আন্তর্জাতিক পুরস্কার
রাইট লাইভলিহুড্ অ্যাওয়ার্ড (Right Livelihood Award)
নোবেল পুরস্কারের পরিবর্ত হিসাবে গণ্য করা হয় রাইট লাইভ্লিহুড পুরস্কার। যারা বর্তমান বিশ্বের জরুরি কোনো সমস্যার সমাধানে বাস্তবসম্মত ও দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন তাদের কৃতিত্বস্বরূপ এই খ্যাতিসম্পন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়।
জার্মান-সুইডিশ বিশ্বপ্রেমিক জ্যাকবভন্ ইউয়েক্সকাল-এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই পুরস্কার প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিকে দেওয়া হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন পরিবেশ রক্ষা, মানবাধিকার, উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং শান্তি থেকে একটি বিচারক মণ্ডলী পুরস্কার প্রাপকদের নির্ধারণ করে। উপহারের টাকা পুরস্কার বিজেতাদের (সাধারণত ৪ জন) মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রায়শই চারজনের একজন প্রাপক এই সম্মানজনক পুরস্কার গ্রহণ করে যার মানে বাকি তিনজন পুরস্কারের অর্থ পাবে।
পরিবেশ রক্ষা, উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এবং মানবাধিকার ক্ষেত্রের উপর নোবেল ফাউন্ডেশনের নতুন পুরস্কার প্রচলনের অসফল প্রচেষ্ঠার অনুকরণ করেই এই পুরস্কার প্রতিষ্ঠিত।
ভারতীয় বিজেতাগণ (Indian Winners)
নং | প্রাপক | বছর |
---|---|---|
১ | সেল্ফ এমপ্লয়েড উওমেন্স অ্যাসোসিয়েশন/এলা ভাট্ | ১৯৮৪ |
২ | লোকায়ন/রজনী কোঠারি | ১৯৮৫ |
৩ | চিপকো আন্দোলন | ১৯৮৭ |
৪ | নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন | ১৯৯১ |
৫ | বন্দনা শিবা | ১৯৯৩ |
৬ | কেরালাতে জনসাধারণের বিজ্ঞান আন্দোলন | ১৯৯৬ |
৭ | স্বামী অগ্নিবেশ/আসগর আলি ইঞ্জিনিয়ার | ২০০৪ |
৮ | রুথ মনোরমা | ২০০৬ |
৯ | কে জগন্নাথন এবং এস জগন্নাথন | ২০০৮ |
১০ | কলিং গনজারভেলস্ | ২০১৯ |
ইউনেস্কো পিস প্রাইজ (UNESCO Peace Prize)
আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য অনন্যসাধারণ অবদানের কৃতিত্ব স্বরূপ ইউনাইটেড নেশনস্ এডুকেশনাল, সাইন্টিফিক এবং কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো) এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে।
১৯৮১ সাল থেকে প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ৬০,০০০ ডলার এবং অসাধারণ কাজের জন্য ইউনেসকোর সংবিধান অনুযায়ী সম্মান জানানো হয়।
ভারতীয় বিজেতাগণ (Indian Winners)
নং | প্রাপক | বছর |
---|---|---|
১ | জেনারেল ইন্দরজিত রিখি | ১৯৮৫ |
২ | মাদার টেরেসা | ১৯৯২ |
৩ | সিটি মন্টেসরি স্কুল, লখনউ | ২০০২ |
ইউনেস্কো হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড (UNESCO Human Rights Award)
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ঘোষণার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে ইউনেস্কো বিলবাও মানবাধিকার সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য এই পুরস্কার চালু করে।
প্রাদেশিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানগত, সংস্থাগত এবং একক প্রচেষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
এই পুরস্কারটি প্রতি দুবছর অন্তর দেওয়া হয়।
মানবাধিকার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের পুরস্কার (United Nations Prize in the field of Human Rights)
১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় এই পুরস্কারগুলি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
মানবাধিকার উন্নয়ন ও রক্ষায় যেসব মানুষ এবং সংস্থা অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছে তাদের সম্মান জানানো ও প্রশংসা করাই ছিল এদের অভিপ্রায়।
প্রথম পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। তারপর থেকে প্রতি ৫ বছর অন্তর এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় ডিসেম্বরের ১০ তারিখ যে দিনটিকে রাষ্ট্রসংঘ মানবাধিকার দিন হিসাবে অভিহিত করেছে।
তুলনামূলকভাবে রাষ্ট্রসংঘের পুরস্কারে নোবেল পুরস্কারের মতো অর্থমূল্য নেই।
কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত গরিব মানুষের পুনর্বাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে পরিচিত সমাজসেবী বাবা আমতে ১৯৮৮ সালে এই পুরস্কার লাভ করেন।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (World Food Prize)
যেসব ব্যক্তি বিশ্বে খাদ্যের গুণ, পরিমাণ বা লভ্যতার বৃদ্ধি ঘটিয়ে মানুষের উন্নয়নে সামিল হয় তাদের কৃতিত্বের সম্মানস্বরূপ রাষ্ট্রসংঘের শাখা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফ এ ও) এই পুরস্কার দিয়ে থাকে।
এই পুরস্কারের প্রথম প্রাপক নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নরম্যান বোর্লাগ (সবুজ বিপ্লবের জনক)।
ভারতীয় বিজেতাগণ (Indian Winners)
নং | নাম | বছর |
---|---|---|
১ | প্রফেঃ এম. এস. স্বামীনাথন | ১৯৮৭ |
২ | ডঃ ভার্গিস কুরিয়ন | ১৯৮৯ |
৩ | ডঃ গুরদেব খুশ | ১৯৯৬ |
৪ | ডঃ বি. আর. বরওয়ালে | ১৯৯৮ |
৫ | ডঃ সুরিন্দর কে. ভাসাল | ২০০০ |
৬ | ডঃ মোডাডুগু বিজয় গুপ্তা | ২০০৫ |
৭ | ডঃ সঞ্জয় রাজারাম | ২০১৪ |
টেমপ্লেটন প্রাইজ (Templeton Prize)
এই বার্ষিক পুরস্কার আমেরিকার টেমপ্লেটন ফাউন্ডেশন প্রদান করে।
এই পুরস্কার দেওয়া হয় কোনো জীবিত ব্যক্তিত্বকে বিচারকদের হিসাবে যার অসাধারণ অবদান জীবনের আধ্যাত্মিক দিক উন্মোচন করে অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে বা কোনো আবিষ্কারের মাধ্যমে অথবা বাস্তবসম্মত কার্যকারিতার মাধ্যমে।
এই পুরস্কার নামাঙ্কিত হয় আমেরিকায় জন্ম ব্রিটিশ উদ্যোগপতি স্যার জন টেম্প্লেটন-এর (১৯১২-২০০০) নামানুসারে যাকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৮৭ সালে নাইট উপাধি প্রদান করেছিলেন তাঁর মানবদরদি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ।
টেমপ্লেটন অনুভব করেছিলেন যে নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সেজন্য এই পুরস্কারের অর্থমূল্য এমন ভাবে ধার্য করা হয় যাতে নোবেল পুরস্কারের থেকে বেশি হয়।
১০,০০,০০০ পাউন্ডের এই সর্ববৃহৎ অর্থমূল্যের একক বার্ষিক পুরস্কার একটি মানবদরদি সংস্থার দ্বারা একজন ব্যক্তিকে দেওয়া হয়।
১৯৭৩ সালে এই পুরস্কারের উদ্বোধনী বিজেতা ছিলেন মাদার টেরেসা যিনি ছয় বছর আগে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
গ্রুবার প্রাইজ ইন কসমোলজি (Gruber Prize in Cosmology)
এই সম্মান একজন নেতৃস্থানীয় কস্মোলজিস্ট, অ্যাস্ট্রোনমার, অ্যাস্ট্রোফিজিস্ট অথবা সাইন্টিফিক ফিলজফারকে দেওয়া হয় যার তাত্ত্বিক, বিশ্লেষণাত্মক এবং ধারণামূলক আবিষ্কার সেই ক্ষেত্রের মৌলিক অগ্রগতি ঘটায়।
এই পুরস্কার প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল ২০০০ সালে এবং এর বার্ষিক অর্থমূল্য ৫,০০,০০০ ডলার। এর কো-স্পনসর হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন।
ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স প্রাইজ (Fundamental Physics Prize)
মৌলিক গবেষণায় লিপ্ত পদার্থবিদ্দের পুরস্কার প্রদান করতে উৎসর্গিত একটি অলাভজনক সংস্থা ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স প্রাইজ ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার প্রদান করে।
রাশিয়ান পদার্থবিদ্ এবং ইন্টারনেট উদ্যোগপতি ইউরি মিলনার ২০১২ সালে এর প্রতিষ্ঠা করে। এই পুরস্কার বিশ্বে খুবই লাভজনক শিক্ষাসংক্রান্ত পুরস্কার এবং নোবেল প্রাইজ বিজেতাগণের প্রাপ্য অর্থের তিনগুণ।
এই পুরস্কার ‘রাশিয়ান নোবেল’ হিসাবেও মর্যাদাপ্রাপ্ত।
ভারতের এলাহাবাদে অবস্থিত হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর তাত্ত্বিক পদার্থবিদ অশোক সেন ২০১২ সালে প্রথম নয়জন ইউরি মিলনার ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স প্রাইজ বিজেতাগণের একজন।
হুবার মেডেল (Hoover Medal)
এটি আমেরিকার যন্ত্রবিদ্দের জন্য পুরস্কার। ১৯৩০ সাল থেকে পেশার বাইরে মানুষের জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করার স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আবদুল কালাম এই মেডেল পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে। আবার ইন্ফোসিস-এর প্রতিষ্ঠাতা এন. আর. নারায়ণ মূর্তি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০১২ সালে।
কিয়োটো প্রাইজ (Kyoto Prize)
এটি নোবেল পুরস্কারের মতো একই অভিপ্রায়ে তৈরি জাপানি পুরস্কার। দর্শন, কলা, বিজ্ঞান এবং কারিগরি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
কাজুও ইনামোরি প্রতিষ্ঠিত ইনামোরি ফাউন্ডেশন্ ১৯৮৫ সাল থেকে এই বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করছে।
মানবজাতির বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এই বার্ষিক পুরস্কার দেওয়া হয়।
যেসব ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় না সেইসব ক্ষেত্র গণ্য করায় এই পুরস্কার সম্মানীয় হয়ে উঠেছে। কলা এবং বিজ্ঞান ক্ষেত্রে সারাজীবনের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুরস্কার একটি অন্যতম বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন আন্তর্জাতিক সম্মান। কখনো-কখনো একে নোবেল পুরস্কারের জাপানি সমতুল্য হিসাবে গণ্য করা হয়।
ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন (W.I.S.E. (WISE)Award)
ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন (ওয়াইজ) লক্ষ রাখে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিক্ষার উন্নয়ন এবং শিক্ষার সঙ্গে বিশ্বজনীন সমস্যাগুলি সংযুক্তকরণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলিকে উৎসাহদান।
শেখ মোজা বিন্ত নাসের-এর সৌজন্যে ২০০৯ সালে স্থাপিত হয়েছিল একটি অলাভজনক সংস্থা (ওয়াইজ), কাতার ফাউন্ডেশন ফর এডুকেশন, সায়েন্স অ্যান্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এর দ্বারা।
অ্যাবেল প্রাইজ (ABEL Prize)
এক বা একাধিক আসাধারণ গণিতজ্ঞকে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার নরওয়ের রাজা প্রদান করেন।
নরওয়ের প্রতিভাধর গণিতজ্ঞ নেইল্ হেনরিক অ্যাবেল-এর (১৮০২-১৮২৯) নামে নামাঙ্কিত এই পুরস্কার গণিত বিজ্ঞানের অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর দেওয়া হয়ে থাকে।
২৬ বছর বয়সে মারা যাওয়া অ্যাবেলের সঙ্গে প্রায়ই ভারতের গণিত-প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজম্ এর তুলনা করা হয়ে থাকে। অ্যাবেলের জন্মের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২০০১ সালে এই পুরস্কার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ৬ মিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোনার (এন ও কে) অর্থাৎ ৭৫০,০০০ ইউরো (প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার)। সম্মান, মূল্য এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে এই পুরস্কার নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে তুলনীয় যেখানে গণিত অন্তর্ভুক্ত নয়।