গান্ধী, আজাদ এবং নেহেরু নামে পরিচিত ছিল। রাই ঝাঁসি ব্রিগেড নামে একদল মহিলা যোদ্ধাও ছিল।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ভারতকে আক্রমণ করে ভারতীয় সিমানায় ঢুকে পড়ে।
আন্দামান এবং নিকোবর এরা জুড়ে দেয় জাপানের সহায়তায় এবং ‘শহিদ’ এবং ‘স্বরাজ’ নামকরণ করে।
কিন্তু আই এন এ ব্রিটিশদের দ্বারা পর্যুদস্ত এবং আত্মসমর্পণ করে।
সুভাষচন্দ্র বোস ‘দিল্লি চলো’ ডাক দেন।
আই এন এর ইন্ডো-বর্মা ফ্রন্ট আক্রমণের নেতা পি কে সায়গল ও শাহ নওয়াজ এবং গুরবক্স সিং ধিলোঁর পক্ষে কংগ্রেস বুলাভাই দেশাই, তেজবাহাদুর সপ্রু, নেহেরু, কে এন কাটজু এবং আসফ আলিকে দাঁড় করায়। মুসলিম লিগও সমস্ত স্থানে এই মামলার বিরোধিতা করে।
নভেম্বর 12, 1945 আই এন এ ডে হিসাবে উদযাপিত হয়।
ওয়াভেল প্ল্যান (জুন-জুলাই 1945)
লর্ড ওয়াভেল এই প্ল্যান করেন।
এই প্ল্যান অনুযায়ী, গভর্নর জেনারেল এবং কমান্ডার-ইন-চিফ ব্যতীত ভাইসরয় এক্সিকিউটিভ কাউনসিল গঠিত হবে সমস্ত পার্টি থেকে ভারতীয় সদস্য নিয়ে। সিমলা চুক্তি এর উপর নির্ভর ক্রেই করা হয়েছিল কিন্তু জিন্না এটি বাতিল করেন।
ক্যাবিনেট (1946)
স্বাধীনতার জন্য এই সংগ্রাম একটি বিবেচনামূলক পর্যায়ে পৌঁছল 1945-46 সালে। লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী লর্ড এটিল 15ই মার্চ, 1946 সালে ঘোষণা করলেন ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিশনের চেয়ারম্যান লর্ড পেথিক এবং স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং এ ভি আলেকজান্ডার ভারতে আসবেন।
তাঁরা ভারতে এস কংগ্রেস এবং লেবার পার্টির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তাঁদের প্রস্তাব গ্রহণ করানোর জন্য।
16ই মে, 1946 সালে তাঁর নিম্নলিখিত প্রস্তাবের খসড়াটি পেশ করেন-
(i) পাকিস্থানকে আলাদা করার চুক্তি নাকচ এবং তার পরিবর্তে একটি অন্তর্ভুক্তিকরণ গোষ্ঠী স্থাপন নৃপতি শাসিত ছোটো রাজ্যসমূহের দ্বারা। গোষ্ঠীটি বৈদেশিক বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা পরিচালনা করবে এবং উক্ত বিষয়গুলির জন্য যতটা উচিত খরচা করবে। গোষ্ঠীর পরিচালনাধীন ব্যতীত সমস্ত কাজের ভার রাজ্যগুলির উপর ন্যস্ত থাকবে।
(ii) রাজ্যজোটগুলি তিন ভাগ ভাগ হবে। প্রথম দলটি তিনটি প্রধান হিন্দু রাজ্য নিয়ে গঠিত হবে যথাক্রমে মুম্বাই, বিহার উড়িষ্যা, চেন্নাই এবং ইউনাইটেড ও সেন্ট্রাল প্রভিন্স। দ্বিতীয়টি তিনটি প্রধান মুসলিম রাজ্য নিয়ে গঠিত হবে যথাক্রমে সিন্ধ, এন ডব্লিউ এফ পি এবং পাঞ্জাব এবং তৃতীয়টি অসম ও বাংলা নিয়ে হবে। প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর একটি রাজ্য জোট থেকে বের হতে পারবে এবং দশ বৎসর অতিক্রান্ত হলে যে কোনো একটি দলের মধ্যে স্থান পাবে।
(iii) ইউনিয়নে একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং একজন আইন প্রণেতা থাকবে। আইন প্রণেতার নির্বাচন জনগণের দ্বারা হবে না। প্রত্যেক গোষ্ঠীর সম্পাদকের দ্বারা এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্যের সদস্যরা সেই রাজ্যের রাজার দ্বারা সদস্যপদ পাবে।
কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগ এই প্রস্তাব গ্রহণ করে।
1946 সালে এই নির্বাচন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। কংগ্রেস 273টি আসনের মধ্যে 209টি আসন লাভ করে এবং গরিষ্ঠতম নির্বাচিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার
ক্যাবিনেট মিশনের প্ল্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের 2 তারিখে, 1946 সালে কংগ্রেস প্রার্থী দ্বারা একটি অন্তর্বর্টী সরকার গঠিত হয়। নেহেরুজি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন এবং গভর্নর জেনারেল চেয়ারম্যানের কাজের দায়িত্ব নেন। মুসলিম লিগ প্রথম দিকে যোগ না দিলেও পরবর্তীকালে ওয়াভের তাঁদের রাজি করান এবং পাঁচজন সদস্য অক্টোবর 26, 1946 সালে এতে যোগদান করে।
জিন্নার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ
নির্বাচনের ফল পেয়ে জিন্না চিন্তাগ্রস্থ হলেন কারণ মুসলিম লিগ বিপদগ্রস্থ হল, তাঁর দল নিশ্চিহ্ন হবার মুখে পতিত হল।
সেই কারণবশত জুলাই 29, 1946 সালে মুসলিম লিগ ক্যাবিনেট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করল।
তারা প্রত্যক্ষ সংগ্রামের সংকল্প গ্রহণ করল এবং ব্রিটিশ এবং কংগ্রেসকে পরিত্যাগ করল (16ই আগস্ট, 1946)
এর ফলে প্রচন্ডভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত হল।
জিন্না 27 মার্চ, 1947 সালে ‘পাকিস্থান ডে’ ঘোষণা করলেন।
সংবিধান সভা গঠন
ডিসেম্বর মাসের 9 তারিখ, 1946 সালে সংবিধান সভা মিলিত হয় এবং ডক্টর রাজেন্দ্রপ্রসাদ প্রেসিডেন্ট প্রসাদ পদে নির্বাচিত হন।
মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা
ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জুন মাসের 3 তারিখ, 1947 সালে লর্ড মাউন্টব্যাটেন একটি খসড়া তৈরি করেন। খসড়াটির বক্তব্য নিম্নরূপ-
(i) ভারত দুটি ভাগে ভাগ হবে-ভারত এবং পাকিস্থান নামে।
(ii) বাংলা এবং পাঞ্জাব দ্বিখন্ডিত হবে এবং নির্বাচনের দ্বারা নর্থ-ইস্টার্ন ফ্রনটিয়ার প্রভিন্স এবং অসমের সিলেট জেলার অধিকরণ নিষ্পত্তি হবে।
(iii) পাকিস্থানের একটি সম্পূর্ণ আলাদা সংবিধান হবে।
(iv) রাজাদের মত অনুযায়ী তাদের রাজ্য ভারত বা পাকিস্থানে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে বা যে কোনো রাজ্য সম্পূর্ণ আলাদা থাকতে পারবে স্বাধীনভাবে।
(v) 15ই আগস্ট, 1947 দিনটি ঠিক হয় ভারত এবং পাকিস্থানকে নিজ নিজ দেশের দায়িত্ব অর্পণের।
ব্রিটিশ সরকার 1947 সালের জুলাই মাসে ভারতকে স্বাধীন ঘোষণা করে এবং মাউন্টব্যাটেনের প্ল্যান অনুযায়ী সমস্ত প্রধান দায়িত্ব ভারত সরকারের হাতে তুলে দেয়।
দেশ ভাগ ও স্বাধীনতা
সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি মাউন্টব্যাটেন প্ল্যান মেনে নেয়।
ব্রিটিশ সরকার দুটি কমিশন জারি করে এবং স্যার সিরিল রেডক্লিফকে কমিশনের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করে। এই কমিশনদ্বয়ের উপর দেশভাগ, ভূমির সীমান্ত্রেখা টানার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সেই সময় ভারতে 512টি ক্ষুদ্র রাজাকর্তৃক শাসিত রাজ্য বর্তমান ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কঠোর হস্তে এর দায়িত্ব রক্ষা করেন। 15ই আগস্ট, 1947 এর মধ্যে সমস্ত রাজ্য ভারতের সংবিধানের ভিতর চলে আসে। কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ এবং জুনাগড় তখনও স্বাধীন রাজ্য হিসাবে থাকে। গোয়া পোর্তুগিজদের ক্ষমতায় এবং পন্ডিচেরী ফরাসিদের অধীনে স্বাধীনভাবে থাকে।