মৌর্য পরবর্তী যুগ
মৌর্যযুগের পরবর্তী সময়ে রাজ্যসমূহ
শুঙ্গ রাজবংশ
পুষ্যমিত্র ছিলেন শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর রাজ্য দক্ষিণে নর্মদা নদী এবং পাটলিপুত্র, অযোধ্যা ও বিদিশা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি দুটি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন। তিনি ব্যাকট্রিয় রাজা ডেমাট্রিয়াসকেও পরাজিত করেছিলেন।
এই বংশের পঞ্চম রাজা হলেন ভগভদ্র, তাঁর রাজসভায় গ্রক দূত হেলিওডোরাস পরিদর্শন করেছিলেন।
অগ্নিমিত্র নামে এক শুঙ্গ রাজ কবি কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রম-এর নায়ক ছিলেন।
তারা আসলে ছিলেন ব্রাহ্মণ। এই সময়কালে দেবী ভগবতীর পুনঃপ্রবর্তন হয়েছিল।
শুঙ্গ বংশের রাজত্বকালে পতঞ্জলির মহাভাষ লিখিত হয়েছিল।
কণ্ব রাজবংশ
এই স্বল্পকালীন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বাসুদেব। তিনি শেষ শুঙ্গ রাজা দেবভূতিকে হত্যা করেছিলেন।
তারা দাক্ষিণাত্যের সাতবাহনে চলে যায়।
কলিঙ্গের চেতি রাজবংশ
ওড়িশার ভুবনেশ্বরের নিকটবর্তী হাতিগুম্ফার শিলালিপিতে খারবেল, তৃতীয় রাজার আমলে চেতিসের বিষয়ে বিবরণ পাওয়া যায়।
খারবেল দক্ষিনে গোদাবরী তীরবর্তী অঞ্চলে তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। তিনি ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী এবং তিনি এই ধর্ম সম্প্রসারণে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
সাতবাহন বা অন্ধ্র রাজবংশ
সাতবাহনেরা ছিল দক্ষিণ ও মধ্য ভারতে মৌর্যদের উত্তরসূরি।
এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সিমুকা গণ্য হন।
এই বংশের কৃতি রাজা ছিলে গৌতমপুত্র সাতকর্ণী (১০৬-১৩০ খ্রিস্টাব্দ)। ইনি তার শৌর্য ও বীর্যে সাতবাহনদের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেন। গোদাবরী ঔরাঙ্গাবাদ জেলার পৈথান-এ তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন।
অন্ধ্রের সাতবাহনদের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিঃ
ব্রোঞ্জ ব্যতীত বেশিরভাগ সীসা ধাতুর মুদ্রার প্রচলন।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সেতুবন্ধনের ভূমিকা গ্রহণ করে।
সাতবাহন শাসকগণ নিজেদের ব্রাহ্মণ বলে অভিহিত করত।
বৈদিক রীতিনীতি মেনে কৃষ্ণ, বসুদেব প্রভৃতি দেবতার পূজা করত।
যদিও তারা বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ভূমি দানের অনুমতি দিয়ে বৌদ্ধধর্মের উন্নতি সাধন করেছিল।
তখন সাধারণত দুই রকম স্থাপত্য চালু ছিল-বৌদ্ধধর্মের মন্দিরগুলিকে ‘চৈত্র’ এবং মঠগুলিকে ‘বিহার’ বলা হত। পশ্চিম দাক্ষিণাত্যে কারলে-র চৈত্যটি ছিল প্রসিদ্ধ।
অশোকের সময় থেকে জেলাগুলিকে বলা হত ‘আহার’। মৌর্যযুগের সময় থেকে তাদের কর্মচারীদের বলা হত অমাত্য এবং মহামাত্র।
ব্রাহ্মণ এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের কর মুক্ত গ্রাম-এর অনুমতি দেওয়া হত।
অশোকের আমল থেকে সরকারি কাজকর্মের ভাষা ছিল প্রাকৃত এবং লিপি ছিল ব্রাহ্মী। ‘গাথাসাত্তাসৈ’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষায় লেখা গ্রন্থ হালা নামে এক সাতবাহন রাজাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল।
বি.দ্র-
সাতবাহনদের বলা হয় ঢাকাতে আর্য বংশের পতাকা বাহক। তারাই ছিল ভারতের প্রথম জাতি যারা রাজার ছবি সংকলিত কয়েন ব্যবহার করত। এই কয়েনগুলির পিছন দিকে দক্ষিণী ভাষায় (তেলেগু অথবা কানাড়া) কিছু লেখা থাকত।
নাগার্জুনাকোন্ডা এবং অমরাবতী সাতবাহন বংশের শাসনকালে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। এই সময় অমরাবতী স্তূপ নির্মিত হয়।