logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

ইতিহাস চর্চা

ইতিহাস

প্রাচীন ভারত

প্রাগৈতিহাসিক যুগ সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা মহেন-জো-দারো সভ্যতা বৈদিক যুগ ঃ আর্য সভ্যতা প্রাগবৈদিক যুগ বা ঋগ্‌বৈদিক যুগ পরবর্তী বৈদিক যুগ মহাজনপদ বৌদ্ধ ও জৈন মগধ সাম্রাজ্য আলেকজান্ডার মৌর্য সাম্রাজ্য মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ মৌর্য পরবর্তী যুগ সংগম যুগ গুপ্ত সাম্রাজ্য অন্যান্য রাজবংশ এবং শাসকগণ

মধ্যযুগের ভারত

গজনির মহমুদ মহম্মদ ঘোরী পৃথ্বীরাজ চৌহান ইলাবরি রাজত্ব খলজি বংশ তুঘলক বংশ সৈয়দ বংশ লোদী বংশ ধর্মীয় আন্দোলন বিজয় নগর সাম্রাজ্য বাহমানি সাম্রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্য আঞ্চলিক শক্তির উত্থান

আধুনিক ভারত

ইউরোপীয়োদের আবির্ভাব গভর্নর জেনারেল সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উত্থান ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ সাংবিধানিক উন্নয়ন ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধসমূহ

প্রাগবৈদিক যুগ বা ঋগ্‌বৈদিক যুগ


অঞ্চল (Region)

*. প্রথমদিকে আর্য্রা পূর্ব আফগানিস্তান, বর্তমান পাকিস্তান, পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশে বসবাস করত। আর্যদের ভারতবর্ষে বসবাসকারী সমগ্র অঞ্চলটিকে ‘সাতটি নদী বা সপ্তসিন্ধু’-র দেশ বলা হত। এই সপ্তসিন্ধু হল-সিন্ধু নদ, এর পাঁচটি উপনদী এবং সরস্বতী নদী।

রাজনৈতিক সংগঠন

*. রাজকীয় সংগঠনে সাধারণ লোকজন এবং এদের রাজা ‘রাজন’ নামে পরিচিত ছিল। রাজা ছিল যুদ্ধের দলনেতা এবং সাধারণের রক্ষাকর্তা। রাজার রাজত্ব বংশগত ছিল না। রাজা উপগোষ্ঠির দ্বারা মনোনীত হত। রাজন সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ছিল না। উপগোষ্ঠীর সরকার হিসাবে সাধারণের প্রতি তার আংশিক দায়িত্ব থাকত যেমন সভা, সমিতি, গণ, বিধাতা প্রভৃতি। এমনকী স্ত্রীলোকেরাও সভায় উপস্থিত থাকত। বিশেষভাবে ‘রাজন’ নির্বাচন বা পুর-নির্বাচনের সময় সকলকে সমিতি বা সভায় উপস্থিত থাকতে হত।

*. অনেক উপগোষ্ঠী মিলে গোষ্ঠী তৈরি করত। মূল সামাজিক একক ছিল কুলা (Kula) বা পরিবার এবং কুলপা (Kulapa)ছিল পরিবারের প্রধান। একদল প্রধান কর্মচারী রাজাকে সাহায্য করত। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল পুরোহিতের । এর পরে স্থান ছিল সেনানী-র অর্থাৎ সৈন্যদলের প্রধানের । যদিও তখন নির্দিষ্ট প্রথামত সৈন্য ছিল না। প্রথম দিকে আর্যদের রণকৌশল ছিল খুব উন্নত। তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হত কারণ তারা ঘোড়ায় টানা রথ ব্যবহার করতে জানত।

*. তখন নিয়মিত রাজস্ব প্রথার প্রচলন ছিল না। প্রজাদের স্বেচ্ছাদান এবং যুদ্ধে লুণ্ঠিত অর্থ সামগ্রী দ্বারা রাজ্যের ব্যয়ভার বহন করা হত। গ্রামীনী ছিল গ্রামের প্রধান, এরাই সভা সমিতিতে প্রতিনিধিত্ব করত। পরবর্তীকালে, গ্রামীনীর দায়িত্ব ব্রজাপ্তির ওপর অর্পিত হয়েছিল। এই ব্রজাপতিগণ পশুচারণ ক্ষেত্রের অধিকার লাভ করেছিল। সামাজিক জীবন (Social Life)

*. আর্যরা যখন ভারতে প্রবেশ করে তখন উপজাতির পরিকাঠামোর বিভাগ শুরু হয়েছিল। যখন তারা কৃষ্ণকায় আদিম অধিবাসীদের সঙ্গে বসবাস করতে লাগল তখন রক্তের শুদ্ধতার অনুসন্ধান করতে লাগল এবং শ্রেণিবিভাগ করার কঠিনতর হল যখন বহিরাগত দাসেরা আর্যসমাজে জায়গা খুঁজে পেল। এবং কিছু কিছু আর্য দাসেদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হল এবং তারাও তাদের পন্থা অবলম্বন করল। ক্রমে ক্রমে উপজাতি সমাজ তিনটি দলে বিভক্ত হল-যেমন সেনা, পুরোহিত এবং সাধারণ গোষ্ঠী; পরবর্তীকালে শুদ্র হিসাবে আরও একটি দলের সৃষ্টি হল।

*. বর্ণ শব্দটি ব্যবহৃত হল গায়ের রং হিসাবে, আর্যরা হল ফর্সা এবং দাসেরা হল কালো।

*. পরিবার ছিল সমাজের মূল একক। পরিবার প্রকৃতিগত ভাবে ছিল পিতৃশাসিত। কিন্তু স্ত্রী লোকেরাও পুরুষদের মতো সকল যুযোগ সুবিধা ভোগ করত।

*. বিবাহের ক্ষেত্রে এক স্বামী প্রথার (Monogamous)প্রচলন ছিল এবং বিবাহবিচ্ছেদ প্রথা ছিল না। কিন্তু অল্প কিছু ক্ষেত্রে বহু বিবাহ প্রথা, ভাই-এর স্ত্রীকে বইয়ে এবং বিধবাবিবাহর প্রচলনও ছিল। বাল্যবিবাহরও কিছু দৃষ্টান্ত দেখা যায়। সাধারণত ১৬-১৭ বছর বয়সে বিবাহ প্রথা চালু ছিল। তখন ‘আর্য’ শব্দটি ব্যবহার করা হত যে-কোনো সম্মানীয় ব্যক্তিকে।

*. আর্যগণের সোম(সোমরস), সুরা এবং পোশাক পরিচ্ছদ প্রিয় ছিল। ধর্মীয় পূজা পার্বণে সোমরস নিবেদন করত এবং তারপর তারা সেটি পান করত। সুরা ছিল পুরোপুরি বৈষয়িক এবং বলবর্ধক যাযক-কবিরা এটি পছন্দ করত না।

*. আর্যগণ গান বাজনা, অভিনয়, বীণা বাজাতে ভালবাসত। গান, নৃত্য এবং নৃত্যরতা বালিকার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। জুয়াখেলা তারা আমোদ-প্রমোদের অঙ্গ মনে করত। তারা রথ-দৌড় উপভোগ করত। স্ত্রী-পুরুষ সকলেই গয়না পরত।

ঋগবেদে বর্ণিত নদ-নদী এবং বর্তমানের নদীগুলির বর্তমান নাম নীচে দেওয়া হল-

ঋগবেদে বর্ণিত নদ-নদী নদ-নদীর বর্তমান নাম সিন্ধু ইন্দাস বিতস্তা ঝিলাম অসিক্‌নি চেনাব পুরুশনি রাভি বিপাশা বিয়াস সুতুদ্রি সাতলেজ গুমাল গোমতী কুম্রু কুররাম দ্রিসশদবতী ঘর্ঘর

এই নদীগুলি ছাড়াও ঋগ্‌বেদে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী এবং আরও কিছু নদীর নাম পাওয়া যায়।

বৈদিক যুগের অর্থনীতি

*. বৈদিকযুগে ব্রোঞ্জ কারুশিল্পীরা ছিল খুব দক্ষ। হরপ্পা সভ্যতার তুলনায় তারা অধিকতর ভালো যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করত। তখনকার দিনে ছুতোর, তাঁতি, মুচি ও কুমোর তাদের নিজ নিজ কাজ করত।

*. তারা মিশ্র অর্থ-নীতির অনুগামী ছিল যেমন পশুপালন ও কৃষি; এর মধ্যে পশুপাল ব্যবস্থা অর্থনীতিতে অগ্রণী গ্রহণ করেছিল।

*. গবাদি পশু নিয়েই তাদের বেশির ভাগ বিরোধ বাঁধত। কারণ ধনদৌলতের আধার ছিল গবাদি পশু। গোরু ছিল এখানকার মুদ্রার বিনিময় প্রথা। গোরুর সংখ্যানুসারে মূল্যবান নির্ধারিত হত। একজন মানুষকে একশত গোরুর সমান ধরা হত। সেই সময় গোরুকে দেবতা রূপে গণ্য করা হত না। ঘোড়াকেও গোরুর মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হত।

*. বিনিময় প্রথার মাধ্যম ছিল গোরু। এর সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণমুদ্রা নিশকা, কৃষনালি এবং সাতমনা নামে মুদ্রা প্রথা চালু হয়।

*. ‘গাভূতি’ দূরত্বের পরিমাণ এবং ‘গোধূলি’ সময় নির্ণয়ের একক হিসাবে ব্যবহৃত হত।

*. মাটির তৈরি দুর্গের মতো সংরক্ষিত স্থানে বসবাস করত।

*. তখনকার দিনে প্রধান শস্য ছিল যব বা বার্লি।

বৈদিকযুগের ধর্ম (Religion)

*. আর্যগণ প্রাকৃতিক শক্তিকে চিহ্নিত করেছিল এবং তাদের জীবন্ত বলে মনে করত। ‘ইন্দ্র’ ছিল গুরুত্বপূর্ণ দেবতা এবং ইন্দ্র যুদ্ধের দেবতা বলে গণ্য হত এবং ‘পুরন্দর’ ছিল ঝড় ও বজ্রের দেবতা।

*. আগুনের দেবতা ছিল অগ্নি, সে ছিল মানুষ ও দেবদেবীর মাঝামাঝি স্থানে।

*. বরুণ ছিল তৃতীয় স্থানে, সে ছিল জলের দেবতা এবং মনে করা হত সেই প্রকৃতিকে তুলে ধরেছে। ঋগবেদে সেই ছিল সর্বোচ্চ।

*. ‘সোম’ ছিল গাছপালার দেবতা। ‘মারুত’ ঝড়ের দেবতা। ‘অদিতি’ এবং ‘উষা’ ছিল স্ত্রী দেবতা (দেবী), ‘উষা’ হল ভোরবেলার প্রকাশ।

*. তারা মন্দির নির্মাণ বা পুতুল পুজোয় বিশ্বাসী ছিল না।

*. যাযকগণ কর্তৃক মুক্তাঞ্চলে পুজো করত।

বিবাহের রকমসমূহ

*. ব্রাহ্মণঃ একই বর্ণের স্ত্রী পুরুষের মধ্যে যৌতুক প্রদানের মাধ্যমে বিবাহকে বলা হত ব্রাহ্ম।

*. দৈবঃ যে বিবাহব্যবস্থায় বাবা কিছু মূল্য দিয়ে তাঁর কন্যাকে পুরোহিতের সঙ্গে বিবাহ দিত।

*. আর্শাঃ যে বিবাহে কন্যার দাম হিসাবে কন্যার বাবাকে একটি গাভি ও একটি ষাঁড় দেওয়া হত।

*. প্রজাপত্যঃ যে বিবাহে কোনো যৌতুক বা কোনো চাহিদা ছাড়াই কন্যার পিতা কন্যার বিবাহ দিতেন।

*. গান্ধর্বঃ বরপক্ষ ও কন্যাপক্ষের সম্মতি নিয়ে লুকিয়ে বিবাহ হত।

*. অসুরাঃ ক্রয় করার যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হত।

*. রাক্ষসঃ যে বিবাহ জোরপূর্বক করা হত।

*. পৈশাচঃ ঘুমন্ত অবস্থায় কন্যাকে প্রলোভন দেখিয়ে যে বিবাহ করা হত।

*. অনুলোম বিবাহঃ উচ্চবর্ণের পুরুষের সঙ্গে নিম্নবর্ণের কন্যার যে বিবাহ হত।

*. প্রতিলোম বিবাহঃ নিম্নবর্ণের পুরুষের সঙ্গে উচ্চবর্ণের কন্যার যে বিবাহ হত।