ইউরোপীয়োদের আবির্ভাব
পোর্তুগিজ-
পোর্তুজিগ পর্যটক ভাস্কো-ডা-গামা কালিকটে 1498 সালের, 17ই মে অবতরণ করেন। ওই সময়ে কালিকটে রাজত্ব করছিলেন রাজা জামোরিন। তাঁর এই পর্যটন সফল হয়েছিল ইউরোপ থেকে ভারতের মধ্যে একটি সমুদ্রপথ আবিষ্কারে যার দ্বারা বাণিজ্যিক আদান-প্রদান করা যেত সুদূর পূর্বদিকে এবং যার দ্বারা মধ্য প্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ার মূল্যবান ও বিপজ্জনক সিল্ক রোডকে পরিহার করা যেত। 1502 খ্রিস্টাব্দে তিনি কোচিনে একটি কারখানার পত্তন করেন। প্রথম পোর্তুগিজদের ভারতে গভর্নর ছিলেন ফ্রানসিস্কো এলমেইদা। তাঁর পরবর্তীকালে 1509 খ্রিস্টাব্দে আলফোনসো ডি আলবুকার্ক তাঁকে স্থলাভিষিক্ত করেন। নতুন গভর্নর পোর্তুগিজ সম্প্রদায়কে উচ্চ সীমায় নিয়ে যেতে সমর্থ হন। তিনি 1510 খ্রিস্টাব্দে গোয়া বিজাপুর শাসকদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। সতীপ্রথার অবসান ঘটান। নিনো-ডা-কুনহা 1530 সালে রাজধানী কোচিন থেকে গোয়ায় স্থানান্তরিত করেন এবং 1535 সালে দিউ ও 1559 সালে হুগলী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
মহম্মদ শাজাহানের রাজত্বকালে পোর্তুগিজদের 1631 সালে হুগলী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
1661 সালে পোর্তুগিজদের রাজা নিজ ভগিনীর বিবাহের সময় যৌতুকরূপে অধুনা মুম্বাইকে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসকে প্রদান করেন।
ধীরে ধীরে ভারতের বিভিন্ন কারণে পোর্তুগিজদের হাত থেকে চলে যায়। ডাচেরা এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
ডাচ-
ওলন্দাজ গঠিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে 1602 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রথম ফ্যাক্টরটি 1605 সালে মাসুলিপত্তনমে স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে অন্য ফ্যাক্টরগুলি পুলিকট, চুঁচুড়া, পাটনা, বালেশ্বর, নাগাপত্তনম, কোচিন, সুরাট, করিকাল এবং কাশিমবাজারে স্থাপিত হয়।
তাদের প্রধান কেন্দ্র ছিল নাগাপত্তনমের পুলিকট (১৬৯০ খ্রিঃ পর্যন্ত)।
ইংরেজ জাতি-
ইংরেজদের দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয় 1599 খ্রিস্টাব্দে এবং তাদের রাই এলিজাবেথ (প্রথম) কিছু রাজকীয় সুবিধা প্রদান করেন 1600 খ্রিঃ পূর্বদিকে বাণিজ্য করবার উদ্দগী হন।
ক্যাপটেন উইলিয়াম হকিন্স জাহাঙ্গিরের রাজসভায় 1608-1611 পর্যন্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি রাজার নিকট থেকে সুরাটে ফ্যাক্টরি করবার উদ্দেশ্যে অনুমতি প্রাপ্ত করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু ক্যাপটেন মিডলটন অনুমতি প্রাপ্ত করতে সফল হন 1611 সালে। একটি রাজকীয় ফরমান জারি হয় কোম্পানির উদ্দেশ্যে একটি স্থায়ী ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করতে (1616 সালে সুরাটে)। স্যার থমাস রো এতে প্রধান ভূমিকা নেন। 1616 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণে মাসুলিপত্তনমে প্রথম ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা হয়। 1633 সালে পূর্ব ভারতে প্রথম ফ্যাক্টরিটি প্রতিষ্ঠা হয় হরিহরপুর, বালেশ্বর (উড়িষ্যা)। 1639 সালে কোম্পানি চেন্নাই লিজ হিসাবে পায় এবং সেখানে সেন্ট জর্জেস ফোর্ট প্রতিষ্ঠিত করে যেটি করমন্ডল তীরবর্তী কোম্পানির হেড কোয়ার্টাররূপে কাজ করতে আরম্ভ করে। পশ্চিমে মুম্বাইকে প্রধান উপনিবেশ হিসাবে 1668 সালে গণ্য করা হয়। ঔরঙ্গজেব 1667 সালে কোম্পানিকে ফরমান জারি করে বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। 1690 সালে সুতানুটি গ্রামে একটি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা হয়। সুতানুটিতে এবং পার্শ্ববর্তী কলকাতা এবং গোবিন্দপুরের কিছু গ্রামে ছোটো ছোটো ফ্যাক্টরি চালু হয়। কোম্পানি 1696 সালে কলকাতাকে শক্তিশালী করবার জন্য দুর্গ বানিয়ে ঘিরে ফেলে।
1717 সালে জন সারমান ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে একটি ফরমান পেলেন যাতে কোম্পানি প্রভূত সুবিধার অধিকার পেল। এই ফরমানটিকে ‘ম্যাগনা কার্ট’ আখ্যা দেওয়া হয়।
ডেন জাতি-
ডেনদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অভ্যুদয় হয় 1616 খ্রিস্টাব্দে। তাঁরা বাংলার শ্রীরামপুরে এবং তামিলনাড়ুর ত্রানকুয়েবাবে কোম্পানি পত্তন করেন। তাঁরা কোম্পানি 1845 সালে ইংরেজদের বিক্রয় করেন।
ফরাসি জাতি-
চতুর্দশ লুইয়ের আমলে ফরাসিরা 1664 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পত্তন করেন মিনিস্টার কোলবার্টের সম্মানার্থে। ফরাসি কোম্পানির পত্তন, অর্থনীতি, নিয়ন্ত্রণ সবকিছুই ফরাসি রাজ্যের অধীন ছিল। ইংরেজদের কোম্পানির সঙ্গে এই বিষয়ে ফরাসি কোম্পানির ব্যবধান ছিল কারণ প্রথমটি পুরদস্তুর একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ ছিল। ফরাসিরা 1668 সালে প্রথম সুরাটে এবং 1669 সালে মাসুলিপত্তনমে কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন। পন্ডিচেরীতে কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন। পন্ডিচেরীতে কোম্পানি গোড়াপত্তন করে। 1673 সালে এবং পরবর্তীকালে এটিই রাজধানীতে পরিণত হয়। কোম্পানি চন্দননগরে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করে।
ব্রিটিশ জাতির বাংলা অধিকার
বাংলার শাসক, মুরশিদকুলি খান, বাংলাকে পরোক্ষ ভাবে স্বনির্ভর করেছিলেন মুঘলদের রাজত্বে 1717 সাল থেকে 1727 পর্যন্ত। তাঁর পুত্র সুজা-উদ-দৌল্লাহ তাঁর মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং বারো বছর রাজত্ব করেন। তাঁর মৃত্যুর পর আলিবর্দি খান 1756 সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। পরপর এই তিন জন তাঁদের রাজত্বকালে বাংলায় শান্তি এবং আইন-কানুন বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দমিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু কখনও ধূলিসাৎ করেন নি। অন্যদিকে কোম্পানি তাদের নীতিভ্রষ্ট অফিসারদের ভ্রষ্টাচারের সুযোগ নিয়ে কোম্পানির শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যস্ত ছিল। ফলস্বরূপ 1757 সালে আলিবর্দি খানের নাতি সিরাজ-উদদৌলাকে পলাশীর যুদ্ধে পরাস্ত হতে হয়েছিল। এই যুদ্ধে নবাবের সেনাধ্যক্ষ মীরজাফর এবং রায় দুর্লভ সৈন্যদের যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং যুদ্ধে অধিকাংশ সৈন্য অংশগ্রহণ করেনি ফলে নবাবকে যুদ্ধে হার স্বীকার করতে হয়েছিল এবং তিনি নিহত হয়েছিলেন।