সিনেমা ও সংগীত সম্মান (Film and Music Awards)
অ্যাকাডেমি সম্মান (Academy Awards)
অস্কার পুরস্কার-
এই পুরস্কার ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। আমেরিকার অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস্ অ্যান্ড সায়েন্সেস (এ এম পি এ এস)প্রতি বছর পুরস্কার প্রদান করে। সিনেমা জগতে এই পুরস্কার সর্বাপেক্ষা সম্মানীয় হিসেবে বিবেচিত।
ভারতীয় বিজেতাগণ (Indian Winners)
১. ভানু আথাইয়া- ১৯৮২ সালে গান্ধি সিনেমার জন্য অস্কার (কস্টিউম ডিজাইনার হিসাবে) প্রাপক প্রথম ভারতীয়।
২. সত্যজিৎ রায়- প্রথম ভারতীয় যিনি ১৯৯২ সালে অস্কার সম্মান লাভ করেছিলেন সিনেমাতে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অথবা জীবনভোর সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ।
৩. এ. আর. রহমান- ২০০৯ সালে স্লামডগ্ মিলিয়নেয়ার সিনেমায় বেস্ট ওরিজিনাল স্কোর এবং বেস্ট ওরিজিনাল সং “জয় হো” গানের জন্য দুটি অস্কার লাভ করেছিলেন।
৪. গুলজার- ২০০৯ সালে স্লাম্ডগ্ মিলিয়নেয়ার সিনেমায় বেস্ট ওরিজিনাল সং “জয় হো” গানের জন্য এ. আর. রহমানের সঙ্গে অস্কার লাভ করেছিলেন।
৫. রেসুল পুকুট্টি- ২০০৯ সালে স্লাম্ডগ্ মিলিয়নেয়ার সিনেমায় বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং এর জন্য অস্কার লাভ করেছিলেন।
গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড (Grammy Awards)
সংগীত শিল্পে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ এই গ্র্যামি সম্মান (পুরো নাম গ্রামাফোন অ্যাওয়ার্ড) প্রদান করে আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ রেকর্ডিং আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস।
এই পুরস্কার টেলিভিশ্নের জন্য ‘এমি সম্মান’, স্টেজে উপস্থাপনার জন্য ‘টনি সম্মান’ এবং চলচ্চিত্রের জন্য ‘অ্যাকাডেমি সম্মান’-এর সমতুল্য।
প্রথম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৯ সালের ৪ঠা মে এবং এই অনুষ্ঠানে ১৯৫৮ সালের সংগীত নির্বাহকদের উপস্থাপনাকে সম্মান জানানো হয়েছিল।
ভারতীয় বিজেতাগণ-
পণ্ডিত রবিশঙ্কর (৪ বার গ্র্যামি বিজেতা, গ্র্যামি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড সহ), জাকির হোসেন (২ বার গ্র্যামি বিজেতা), ভিকু বিনায়েক, এ-আর. রহমান, বিশ্ব মোহন ভাট, পি. এ. দীপক, এস. এইচ. শ্রীধর।
ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস্ (BAFTA)
ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস্ (বি এ এফ টি এ) বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী সভায় এই পুরস্কার প্রদান করে। এই পুরস্কার অ্যাকাডেমি সম্মানের ব্রিটিশ পরিপূরক।
ব্রিটিশ ফিল্ম অ্যাকাডেমি হিসাবে বি এ এফ টি এ স্থাপিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে।
অনুষ্ঠান ফেব্রুয়ারি মাসে অস্কার প্রদানের পূর্বেই অনুষ্ঠিত হয়। বেশিরভাগ সম্মানই সমস্ত দেশের অধিবাসীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়, যদিও অসাধারণ ব্রিটিশ সিনেমা এবং কোনো ব্রিটিশ লেখকের, প্রযোজকের বা পরিচালকের অসাধারণ প্রথম প্রয়াসের জন্য আলাদা পুরস্কার রক্ষিত থাকে। অল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা বা অল্প দৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন-এর জন্য কেবলমাত্র ব্রিটিশ ফিল্ম নির্মাতাদেরই পুরস্কৃত করা হয়।
রোহিনী হাত্তাংগাদি সেরা নায়িকা হিসাবে বি এ এফ টি এ পুরস্কার পেয়েছিলেন গান্ধী (১৯৮২) সিনেমার সাপোর্টিং চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য। এ. আর. রহমান বি এ এফ টি এ পুরস্কার জিতেছিলেন স্লামডগ মিলিয়নেয়ার (২০০৯) ছবিতে সেরা সংগীত স্কোর বিভাগে।
ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড (Filmfare Award)
ভারতের হিন্দি চলচিত্র শিল্পজগতে অভিনয় এবং কারিগরি উভয় কলাকুশলীদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ টাইমস গ্রুপ বাৎসরিক ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার প্রদান করে।
এই পুরস্কার প্রদান প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৫৪ সালে যে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। শুরুতে এই পুরস্কার পরিচিত ছিল ক্লেয়ার অ্যাওয়ার্ড বা টাইমস্ অফ ইন্ডিয়ার এডিটর ক্লেয়ার মেন্ডনকা-র নামানুসারে শুধুমাত্র ক্লেয়ার নামে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকে পার্থক্য দেখানোর জন্য যৌথ ভোটদান পদ্ধতি চালু করা হয় ১৯৫৬ সালে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কর্তৃক নিয়োজিত একটি প্যানেল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কিন্তু ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার দেওয়া হয় জনসাধারণ এবং বিশেষজ্ঞদের কমিটির প্রদত্ত ভোটের মাধ্যমে।
১৯৫৪ সালের ২১শে মার্চ মুম্বাই-এর মেট্রো থিয়েটারে প্রথম পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে কেবলমাত্র পাঁচটি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল,-সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী এবং সেরা সংগীত পরিচালক। দো বিঘা জমিন ছিল প্রথম চলচ্চিত্র যা সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছিল। অন্য চার বিভাগে প্রথম বিজেতারা হলেন-বিমল রায় দো বিঘা জমিন ছবি পরিচালনা করার জন্য। দিলীপকুমার দাগ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। মীনাকুমারী বৈজু বাওরা ছবিতে অভিনয়ের জন্য। নৌসাদ বৈজু বাওরা ছবিতে সুর দেওয়ার জন্য।
ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস (National Film Award)
১৯৫৪ সালে প্রথম উপস্থাপিত ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডস ভারতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
প্রতি বছর সরকার নিয়োজিত একটি জাতীয় প্যানেল বিজয়ীদের মনোনীত করে এবং পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান নিউ দিল্লিতে আয়োজিত হয় যেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রদান করেন। এর পরেই জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করা হয় যেখানে পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলি সাধারণ দর্শকদের সামনে প্রদর্শিত হয়।
সারা দেশে আগের বছর তৈরি চলচ্চিত্রের জন্য ঘোষণা করা এবং দেশের প্রত্যেক প্রদেশের ও ভাষায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকে পুরস্কৃত করার মধ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠ ভারতীয় সিনেমার যোগ্যতা নিরুপণে স্বাতন্ত্রতার দাবি রাখে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ব্যাপ্তির জন্য এই পুরস্কারকে আমেরিকার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের সমতুল বিবেচিত হয়।
দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড (Dada Saheb Phalke Award)
সিনেমা শিল্পে সারাজীবনের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক প্রদেয় এই বাৎসরিক পুরস্কার ভারতের সিনেমা জগতের শ্রেষ্ঠ সম্মান।
ভারতীয় ফিল্ম জগতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য খ্যাতি ও স্মমানীয় কোনো প্রতিথযশা ব্যক্তিত্বকে এই সম্মান প্রদান করা হয়।
পুরস্কৃতকে মনোনীত করার জন্য ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটিকে নিয়োগ করা হয়। ১৯৬৯ সালে ভারতীয় সিনেমার জনক হিসাবে বিবেচিত দাদাসাহেব ফালকের জন্মশতবার্ষিকিতে শুরু হওয়া এই পুরস্কার ভারতীয় সিনেমার উন্নতিকল্পে কোনো সিনেমা ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এবং এই মাধ্যমের উন্নতি ও প্রসারে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে প্রদান করা হয়।
কোনো নির্দিষ্ট বছরের পুরস্কার পরবর্তী বছরের শেষে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সঙ্গে প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারে একটি বড়ো স্বর্ণকমল (সোনার পদ্ম) পদক, নগদ ১ মিলিয়ন টাকা এবং একটি শাল প্রদান করা হয়।